somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বিধা।

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই আমি বেশ লাজুক।নিজের চাওয়াটা বা ইচ্ছেটা চেচিয়ে বলা তো দুরের কথা ফিসফিস করে বলতেও লজ্জা হত আমার।
প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে আমি ছিলাম আজব ধরনের আজ হয়ত নিশাতের প্রেমে পড়ে তার বাচ্চা-কাচ্চার বাবা হয়ে ঘরসংসার সাজিয়ে ফেলতাম দুদিন পরই আবার মুক্তা বা জেরিনকে নিশাতের আসনে বসিয়ে দিতাম।অথচ এতকিছুর পরও আমার নায়িকারা জানতই না আমার ভালোবাসার কথা!
কারন? ঐ যে লজ্জা!

আমাদের কলেজের বেঞ্চগুলো ছিল অন্যরকম। ছেলে মেয়ে যে যেখানে ইচ্ছা বসতে পারত।মিতা আমার নজরে পরে গেল প্রথম সপ্তাহতেই। ওকে দেখে মনে হয়েছিল এই মেয়ে আমার না হলে ফাসি বা বিষ যায় একটা হোক না কেন আমার কোনো আপত্তি নেই।মিতার জন্য তখন আমি পাগলপ্রায়। খুব সকালে কলেজে এসে আমি বসে পরতাম তার পিছনের বেঞ্চে।তার চুলের ঘ্রাণে ডুবে আমার পড়া কোথায় হারাত কে জানে।মাতাল আমি তখনও লাজুক। বলতে পারছি না কিছুই। অবশ্য মেয়েরা একটু বেশীই চালাক হয়। মিতা একদিন সরাসরিই জিজ্ঞেস করে ফেলল, তুমি কি চাও?
আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম, কই কিছু না তো।
একটা দীর্ঘশ্বাষ ফেলে সে বলল, ভুল করো না।

গল্প উপন্যাসে হয়ত কলেজের ফাস্ট বয়ের প্রেমে পড়ে মেয়েরা। কিন্তু বাস্তবে নয়। আমি তখন শুনতে পেলাম মিতা আমাদের এক সিনিয়রের সাথে প্রেম করছে।মরীয়া আমি তখন ভুলটি করলাম।
কতক্ষন চুপ থেকে মিতা বলল, জীবনটা খুব কঠিন। তুমি ভুল করলেও আমি ভুল করতে পারি না।প্রাইভেট পড়িয়ে দিন যাবে না।

আমি কি খুব অপমানিত হয়েছিলাম? মনে হয় না। কারন এর চেয়েও অনেক বড় অপমান আমাকে সইতে হয়েছে জীবনে।মানুষের মন খুব অদ্ভুত। কিছু স্মৃতি সহজে ভুলা যায় না।অনেকটা ছোট মাছের কাটার মত। সহজে নড়ে না বরং বারবার তার বিরক্তিকর উপস্থিতি জানান দেয়।এ ঘটনার পর আমি অনেক অন্তর্মুখী হয়ে পরলাম।এর মাঝে আমি বুয়েট থেকে বের হলাম একজন সিভিল ইন্জিনিয়ার হিসাবে।আমি মেয়ে মানুষ থেকে দুরে থাকি। ড্রিংক করি না কোনও পার্টিতে যায় না।আমার বউ আবার বিপরীত মেরুর। ওর সাথে আমার কিভাবে সম্পর্কটা টিকল তাই আমি বুঝি না।বুয়েট এর ছেলেরা হয় অনেক স্মার্ট। কিন্তু আমি সেই আগের মতই। আমার দশ বছরের ছেলের ভাষায় "গেয়ো" আর আট বছরের মেয়ের ভাষায় "ক্ষ্যাত"।

