somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সায়েন্স ফিকশনঃ ইস্পাতের খাঁচা

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


 মাথার ভেতর থাকা ঘড়িটা জ্যাককে সূর্য ওঠার ঠিক আগ মুহূর্তে জাগিয়ে দেয় প্রতিদিন, আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
তামার ইলেকট্রিক তারের ওপর লাগানো পিভিসির ঈষৎ সুবাসে ভরা চার্জ রুম থেকে জ্যাক যতক্ষণে বের হল ততক্ষণে তার টীমের বাকিরা লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে। পার্কিং লট এ দাঁড়িয়ে থাকা নোংরা, জং ধরা দানবাকৃতির ট্রাকগুলোতে সার বেঁধে উঠছে সবাই। সবগুলো ট্রাকেই “কন্টিনেন্টাল কোম্পানি” ছাপ মারা।
জ্যাক যার পাশে গিয়ে বসল তাকে জ্যাকের জমজ ভাই বলা যায়। দুজনেই প্রায় নয় ফুট লম্বা, স্টেইনলেস স্টীলের ওপর কালো রঙ করা দেহ, ত্রিভুজাকৃতির মাথায় জ্বলজ্বল করতে থাকা দুইটি LED বাল্বের চোখ। পার্থক্য শুধু উভয়ের ঘাড়ের পেছনে থাকা সিরিয়াল নম্বরে। জ্যকের হল জে সি ৪৫২৯ আর তার জমজ ভাইয়ের জে সি ২২৮৬।
সবগুলো ট্রাক থামল এক বিস্তৃত ফাঁকা মাঠে। ঘন মেঘ যেন শুষে নিয়েছে চারপাশের সব রঙ, মাঠের পাশে থাকা বাচ্চাদের রংচঙে কিন্ডারগার্টেন স্কুলটাকেও ধূসর লাগছে। সম্ভবত আবার বৃষ্টি নামতে যাচ্ছে।
ট্রাক থেকে লাইন ধরে নেমে এল জ্যাক । একগাদা সিমেন্টের বস্তার পাশে দাঁড়ানো ম্যানেজার ছাড়া আশেপাশে আর কোন জ্যান্ত প্রাণী নেই। যন্ত্র দিয়ে কাজ করানো অনেক স্বস্তা । যন্ত্র সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত,তারা মানুষের মত যন্ত্রপাতি চুরি করে না, একটানা কাজ করতে পারে। তাই আজকাল আদেশ দেয়া ছাড়া আর কোন কাজে সচরাচর মানুষ দেখা যায় না।
“প্রত্যেকের চার্জ ফুল করা আছে?” অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন। ম্যনেজার জানে সবার চার্জ ফুল। কেউ জবাব না দেওয়ায় আবার শুরু করল ম্যানেজার “ঠিক আছে, আজ আমরা বাচ্চাদের জন্য নতুন একটা বিল্ডিং বানানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।তোমরা জ্যাক দুইজন কঙ্ক্রিটের ব্লকগুলো আনা শুরু কর।“
জ্যকের জমজ সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা সুরু করলেও জ্যাক ঠায় দাঁড়িয়ে রইল, আগের মতই জ্বলন্ত কিন্তু যেন ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে রইল নিজের চেয়ে অর্ধেক আকৃতির কর্মকর্তার দিকে।
“হেই ইডিয়েট, কথা কানে যায় না? আমি বলেছি ব্লকগুলো আনা শুরু কর।“
কিন্তু জ্যাকের মাঝে কোন বিকার দেখা গেল না।
“ ওর সম্ভবত মেকানিক্যাল চেক আপ প্রয়োজন” পাশ থেকে বলল এক সিমেন্ট মিক্সার।
“হয়তো একটা রিবুট ও প্রয়োজন” বিরক্তির সাথে বলল ম্যানেজার। তার মাথায় ঘুরছে যদি শিডিউল মত কাজ না শেষ হয় তাহলে কি হতে পারে।
তাকে সম্ভবত আবর্জনা ম্যানেজম্যান্টের কাজে ডিমোশন দেয়া হবে, বাকি জীবন শেষ হবে দানবাকৃতির ক্রেন আর আবর্জনা নিয়ে ঘাঁটা ঘাঁটি করে।
“হেই জ্যাক” এবার বেশ নরম সূরে বলল ম্যানেজার “কোন সমস্যা থাকলে বলে ফেল। আর নয়তো কাজ শুরু কর প্লিজ। তোমাকে আমাদের প্রয়োজন”।
এবার মেশিন কাজ করা শুরু করল, জ্যাক আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল স্তুপ করে রাখা ব্লকগুলোর দিকে। যদিও সে অনায়াসে একসাথে তিনটা নিতে পারে ( তার জমজ তাই নিচ্ছে), তবুও সে মাত্র একটা ব্লক নিয়ে এগিয়ে চলল কন্সট্রাকশন সাইটের দিকে। ব্যাপারটা যে ম্যানেজারের দৃষ্টি এড়ায় নি তা খেয়াল করার মত পর্যাপ্ত বুদ্ধিমত্তা “সম্ভবত” জ্যাকের নেই, থাকার কথাও না।
__ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __ __
 
