somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংবিধান এবং নাগরিক অধিকার

০৫ ই অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরের শেষের দিকে দেশের রাজনৈতিক অসহিঞ্চুতা তখন চরমে পৌঁছেছে। দিনেরবেলা ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদল উভয়ের শক্তির মহরা এবং শেষ বিকেলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অত্যন্ত জাকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্ধ্যের দিকে বাসা থেকে বের হলাম, উদ্দেশ্য সংবিধানের সর্বশেষ সংস্করণটি ক্রয় করা। পুরো শহর থমথম করছে। দোকানপাট বেশীরভাগই বন্ধ। দু'একজন অতি সাহসী ব্যবসায়ী দোকান খুলেছে তবে শাটার অর্ধেকেরও বেশী নামানো। স্বল্প সময়ের নোটিশে তালা লাগিয়ে দৌড় দেয়ার জন্যে প্রস্তুত।

বইয়ের মার্কেটে গিয়ে দেখি অনেক দোকানই খোলা রয়েছে। কিন্তু কোন দোকানেই বাংলাদেশের সংবিধান পাচ্ছি না। অনেক ঘুরে অবশেষে একটা বড় দোকানের সামনে গিয়ে হাজির হলাম। দোকানের একটা বাদে সব শাটার বন্ধ। একটি ১৮/২০ বছরের ছেলে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। "বাংলাদেশের সংবিধান আছে?" ছেলেটির কাছে জানতে চাইলাম। মাথা নেড়ে জানিয়ে দিলো নেই। কি মনে হতে দোকানের ভিতরে ঢুকে পুনরায় জীজ্ঞেস করলাম বাংলাদেশের সংবিধান আছে কিনা। একটি ছেলে জানালো পকেট সাইজেরটি আছে। বললাম, তাতেই হবে। ৫০ টাকা থেকে দর কষাকষি করে ৪৫ টাকায় কিনে পকেটে পুরলাম গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। এ সময় দোকানের সামনের পাহারারত ছেলেটি ভেতরে এসে অন্য ছেলেটিকে বললো, সংবিধান বিক্রি করেছ কেন? "অমুক" ভাই যে কারো কাছে সংবিধান বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। ছেলেটিকে বললাম, "দেখ সংবিধান লুকিয়ে রাখার কোন জিনিষ নয়, এটা সকল নাগরিকের অবশ্য পাঠ্য।"

সংবিধান আসলে কি?
সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি এবং নির্দেশনাসমূহ। রাষ্ট্র কি নামে পরিচিত হবে, এর সীমানা, পতাকা, জাতীয় সংগীত, প্রতীক, নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে সংসদ, আইন, বানিজ্য, যুদ্ধ সবকিছুর নির্দেশনা রয়েছে সংবিধানে। সংবিধানই হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কখনো যদি এমন কোন আইন প্রণয়ন করা হয় যা সংবিধানের যে কোন অনুচ্ছেদের পরিপন্থী কিংবা সাংঘর্ষিক, সেক্ষেত্রে নতুন আইনটি বাতিল বলে গন্য হবে এবং সংবিধানের নির্দেশ বহাল থাকবে।

সংবিধানের একদম শুরুতেই বলা হয়েছে,

"বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
(দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে)

আমরা, বাংলাদেশের জনগন, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষনা করিয়া জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।"

উপরোক্ত ঘোষনার মাধ্যমে সকল প্রকারের রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র আর পরিবারতন্ত্রকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে একথাই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, এই দেশ প্রতিটি বাংলাদেশী নাগরিকের নিজস্ব¡ সম্পদ। বলা হয়েছেঃ আমরা, বাংলাদেশের জনগন যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি কিংবা দল নয়। সংবিধান শুরুতেই ব্যক্তি আর দলপুজার পথকে নির্মূল করে দিয়েছে। অথচ গত ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এদেশে দল আর ব্যক্তির আরাধনা অঘোষিত আইন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জনগনের নিকট থেকে এই সংবিধান শুধুমাত্র একারনেই দুরে রাখা হচেছ যে, সাধারন মানুষ এটি পাঠ করলে তারা নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠবে। আর কেউ যদি একবার নিজ অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠে তবে সেই অধিকার থেকে তাকে আর বেশীদিন বঞ্চিত রাখা সম্ভব নয়।

সংবিধানে নাগরিকের জন্যে কিছু মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। যা কখনোই কোন আইন কিংবা আদালতের নির্দেশ দ্বারা রহিত করা যাবে না। সাধারন মানুষ জানেনা রাষ্ট্র কর্তৃক কি কি অধিকার এবং সম্মান তাদের প্রাপ্য। এই অজ্ঞতার সুযোগে রাজনীতিবীদ নামের একশ্রেনীর লম্পট সাধারন মানুষকে ভেড়ার মতো যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে পরিচালিত করছে। অথচ প্রতিটি নাগরিকের উচিত সংবিধানের নাগরিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে অবহিত হওয়া। তবেই কেবলমাত্র এর প্রয়োগ এবং অধিকার রক্ষার পথ উন্মুক্ত হবে।

ঢাকা থেকে
০৫.১০.০৭
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৬:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×