১।১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনের ৬(২) ও ৬(৪) ধারায় বলা আছে, ধর্ষণের পর কোনো ব্যক্তি বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে যদি কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যুট ঘটান, তাহলে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড- দেবেন। এখানে মৃত্যুদণ্ড- ছাড়া আর কোনো সাজা দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের সামনে রাখা হয়নি। এ জন্য সর্বোচ্চ আদালত এ ধারা দুটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন। এবং ১৯৯৫ সনের ওই আইনের রহিতকরণ ও হেফাজত সম্পর্কে ২০০০ সালের ওই আইনের ৩৪(২) ধারায় বলা হয়, ‘উক্তরূপ রহিতকরণের অব্যবহিত পূর্বে উক্ত আইনের অধীন অনিষ্পন্ন মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে এবং অনুরূপ মামলায় প্রদত্ত আদেশ, রায় বা শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল সংশ্লিষ্ট আদালতে এমনভাবে পরিচালিত ও নিষ্পত্তি হইবে যেন উক্ত আইন রহিত করা হয় নাই৷” এই ধারাটি কেও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে এখন সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিল। তাহলে ১৯৯৫ সালের অধীনে চলমান মামলাগুলো কীভাবে চলবে? মামলাগুলার কি ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনে নাকি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর অধিনে চলবে। ১৯৯৫ সালে প্রণীত নারী ও শিশু নির্যাতন (বিশেষ বিধান) আইনতো ২০০০ সালে রহিত করা হয়। জানি পুরনাঙ্গ রায় পাওয়ার পর এক বাবস্থা হয়ে যাবে। তবে এখানে উল্লেখ্য যে ২০০০ সালে ১৯৯৫ সালের আইনটি সংশোধন করা হয়। নতুন আইনের ৯(২) ধারায় ধর্ষণ করে হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেরও বিধান রাখা হয়েছে।
সব মিলিয়ে এটা খুব ভালো কথা। ইহাত বড়ই অসংবিধানিক ছিল।আইনে একটা বিকল্প শাস্তির বিধান থাকাটা জাস্টটিস। এতো কিছু খারাপের মধ্যে এতো ভালো আদালত আমাদের। কিন্তু পরের ঘটনা একটা উদাহারন হিসাবে দেখালাম, দেখুন-
২। নারী ও শিশু নির্যাতনের একটা মামলা ছিল যেখানে, ১৩ বছর বয়সের গণধর্ষণের শিকার হয়ে অপহরণের এক মাস পর বাড়ির কাছের পাটখেত থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার হয়। তার বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারা মোতাবেক অপহরণ ও গণধর্ষণ মামলা করেন। ঘটনার ৪০ দিন পর মেডিকেল সনদ এই মর্মে প্রত্যয়ন করে যে, ভিকটিমের বয়স ১৭ বছর, তার শরীরে জোরপূর্বক যৌনসঙ্গমের চিহ্ন নেই, ভিকটিম যৌনসঙ্গমে অভ্যস্ত (বেশ্যা)। এই সনদের ভিত্তিতে সাতজনের মধ্যে পাঁচ অভিযুক্ত ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। বাকি দুজন অভিযুক্ত ব্যক্তির একজনের সঙ্গে ওই শিশুর পূর্বপরিচয় থাকায় আদালত পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তাকে ‘ভিকটিমের ভালোবাসার সূত্রগুলো ভালোভাবে দেখিতে হইবে’—এই মর্মে তদন্ত চালানোর নির্দেশ জারি করেন। দুই অভিযুক্ত ব্যক্তির একজন সাক্ষ্য আইনের মাধ্যমে ভালোবাসার সম্পর্ক এবং শিশুটির সঙ্গে তার অপর বন্ধুর শারীরিক সম্পর্ক রয়েছে, সে ‘খারাপ চরিত্রের’—এই সাক্ষ্যপ্রমাণের মধ্য দিয়ে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা থেকে খালাস পেয়ে যায়।
তার মানে কি অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলে, অভিযুক্ত চেনা হলে, বাদিনী বেশ্যা হলে, নষ্ট মেয়ে হলে ধর্ষণ হয় না?
ইহাতে কিন্তু আমাদের সাংবিধানিক আদালতের কোন দোষ নেই, কারন সেকেলে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ সালের ১৫৫(৪)ধারায় বর্ণিত আছে যে, যখন কোন পুরুষ লোকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা শ্লিলতাহানির চেষ্টার মামলা চলে, তখন দেখান যেতে পারে যে বাদিনী ছিল অনৈতিক চরিত্রের অধিকারিণী।আর সাক্ষ্যর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারলে অভিযুক্ত সুবিধা পাবে। নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বাবস্থায় এমন বিধান থাকা কতোটা সাংবিধানিক সেটা সময় এসেছে জানার? ভারত সরকার ২০০৩ সালে এই ধারা বাতিল করেছে।তাহলে আমাদের টা বাতিলের জন্য আমাদের সাংবিধানিক আদালত কি পদক্ষেপ নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৩