somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদেদের নিয়ে কত কথা!

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন কিনা, আজকাল বড্ড পিঁপড়া বেড়েছে। দেয়ালে পিপঁড়া, মেঝেতে পিঁপড়া, খাবার টেবিলে পিঁপড়া, বিছানায় পিঁপড়া। যত ছোট পিঁপড়া, তত বিষময় তাদের কামড়। চুলকাতে চুলকাতে রাতের ঘুম হারাম। চোখের তলায় কালি পরে গেল। চোখে দিব বলে শশা কেটেছি, সেখানেও দেখি পিঁপড়ারা সদলে বলে হানা দিয়েছে। কি মুসিবত, কই যাই?

এ সময় চোখে পড়ল বইয়ের তাকে রাখা 'বাংলার কীটপতঙ্গ'। লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য(জ়ণ্ম ১৮৯৫-মৃত্যু ১৯৮১)। সূচীপত্র উল্টে দেখলাম সেটাতে পিঁপড়ে, বোলতা, ভীমরুল, শোঁয়াপোকা, মৌমাছি, মাকড়শা (মাগো!!!) ইত্যাদি পোকামাকড়েরা গিজগিজ করছে (কি ভয়ংকর অবস্থা!!!)/:)

শেষে ভয়ে ভয়ে বইটা পড়া শুরুই করে দিলাম। প্রথম প্রবন্ধটি হল 'শ্রমিক পিঁপড়ের জন্ম-রহস্য'। যতই এগুতে থাকলাম, বিস্ময়ের সাথে আগ্রহ বাড়তে লাগল। একে একে সব কয়টা প্রবন্ধ কখন শেষ হয়ে গেল, টেরই পেলাম না। এই ছোট্টু শয়তান পিঁপড়েদের শ্রমনিষ্ঠা সম্পর্কে তো কত গল্পই শুনেছি। এবার পড়লাম এদের বুদ্ধিমত্তার গল্প। এরাও বিপদে একে অপরকে সাহায্য করে, সমস্যায় পড়লে মাথা খাটিয়ে (অবশ্য এদের 'মাথা' টাকে কি মাথা বলা ঠিক?) সমস্যার সমাধান করে। আর এদের যুদ্ধের কথা তো চিন্তা করলেই ভয়ে গা শিউরে উঠে। এ সবই আমাদের আশেপাশেই ঘটে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কয়জনই বা আমরা লক্ষ্য করি, কয়জনই বা আগ্রহ দেখাই? কিন্তু এই গোপাল বাবু (পুরো নাম লিখতে গেলে আমার হাত ভেঙ্গ যাওয়ার ভয় আছে তাই লিখলাম না :D) কি 'অসীম' ধৈর্য্য নিয়ে আর আগ্রহ নিয়েই না এই পর্যবেক্ষণ করেছেন। উনার সময়কালে (বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে) এই সব ক্ষুদে প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করা যেমন কষ্ট সাধ্য ছিল, তেমনি ছিল বিব্রত কর। কারণ এই সহজ সরল মানুষটা তার এই আগ্রহের জন্য সাধারণের চোখে পাগল সাবস্ত্য হয়েছিলেন, আর গবেষণার পদে পদে এসেছে অজস্র বাধা।

তারপরেও তিনি দমে না গিয়ে তাঁর আগ্রহকে পূর্ণতা দিয়ে গেছেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। কষ্ট করে বিশেষ কাগজ দিয়ে নালসো পিঁপড়ার বাসা বানিয়ে পিঁপড়াদের পর্যবেক্ষণ করে তিনি আবিষ্কার করেছেন পিঁপড়াদের শ্রেণী বিভক্তির কারণ। আর তার গবেষণার কাজ যে শুধু পিঁপড়াতেই সীমাবদ্ধ ছিল না তা নিশ্চই সূচীতেই পরিস্কার বোঝা গেছে। মাকড়শা নিয়ে তার গবেষাণা উল্লেখ করার মত। শুধু পর্যেবেক্ষণই না, তিনি অনেক ছবিও তুলেছেন। তবে বইএ ছাপানো ছবিগুলোর ঠিকঠাক মর্মোদ্ধার করতে পারলাম না। তবুও ব্যাপারটা প্রশংসনীয়, কারণ তখন কার দিনে ছবি তোলা আজকালকার মত চাট্টি খানি ব্যাপার ছিল না।B-)

জগদীশ চন্দ্র বসুর স্নেহ ধন্য এই গবেষক যত টুকু মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তার এক অষ্টমাংশ মনোযোগ দিয়েও যদি এগুলো আন্তর্জাতিক ভাবে প্রকাশ করতেন, তাহলে হয়তো বাঙালীর ভান্ডারে আরেকটা নোবেল প্রাইজ চলেও আসতে পারত। মজা করছি না, সত্যি! মৌমাছির উপর গবেষণা করে নোবেল পেয়ে যিনি কীটপতঙ্গ নিয়ে পড়াশুনার ব্যাপারটা জাতে তুললেন, তার তুলনায় এই গোপাল বাবুর গবেষনাও কম যায় না। বাঙালীর পোড়া কপাল, আরেকটা নোবেল তার শো কেসে তোলা হল না।

কথা প্রসঙ্গে আমার এক বাংলা স্যারের কথা মনে পরে গেল। স্যার তার নামের সাথে বাবু যোগ করলে ভারী গোসা করতেন। তিনি বলতেন , যারা কিছু জানে না, তারা বাবু। আমি যদি কিছু নাই জানি তাহলে তোদের পড়াচ্ছি কি ভাবে? তাই খবরদার, বাবু নয়। গোপাল বাবু যে 'বাবু' নন তা এতক্ষণে পাঠকের বোঝার কথা। তাই তাঁর স্বর্গীয় আত্মা (অবশ্য এত পোকা গবেষণার জন্য মারার জন্য যদি তার নরক হয়, তবে নরকীয়) আর আমার শ্রদ্ধেয় স্যারের কাছে আমার স্বেচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।:D

আমাদের বেশীর ভাগেরই পোকার প্রতি আগ্রহ না থাকলেও, বিশেষ বিশেষ পোকার প্রতি ভীতিটা অবশ্যই আছে। আসলে ভয়টার তেমন কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। সামান্য কয়েকটা ক্ষতিকর পোকা ছাড়া সব পোকাই কোন না কোন ভাবে আমাদের উপকারে আসে। প্রকৃতির ভারসাম্যের জন্য এরা খুবই দরকারী। তাই, পোকা দেখলেই হাউমাউ করে গাদা খানিক কীটনাশক ছিটিয়ে নিজেদের স্বর্গে (নাকি নরকে) যাওয়ার রাস্তাটা প্রশস্ত না করাই বোধ হয় বুদ্ধিমানের কাজ।

বাহ, সবটুকুই দেখছি পড়ে ফেললেন। আপনার ধৈর্য্যের তারিফ করতেই হয়। এর খানিকটা এবার আমাদের ক্ষুদে প্রতিবেশীদের পিছনে কাজে লাগালে বলাও যায় না, ভবিষ্যতে বাঙালীর ভাগ্য কে হয়তো আপনিই সুপ্রসন্ন করতে পারবেন।;)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×