যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নিয়ে ইতোমধ্যে ট্রাইবুনাল থেকে বক্তব্য এসেছে। যে কোন দিনই যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় প্রকাশিত হতে পারে। আওয়ামী সরকার থেকে শুরু করে সাধারন জনগন উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। কি হতে যাচ্ছে রায় এবং আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে? দেলোয়ার শিকদারের অপকর্ম শুধুমাত্র দেলোয়ার নামের সাথে মিল থাকার কারণে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সাঈদীর ফাঁসি হতে যাচ্ছে কিনা? এই নিয়ে নানান জল্পনা কল্পনা উচ্ছাস উৎকন্ঠার স্রোত বয়ে যাচ্ছে আমাদের ধমনীতে।
প্রথমেই বলি, লেখার শিরনাম অনুযায়ী"বাঙালীর হাইকোর্ট দর্শন"। কথাটার অর্থ কি? সোজা বাঙলার এই প্রবাদ প্রায়ই ঘোরপাক খায় মনে। বিষয়টার গভীরে প্রবেশ করলে বোঝা যায় অন্ধের হাতি দর্শন.....
অর্থ্যাৎ হাইকোর্ট নামক কোন আলাদা কোর্টের অস্তিত্ব বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নেই। সুপ্রিম কোর্টের দুটি ডিভিশনের মধ্যে একটি হচ্ছে হাইকোর্ট ডিভিশন। অথচ পত্রিকার বিজ্ঞ সাংবাদিকরা প্রতিনিয়তঃ বাঙালীকে হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচেছন।
সেই সাথে আওয়ামী সরকারও বাঙালীকে হাইকোর্ট দেখিয়ে যাচ্ছেন। আর সরকারের কথায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরাও দারুন উচ্ছাসিত। যেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবনালে সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় দিলেই সরকার বিজয়ের মালায় ভুষিত হবেন!
আইন প্রসঙ্গে কিছু কথা না বললেই নয়। আইন কি? আইন হচ্ছে ক্ষমতাবানের নির্দেশ। ক্ষমতাবানরা যা চাইবেন, আইনও তাই চাইবে। ক্ষমতাই হচ্ছে আইন তৈরীর একক। আইন হচ্ছে একটি বিচারিক কাঠামো। কিন্তু ন্যায় পরায়নতা এবং জাস্টিস ক্ষমতাবানের ইচ্ছা অনিচ্ছার উপরই নির্ভর করে। তাই ইনসাফ বা ন্যায়পরয়নতা শুধুমাত্র আদালতের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে শাসক শ্রেনীর ন্যায় পরায়নতার উপর। তাই রুল অব ল', ইকুইটি এন্ড জাস্টিস এসব শুধুই পুঁথিগত বিদ্যা। পুঁথির মাঝেই যার অবস্থান।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাই আইন, আইনই ক্ষমতা। যদি গোটা বিশ্বের উৎকন্ঠিত মুসলিম জনতাকে হতবাক করে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল জুডিসিয়াল মার্ডারের জাজমেন্ট প্রদান করেন, তাহলেই আওয়ামী সরকারের বিজয় হবে?
যদি রাজপথে জামাত-শিবির সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হন এবং উচ্চ আদালতে আপিল কালীন সময় সেই কার্যকর আন্দোলন সরকারের ভিত নাড়াতে সক্ষম হয়, তাহলে উচ্চ আদালত বাস্তবতা এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। অবশ্য ইতোমধ্যেই সরকারের ভিত কাঁপতে শুরু করেছে।
তাই যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় নিয়ে যারা উৎকন্ঠিত এবং যারা উচ্ছাসিত তাদের জ্ঞাতার্থে বলা প্রয়োজন এই রায়ই শেষ কথা নয়। আরো কথা আছে। আর সেটা সময়ই কথা বলবে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের একান্ত সমর্থক ব্যাতিত সমগ্র বাংলাদেশের পাবলিক সেন্টিমেন্ট জামাত-শিবিরের পক্ষে। আর এটাই সরকারের জন্য শুভ সংবাদ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৪