আমার বোনের মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে – হাসপাতালে প্রায় একসপ্তাহ মৃত্যুর সাথে লড়াই করে শেষে পরাজয়। মনে পড়ে আমার এক কলিগ বলেছিল – পোড়া শরীর নিয়ে বেঁচে থাকা আরো বেশী দুর্বিষহ হতো, চলে যাওয়াটা তার জন্য আশির্বাদ মনে করবেন। মধ্যবয়সী বৈষয়িক বুদ্ধিতে পরিপক্ক মাথা হিন্দু ভদ্রলোক, এই কথাটা বলেছিলেন মনে পড়ে আমার আর আমাদের অনেক দুঃখের সময়, সহানুভূতি আর সহমর্মি অনেকের অনেক কথার মধ্যে এই কথাটা হয়ত সেদিন একটু হৃদয়হীন মনে হয়েছিল। কিন্তু পরে যখন চিন্তা করেছি মনে হয়েছে হয়ত তিনি ঠিকই বলেছেন – পৃথিবীটা কদাকার কুচ্ছিত কুশ্রী একটা মানুষের জন্য কেমন? - হৃদয়হীনই বটে। জীবনের অভিজ্ঞতা তেমনইতো বলে। সৌন্দর্য্য আর সাফল্যকেই সবাই মাথায় তুলে রাখে। ব্যর্থতা বা কুশ্রীতার বন্ধু কে হতে চায়।
এই ভাবনাটাকে খানিকটা সংযত করতে হলো গতকাল সি.বি.সি-র একটা টিভি প্রতিবেদন দেখে। এই দেখাটা শেয়ার করার জন্যই এই লেখার অবতারণা।
লোকটার বয়স হবে ৩০-৩৫, মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার পোড়া। চোখ, মুখ, ঠোঁট নাক কোন কিছুই অক্ষত নেই, মুখটা আগা গোড়া লেপটানো ছবির মত।
তাকে ভালবেসে বিয়ে করেছে একটা মেয়ে – ২০-২৫ বছরের স্বাভাবিক সুন্দর একটা মেয়ে। তাদের দুটি ছোট ছোট পরীর মত বাচ্চা হয়েছে। ভীষন খুশি আর তৃপ্ত তারা, তাদের ছোট সংসার নিয়ে।
এইই নিউজ।
মেয়েটা খুব হাসিখুশী – “ইন্টারনেটে পরিচয়, তারপর দেখা,ডেটিং, অতঃপর বিয়ে!”
প্রতিবেদক মহিলা ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করে – “তোমার এই ক্ষতের কারনে তোমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে বিশ্বাস করতে?”
ছেলেটা, তার “অভিব্যক্তিবিবর্জিত” মুখে প্রতিবেদককে বলছিল – “ভাবিনি কোনদিন কেউ আমাকে ভালবাসতে পারবে। আমার এক সুহৃদ আমাকে সব সময় বলতো- দেখো, কেউ না কেউ একদিন না একদিন তোমার ক্ষতকে পার হয়ে, তোমার ভেতরের সৌন্দর্য্যকে দেখতে পাবে, তোমার বাইরের অবয়ব নয়, বরং তোমার ভেতরের সেই অমলিন সৌন্দর্য্যের জন্য তোমাকে সে ভালবাসবে। তার সেই কথা তখন বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু সত্যসত্যই সেই রূপকথার গল্প আজকে বাস্তব হয়েছে”।
আশা আছে তবে!!! “আশা শুধু মিছে ছলনা” নয়!!!
পৃথিবী এখনো পুরোপুরি হৃদয়হীন হয়ে যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৮:০৬