বাঘের ডেরায় -২ - তাহসিন শাহেদ
শেষের দিনের গল্পঃ
আজকের সকালটা এক কথায় অসাধারণ। আমাদের লঞ্চ নোঙর করেছে হাড়বারিয়ার কাছে। লঞ্চ থেকে হারবারিয়া জেটি দেখা যায়। মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে কোনরকমে চা-বিস্কুট মুখে দিয়েই রওনা হলাম হারবারিয়ার উদ্দেশে।
পেছন থেকে মন পাগল করা খিচুড়ির সুগন্ধ আমাদের ডাকতে লাগলো বার বার। জেটি পার হয়েই সামনে পরল একটা মিঠা পানির পুকুর। পুকুরে অসংখ্য শাপলার মেলা। তারা যেন সারাক্ষণ খেলা করছে ভ্রমর আর প্রজাপতির সাথে।
এখানে বাংলাদেশ বন বিভাগের তৈরি করা করা একটা ট্র্যাক আছে। মাঝে একটা ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ারের উপর থেকে সবুজ গাছপালা, নিস্তব্ধ পরিবেশ আমাদের মনকে ভাবুক করে তুলছিল বার বার। এরই মধ্যে বারোটা বেজে গেছে। না, আমাদের নয়, ঘড়ির।
আমি, মনা ভাই, প্রিন্স ভাই, অদিতি আপু ও সুমন ছাড়া হারবারিয়াতে কোন পর্যটক এই মুহূর্তে নেই। আমরা সবাই ওয়াচ টাওয়ারে বসে প্রকৃতি গিলছি। অদ্ভুত এক ভাললাগায় ভরে গেছে মনের প্রতিটি পরত। সজীব ভাই ওয়াকি টকির মাধ্যমে আমাদের জেটিতে ফিরতে অনুরোধ জানালেন। আমরা জেটি হয়ে সবাই মিলে ফিরে এলাম লঞ্চে।
লঞ্চ রওনা হল করমজলের উদ্ধেশে। এখানে কুমিরের বেশ বড় একটি প্রোজেক্ট রয়েছে। বুড়ো কুমির, বাচ্চা কুমির এমনকি গুড়া কুমিরেরও দেখা মিলবে এখানে। এখানকার বাঁদরগুলো এতোই বাঁদর যে বাঁদরামি কত প্রকার ও কি কি সংজ্ঞা সহ উদাহরণ এরা দিয়ে দেয় অবলীলায়। আর ভাবখানা এমন যে আমরা বাঁদর থেকে মানুষ হয়ে কি বোকামিটাই না করেছি। তা না হলে তাদের মতো আমরাও বাঁদরামি করতে পারতাম অবলীলায়। যারা ঝটিকা অভিযানে সুন্দরবন যেতে চান, তারা করমজল মিস করবেন না। প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক করমজলে কাটিয়ে আমরা ফিরে এলাম লঞ্চে। লঞ্চ ছুটে চলেছে খুলনা ঘাটের দিকে। ঐ দূরে মংলা বন্দর। বিদায় সুন্দরবন। আবার কোন একদিন নিশ্চয় ফিরে আসব তোমার কোলে। কোন অরণ্য প্রেমী কি উপেক্ষা করতে পারে অরণ্যর ডাক ?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:১৮