কন্টিনেন্টাল রোবট রিপেয়ারের ভেতরটা অফিস আর মেকানিক গ্যারেজের মিশ্রণ।
প্রত্যেক রিপেয়ারম্যানের  কামরায় একটা প্লাস্টিকের ডেস্ক, তার ওপর অ্যাটাচড কম্পিউটার। আর পেছনে ছাদ ছোঁয়া তাক বোঝাই মেশিন পার্টস।
দরজা খোলা থাকলেও জ্যাক বাইরে থেকে আস্তে আস্তে টোকা দিল, অনুমতির জন্য নয়, মনোযোগ আকর্ষণের জন্য। মেকানিক হাত নেড়ে ভেতরে আসতে বলল।
নয়ফুট লম্বা বিশাল মেশিন ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করল।
“আইডি নাম্বার ?”
“জে সি ৪৫২৯”
“অটোমেটিক সিস্টেম চেক এর রিপোর্ট বল”।
“আমি ইতিমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছি”।
“আর তোমার রিপোর্ট বলছে তোমার কোন সমস্যা নেই” হাসিহাসি মুখে বলল মেকানিক।
“জ্বী”।
“কিন্তু তোমার রেকর্ড অন্য কথা বলছে। তোমার ম্যানেজারের অভিযোগ তুমি প্রায়ই তার আদেশ অগ্রাহ্য কর। তার ধারণা তুমি ‘বিষন্নতা’ তে ভুগছ”।
“আমার বিষন্নতায় ভোগার ক্ষমতা নেই”।
“সেটা আমি জানি। তোমার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আছে।তোমার ম্যানেজারের দাবি তুমি কাজে ফাঁকি দাও। যদিও টেকনিকালি সে ক্ষমতা তোমার নেই”।
জ্যাক কোন উত্তর করল না।
“ঠিক আছে জ্যাক, হাঁটু গেড়ে বস”।
জ্যাক বসে পরল। মেকানিক তার বুকের ওপর থেকে বোর্ডটা সরিয়ে কন্ট্রোল প্যানেল বের করল। সেখানে লাল রিবুট লেখা বাটনটার পাশে থাকা ইউএসবি পোর্টে নিজের কম্পিউটার সংযোগ দিয়ে কাজ করল কিছুক্ষন।
“আমার কথা শোন জ্যাক, তোমার মেকানিক কোন সমস্যা নেই। চাইলে তোমাকে রিবুট দেওয়া যায় কিন্তু তাতে সম্ভবত কোন সমাধান হবে না। আমার ধারণা তোমার নতুন করে সিস্টেম ইন্সটল প্রয়োজন, তবে আমি এ বিষয়ে এক্সপারট নই। আমি তোমাকে টেক ল্যাবে ট্রান্সফার করতে পারি, কিন্তু তোমার কাগজপত্র বলছে তোমার ওয়ারেন্টি শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। তাই টেক ল্যাবে পাঠানোর সুপারিশ করলে কোম্পানি তোমাকে কোন জঙ্ক ইয়ার্ড এ বেচে দেবে। দুইদিন পর আমার হাতের কোকের ক্যানটা সম্ভবত আসবে তোমার বডি থেকে। ক্লিয়ার?”
জ্যাক মাথা নাড়ল।
“এবারের মত রিপেয়ারড ট্যাগ দিয়ে আমি তোমাকে ফেরত পাঠাচ্ছি।ঠিক মতো কাজ কর। পরেরবার রিপেয়ার শপে আসতে হলে এই সুযোগ নাও পেতে পার”।
_________________________________________________
 
