..............
"বক্সে আটা আছে,১০টা রুটি বানাও
আর আলু ভাজি করো তোমার শ্বশুরের
জন্যে।"
মুখটা কিরকম যেন বেঁকিয়ে কথাটা
বলেই দরজার পইডা থেকে উঠে গেল
জহুরা খাতুন,বর্ষার শ্বাশুড়ী।
,
সংসারের কাজে অভস্ত্য তবুও
বিয়ের প্রথম সকালেই এরকম কড়া
আদেশ শুনে মুষড়ে উঠে বর্ষা।
পরিবার কে না জানিয়ে হুট করে
বিয়ে করেছে বলে কি ওর শ্বাশুড়ী
প্রতিশোধ নিচ্ছে?!
,
এদিকে সকালে সারা পাড়া
প্রচার হয় জিহাদ বিয়ে করে
এনেছে,দু একজন করে দেখতেও আসে
নতুন বউ কে।
এসেই যখন দেখে বউ রুটি
সেকছে,কেও কেও দরদি কন্ঠে বলে
উঠে," আ লো,বাসর রাইতের গন্ধই যায়
নাই বউএর শরীর থাইকা তারে দিয়া
এই বেহান বেলা রুটি সেকবার
দিছে, জিহাদের মায়ের আক্কেল
বরাদ্দ গেল নাকি?!!"
আবার কেও কেও খুশিতে
বলে,"বাব্বা, কি কামিলা বউ লো,
বিয়ার সক্কালেই কামে লাইগা
গেছে।জিহাদের পচ্ছন্দ আছে কইতে
হইবো।"
,
কথাগুলি শুনে বর্ষার হৃদয় একবার
হাহাকার করে উঠে আবার স্বস্তির
আবেশও ছড়িয়ে পড়ে।সবাইকে টুল
এগিয়ে দিয়ে বস্তে বলে,ঘোমটা
টেনে সবার সাথে দু-চার কথাও
বলে।
,
বাজার থেকে শ্বশুর আসলে প্লেটে
রুটি আর ভাজি দিয়ে খেতে দেয়
বর্ষা।রুটিতে দুই কামড় দিয়ে বলে,
__"বাহ আইজকার রুটি দেখি অনেক
নরম হইছে জিহাদের মা।তুমিই
বানাইছো নাকি?"
__জিহাদের বউ বানাইছে।
পানি নিয়ে আসার সময় শ্বশুরের মুখে
নিজের প্রশংসা শুনে খুশিতে
সকালে সব কষ্ট ভুলে যায় বর্ষা।
লজ্জা মুখে বর্ষা বলে
__বাবা,আর দুইটা রুটি এনে দেই?
__দেও মা, দেও।তোমার হাতে
ক্ষেমতা আছে কইতে হইবো।
__আম্মাকেও একটা দেই রুটি?
__না তোমার শ্বশুরকেই দেও।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে এলে
জিহাদ আর বর্ষা খেয়ে নেয়।
,
বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ বেড়ে
যাওয়ায় আর জিহাদের চাকরি টা
হওয়ায় ওরা নিজেরাই বিয়ে করে
ফেলে কাওকে না জানিয়ে।
জিহাদ বংশের একমাত্র ছেলে।ওর
উপর সবার বিশ্বাস।ও যা করবে
বাড়ির সবাই তা মেনে নিবে,তাই
সরাসরি বর্ষা কে নিয়ে ও নিজ
বাড়িতেই উঠে।
ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিবে এই
আশা ছিলো সবার।কিন্তু হুট করে
বিয়ে করায় সবাই জিহাদের উপর
রাগ ক্ষোভ করলেও বর্ষা কে দেখে
সবারই পচ্ছন্দ হয়।কিন্তু জিহাদের মা
বর্ষার সাথে এমন করছে কেন?
