somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আমাকে আমি।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লক্ষী সোনা, কেমন আছো তুমি? আমিও কি বোকা, এ কেমন প্রশ্ন করছি আমি? মাকে ছেড়ে কেউ কি কখনও ভাল থাকে? তারপরও মনে তীব্র আশা তুমি ভাল আছ। কারণ তোমাকে তো আবার ফিরে আসতে হবে তোমার এই পঁচা মা টার কাছে। তোমাকে ছাড়া যে তোমার এই মা টার কিচ্ছু ভাল লাগেনা। শত ব্যাস্ততার মাঝেও যখনই তোমার কথা মনে পরে তখনি সব কিছু কেমন যেন অর্থহীন মনে হয়। ভালই তো ছিল তার জগৎ কচি কাঁচার দের নিয়ে। তুমি এসে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত তার জগৎটা রাঙ্গিয়ে দিয়ে আবার কোথায় হারিয়ে গেলে? এ কেমন অভিমান তোমার?

কোটি মানুষের এই যান্ত্রিক শহরটাতে যখন প্রথম এলাম তোমার বাবার সাথে তখন দু চোখে তোমাকে নিয়েই অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেইসাথে এটাও বুঝেছিলাম যে তোমার জন্য অনুকূল পরিবেশ এনে দিতে পারার ক্ষমতা অর্জন করে তবেই তোমাকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসা উচিত হবে আমাদের। আর তাই তো তোমার জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ গড়ে দেবার জন্য আমার আর তোমার বাবার সংগ্রাম শুরু হল।সকাল থেকে সন্ধ্যা দুজন দুদিকে ব্যস্ত। সারাদিন পরিশ্রমের পর অফিস থেকে তোমার বাবা যখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসে খুব মায়া লাগে ওকে দেখে। পরেরদিন ভোর হতে না হতেই আবার ছুটি দুজনেই দুই প্রান্তে। এ যেন যান্ত্রিক শহরের দুই যন্ত্রমানবের সংসার। এই যান্ত্রিকতার মাঝে প্রাণের পরশ পাই শুধু ঐ সময়টাতে যে সময় আমি স্কুলে বাচ্চাগুলোর সাথে কাটাই। ওদের নিস্পাপ মুখ, ওদের ভালবাসা,ওদের আধোআধো বুলি, ওদের সরলতা, ওদের দুস্টুমি এসবকিছুই আমাকে তোমার অভাববোধটাকে যেন আরও তীব্রভাবে জানিয়ে দেয়। আর কেনইবা তা হবেনা বল , এই যে যে বাচ্চাগুলো তিনঘন্টা ছায়ার মত আমার কাছে কাছে থাকে, আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা সেই বাচ্চাগুলোই যখন ছুটির পর তাদের মামনিকে দেখে এক দৌড়ে ছুটে যায় তখন তাদের মুখে যে স্বর্গীয় দ্যূতিটি ছড়িয়ে পড়ে সেই আলোয় কতটাই না ম্লান হয়ে যাই এই আমি, তাদের অতি সাধারন একজন মিস।

আর পারলামনা। সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে আনার। ভাবলাম, খুব অর্থ না থাক ভালবাসার তো কমতি নেই আমাদের তাই দিয়েই না হয় পূর্ণ করব তোমার সকল অপূর্ণতা। কিন্তু তোমার এই হতভাগ্য মা তার কথা রাখতে পারেনি। তার ভালবাসায় হয়ত কোথাও কমতি থেকে গিয়েছিল তাই তো সে তোমাকে ধরে রাখতে পারেনি। তাই তো তুমি অভিমান করে চলে গেলে। আচছা তোমার কি এই মনে করে অভিমান হয়েছিল যে তোমার মা তোমার চেয়ে তার স্কুলের বাচ্চাদের বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলছে? লক্ষী সোনা, এমন মনে করোনা। কি করব বল তোমার অনভিগ্গ মা যে ভিষণ বোকা ।ও যে বুঝতেই পারেনি তোমাকে নিয়ে ওর বাচ্চাদের সাথে ছুটোছুটি করাটা একদম ঠিক নয়। যখন বুঝতে পারলাম তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তীব্র ব্যাথায় নীল হতে হতে বুঝতে পারলাম আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ আজ পেয়েও হারালাম। এতদিনের তিল তিল করে গড়া স্বপ্নের আজ মৃত্যু হতে চলেছে।পরম করুণাময়ের কাছে অনেক কাঁদলাম, প্রার্থণা করলাম,ক্ষমা চাইলাম তোমার কাছে বারবার কিন্তু তুমি ফিরলেনা কিছুতেই। একরাশ অভিমান নিয়ে তোমার এই হতভাগ্য মা কে পিছনে ফেলে রেখে তুমি হারিয়ে গেলে কোন অজানা এক জগতে।

জানি আমি তোমাকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি, এক ব্যর্থ মা আমি, তাই তুমি অভিমান করে চলে গেছ । কিন্তু সোনা, তোমার বাবার কথা ভেবে তুমি আর একবার ফিরে আসো আমাদের কাছে। ওর তো কোন দোষ নেই। তুমি আসলে বুঝতে পারবে পৃথিবীর শ্রেস্ঠ বাবারা কেমন হয়। তুমি আসলে আমি তোমার জন্য সব ছেড়ে দিব, জানি কস্ট হবে তারপরও দরকার হলে তোমার জন্য আমি স্কুল ছেড়ে দিব, নয়মাস বিছানায় থাকব, কোথাও বের হবনা তবুও তুমি আমার কাছে এসো। এসো কোনও রাজপুত্তুর বা রাজকন্যার বেশে। তখন কোন একদিন স্কুল ছুটির পর আমি দাঁড়িয়ে থাকব গেটের বাইরে আর তুমি আমাকে দেখে এক স্বর্গীয় দ্যূতি ছড়িয়ে এক গাল হেসে দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার কোলে। আমি তো দিন গুনে চলেছি সেই দিনটির জন্যই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×