somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা।

২৩ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোটা মানব জাতি ই আজ এক কঠিন সময় পার করছে। প্রত্যেকের ই এক আতংকের মধ্যে প্রতিটি মুহুর্ত পার হচ্ছে । করোনা ভাইরাসের থাবায় আজ জীবন জীবিকা সবই স্তব্ধ। পৃথিবীর অনেক দেশ ই করোনার থাবা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলেও আমাদের বাংলাদেশ আজ করেনার থাবায় পুরোই নাস্তানাবুদ। ইতোমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ও কম না। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কয়েক জন সুপরিচিত মানুষের জীবনের অবসান হয়েছে করোনার থাবায়। আরো কত জীবনের বিনিময় করোনা যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে সেটাই আজ বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলা ও দায়িত্ব হীনতার মাশুল ই আজ সমগ্র জাতিকে দিতে হচ্ছে। আর এই মাশুল কত দিন গুনতে হবে সেটাও বলা মুশকিল। যদিও কয়েক দিন আগে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাহেব বলেছিলেন বাংলাদেশে আরো দুই তিন বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ চলবে। পরে এটা নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে তিনি অবশ্য তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কি বললেন বা কি প্রত্যাহার করলেন সেটা বড় কথা না বা সেটা বস্তবতা ও না। কারন আমাদের রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা সবসময় ই বাস্তবতা থেকে অনেক দুরে অবস্হান করেন। তারা নিজেদের ভোগবিলাসী জীবনের মাপকাঠিতে ই সমগ্র জাতিকে বিবেচনা করেন। তাই তাদের প্রায় প্রতিটি আচরন ই আমাদের সাধারন মানুষের জীবনে কষ্টের অন্যতম কারন।

আমাদের অর্থনীতি সিংগাপুর কানাডা আমেরিকা বা যে কোন উন্নত দেশের কাছাকাছি বলে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা সংসদ বা রাজনীতির মাঠ গরম করলে ও আমাদের সাধারন মানুষের নজরে আজ ও আমাদের অর্থনৈতিক অবস্হা খুবই নাজুক। আমেরিকার প্রতিটি করদাতার জন্য সেই দেশের সরকার বারোশত ডলার ও বাচ্চাদের জন্য পাঁচশত ডলার করে করোনাকালীন সহায়তা প্রদান করলেও আমাদের দেশের পঞ্চাশ লাখ হত দরিদ্র মানুষের জন্য ২৫০০ টাকা প্রদানের কর্যক্রম সহ ত্রানের খাবার নিয়ে যে কান্ড জাতি লজ্জার চোখে দেখেছে তা ভুলতে হয়তো একযুগ পার হয়ে যাবে। যাই হোক গত পহেলা জুন থেকে সরকার তথাকথিত সীমিত আকারে প্রায় সব কিছু উন্মুক্ত করতে থাকলে ও অনেক কিছুই আজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমাদের ব্যবসায়ীদের একটি বিরাট অংশ ই ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের ব্যবসায়ী। আর আমাদের ব্যবসায়ীদের এই শ্রেনীর আজ চরম হতাশা ও বিপদের মধ্যে দিন পার করছেন। বিশেষ করে আমাদের দোকানদার শ্রেনী। বিশেষ প্রয়োজনে গত কয়েক দিন আমাকে রাজধানীর বেশ কিছু বড় ও ছোট শপিং মলে যেতে হয়েছে এবং জীবিকার প্রয়োজনে আমি ও একটি ক্ষুদ্র ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত তাই ঐ সকল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে ও নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে আজ এই দোকানদার শ্রেনী এক মহাসাগরের মাঝ খানে হাবুডুবু খাচ্ছেন।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগীর কথা প্রকাশ হবার পর থেকেই সাধারন মানুষের মনে এক ধরনের ভয় ও আতংকের জন্ম নেয়। সেই থেকেই প্রায় সকল ছোট ব্যবসায় ভাটা শুরু হয়। এর পর ২৬ মার্চ থেকে করোনার আক্রমন ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখার জন্য সাধারন ছুটি ঘোষানা করে মানুষের মনে এক ধরনের বিভ্রান্তের জন্ম দিয়েছিল সরকার। তার পর ও সাধারন মানুষ তাদের জীবনের কথা ভেবে নিজেদের ঘরের ভিতর বন্দী করতে বাধ্য হয়েছিল। কিছু দিনের মাথায় পেটে ক্ষুধা ও সরকারের অব্যবস্হাপনা মানুষ করোনার ভয় কে পিছু ফেলে পথে নামতে বাধ্য হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ই মে মাসের শেষ পর্যন্ত বন্ধ থাকায় প্রায় কয়েক কোটি মানুষ ছিল বেকার। আর এই মানুষ গুলি তাদের জমানো সঞ্চয় ও ধার দেনা করে বন্ধের ঐ সময়টা কোন ভাবে পার করতে পারলে ও এখন আর কোন পথই খোলা নাই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার দীর্ঘ এক মাস চললেও ব্যবসার নামে জ্বলছে লাল বাতি। কোন দিন দুই চার শত টাকা বিক্রি হলো ও প্রায় দিন ই শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার পর ই চার দিক থেকে শুরু হয়েছে নানান অর্থনৈতিক চাপ বাড়ীওয়ালা ভাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিদারের ভাড়া কর্মচারীদের বেতন সেই সাথে দীর্ঘ বন্ধ সময়ের বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল। সব মিলিয়ে সত্যি এক মহা বিপদের সময়। ব্যবসায়িক ক্ষতির আরো একটি দিক হলো আমাদের দেশ ধার্মীয় ভাবে মুসলিম প্রধান দেশ আর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎযাপনের জন্য প্রতিটি মুসলমান ই তাদের সাধ্যমত পোষাক আশাক সহ নানান জিনিস কিনেন। তাই আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের বাৎসরিক আায়ের একটি বিরাট অংশ আসে এই ঈদের বেচা-কেনা থেকে এর সাথে ছিল বাংগালীর প্রানের উৎসব পহেলা বৈশাখ। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক আয়ের সিংহভাগই করোনার থাবায় হাত ছাড়া। ব্যবসায়িদের ব্যবসাই আজ গলার ফাঁস হয়ে দাড়িয়েছে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতর দুই উৎসবের ব্যবসার মুনাফার আশায় তাদের সমস্ত সঞ্চয় ই ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করে শূন্য হাতে সবাই আজ দিশেহারা।

