somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বালুর রাজ্যে একদিন ( নাকি একরাত?? )

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গত দুই মাস ধরে অফিস থেকে মানুষ চলে যাওয়ার হিরিক পড়েছে। প্রথমে গেলেন জুবায়ের ভাই, তারপর রাসেল ভাই, তারপর হুদা ভাই, তারপর জাকির ভাই, তারপর রাব্বি ভাই... এই লিস্ট করতে গেলে আর শেষ হবে না মনে হয়। বাদ থাক। এই মাসের দুই তারিখে প্রথম যখন অফিসে ঢুকলাম- পুরো অফিসে দুই চারজন ছাড়া আর কেউ নাই। একদম ধু ধু মরুভূমি। মনটা খারাপ হয়ে গেল মুহুর্তেই।
এমন সময় পাশের রুম থেকে প্রিন্স উকি দিলো। ওর পিছে পিছে বেড়িয়ে এলো আস্ত একটা উট।
"এই সাত সকালে অফিসে উট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস যে?"
"অফিস ধু ধু মরুভূমি। উট ছাড়া চলবি কিভাবে এই গরমে?"
ওহ... তাই তো... আমি মাথা নাড়লাম। প্রিন্স নির্বিকারভাবে হেঁটে গেল এমডির রুমের দিকে। "ওই, দাড়া, আমারও একটা লাগবে। কই পাবো? তুই কি কিনে আনছিস বাইরে থেকে?" আমি ডাকলাম।
"না না- স্টোরে গিয়ে খোঁজ নে। সবার জন্য একটা করে আনা হইছে। তোরটাও থাকার কথা- দ্যাখ গিয়ে। আমার মিটিং আছে। গেলাম"
আমি গুগল ম্যাপ অন করে স্টোরের দিকে হাঁটতে থাকলাম। উফফফ... কি যে জঘন্য গরম। দুই পা আগাতেই ফয়সাল ভাই চিৎকার দিলেন কোত্থেকে যেন- "শাদমান ভাই- সাবধান। মুখ ঢাকেন।"
শব্দের উৎস্য খুঁজতে মাথা ঘুরাতেই এক গাদা বালু এসে আমার নাকে মুখে ঢুকে গেল... ফাক...এটা কি ছিলো? আমি কাশতে কাশতে শেষ। চোখে কিচ্ছু দেখছি না। হাঁটু গেড়ে চোখ মোছার চেষ্টা করছি। কে যেনো ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেললো আমাকে।
সৌরভ ভাই- আমাদের পিসিবি ডিজাইনার- এবং আজকের জন্য আমার ত্রাণকর্তা। "শাদমান, অফিসের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা যে কিসের মধ্যে আছি... স্ট্যান্ড ফ্যানটা যখনই গায়ের দিকে আসে- এক গাদা বালু ছিটায় দিয়ে যায়"। " তুমি মুখ চোখ ঢাকো। এই নাও গামছা"- বলে তিনি আমার দিকে একটা গামছা এগিয়ে দিলেন। আমি নাক মুখ বাঁধলাম। দূরে ফয়সাল ভাই হাত নাড়লেন আমার দিকে।উনি কালো পাঞ্জাবি পরা, মাথায় পাগড়ী। পুরো মুখ ঢাকা কালো কাপড়ে। ল্যাপটপে টিমভিউয়ার অন করে ক্লায়েন্টকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। আমি হাত নেড়ে তাকে বুঝালাম যে আমি ঠিক আছি।
"তুমি থাকো শাদমান, আমি যাই- এইচআর থেকে ডাকছে।" বলেই তিনি তার উটের পিছে উঠে বসলেন। আমি হাঁটা ধরলাম। রফিক রান্নাঘর থেকে সবার জন্য চা নিয়ে যাচ্ছিল। আমার এই দুর্দশা দেখে সে থামলো। "শাদমান ভাই, একটা জিনিস দেই আপনারে- এইটায় কইরা স্টোর পর্যন্ত যান। কষ্ট হইবো না। কিন্তু ফেরত দ্যাওন লাগবো কিন্তুক। আর কাউরে কইবেন না এইটার কথা। আমার দাদায় আমারে দিসিলো এইটা"- বলে সে একটা রোল করা পাটি আমাকে দিল। পাটির গায়ে লেখা- "জাদুর পাটি। মেড ইন পার্সিয়া"
"হোয়াট দ্যা ফাক!! এই মাল তোমার কাছে ক্যাম্নে আসলো?...ও আচ্ছা, বললাই তো- তোমার দাদা দিসে।" "থ্যাঙ্কস রফিক। আচ্ছা, তুমি চা নিয়ে রুমে যাও। আমি স্টোর থেকে এসে তোমার জিনিস ফেরত দিচ্ছি।"
আমি জাদুর পাটিতে উঠলাম। পাটির উপরের দিকের কোনায় একটা গ্রাফিক এলসিডি স্ক্রীন। ওখানে লেখা দেখালো- "ইন্টার্নাল কম্পাস ইজ করাপ্টেড। প্লীজ কানেক্ট ইয়োর স্মার্টফোন"
যা বাবা... জাদুর পাটির এই হাল? ক্রম বর্ধমান গুম ধরা শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি স্ট্যান্ড ফ্যানটা আমার দিকে আবার ধেয়ে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি করে স্ক্রিনের নিচ থেকে বের হওয়া ওটিজি ক্যাবলটা ফোনের পিছনে ঢুকিয়ে দিলাম। ভুউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউউস... এক টানে সিলিঙ্গের কাছে পৌছে গেলাম আমি। নিচে স্ট্যান্ড ফ্যান সৃষ্ট বালুঝড়ের সাথে তুমুল যুদ্ধ করে ক্লায়েন্টকে সাপোর্ট দিয়েই যাচ্ছেন ফয়সাল ভাই...
