শিরোণাম পড়েই হয়ত বুঝে নিয়েছেন সাম্প্রতিক আলোচিত , নন্দিত (সামান্যই) এবং নিন্দিত লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার অনুষ্ঠান্টি নিয়ে আরো একটি লেবু কচলানো হতে যাচ্ছে । নাহ, এখনই বিরক্ত হয়ে ফিরে যাবেন না । মেয়েদের শরীর প্রদর্শন , বাঙ্গালীত্ব , ধর্ম তত্ত্ব - এই সব কচলানো লেবু নিয়ে তিতা করার কোন ইচ্ছা আমার নাই । আমি বরং আমার ফিল্ডের কাছাকাছি মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই । আর যেই বিষয়টায় আমার চিরকালীন এলার্জি আছে , সেই মেগা কর্পোরেট দুনিয়া কি ভাবে আমাদের মন, মেধা , মনন ও স্বাভাবিক বুদ্ধি বিবেচনা খেয়ে ফেলছে , তাই নিয়ে দু'চারটা কথা বলতে চাই ।
নিঃসন্দেহে সৌন্দর্য চর্চা একটা ব্যবসা । ট্রিলিওন ট্রিলিওন ডলারের ব্যবসা । এই ব্যবসার মূলে আছে মূলত কর্পোরেট পুঁজিবাদ । পুঁজিবাদ কি বলে? পুঁজিবাদ বলে প্রোডাকশন বা উৎপাদনের সব রকমের উপাদান , মালামাল বা সার্ভিস, বিক্রি ও লাভ - সব কিছুর মালিক হবে ব্যক্তি । উৎপাদন প্রক্রিয়ার লেন দেন হবে মার্কেটে এবং বেতন ও দাম নির্ধারন করবে মার্কেট । কর্পোরেট পুঁজিবাদ বলা হয় সাধারণত ঐ ধরনের ব্যবস্থাকে যেইখানে , আইন অনুযায়ী কর্পোরেশন বা সংস্থাকে হতে হবে প্রফিট ওরিয়েন্টেড । অর্থাৎ , একটা হাঁচি কাশি দিতে গেলেও সেইখানে আপনার লাভ থাকতে হবে । অর্থনীতির ড্রাইভার সমূহ একটি এবং একটি মাত্র লক্ষ্য নিয়ে আগাবে তা হলো " প্রফিট বা লাভ" ।
কমিউনিজম বা সোসালিজম এর সাথে এর মূল পার্থক্যটা হলো , কমুইনিটি বা সোসাইটির সার্বিক লাভালাভ এইখানে বিবেচ্য থাকে না । বিবেচ্য থাকে কর্পোরেট এর লাভ। মালিক যেহেতু ব্যক্তি তাই ব্যক্তিগত লাভ। তাতে সমস্যাটা কি ?
সমস্যাটা হলো , আপনাকে যখন পুরো কমিউনিটি বা সোসাইটির লাভ মাথায় রেখে লেন দেন করতে হবে , তখন আপনি এই কমিউনিটি বা সোসাইটির কোন সদস্যের কোন ক্ষতি হয় , এমন কোন লেন দেন বা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না । সুতরাং, আপনাকে এথিকাল ট্রেডিং করতে হবে । এখন একটা রাষ্ট্র যদি গণতান্ত্রিক হয় , তাহলে সে তার জনগণের কাছে একাউন্টেবল এবং জনগণের জন্য অনিষ্ট করে এমন কোন সিদ্ধান্ত , ব্যবসা করতে পারবে না । দুনিয়ার কর্পোরেট গুলা যতদিন রাষ্ট্রের অধীনে ছিলো , তারাও এই নৈতিকতা মেনে চলতে বাধ্য ছিলো । কিন্তু এখন মাল্টীন্যাশনাল কোম্পানি গুলা ধনে, সম্পদে , পলিটিকাল পাওয়ারে যে কোন একটি রাষ্ট্রের অধীনে নয় । আগে রাষ্ট্র কর্পোরেটকে নিয়ন্ত্রন করত। এখন কর্পোরেটই উলটা রাষ্ট্রকে চালায় । সুতরাং , ভোটের মাধ্যমে কে নির্বাচিত হবে , সেইটাও আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। মূলত পৃথিবীর সমস্ত ধন সম্পদ, পলিটিকাল ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রন চলে গেছে জনগণ তথা রাষ্ট্রের বাইরে , কতগুলা মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটের হাতে । ন্যায়, নীতি , উচিত , অনুচিত বলে তাই আর দুনিয়াতে কিছু নাই । সবই প্রফিট ওরিয়েন্টেড । দুনিয়া জুড়ে যেই তথা কথিত এন জি ও , ডেভেলপমেন্ট, ডোনার , হেলথ , ডেভেলপমেন্ট এইড ইত্যাদি ইত্যাদি গাল ভরা নাম আর কার্যক্রম চলে , এইটাও আসলে কর্পোরেট বাণিজ্যেরই আরেকটা রুপ । নামেই নন প্রফিট , আসলে বিজনেস।
বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ? কল্পনা করুন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে । এদের কত্তগুলা হাত আছে ?
ক। নন আর্মস , লিগাল ব্যবসার হাত
১। পলিটিকাল দল বা রাজনৈতিক ব্যবসার হাত
২। সম্পূর্ণ ফর প্রফিট ব্যবসার হাত - যেমন কম্পিউটার, ব্যাংক , প্রকাশনা
৩। প্রফিট - নন প্রফিট মিক্স সেবা খাত হিসেবে ধরা হয় এমন ব্যবসা - হাস্পাতাল, ইউনিভার্সিটি
৪। সম্পূর্ণ নন প্রফিট ( আসলে প্রফিট) ব্যবসা - এন জি ও
খ। আর্মড ও ইলিগাল ব্যবসার হাত
১। অস্ত্র চোরাচালান ও বিক্রি
২। মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ পণ্যের বেচাবিক্রি
৩। আদম পাচার ইত্যাদি
এখন একটু চিন্তা করে দেখেন , এই সব কয়টা হাত মিলিয়ে জামায়াত কিন্তু বাংলাদেশের একেবারে গরীবের চেয়ে গরীব এবং উপরের ধনীর চেয়ে ধনী সব কয়টা স্তরেই ব্যবসা করছে । ক্ষুদ্র ঋণ থেকে শুরু করে ভার্সিটি, ব্যাংকিং, হাসপাতাল , তার উপরে ধর্ম ও পলিটিক্স । তার মানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ হইলাম আমরা জামায়াতের ক্রেতা গোষ্ঠী এবং আমাদের শ্রম ও শ্রমের পয়সা চলে যাচ্ছে তাদের পকেটে । তাই রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা না থাকলেও জামায়াত গেড়ে বসেছে আমাদের গলার কাঁটা হয়ে , এবং এইটা ঘটেছে গত ৩০ বছরে । ঠিক এই ভাবেই কল্পনা করুন, বিশ্বের কয়েকটা মাত্র কোম্পানি এক এক করে কিনে নিচ্ছে অর্থনীতির সব কয়টা হাত । কি ঘটবে?
সারা বিশ্বই তখন পরিণত হবে একটা বাজারে যেইখানে সকলেই ক্রেতা বা কঞ্জিউমার । যে যত বড় বা বেশি কনজিউমার , তার দাম তত বেশি। আর সকল কার্যক্রমের মূলে রয়েছে শুধুই লাভ আর লাভ। লাভ নাই তো সব বন্ধ। এর ভিতরে লাক্সের চামড়া আসল কই থেকে , এইটাই ভাবছেন তো ?
পড়ুন২য় পর্ব ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ৮:০৪