মাত্র মাসতিনেক হয়েছে এই ফ্ল্যাটে উঠেছি। উঠিনি, আমাকে উঠানো হয়েছে। মা বাবার কষ্টাপোর্জিত অর্থে ক্রীত শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই বহুতল ফ্ল্যাট। সামনে সদর রাস্তা, চারদিকে বাজার, বেশ মনোরোম পরিবেশ!!! বেশ ভালোই ছিলাম। সামনে ভর্তি পরীক্ষা, পড়ছিলামও বেশ মনোযোগ দিয়ে। তবে এখন পড়ছি না কেন সেটা নিশ্চই বুদ্ধিমান পাঠক এর না বোঝার কথা নয় (এই ফাকেঁ নিজের বুদ্ধিমত্তা কেও যাচাই করে নিন একবার )
তো পড়ছিলাম মন দিয়ে, দুলে দুলে। আমার সাথে দুলছিল আমার চেয়ার, আমার কলম। আস্তে আস্তে দেখি টেবিলটাও দুলছে, সেই সাথে টেবিলে সংরক্ষিত আমার সকল সম্পত্তি। বেশ ভালোই দুল দুল দুলুনি খেলছিলাম আমরা সকলে, মজাই লাগছিল। হঠাৎ মনে হল, আচ্ছা আমরা কি একটু বেশীই দুলছি না? চেঁচিয়ে মাকে বললাম, মা, ভূমিকম্প? সাথে সাথে দুলুনি বেড়ে গেল, আমার ক্ষীণাঙ্গিনী(???) মায়ের দাপাদাপি শুরু হতে না হতেই। আমি তখন আমার বক্স খাট টা পর্যবেক্ষণ করছি। নিরাশ হয়ে গেলাম খাবার ঘরে, খাবার নয়, খাবার টেবিল খুঁজতে। তলা দেখে মনে আশা হলেও উপরে ফ্যানের দুলুনি দেখে গলা শুকিয়ে এল। দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি সমুদ্র কক্সবাজার থেকে সরাসরি আমাদের ফ্ল্যাটে চলে এসেছে। আর সব স্রোত ভাঙছে সিড়ির উপর। লিফটের সামনে কিছু ভাঙা ঢেউ। ভয়েডের কাছে রেলিং ধরে টের পেলাম, বিল্ডিং এর নাচ থামেনি। অনেকে চিৎকার করে আল্লা আল্লা করছে, উপর তলা থেকে আসছে জোর ঘন্টার শব্দ। পিচ্চি গুলো কাঁদছে, বড়রা বলাবলি করছে, এর থেকে কুড়ে ঘর কত্ত ভালোই না ছিল। সাত তলায় থাকি, সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ফ্ল্যাট মাথায় ভাঙার সম্ভবনা ৮০%। জীবনে অনেক ভূমিকম্প দেখেছি, এত সময় ধরে এই প্রথম। রেলিং এর উপর আবার হাত দিলাম, কাঁপছে না। ঠিক তো? আবার হাত দিলাম। বার বার পরখ করে মাকে বললাম, থেমে গেছে। বলে নিজের ঘরে চলে এলাম।
ফ্ল্যাট কাঁপছে না ঠিকই, তবে আমার কাঁপুনি এখনও থামছে না।