আমার ভাল লাগলো। সকালটা আল্টিমেটলি ভালোই যাচ্ছে। এই রুমটাতে কোন সিলিং ফ্যান নেই। তাই উপরে নেই কোন ঝড়ঝাপটাও। আমি ফুরুফুরে বাতাস উপভোগ করতে করতে এগিয়ে গেলাম স্টোররুমের দিকে। আমার ঠিক নিচের বেঞ্চিতে বসে সার্কিট সোল্ডারিং করছেন দু জন নারী টেকনিশিয়ান। আমি বেশ কিছুক্ষন ওপর থেকে তাদেরকে দেখলাম।
.
উপরের ভিউটা ভাল।
...
...
স্টোরে ঢুকে আমি বুঝতে পারলাম- আজকের সকালটা আসলে মোটেও ভালো না।
উট শেষ হয়ে গেছে।
"উট ক্যামনে শেষ হয়ে যায়? উট কি গ্লিসারিন নাকি যে শেষ হয়ে যাবে?" আমি আর্তনাদ করলাম।
"ভাই, একদম হিসাব করেই আনা হইছিল, বুঝছেন। একটা আসার পথে স্ট্রোক করে মারা গেছে। তাই একটা কম। যে কয়টা ছিল- সবাই সকালে নিয়ে গেছে। আপনি আজকে লেট। নইলে হয়ত পাইতেন।" চঞ্চল ভাই আমাকে বুঝ দেয়ার ট্রাই করলেন। আমার রক্ত মাথায় উঠে গেল। লেট করার জন্য বেতন ও কাটবে, আবার এইসবও করবে? মগের মুল্লুক নাকি? কিছু একটা বলতে যাবো- হুট করে কোথায় জানি প্রবল ধস্তাধস্তির শব্দ শুরু হল... আমি ব্রেক দিলাম। চঞ্চল ভাই টেবিলের নিচ থেকে একটা খাঁচা বের করে উপরে তুলে রাখলেন। খাঁচার ভেতরটা দেখে আমি শিউরে উঠলাম। খুব সাবধানে জিজ্ঞেস করলাম- "চঞ্চল ভাই, সানি খাঁচার ভিতরে ক্যানো?"
"আমাদের চায়না পার্টি ওদের গত মাসে দেয়া শিম্পাঞ্জিটা ফেরত চাইছে। শিম্পাঞ্জি তো জানেনই সেদিন সরকারবাড়ি থেকে হারায় গেছে। ওনেক খুঁজেও এমডি স্যার আর কোন শিম্পাঞ্জি পান নাই। তাই বলছেন সানি ভাইকে পাঠায় দিতে..."
আমি মুহুর্তে ব্যাপারটা ধরতে পারলাম।
"সানি এখানকার বিজনেস অফিসার। ওকে চায়নায় পাঠাইতে বলছেন যাতে করে শিম্পাঞ্জি হারানোর ব্যাপারটা সে চায়না পার্টির সাথে মিমাংসা করতে পারে। ওকে শিম্পাঞ্জি হিসাবে পাঠাইতে বলেন নাই এমডি স্যার" আমি রাগে ফুঁসছি।
চঞ্চল ভাই ভড়কে গেলেন একটু। অবাক হয়ে তাকালেন- "ওহ। তাই? আমি তো ভাবছি শিম্পাঞ্জির বদলে..."
"আরে রাখেন বাল আপনি কি ভাবছেন। আপনি এইটা ক্যানো ভাববেন? আজব তো... এক্ষুনি বের করেন ওকে। আর সানি- তুই কি রে ভাই বল তো? তোরে বললো আর তুই রাজী হয়ে গেলি?"
সানি এতক্ষন চুপচাপ শুনছিল। এবার মুখ খুললো- "আমি ভাবলাম বিদেশ ঘোরা হবে কয়দিনের জন্য..."
আমি আর নিতে পারলাম না...
"চঞ্চল ভাই, থাক। ওরে বাইর করা লাগবে না। আমিই ভুল ভাবছি আসলে। এই বাইনচোদটাকে আপনি ওইখানেই রাখেন।সন্ধ্যার চালানে ট্রাকে উঠায় দিয়েন।" বলে একটা শুকনো হাসি দেয়ার চেষ্টা করলাম।
"আচ্ছা... " চঞ্চল ভাই বসে পড়লেন। আমি সানির দিকে একটা তীব্র দৃষ্টি দিয়ে স্টোর থেকে বের হয়ে আসলাম। এই অফিসে আর না... আর একতা মুহুর্তও না। জাদুর পাটিতে উঠে ম্যাপে নিজের বাসা সিলেক্ট করতে যাবো- দেখি ফোন অফ। ব্যাটারি শেষ।
.
কিছু কিছু দিন আসলে কোনভাবেই ভাল যায় না...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×