somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন বৃষ্টিতে...

১০ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আহা, অনেকদিন পর এলাম ব্লগে, বছরের প্রথম আম ভর্তা খেতে খেতে। অবশ্য এটা ইংরেজি বছরের প্রথম, বাংলা বছরের হয়তো এই শেষ। হয়তো এই শেষ ব্লগে আসাও। আবার পরীক্ষার যাঁতাকলে পড়বো। বাংলা বছরের শেষ পরীক্ষাটা ইংরেজী হয়াতেই খানিকটা অবসর।

ছোটবেলা ঝড়ের দিনে আম কুড়াইনি কখনই, মা ঠাণ্ডা লাগবে ভয়ে বাইরে যেতে দিত না। মামার বাড়ি কোন আম গাছও ছিল না, তাই 'ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়ানো সুখ' লাইনটা আমার জন্য সারা জীবন ছড়াই থেকে গেল। কিন্তু বৃষ্টিতে মাঝে মাঝেই ভিজি এখন। ভিজতে হয় বলাটাই ভালো। ঘোর বরষায় বেরসিক প্রাইভেট কিনবা কলেজ়ে যেতে রিক্সার প্রয়োজন। যেন তেন না, পর্দাওয়ালা। ছাতা নিয়ে উদাসীনের মত রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকা, কখনো একটা দুইটা খালি পাওয়া গেল, তারা হয় বলল যাবে না নয়তো পাঁচগুণ ভাড়া দাবি করে বসল। অনেক কষ্ট করে রিক্সা করে গিয়ে দেখলাম প্রাইভেটের সামনে সাঁতার পানি। এলাম তো, যাবো ক্যামনে? এভাবেই বিভিন্ন পর্যায়ে ভিজতে ভিজতে কাক ভেজা হতে হয়।

এমনি এক ঝরোঝরো বরষার দিনে অনেক কষ্ট করে এক রিক্সা পেলাম, গন্তব্য ইংরেজী প্রাইভেট যা এমনি তে শহরের মাঝখানে হলেও বরষার সময় নদীতীরে চলে যায়! আশা করি সিচুয়েশনটা বোঝাতে পেরেছি। রিক্সায় ওঠার পর থেকেই চিন্তা করছি, কতটুকু পানি জমতে পারে, পানি টা কতটুকু নোংরা হতে পারে, কখন সরতে পারে ইত্যাদি। এমন সময় টের পেলাম, রিক্সাওয়ালা কথা বলছে। মুখ যেহেতু আছে, কথা সে বলতেই পারে। কিন্তু ব্যাপারটা হল, সে আমার উদ্দেশ্যে কথা বলছে, যা আগে কখনো হয়নি। আমি আবার কানে সামান্য খাটো, তার উপর আবার বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টকরে কিছু কিছু কথা উদ্ধার করতে পারছিলাম। ছেলেটা (আমার প্রায় সমবয়সীই) তার জীবনের গল্প করছিল। গ্রামে বাড়ি, কি ভাবে জানো (আমি উদ্ধার করতে পারি নি) সে শহরে আসে। ভালোই ছিল। আশরাফুলের বন্ধু ছিল। এই আশরাফুল সেই, যে কিছু কাল আগেও আমাদের ক্রিকেটের আশার ফুল ছিল, এখন নির্ভুল ভাবে বাজে ফরমে আছে। যে সময়ের কথা বলছি সে সময় আশরাফুল সাফল্যের শীর্ষে ছিল। ছেলেটা বলছিল, আজ কোথায় সে আর কোথায় আশরাফুল। যার সাথে একসাথে খেয়েছে, শুয়েছে - সে আর আজ তাকে চেনে না। ছেলেটা আন্তরিক ভাবে বলছিল, আমারও বেশ খারাপ লাগছিল। মাঝে মাঝে কিছু কিছু উত্তরও দিচ্ছিলাম। এতে ছেলেটার কথা বলার আগ্রহ বাড়ছিল। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল আমার সম্পর্কে। সাথে সাথে বলছিল তার নিজের অনেক গল্প। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ, কিন্ত অনেক গল্প হল, একটা বন্ধুত্ব তৈরি হল।

গলির মুখে ঢুকে যা ভেবেছিলাম, সেইটাই দেখলাম। ড্রেনের জলে গলি ভেসে গেছে। চিন্তায় পড়ে গেলাম, ফিরার সময় কি করব ভেবে। ছেলেটাই সব সমস্যার সমাধান করে দিল। সে বলল, আমাকে সেই নিতে আসবে। আমি তাকে ১২টায় আসতে বলে দিলাম।

প্রাইভেটের এক গার্জিয়ান কে বললাম ঘটনাটা। আমার বেশ মজা লেগেছিল ব্যাপারটা। কিন্তু আন্টির ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে নি। কোথাকার কোন উটকো বস্তির ছেলের সাথে বন্ধুত্ব, এরা তো মেয়ে দেখলেই গলে যায় ইত্যাদি। আমি নিজেও একটু চিন্তায় পড়লাম। এতকিছু ভেবে তো বন্ধুত্ব করিনি কখনো। তাই একটু কষ্টও পেলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে লাগলাম। এর মধ্যে বৃষ্টিটাও ধরে এসেছে। বারোটা বাজল। আরো কাটল দশ মিনিট। তবুও ছেলের দেখা নেই। আন্টিটা বার বার বলছিলেন, আসবে না আসবে না। আমিও ভাবলাম, আসবে না। তখন অগত্যা ড্রেনের পঁচা জল পাড়িয়ে বাসায় এলাম। সারা দিন মন খারাপ ছিল।

পরে আবার যখন সেখানে গেলাম, স্যার আমাকে ডেকে বললেন, এক রিক্সাওয়ালা এসেছিল তোমার খোঁজে। সে দিনও বৃষ্টি পড়ছিল।

ছেলেটাকে আর কখনো দেখিনি।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×