somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিদ্রা ভেঙ্গে জেগে ওঠো হে স্বপ্নচারী আবেগী জাতি

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৭ ভোর ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে সাধারন মানুষ এখন দিশেহারা। এমন সময়ে দেশে কোন রাজনৈতিক সরকার থাকলে বিরোধীদল নিঃসন্দেহে ব্যর্থতার দাবী তুলে সরকারের পদত্যাগের জন্যে চিত্কার চেঁচামেচি শুরু করে দিতো। সভা-সমাবেশে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দ্রব্যমূল্য কমানোর জন্যে অনেকেরই উচ্চ কণ্ঠস্বর শোনা যেত।

খালেদা এবং হাসিনা, দুজনেই এখন কারাগারে। বহু প্রাক্তন মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য আর ব্যবসায়ী এখন রাজবন্দী। এখন প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের প্রধান ইস্যূ দুই নেত্রীর মুক্তি। এটাকে আন্দোলনের প্রধান ইস্যূ বলছি এই কারনে যে, সুযোগ থাকলে দুটো দলই নির্দ্বিধায় কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করতো। সেই সুযোগ না থাকার কারনে স্রেফ বিবৃতির মাধ্যমে তাদেরকে আন্দোলনের সাধ মেটাতে হচ্ছে। দুটো প্রধান দলই এখন দুই নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি যথেষ্ট সোচ্চার।

একটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম এবং প্রধান কাজ হওয়া উচিত দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্যে কাজ করা। এরপরে দলীয় স্বার্থ সংরক্ষনের দিকে দৃষ্টিপাত করা। দেশের দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর যথেষ্ট মৌনতা লক্ষনীয়। তাদের প্রধান দাবীগুলো হচ্ছে দুই নেত্রীর মুক্তি এবং যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠান। বিষয়টি একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে একটি ধ্রুব সত্যকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো ভালোভাবেই জানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অস্থায়ী সরকার। এদের অবস্থানের সময়টি একটু দীর্ঘ হলেও এদেরকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে যদি না কোন অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা ঘটে। আপাতত দুর্ঘটনা ঘটার তেমন কোন সম্ভাবনা না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো ধরে নিয়েছে যে নির্বাচন হবেই। নির্বাচন মানেই ক্ষমতায় যেতে পারার একটা সম্ভাবনা। আর এদেশে ক্ষমতায় যেতে পারা মানে স্বর্গের ছোটখাটো সংস্করণ প্রাপ্তি। অতএব, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারনে সাধারন মানুষ বাঁচুক আর মরুক রাজনৈতিক দলগুলোর সেদিকে চোখ ফেরানোর সময় কোথায়? এ মূহুর্তে নির্বাচিত কোন সরকার ক্ষমতায় থাকলে দ্রব্যমূল্যকে হয়তো চমত্কার একটি ইস্যূ করা যেতো ক্ষমতাসীনদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করার ক্ষেত্রে। যেহেতু রাজনৈতিক কোন দল ক্ষমতায় নেই অতএব দ্রব্যমূল্য নিয়ে রাজনীতিকদের তেমন কোন মাথাব্যাথাও নেই।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য সবসময় একটাই, যে কোনভাবে ক্ষমতায় যেতে পারা এবং যতটা বেশী সময় ধরে সম্ভব ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা। যদিও রাজনীতিবিদদের আজীবনের দাবী তারা দেশের সাধারন মানুষের সুখ-শানি-র জন্যেই আন্দোলন করে থাকেন। রিকশা, টেমপু, বাস, প্রাইভেটকার পুড়িয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছুঁড়ে, দেশের সমপদ ধ্বংস করে সাধারন মানুষের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেন। রাজনীতিবিদদের গলাবাজী কখনো থামবে না। কারন রাজনীতিকরা রামনির্লজ্জ।

