somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাক্স এর চামড়া ব্যবসা , দর্শকের দেহ কামনা আর ব্লগে ধর্ষকামী ভূতের আছর - ১ম পর্ব

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিরোণাম পড়েই হয়ত বুঝে নিয়েছেন সাম্প্রতিক আলোচিত , নন্দিত (সামান্যই) এবং নিন্দিত লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার অনুষ্ঠান্টি নিয়ে আরো একটি লেবু কচলানো হতে যাচ্ছে । নাহ, এখনই বিরক্ত হয়ে ফিরে যাবেন না । মেয়েদের শরীর প্রদর্শন , বাঙ্গালীত্ব , ধর্ম তত্ত্ব - এই সব কচলানো লেবু নিয়ে তিতা করার কোন ইচ্ছা আমার নাই । আমি বরং আমার ফিল্ডের কাছাকাছি মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই । আর যেই বিষয়টায় আমার চিরকালীন এলার্জি আছে , সেই মেগা কর্পোরেট দুনিয়া কি ভাবে আমাদের মন, মেধা , মনন ও স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা খেয়ে ফেলছে , তাই নিয়ে দু'চারটা কথা বলতে চাই ।

নিঃসন্দেহে সৌন্দর্য চর্চা একটা ব্যবসা । ট্রিলিওন ট্রিলিওন ডলারের ব্যবসা । এই ব্যবসার মূলে আছে মূলত কর্পোরেট পুঁজিবাদ । পুঁজিবাদ কি বলে? পুঁজিবাদ বলে প্রোডাকশন বা উৎপাদনের সব রকমের উপাদান , মালামাল বা সার্ভিস, বিক্রি ও লাভ - সব কিছুর মালিক হবে ব্যক্তি । উৎপাদন প্রক্রিয়ার লেন দেন হবে মার্কেটে এবং বেতন ও দাম নির্ধারন করবে মার্কেট । কর্পোরেট পুঁজিবাদ বলা হয় সাধারণত ঐ ধরনের ব্যবস্থাকে যেইখানে , আইন অনুযায়ী কর্পোরেশন বা সংস্থাকে হতে হবে প্রফিট ওরিয়েন্টেড । অর্থাৎ , একটা হাঁচি কাশি দিতে গেলেও সেইখানে আপনার লাভ থাকতে হবে । অর্থনীতির ড্রাইভার সমূহ একটি এবং একটি মাত্র লক্ষ্য নিয়ে আগাবে তা হলো " প্রফিট বা লাভ" ।

কমিউনিজম বা সোসালিজম এর সাথে এর মূল পার্থক্যটা হলো , কমুইনিটি বা সোসাইটির সার্বিক লাভালাভ এইখানে বিবেচ্য থাকে না । বিবেচ্য থাকে কর্পোরেট এর লাভ। মালিক যেহেতু ব্যক্তি তাই ব্যক্তিগত লাভ। তাতে সমস্যাটা কি ?

সমস্যাটা হলো , আপনাকে যখন পুরো কমিউনিটি বা সোসাইটির লাভ মাথায় রেখে লেন দেন করতে হবে , তখন আপনি এই কমিউনিটি বা সোসাইটির কোন সদস্যের কোন ক্ষতি হয় , এমন কোন লেন দেন বা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না । সুতরাং, আপনাকে এথিকাল ট্রেডিং করতে হবে । এখন একটা রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক হয় , তাহলে সে তার জনগণের কাছে একাউন্টেবল এবং জনগণের জন্য অনিষ্ট করে এমন কোন সিদ্ধান্ত , ব্যবসা করতে পারবে না । দুনিয়ার কর্পোরেট গুলা যতদিন রাষ্ট্রের অধীনে ছিলো , তারাও এই নৈতিকতা মেনে চলতে বাধ্য ছিলো । কিন্তু এখন মাল্টীন্যাশনাল কোম্পানি গুলা ধনে, সম্পদে , পলিটিকাল পাওয়ারে যে কোন একটি রাষ্ট্রের অধীনে নয় । আগে রাষ্ট্র কর্পোরেটকে নিয়ন্ত্রন করত। এখন কর্পোরেটই উলটা রাষ্ট্রকে চালায় । সুতরাং , ভোটের মাধ্যমে কে নির্বাচিত হবে , সেইটাও আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। মূলত পৃথিবীর সমস্ত ধন সম্পদ, পলিটিকাল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রন চলে গেছে জনগণ তথা রাষ্ট্রের বাইরে , কতগুলা মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটের হাতে । ন্যায়, নীতি , উচিত , অনুচিত বলে তাই আর দুনিয়াতে কিছু নাই । সবই প্রফিট ওরিয়েন্টেড । দুনিয়া জুড়ে যেই তথা কথিত এন জি ও , ডেভেলপমেন্ট, ডোনার , হেলথ , ডেভেলপমেন্ট এইড ইত্যাদি ইত্যাদি গাল ভরা নাম আর কার্যক্রম চলে , এইটাও আসলে কর্পোরেট বাণিজ্যেরই আরেকটা রুপ । নামেই নন প্রফিট , আসলে বিজনেস।

বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ? কল্পনা করুন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে । এদের কত্তগুলা হাত আছে ?