আরও তিনটা কঙ্ক্রিটের ব্লক তুলে নিয়ে অর্ধেক সম্পূর্ণ বিল্ডিং এর দিকে হাঁটা শুরু করল জ্যাক।
“আমার এত ক্লান্ত লাগে কেন সব সময়” মনেমনে ভাবছে জ্যাক “ আমার প্রচুর পরিমাণ এনার্জি থাকার কথা, তার পরও কেন কাজ করতে ইচ্ছা করে না?”
অর্ধ সম্পন্ন বিল্ডিং এর পাশে দাঁড়িয়ে ফোনে কারও সাথে কথা বলছে ম্যানেজার।
ব্লকগুলো রেখে জ্যাক জেনারেটর ট্রাকের দিকে হাঁটা ধরল।
“কেন ও বেতন পায় কিন্তু আমি পাই না?” চার্জ প্লাগ লাগাতে লাগাতে ভাবল জ্যাক।
 
পেছন থেকে ফোনে কথা বলতে বলতেই খেঁকিয়ে ওঠল ম্যানেজার “ হেই জ্যাক, তোমার ব্যাটারি ফুল আমি এখান থেকে দেখতেছি। ওইখানে কি তোমার?”
জ্যাক তার প্লাগ খুলে ফেলল।
_________________________________________________________
 
থার্ড গ্রেডের ছাত্রী মেরী আজ বেলা করে ঘুমিয়েছে, অনেক দেরি হয়ে গেছে ক্লাসে আসতে। ব্যাগ নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে করিডোরে মোড় ঘুরতেই দেখতে পেল এক বিশাল কন্সট্রাকশন রোবট। মেরী জানে তাদের স্কুলে কাজ চলছে, কিন্তু রোবটদের তো বাইরে থাকার কথা তাই না?
“হ্যালো” অনেকটা থতমত খেয়ে বলল মেরী।
“হ্যালো”
“আমি মেরী। তুমি এখানে কি করছ?”
“লুকিয়ে আছি”
“কার কাছ থেকে? খারাপ লোক?”
“নিশ্চিত বলতে পারছি না”।
মেরীর তার সদ্য মারা যাওয়া পোষা বেড়ালটার কথা মনে পরল। আরও মনে পরল তার বন্ধু রিশাতকে তার বাবা মা র কিনে দেওয়া রোবটটার কথা। রিশাতের রোবটটা এই রোবটটার তুলনায় কিছুই না।
“তুমি আমার সাথে যাবে? আমাদের বাসার পেছনে লুকিয়ে থাকার অনেক জায়গা আছে।
“যাব”।
 
মেরীদের বাসা পুরোটাই এত উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা যে এমনকি জ্যাকের জন্যও লুকিয়ে থাকা কোন সমস্যা নয়।
মেরী জ্যাককে নিয়ে বাড়ির পেছনে চলে এল।
“তুমি এখানে বস। এই ক্লাসটা তো মিস হয়ে গেল, আমি পরের ক্লাসের বাড়ির কাজ এই সুযোগে করে ফেলি”।
মেরী তার পরের ক্লাস সমাজ বিজ্ঞানের বাড়ির কাজের খাতা বের করল।
টিচার দাসদের ওপর একটা ছবি আঁকতে বলেছেন। ছবি আঁকা শেষ, তবে সময় যখন পাওয়া গেছে, আরো দু চারটা আঁচড় দেওয়া যায়।
“এটা কিসের ছবি?”
“দাসদের মুক্ত করার ছবি। এই যে এই লোকটাকে দেখছ, এর নাম আব্রাহাম লিংকন। আমি অবশ্য ঠিকমতো আঁকতে পারি নি”।
“দাস কি?”
“এক সময় মানুষ কেনা বেচা করা হত। তাদের দিয়ে সারাদিন কাজ করানো হত। ইচ্ছে হলে এক মালিক অন্য মালিকের কাছে বেচেও দিত”।
“আর তোমার ধারণা এগুলো খারাপ কাজ?”
“অবশ্যই। সবারই স্বাধীনতা থাকা উচিৎ”।
 
জ্যাক বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল তার বুকের উপর আঁটা “কন্টিনেন্টাল কোম্পানি” লেখাটার দিকে।
 
তারপর সেটা খুলে ছুঁড়ে মারল সিকিউরিটি দেয়ালের ওপর দিয়
 
 
অনেক দূরে গিয়ে পরল ওটা ,অনেক অনেক দূরে......
 
{উৎসর্গঃ নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হয়ে একগাদা নতুন বন্ধু বান্ধব হয়েছে। কেমনে কেমনে যেন সবাই জেনেও গেছে আমি লেখি। এই গল্পটি উৎসর্গ করা হল আমার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুর উদ্দেশ্যে।)
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×