পাস করার পর বছর দুয়েক আমি একটি প্রতিষ্টানে কাজ করেছি। তারপর নিজেই একটি ফার্ম খুলে বসি।সাফল্য ধরা দিতে আমার বেশী সময় লাগে নি।
আমি এখন আছি রহিমপুরে। আমার নতুন জুট মিলটার উদ্বোধন করতে।বিকালে সাধারনত আমি চুপচাপ বসে থাকি। এ সময় কেউ আমাকে বিরক্ত করে না। কিন্তু আমার ম্যানেজার রাশেদ সামনে এসে দাড়িয়ে থাকাতে অবাক হলাম আমি।
-কোনো সমস্যা?
-না স্যার... মানে এক ভদ্রলোক কয়েকদিন ধরে এ সময় দাড়িয়ে থাকে। আপনার সাথে দেখা করার জন্য।
-তো?
-স্যার উনি বলল আপনাকে তিনি চিনেন।
কতক্ষন চুপ থেকে বললাম, ঠিক আছে পাঠাও উনাকে।
নিজের চেহারার প্রতি আমার সবসময়ই হীনমন্যতা কাজ করে যদিও তবু বলতে বাধ্য হলাম লোকটি সুপুরুষ বটে!মধ্যবয়সে এসেও অনেক স্মার্ট। তবে পরিচ্ছদে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট।
বসতে বলে আমি বললাম, আপনাকে চিনি বলে তো মনে হচ্ছে না।
মৃদ হেসে লোকটি বলল, স্যার আমি মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে আমি বা আমাকে আপনি চিনেন না।
তাহলে এভাবে দেখা করতে আসলেন কেন? আমার কন্ঠে রাগ ফুটে উঠল।
-স্যার আপনি মিতাকে স্মরন করতে পারেন? আপনার সাথে কলেজে পড়ত।
একটু বললে ভুল হবে বেশ চমক খেলাম আমি।
-আপনি....
আমাকে থামিয়ে দিয়ে লোকটি বলল, স্যার আমি মাহফুজ ওর হাসব্যান্ড।
-আচ্ছা! সে কেমন আছে?
-ভাল স্যার।
-আপনি আমাকে স্যার ডাকছেন কেন?
-আসলে স্যার আমি আপনার কাছে সাহায্যপ্রার্থী।আমার একটা চাকরির খুব দরকার। তাই আপনার কাছে আসা।
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম।কতক্ষন চুপ থেকে বললাম, আসলে এই মুহুর্তে আমাদের কোনো লোক দরকার নেই তাছাড়া আপনি মিতার হাসব্যান্ড আপনাকে তো যেখানে সেখানে বসানো যায় না।
-স্যার আমার কিছু একটা হলেই হবে। মিতা খুব আশা নিয়ে আপনার কাছে আমাকে পাঠিয়েছে।
চোখ বন্ধ আমার। ভাবছি আজ কি প্রত্যাখান করব নাকি মহত্ত্ব দেখাব।
-স্যার আমি নাহয় মিতাকে আসতে বলি। দুপুরে তো আপনি রুমে একাই থাকেন। ঐসময়!
আমি চোখ মেলে সরাসরি উনার দিকে তাকালাম। চোখ নামিয়ে পা দিয়ে মাটি ঘষতে লাগল মাহফুজ সাহেব।
এ ধরনের প্রস্তাব পাওয়াতে আমি অভ্যস্থ কিন্তু নেওয়াতে নয়।কিন্তু আজ কি হল কে জানে। হয়ত কোনো খেলায় জয়ী হওয়ার নেশা চাপল মাথায়।
আমি দৃঢ়স্বরে বললাম, ঠিক আছে ওকে আসতে বলুন।দুপুরে। একা।
আমার দিকে ঝুকে মাহফুজ সাহেব বলল, জ্বী স্যার। তাহলে আমি এখন উঠি।
চলন্ত মিতার বরকে দেখে কেন জানি আমার মনে হল লোকটি এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়াতে অভ্যস্থ।

আমি সাধারনত ভোরের দিকে ঘুমাতে যাই। আজ সকালেও ঘুম আসছে না আমার।চাপা অস্থিরতা ফুটে উঠছে আমার শরীরে। সারাটা সকাল আমি পায়াচারি করে কাটালাম।খুব চেষ্টা করছি মিতার মুখটা চোখের সামনে ফুটাতে। পারছি না আমি।ঠিক বারোটায় দরজায় শব্দ হল। আমি জানি মিতাই এসেছে।এ সময় আর কারো আসার কথা নয়।
আমার পা কাপছে। শরীর ঘামছে।দরজা খুলতে পারছি না আমি।বুঝতে পারছি না আজ আমি কি হব। পাপী নাকি কাপুরুষ!
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫১
১০৪টি মন্তব্য ১০২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×