এই লেখাটা শুরুর আগে অনেক পড়াশুনা করে নেয়া উচিৎ ছিলো, বিশেষ করে লেখার প্রতিপাদ্য যখন আমার প্রিয় শহর ঢাকা। কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই তা আর করিনি। আমার লেখায় থাকবে আমাদের সময়ের কথা, মমতা নিয়ে, ভালোবাসা নিয়ে যে শহরের জন্য লিখবো তার ইতিহাস কেন টানা লাগবে সেই লর্ড ক্লাইভের যুগ থেকে ? বরং তা না করে আমি শুরু করবো সেই সময় থেকে, যখন এই আমি নিজ চোখে এ এই অপূর্ব শহরটি কে দেখা শুরু করেছিলাম। আর এই লেখা টা লিখতে বসে এখন মনে হচ্ছে আসলেই, অনেক দিন পার করে দিলাম এই শহরটার বুকে।
আহারে, কি মধুর ই না ছিলো সময় টা।১৯৮৪ সনের শুরুর দিক। আমি তখন ক্লাস ওয়ান অথবা টু এর ছাত্র, রামপুরা থেকে মতিঝিল এর রিকশা ভাড়া ছিল দেড় টাকা, বড় জোর পৌনে দু টাকা। স্পস্ট মনে আছে, বাবা মা এর সাথে মতিঝিল এ জি বি কলোনী থেকে রামপুরা আসতাম রিকশাচালকের জাস্ট পেছনের খালি জায়গা টা তে দাঁড়িয়ে। এটুকু মনে আছে যে মৌচাক থেকে শুরু করে রামপুরা বাজার পর্যন্ত খুব বেশি হলে ২/৪টা চার চাকার গাড়ী দেখতাম, হয়তবা ভাগ্য খুব ভালো থাকলে একটা মালবাহী ট্রাকের দেখা মিলতো কি মিলতো না। রাস্তায় গাড়ী ঘোড়ার দেখা পাওয়া মানে আমার শিশু মনে এক ঈদের খুশী। তখনো কি আমাদের কেউ ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পেরেছিলাম যে সামনে কি দিন আসছে ? ধীরে ধীরে এর পরের মাত্র কয়েকটা বছরে ঢাকার চেহারা কেমন করে যেন চেনা থেকে অচেনা অন্য একটা দিকে মোড় নিতে থাকে। ১৯৯৩/৯৪ এর কথা।থাকি তখন রামপুরা তে। কোন এক যাদুবলে আমাদের চিপা কানা গলির মধ্যে লাখ লাখ রিকশার মেলা বসে।সে আমার কাছে এক মজার দৃশ্য। একের পর এক রিকশা যাচ্ছে আসছে বিরামহীন স্রোতের মত, একটার পেছনে একটা লাগানো, চুল পরিমান ফাঁকা নেই। অবস্থা দেখে মনে হত কোন কারনে একটা রিকশাওয়ালা নিজে থেকে রিকশা না টানলেও পেছনের বাঁধ ভাংগা রিকশার জোয়ার তাকে ঠেলে সামনে নিয়ে যাবে। মানুষের হাটা চলার কোন জায়গা নেই। মানুষেরও যে জ্যাম লাগে ঐ সময়েই প্রথম বুঝতে শিখি। আস্তে আস্তে কানা গলি ছাড়িয়ে নির্মম ও অসহনীয় এই যানজট ছড়িয়ে যেতে থাকে সবখানে।
আমি অর্থনীতি অথবা রাজনীতি বুঝিনা। আমি বুঝতে পারিনা কোন নীতি বলে প্রানবন্ত একটা শহর ঘন্টার পর ঘন্টা এরকম ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। একটা শহর বাসযোগ্য হতে গেলে নাকি তার কমপক্ষে ২৫ ভাগ শুধু চলাচলের রাস্তা থাকার কথা। ডি আই টি আর রাজউক তাহলে কি কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত ? এখানে বসে থাকা লোকগুলোর ছেলে মেয়ে মা বোনেরা কি এই রাস্তায় চলাচল করে না ? সারা জীবন ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ ভাবে রাস্তাখোর কিছু মানুষকে সুবিধা দিয়ে তারা একটা শহরের অপমৃত্যুই ডেকে এনেছেন। ১৯৯০ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকা রাজউক, ডি আই টি , গনপূর্ত, গৃহায়ন প্রতিটা দপ্তরে কর্মরত প্রতিটি কর্মকর্তা কর্মচারী কে আমার স্বপ্নের এই শহর হত্যার অপরাধে আমি দায়ী এবং দোষী মনে করি। সেই সাথে দুর্ভাগা মনে করি নিজেকে, তিলে তিলে আমার প্রিয় এই শহরটার অপমৃত্যু নিজের চোখে দেখতে !!!!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৩৬