somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঘের ডেরায় -২ - তাহসিন শাহেদ

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাঘের ডেরায় -১ - তাহসিন শাহেদ
বাঘের ডেরায় -৩ - তাহসিন শাহেদ


দ্বিতীয় দিনঃ


দিনের প্রথম সূর্যের রঙিন আভা তখন সবে ছড়িয়েছে দিগন্তে। তাঁবুর ভেতর থেকে শুনতে পাচ্ছি কথাবার্তার আওয়াজ। ঘুম আমারও ভেঙেছে কিন্তু চোখে মুখে তখনও ঘুমের রেশ। কিন্তু কিছু করার নেই। একটু ফ্রেশ হয়েই উঠে বসলাম লঞ্চের সাথে করে আনা ট্রলারে। ট্রলারের গন্তব্য নদীর পাশের ছোটো একটি খাঁড়ি ধরে কিছুদূর এগিয়ে একটি জেটিতে। নাম যার কচিখালি। দু’দফায় ট্রলার আমাদের সকলকে পোঁছে দিল এখানে। সেদিনের মতো শুরু হল আমাদের অ্যাডভেঞ্চার দ্যা সুন্দরবন। দুপাশের গাছপালা পেছনে ফেলে, কিছুদূর গিয়ে মসৃণ ইট বিছানো রাস্তা ছেড়ে পুরো দল যখন ঢুকে গেল বনের একটু ভিতরে তখন এর চারপাশ জুড়ে এক অদ্ভুত নিঃস্তব্ধতা।
যেখানে হয়তো রাতভর চলেছে জীবনমরণ খেলা। হয়তো কোন বাঘের অতর্কিত আক্রমনে ছিন্নভিন্ন হয়েছে কোনও হরিণীর নরম শরীর। সেই রোমাঞ্চে ভরা জঙ্গলের একটু সামনে যেতেই চোখে পড়তে পারে নানা পশু পাখির। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে? দেখা হয়ে যেতে পারে ‘জঙ্গলের রাজার’ সাথে। না-না টারজান বা মুগলির কথা বলছি না। এনার নাম ‘বাঘবাবাজি’। আমাদের ভাগ্য অবশ্য এতো সুপ্রসন্ন ছিল না। তাই বাঘবাবাজির সাথে দেখা না করেই আমাদের ফিরতে হল লঞ্চে। লুচি, হালুয়া ও বুটের ডালের সাথে গিলা কলিজা দিয়ে সম্পন্ন হল আমাদের সকালের নাস্তা।



আমাদের পরবর্তী গন্তব্য জামতলা ও কটকা বীচ। প্রায় ১১ টা নাগাদ আমরা পোঁছে গেলাম জামতলা বীচে যাওয়ার পথে যে ওয়াচ টাওয়ারটি আছে সেখানে। সেখান থেকে সবাই সারি বেঁধে সোজা বীচে। আর পুরো রাস্তা জুড়ে সকলের সন্ধানী চোখ খুঁজে বেড়িয়েছে সেই বনের রাজাকে। সামনে হঠাৎ চিল্লাচিল্লি শুনতে পেলাম। বুকটা ধুক করে উঠলো! বাঘ নাকি? আমরা যারা পিছনে ছিলাম তারা সবাই তাড়াতাড়ি পা চালালাম। ধুর! কিসের বাঘ। সামনে হঠাৎ করেই উদয় হল জামতলা বীচ। লাফালাফি আর হইহুল্লরের কারণ এটাই। বীচে ঘণ্টা দেড়েক চমৎকার একটা সময় কাটিয়ে আমরা ফিরতি পথ ধরলাম।

এরই মধ্যে বেশ ক্ষুধা লেগেছে। আসার সময় দেখে এসেছি বড় বড় চিংড়ি মাছের দোপেয়াজার আয়োজন চলছে। দুপুরের খাবার সেরে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নিয়ে প্রায় ৪ টার দিকে আমরা ট্রলার নিয়ে বের হলাম কটকা জেটির উদ্দেশে। আগের মতই দু’দফায় আমরা সবাই কটকা জেটিতে এসে পোঁছালাম। এখানে আমরা প্রচুর হরিণের দেখা পেলাম। বোনাস হিসেবে পেলাম বেশ কিছু বানর। বাঘবাজির ক্ষেত্রে বানরের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে জঙ্গলের জীবনযাত্রায়। কারণ, গাছের উঁচু ডাল থেকে ওরা লক্ষ রাখে বাঘের আনাগোনা। আর তার সামান্য আভাস পেলেই ওরা সাবধান করে দেবে অন্যদের। এখানেও আমরা বাঘের দেখা পেলাম না ঠিকই কিন্তু কটকা বীচের সূর্যাস্ত এক কথায় অসাধারণ। সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ আমরা ফিরে এলাম লঞ্চে। এসেই দেখি বার-বি-কিউ এর আয়োজন চলছে পুরোদমে।

টুটু ভাই নিজে সবকিছু দেখাশুনা করছেন। ৯০ জনের জন্য মুরগি ৬০ টা ! আমি নিশ্চিত, মুরগিদের কোন আদালত থেকে থাকলে এই মুরগি হত্যার অপরাধে টুটু ভাইয়ের ফাঁসি হয়ে যেত এতদিনে! তৈরি হল মুরগির বার-বি-কিউ, পোলাও আর টুটু ভাইয়ের স্পেশাল সালাদ। যেই সালাদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি দিনের পর দিন, এক বার-বি-কিউ থেকে আর এক বার-বি-কিউ পর্যন্ত। খাওয়াটা কেমন হল তা না হয় নাই বললাম কিন্তু খাবার নিয়ে অনেকেই একটা অভিযোগ করলেন। আর তা হল টুটু ভাই নাকি সবাইকে খাইয়ে খাইয়ে মোটা করে ফেলার গভীর এক ষড়যন্ত্র করেছেন।



রাতে খাবার পরে জমিয়ে একটা আড্ডা দিলাম সবাই মিলে। আস্তে আস্তে আসর ভাঙল। তখন ঘড়ির কাঁটা প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই করছে। সবাই ঘুমাতে চলে গেলে আমি গিয়ে বসলাম ডেকের মাথায়। নদীর স্রোতের কূল কূল ধ্বনি কানে আসতে লাগলো। সেই অবিরাম কুলু কুলু স্রোতে মিশে থাকে অরণ্য-ভাললাগা। নজর চলে যায় নদীর দু’ধারে কালো জমাট বাঁধা জঙ্গলে, যা ক্রমশ জেগে ওঠে নিষ্ঠুর পাশবতায়- খাদ্য ও খাদকের আদি অকৃত্তিম নেশার রক্ত-মন্ত্রে। এর এক মাত্র সাক্ষী হয়ে থাকে শুধু নীলচে আকাশের ওই তামাটে পূর্ণিমার চাঁদ। সমস্ত প্রকৃতি যেন এক অধরা রহসসের মাধুরীতে গাঁথা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×