আমাদেরই সমগোত্রীয় একদল আমাদের অধিকার রক্ষার নামে আমাদেরকেই শোষন করছে। মরাখেকো শকুনের মতো আমাদের দারিদ্রতা, দুঃখ আর স্বজন হারানোর কষ্টকে পুঁজি বানিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা করছে। এতোদিন আমরা সীমাহীন প্রত্যাশা বুকে নিয়ে স্বপ্নাতুর চোখে এদের পানে চেয়ে প্রাচূর্যের স্বপ্ন দেখেছি। বাস্তবের রূঢ় কষাঘাতে আজ আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। প্রয়াত বীরদের নামোচ্চারনে আমরা মোহগ্রস্থ হয়েছিলাম। আমাদের মোহভঙ্গ হয়েছে। আমরা জেনে গেছি, এতোদিন একদল হিংস্র শ্বাপদ ড্রাকুলার মতো করে আমাদের রক্ত চুষে খেয়েছে সুনিপুন দক্ষতায়।

আমাদের সুখনিদ্রা ভঙ্গ হয়েছে। দুঃস্বপ্ন শেষে আমরা জেগে উঠেছি। যদিও পূনরায় ঘুমিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে। আমরা কি সংস্কারের কথা বলেছিলাম? নাকি আমরা সংস্কারের কথা বলছি? শকুনেরা নিজেদের গা বাঁচাতে সংস্কার চায়। আমরা তো তিনবেলা পেটপুরে খাওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝিনা। আমাদের খাবার আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কষ্টে, দুঃখে, অভিমানে আমরা কাঁদছি, আমাদের জন্যে কেউই কাঁদছেনা। শকুনেরা কি আমাদের জন্যে কাঁদবে? আমাদের দুঃখ ওদের স্বার্থসিদ্ধিতে কাজে লাগলে তবেই ওরা হয়তো কাঁদবে। তাহলে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্যে কে কথা বলবে? শোকে-দুঃখে কে আমাদের পাশে এসে শান্তনা দেবে? সত্যিকারভাবে বলতে গেলে কেউই না। আমরা কি তবে যুগ যুগ ধরে এভাবেই আজন্ম শোষিত, বঞ্চিত থেকে যাবো? অসহায়ের মতো হিংস্র শ্বাপদ, শকুনদের উল্লাস দেখে নিভৃত মৌনতায় দীর্ঘশ্বাস ফেলবো?

আসলে আমরা ভুল পথে হাঁটছি। আমাদের জন্যে কেউই কাঁদবেনা, কখনোই না। কেউই আমাদেরকে আমাদের অধিকার আর সম্মান ফিরিয়ে দেবেনা। আমাদের কষ্ট আমাদেরকেই মোচন করতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদেরই আদায় করে নিতে হবে। কেউই আমাদেরকে সত্যিকার শান্তনা দেবে না, এবং আমরা মায়াকান্নাও চাইনা। অতএব, নিজহাত পিঠে বুলিয়ে নিজেকে নিজেরই শান্তনা দিতে হবে।

আমরা অধিকাংশ সাধারন মানুষ জানিনা যে, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্যে একটি মহাঅস্ত্র রয়েছে। আমাদেরকে জানতে হবে কি সেই অস্ত্র এবং আমাদেরকে জানতে হবে এর সঠিক ব্যবহার। বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের অধিকার আদায়ের এক অমোঘ অস্ত্র। সংবিধান এদেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্যে অনেকগুলো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। যেহেতু আমরা জানিনা যে, কি কি আমাদের প্রাপ্য, অতএব প্রাপ্য আদায়ের ব্যাপারে আমরা উদাসীন। একদল শকুনের হাতে আমাদের অধিকার রক্ষার ভার দিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকছি।

আমাদেরকে সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলোর ব্যাপারে জানতে হবে। আমাদেরকে আমাদের প্রাপ্য অধিকারগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অধিকার এক প্রকারের স্বাধীনতা। একে অন্যের হাতে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানো নিজেকে হত্যার শামিল। যদিও আমরা এভাবেই নিজেদেরকে হত্যা করে চলেছি ৩৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে। একদল হিংস্র রক্তচোষার হাতে আমাদের অধিকার আদায়ের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছি শিশুসুলভ সরলতায়। আমরা বড্ড বেশী আবেগী, স্বপ্নচারী। আমাদেরকে বাস্তববাদী আর রূঢ় হতে হবে। আমাদের অধিকার আমাদেরকেই আদায় করতে হবে। নিজের স্বাধীনতা নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।

ঢাকা থেকে
০৬.১০.০৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×