,
বিয়ের তিনদিন পরেই জিহাদ তার
কর্মক্ষেত্রে চলে যায়।নতুন চাকরি,
ছয়মাস একবছর না হলে বউ কে বাসায়
নিতে পারবে না জিহাদ। তাই
বর্ষা বাড়িতেই থাকে।তিনজনের
সংসার, খুব একটা কাজ নেই রান্না
খাওয়া ছাড়া।
,
বাহির বাড়ির ছোট্ট পালানে
শীতের একদিন জিহাদের মা
কোদাল নিয়ে যায় কোপাতে।
মাটি একটু আলগা করে লাল শাকের
বীজ ছিটিয়ে দিলে সুন্দর শাক
হয়,জিহাদের খুব পচ্ছন্দ লাল শাক।এটুকু
কাজের জন্যে এত দামের কামলা
নেওয়ার কি দরকার। আর শ্বশুর তো
বাজারে দোকান করে।
শ্বাশুড়ী কোপাবে আর বউ ঘরে বসে
থাকবে তা কি হয়,বর্ষাও যায়
কোপাতে।দুই দিন পর বীজ ছিটিয়ে
দেয়।এক সপ্তাহের মধ্যেই শাক
গজিয়ে উঠে,ভাতে মাখলে লাল
টুকটুকে হয়।পালানের আবাদ দেখে
আর পাড়ার লোক বউ এর সুলক্ষণ বিচার
করে। শ্বশুর খায় আর বউ এর প্রশংসা
বাজারময় ছড়ায়।
,
আজ জিহাদ আসবে বাড়িতে।ছোট
মাছ ওর খুব পচ্ছন্দের কিন্তু দেরি
হওয়ায় বাজারে পায়নি।
দুপুরবেলা জাল আর পাতিল নিয়ে
জিহাদের মা ওদের ছোট্ট পুকুরে
যায় মাছ মারতে,সাথে বউ কেও
আসতে বলে।
ইতস্তত করলেও রাগে দুঃখে
বিরক্তিতে বর্ষা পাশের বাড়ির এক
ননদ কে সাথে নিয়ে যায় পুকুর
পাড়ে।মাজা পানি।মাছ মারার
অভ্যাস না থাকলেও জাল দিয়ে দু-
চার খেউন দিতে
মছি,পুটি,খোলসায় ভরে যায় জাল।
ভালোই লাগে বর্ষার, নতুন
অভিজ্ঞতা।
,
বিকেলে মাছগুলি দো-পেয়াজু
করে।রাতে জিহাদ আসে সাথে এক
বন্ধুকে নিয়ে।মাছের দো-পেয়াজু
খেয়ে ওদের যেন তৃপ্তি মিটে না।
যখন শুনে বর্ষায় মাছ মারছে তখন তো
ওর প্রশংসার বন্যা বয়ে যায়
বর্ষা ওর শ্বাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে
বলে,আম্মা আরেকটু ভাত দেই?"
,
আজ জিহাদ বর্ষা কে বাসায় নিয়ে
যাবে।একফাকে জিহাদের মা
বর্ষা কে পাশে বসিয়ে
বলে,মারে,বিয়ের সকাল থেকেই
তোমারে অনেক কষ্ট দিছি,কাজ
করাইছি।তুমি অনেক দুঃখ পাইছো,
আমার উপর রাগ কইরা আছো আমি
জানি।কিন্তু ওই সামান্য কষ্টের পর
যে তুমি সবার প্রশংসার সাগরে
ভাসছো তা কি খেয়াল করছো? ওই
কাজগুলা তুমারে না করাইয়া যদি
আমি করতাম পাড়ার মানুষ বলতো,
"দেখ, জিহাদ কি নবাবজাদী বিয়া
কইরা আনছে।শ্বাশুড়ী কাম করে বউ
বইসা বইসা খায়।"
কও বউ,এই কথা কি আমার সহ্য হইতো?
বাসায় যাইতাছো,কালে ভদ্রে
একদিন আসবা।মাপ কইরা দিও
পারলে তোমার উপর যে অত্যাচার
গুলা করছি।কিন্তু এইডা মনে রাইখো,
সব তোমার জন্যেই করছি।"
,
বর্ষা আচল কামড় দিয়ে কান্না
চেপে রেখে শ্বাশুড়ীর কথা শুনে।
কিন্তু চোখ দিয়ে ঠিকই পানি পড়ে।
সত্যিই তো,ওর যে পাড়াময় এত সুনাম
এই ৮-১০মাসে,সব তো ওর শ্বাশুড়ীর সব
কাজ চোখ মুখ বুঝে সহ্য করে করার
জন্যেই।
,
বর্ষা শ্বাশুড়ীর পা ধরে কেঁদে
বলে,"কি বলছেন আম্মা,আপনিই
আমাকে মাপ করে দিয়েন।আমি
বাসায় যাবো না।আপনি আমাকে
আরো কষ্ট দেন,আমি মাথা পেতে
নেব।"
,
জিহাদের মা কান্নাজড়িত হাসি
দিয়ে বলে,"পাগলি মেয়ে।
জিহাদের খাওয়ায় কষ্ট হয়,তুমি না
গেলে চলবো? আমরা বুড়া মানুষ, দুই-
চার মাস পরপর আমাগো দেখতে
আসলেই চলবো।"
,
বর্ষা জিহাদের সাথে শহরের
বাসায় যাওয়ার পথ ধরে।কিন্তু ওর মন
পড়ে থাকে বিচিত্র এই শ্বাশুড়ীর
উপর। ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠে
সহজ সরল শ্বশুর টার জন্যে যে মা
ছাড়া কথা বলে না....।
,
ইশ সব শ্বাশুড়ীই যদি এমন বিচিত্র
হতো!!!
।
লেখাঃ http://www.facebook.com/venus.vasper