যদি ও সরকার ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য নানান ধরনের প্রনোদনার ঘোষনা করেছেন৷ কিন্তু সেই প্রনোদনার সুষ্ঠু ব্যবহার কত টুকু হচ্ছে বা হবে সেটাই একটা বড় প্রশ্ন। আমাদের দেশের বিভিন্ন সরকারী সুযোগ সুবিধা কখনোই সাধারন মানুষের স্বার্থে তেমন ব্যবহার হয়েছে বলে কেউ মনে করেন না। একজন সত্যিকারের ব্যবসায়ী বা কৃষক ব্যাংক ঋনের জন্য মাসের পর মাস ব্যাংক কর্মকর্তার পিছনে হাটতে হাটতে জুতার তলা ক্ষয়করে নানান অজুহাতে খালি হাতে ফিরতে হয়৷ কথিত বা নামসর্বস্ব ব্যবসার জন্য ব্যাংক ঋনে নিয়ে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি লুটপাটের সংবাদ প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে আমাদের শুনতে হয়। তাই সরকার ঘোষিত এই প্রনোদনা ও শুধু কথা আর কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্হ ব্যবসায়িরা এর সুফল এখন পায়নি আর ভবিষ্যতে ও হয়তো গুড়ে বালি।

২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায়র মাঝে ও আমাদের ক্ষুদ্র বা মাঝারি ব্যবসায়ীদের তেমন কাবু করতে পারে নি। তার পর ২০১৩ সালে শেষ দিকের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন ও ব্যবসায় তেমব প্রভাব পরে নি। ঐ সময়ে ও আমাদের ব্যবসায়িদের মনের ভিতর আশার প্রদীপ জ্বলছিল। সার্বিক ভাবে আজ কেন জানি আমাদের ব্যবসায়ীদের মনের ভিতর সেই আলো আর জ্বলছে না। চার দিকে আমাবশ্যার অন্ধকার কখন এই মহামারির হাত থেকে জীবন জীবিকার উদ্ধার হবে তা কোন ভাবেই বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের ধারনা বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ সেটি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনো নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না৷ অন্যদিকে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতি ও প্রচন্ড চাপের মুখে ৷ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ধারণা করছে যে করোনার প্রভাবের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি এ বছর তিন শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে এবং আমাদের অর্থনীতি এমন সংকটময় পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বের হয়ে আসবে? প্রশ্ন যতই আসুক এর মধ্যে যদি সকরার আমাদের সাধারন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বানিজ্যের স্বার্থ রক্ষায় ও আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য আন্তরিকতা সাথে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করে এবং চাটুকারদের এই মুহুর্তে দুরে সরিয়ে রাখে তা হলেই চলমান ও আগামী ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশের সাধারন মানুষ নিজেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হবে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×