somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুজিব কোটের সেকাল-একাল

১২ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মুজিব কোট’ নামটা শুনলেই মন ভরে যায়। মনে পড়ে, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার কথা। মুক্তির ইতিহাস। মুজিব কোটের প্রতিটি সুতায় সুতায় লুকিয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস। মুক্তির গল্প। বাংলাদেশের মানুষের সুখ-দুঃখ, ভাগ্য। মুজিব কোট কোনো সাধারণ কোট নয়। এটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যবহৃত পোশাকের বিশেষ অংশ। যা তিনি জীবনের প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে ব্যবহার করেছেন। জাতির জনকের ব্যবহৃত ঐ কোট ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির একটি আদর্শের প্রতীক। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুজিব কোট ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর ব্যবহৃত নেহেরু কোটের একটি সংস্করণ। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কোটটি পরতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। যা পরবর্তীকালে মুজিব কোট নামে পরিচিতি পায়।



কালো পোশাকটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। ওই কোট ছয় বোতাম বিশিষ্ট যা ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের ছয়-দফা দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠজন এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্য যে মুজিব কোট এবং ছয় দফা সনদের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক যাই হোক, এই মুজিব কোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্পর্কটা যে গভীর থেকে গভীরতর ছিল তা মোটেও বলার অপেক্ষা রাখে না। তারই ফলে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে আনা, ১৯৭০-এর নির্বাচনের ফলাফল ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ। মুজিব কোটের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কের অপব্যবহার শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই একটি বিশেষ শ্রেণি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে ও মুজিব কোট শরীর থেকে নামায়নি। বঙ্গবন্ধুর কাছে নিজেদের তার অনুগত হিসেবে প্রকাশই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এরই নির্লজ্জ আনুগত্য ও ক্ষমতা দখলের গুপ্ত ইচ্ছার ফলাফল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। যেখানে প্রায় পুরো পরিবার নিয়ে খুন হতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। এরপরের দিন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর বিশেষ অনুগত ব্যক্তি খোন্দকার মোশতাক ও তার দলবল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাভার গ্রহণ করে।

আজও মুজিব কোট নিয়ে চলছে নানা অপরাজনীতি। মাদক কারবারি থেকে চোরাকারবারি, মানব পাচারকারী থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের টাকা পাচারকারী, গরিবের সাহায্য লুটেরা থেকে ব্যাংক লুটেরা এমনকি ক্যাসিনোর হোতা বা টেন্ডারবাজসহ শীর্ষ থেকে টোকাই রংবাজ সবাই আজ লুফে নিয়েছে সাধারণ মানুষের প্রিয় মুজিব কোট। মুজিব কোট আজ যেন তাদের আত্মরক্ষারই একটি ঢাল! গেন্ডারিয়ার মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী নসিবুন্নেসার দুই পুত্র রাহিদ হাসান সুমন ও সাজিদ হাসান সুজনের কথা হয়ত আমরা ভুলে গেছি। ২০০০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার রাইফেলস ক্লাবের ভেতর সায়েম ও মহসীনকে হত্যার পর বার টুকরা করেছিল এই সুমন-সুজন ব্রাদার। বহুল আলোচিত হত্যাকা-ে গ্রেফতার হওয়া সুমন-সুজনকে আদালতে হাজিরের সময় তাদের গায়ে পরিধান করতে দেখেছি মুজিব কোট! জানি না কোন কারণে, কাদের সহযোগিতায় জঘন্য হত্যার আসামি ওই দিন গায়ে মুজিব কোট জড়িয়ে আদালতে হাজির হতে পেরেছিল।

২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত অনেক চড়াই-উতরাই পার করে দেশের মানুষের সঙ্গে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভার গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই জনগণকে দেওয়া প্রায় সকল প্রতিশ্রুতি মন থেকে মুছে ফেলার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্ষমতাসীনরা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে যে সকল কূট-কৌশল ব্যবহারের প্রয়োজন তার সবই করেছেন। প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী শক্তি বিএনপি-কে রোষানলে ফেলতে বিএনপির ভেতরে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী চোর বাটপারদের আশ্রয়কেন্দ্র হতে থাকে ক্ষমতাসীনদের ডেরা।

বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি ফ্রিডম পার্টি থেকে আগত সন্ত্রাসী অতিথিদের অত্যাচারে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জাতির জনকের সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ত্যাগী নেতাকর্মীরা। শুরু হয় জাতির জনকের প্রিয় সেই মুজিব কোটের অপব্যবহার। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল ও ক্ষমতার অপব্যবহার আর দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখতে ঐ চাটুকার তেলবাজ শ্রেণি ঐ একই কায়দায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের আগের দৃশ্য মঞ্চস্থ করতে শুরু করে। যার বর্তমান প্রমাণ সাহেদ-পাপুল, ক্যাসিনো ব্রাদার এনু-রুপনসহ ভুরি ভুরি। এদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই হয়ত ২০১৭ সালের ২২ মার্চ সিলেট নগরের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে জনাব ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন- ‘আওয়ামী লীগের ভেতরে এখন কাউয়া ঢুকছে।

দলের জায়গায় জায়গায় কাউয়া আছে।’ তার মানে আওয়ামী লীগের ভেতর এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক নেতাকর্মী নেই বললেই চলে। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে আজ আওয়ামী লীগে ক্ষমতাসীনরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও অতীতের ইতিহাস পুরোটাই মুছতে বসেছে। তাই আজ দেশে দুর্নীতি সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ও বিচারহীনতাসহ সকল অকর্মের মহোৎসব চলছে। আজ বাংলাদেশের রাজনীতি এমন এক পর্যায়ে চলে এসেছে যেখানে মনে হয় আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশে আর কারোই অস্তিত্ব নাই যেমনটি হয়েছিল ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্বে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, ৭৫-এর ১৫ আগস্টে প্রায় সপরিবারে জাতির জনককে হত্যার পরও মানুষকে ঠিকভাবে পাওয়া যায়নি এর প্রতিবাদে। বরং ওই সময় জাতির জনক ও তার পরিবারকে নিয়ে নানা কুৎসা রটাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি সেই বেঈমানরা। বঙ্গবন্ধুর আর বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

তাই বাঙালি জাতির অন্তরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত সেই কালো কোট অর্থাৎ মুজিব কোটও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু আজ একটি বিশেষ সম্প্রদায় বঙ্গবন্ধুর হাতের গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থেকে বঙ্গবন্ধুরই প্রিয় সেই কোট গায়ে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের সঙ্গে পুরোপরি প্রতারণা করে যাচ্ছে। আমরা চাই না কোনোভাবেই বাংলাদেশের স্থপতির নীতি ও আদর্শ নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক। আজ যাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করছে বঙ্গবন্ধু তথা বাঙালির প্রিয় মুজিব কোট গায়ে জড়িয়ে যারা এদেশের মানুষের মানসম্মান ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। যেমনটি হয়েছে জাতির জনকের খুনিদের বেলায়।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×