সবাইকে ঈদ মুবারক। নাম মনে করতে পারছিনা, গতকাল বা তার আগের দিন সামুর ফ্রন্ট পেইজ এ একটা লিখা দেখলাম । বিষয়বস্তুর সাথে দ্বিমত পোষন না করে থাকতে পারলাম না। লিখাটির শিরোনাম যাই হোক, মূল প্রতিপাদ্য ছিলো প্রবাসী বাংলাদেশীদের শ্রেনী বিন্যাস।যাই হোক, লেখক সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাত্র দুটি শ্রেনীতে ভাগ করেছেন। একদল, যাদের অনেক টাকা আর টাকার অহংকার এ দেশ ছেড়ে বাইরে মাইগ্রেট করেছেন, ফিরে আসাটা চরম অপমান মনে করেন, দেশের মানুষ কে মনে করেন.........ইত্যাদি। আর আরেক দলের কথা এসেছে, যারা ১৪-১৬ ঘন্টা কায়িক পরিশ্রম করে, না খেয়ে না ঘুমিয়ে থেকে টাকা উপার্জন করছেন। তাহলে আমরা কোন শ্রেনীতে পড়ি ? টাকার অহংকারেও দেশ ছাড়িনি, আবার মানবেতর অবস্থায় না থেকেও দেশের পতাকা বহন করে পরিবার পরিজন ছেড়ে আমরা যারা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে রয়েছি, তারাও কিন্তু এক অর্থে প্রবাসী। আমাদেরও রয়েছে দেশের প্রতি আর দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর টান।
বর্তমানে আছি আফ্রিকান দেশ সুদান এর দারফুর প্রদেশ এ। সুদান কঠোর শরীয়া ভিত্তিক ইসলামি প্রজাতন্ত্র। সুদান নিয়ে আরেকদিন লিখার ইচ্ছে আছে বলে আজকে শুধু দারফুরে আমার দেখা ঈদের কথাই বলবো।
গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশে ঈদ দেখার বিরল অভিগ্গতা। সুদানে প্রায় ২৪ টির ও বেশী বিবদমান দল রয়েছে যারা মাঝারি ও ভারি অস্ত্রে সজ্জিত এবং যাদের রয়েছে নিয়মিত সেনাবাহিনীর আদলে গঠিত সৈন্যদল। এতকিছুর মাঝেও ঈদের হাওয়া দোলা দিয়ে যায় দারফুরবাসীর জীবনে।
রোজার শুরু থেকেই দেখেছি সর্বত্র একটা সাজ সাজ রব। দারফুরবাসীরা এমনিতে যথেষ্ট রংগীন জামাকাপড় পছন্দ করে যদিও বয়ষ্ক পুরুষরা সাদা রং এর আজানুলম্বিত জোব্বা পরে থাকে। এটাই নাকি আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে। মহিলারা বিশেষ করে কম বয়সীরা খুবই রং চঙে হাল ফ্যাশনের স্কার্ট আর টপস পড়ে থাকে, তবুও দেশের ডিজ্যুস পোলাপান এর মত এতোটা অশ্লীল ভাবে নয়। ওদের দেখে মনে হয় কঠোর অনুশাসনের মধ্যে থেকেও আধুনিকতা সম্ভব। ঈদের দিন পথঘাট নতুন জামা কাপড় পড়া বাচ্চা কাচ্চায় সয়লাব। বাংলাদেশের মত্ই। দেখে খুবই নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে এখানেও শুক্রবারে ঈদ বলে জুম্মা পড়তে গেলাম।এর পরে আমরা দারফুরবাসী বাংলাদেশীরা এক হলাম আগে থেকে ঠিক করে রাখা এক বাসায়। সেমাই আর কাচ্চী বিরিয়ানির মাঝে দেশের ঈদ আমেজ খোঁজার ব্যর্থ এক অপচেষ্টা। এখানে নতুন একটা জিনিশ দেখলাম, ভালোও লাগলো। পাড়ায় পাড়ায় বাচ্চারা দল বেঁধে বের হয় আর বাসায় বাসায় হামলা চালায়, লক্ষ্যবস্তু চকলেট আর ক্যান্ডি। অনেকটা পাশ্চাত্যের হ্যালোইন উৎসবের মত। ঈদের একমাত্র বিনোদন ছিল বিশাল নিশান পেট্রল নিয়ে মরুর বুকে লং ড্রাইভ। ভালো কেটেছিলো সময় টা।
দারফুর নিয়ে আরো লিখার ইচ্ছে রইলো সামনের দিনগুলোতে। সবাই ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৭