ক। নন আর্মস , লিগাল ব্যবসার হাত
১। পলিটিকাল দল বা রাজনৈতিক ব্যবসার হাত
২। সম্পূর্ণ ফর প্রফিট ব্যবসার হাত - যেমন কম্পিউটার, ব্যাংক , প্রকাশনা
৩। প্রফিট - নন প্রফিট মিক্স সেবা খাত হিসেবে ধরা হয় এমন ব্যবসা - হাস্পাতাল, ইউনিভার্সিটি
৪। সম্পূর্ণ নন প্রফিট ( আসলে প্রফিট) ব্যবসা - এন জি ও
খ। আর্মড ও ইলিগাল ব্যবসার হাত
১। অস্ত্র চোরাচালান ও বিক্রি
২। মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ পণ্যের বেচাবিক্রি
৩। আদম পাচার ইত্যাদি

এখন একটু চিন্তা করে দেখেন , এই সব কয়টা হাত মিলিয়ে জামায়াত কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে গরীবের চেয়ে গরীব এবং উপরের ধনীর চেয়ে ধনী সব কয়টা স্তরেই ব্যবসা করছে । ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে ভার্সিটি, ব্যাংকিং, হাসপাতাল , তার উপরে ধর্ম ও পলিটিক্স । তার মানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ হইলাম আমরা জামায়াতের ক্রেতা গোষ্ঠী এবং আমাদের শ্রম ও শ্রমের পয়সা চলে যাচ্ছে তাদের পকেটে । তাই রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা না থাকলেও জামায়াত গেড়ে বসেছে আমাদের গলার কাঁটা হয়ে , এবং এইটা ঘটেছে গত ৩০ বছরে । ঠিক এই ভাবেই কল্পনা করুন, বিশ্বের কয়েকটা মাত্র কোম্পানি এক এক করে কিনে নিচ্ছে অর্থনীতির সব কয়টা হাত । কি ঘটবে?

সারা বিশ্বই তখন পরিণত হবে একটা বাজারে যেইখানে সকলেই ক্রেতা বা কঞ্জিউমার । যে যত বড় বা বেশি কনজিউমার , তার দাম তত বেশি। আর সকল কার্যক্রমের মূলে রয়েছে শুধুই লাভ আর লাভ। লাভ নাই তো সব বন্ধ। এর ভিতরে লাক্সের চামড়া আসল কই থেকে , এইটাই ভাবছেন তো ?

পড়ুন২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:০৪
৪৯টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একুশ বছর

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৩৬



একুশ বছর—
সাত হাজার ছয়শত পঁয়ষট্টি রাত
আমি নির্ঘুম— চোখের নিচে কালো দাগ সাক্ষী।
আজও ভেসে ওঠে তোমার প্রিয় হাসিমুখ
আর কাজল কালো এণাক্ষী।

প্রথম যেদিন আমি, তোমার পানে চেয়েছি
তোমার দুচোখে আমি, আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২২

"বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী".....

ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় ২০০ বছর বৃটিশদের অধীনে ছিলো। দীর্ঘ বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের অবসান হলে আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেলাম। আবার দুই যুগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশী হিন্দুরা কেন শক্তভাবে কথা বলতে পারছেনা?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:২১


বাংলাদেশের হিন্দুরা বলতে গেলে ৯৫ পার্সেন্ট আম্লিগকে ভোটি দেয় ইহা ধ্রুবসত্য। অনেকেই হয়তো দ্বিমত পোষণ করতে পারে সেটা তার নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা সবসময়ই ভাবে আম্লিগ তাদের রক্ষাকর্তা কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরে বাধ্য হবে ভারত: ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮





অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে রায় হলে হাসিনার প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে দু’দেশের স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে ভুয়া তথ্য ছড়ানোয় শীর্ষে ভারত

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪




বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্য ছড়ানো দেশের তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×