কুরআনের হুকুম-আহকাম যারা নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে অধ্যয়ন করে না কুরআন কখনই তাদের জন্যে লুক্কায়িত জ্ঞানভাণ্ডার খুলে দেয়না। কুরআনকে যারা নিছক পুথিগত তাত্ত্বিক আলোচনা, একই শব্দের বিভিন্ন অর্থবোধক এক অসাধারন গ্রন্থ, সাহিত্য চর্চা, পৃথিবীর আদি ইতিহাস জানার নির্ভর যোগ্য তথ্যসুত্র কিংবা নিছক সুর করে পড়ার একটি গ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেন, তারা কুরআনের সাথে যথার্থ আচরন করেন না। কুরআন এমন কোন গ্রন্থ নয়। কুরআন একটি জীবন্ত ও সার্বজনীন জীবনবিধান। কুরআনের আইন জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে দিয়ে মানুষ আল্লাহর দরবারে সর্বাত্মক আত্মসমর্পণ করবে- কুরআন এই জন্যেই এসেছে। এ কারনেই আল্লাহ তায়ালা সমগ্র কুরআন একত্রে নাযিল করেননি;বরং প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে অল্প অল্প করে ধাপে ধাপে নাযিল করেছেন।
“আমি কুরআনকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছি;যাতে তুমি ক্রমে ক্রমে তা মানুষের সামনে পড়তে পারো- আর এ কারনেই আমি তা পর পর নাযিল করেছি।”-(সুরা বনী ইসরাইলঃ ১০৬)
কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিমদের কুরআনের উপর বিশ্বাস কম। তারা কিছু মানে কিছু বর্জন করে।
"আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেবার ক্ষমতা নেই।" -সুরা ইউসুফঃ ৪০।
“আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করেনা, তারা কাফের, ফাসেক, যালেম।" -সুরা আল মায়েদা - ৪৪, ৪৫, ৪৭"
“আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজেদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে” -সূরা আল আহযাব: ৩৬
"অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।" -(সূরা আল কাসাসঃ ৫০)
"যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। " -সূরা ত্বোয়া-হাঃ ১২৪
অথচ এত হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও আমরা নিজেরাই আইন তৈরি করছি অথবা ইউরোপ-আমেরিকার মত দেশ গুলো থেকে অনুকরণ করছি। আমরা বলি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। অথচ কুরআন বলে আল্লাহ্ই সকল ক্ষমতার উৎস । আমরা আল্লাহর আইনের উপর ভরসা করতে পারি না।
রাসুল (সাঃ) বিদায় হাজ্জে বলেনঃ আমি তোমাদের কাছে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা এই দুটি জিনিস আঁকড়ে ধরে রাখ তাহলে তোমরা কোনদিন পথভ্রষ্ট হবেনা। তা হচ্ছে-
১। আল্লাহ্র কুরআন।
২। রাসুলের সুন্নাহ।
কিন্তু আল্লাহ্র কুরআন আমরা আঁকড়ে ধরা তো দুরের কথা সারা বছরে একবার ছুঁয়েও দেখি না। তাহলে আমরা বিদ্আতে জড়াবো না তো কারা জড়াবে? কারা... পথভ্রষ্ট হবে?
আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ এটি সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এটি মুত্তাকিদের জন্য পথ প্রদর্শক। [ সুরা বাকারাঃ ২]
তাহলে এই কিতাবই তো আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবার পথ দেখাবে।
অনেকেই ভাবে কুরআন তিলাওয়াত করলেই মনে হয় বিদ্আত থেকে বাচা যাবে। কিন্তু আরবি কুরআন তিলাওয়াত করলে কোনো লাভ হবে না। কুরআনের অর্থ বুঝতে হবে। বুঝতে হবে আল্লাহ্ আমাদের কি বলছেন।
আমরা যে কোনো সমস্যায় পড়লেই বিভিন্ন পীর, ইমাম, মুফতী, মাওলানার কাছে যাই সমাধান জানার জন্য। কিন্তু এটা চিন্তা করি না যে কুরআন পড়লেই তো আমি সব জানতে পারছি।
কুরআন কি শুধু পীর, ইমাম, মুফতী, মাওলানাদের পড়ার জন্য নাজিল হয়েছে?
মনে রাখবেন এই কুরআন-ই হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
##Quran is The Complete Code of Life.##