পর্যবেক্ষক
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মঙ্গলবার ইরাকে সাত বছর পাঁচ মাস ১১ দিনের সেনা অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি আমেরিকান অর্থনীতির পুনরুদ্ধার বিষয়ে তার দেশের নাগরিকদের আশ্বস্ত করেছেন। ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করতে বেতারে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ওবামা বলেন, আমেরিকান সেনাবাহিনী এবং তাদের পরিবারবর্গের আত্মত্যাগ আর কর্তব্যবোধ দেখে তিনি বিস্মিত। তবে ইরাক যুদ্ধে তাদের বিজয় হয়েছে কিনা এ বিষয়টি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন।
যে ওভাল অফিস থেকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ ইরাক আগ্রাসনের (আমেরিকার ভাষায় যুদ্ধ) ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে অফিসের ওই ডেস্ক থেকেই ওবামা বলেন, ‘পট পরিবর্তনের এখনই সঠিক সময়।’ ওবামা বলেন, ইরাকি নেতাদের এখন ‘জরুরি ভিত্তিতে’ এগিয়ে যাওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিযান শেষ হচ্ছে। কিন্তু ইরাকের ভবিষৎ সম্পর্কে আমাদের অঙ্গীকার এখনো বজায় আছে।’
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনী প্রচার অভিযানে ইরাকে যুদ্ধ শেষ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি ইরাকি জনগণকে নিরাপত্তার দায়িত্ব এখন নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইরাক যুদ্ধের দায়িত্ব ওবামা পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বুশের কাছ থেকে পেয়েছেন। এ তালিকায় আফগান যুদ্ধও রয়েছে। অবশ্য আফগানিস্তান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আল কায়েদা দমন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
১৮ মিনিটের বেতার ভাষণে ওবামার মুখে সেনাবাহিনীর প্রশংসার শেষ ছিল না। বলা হয়, ইরাক যুদ্ধের সমর্থক কোনোদিনই ছিলেন না ওবামা। যুদ্ধটাকে ‘মারাত্মক রকমের ভুল’ বলে চিহ্নিত করেন তিনি। ভাষণের কোথাও একবারের জন্যও ‘বিজয়’ শব্দটা উল্লেখ না করলেও বারবার করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এ যুদ্ধ এবং যে বিপুল সেনা ক্ষয়, সেনাদের আত্মত্যাগ, তাদের পরিবারের যন্ত্রণা দেখে তিনি বিস্ময় বোধ করেছেন। তবে তাদের আগ্রাসনের সাড়ে সাত বছরে যে ইরাকের বহু নারী-শিশু ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, সে বিষয়েও কোনো কথা বলেননি। প্রসঙ্গত, সাড়ে সাত বছরের অভিযানে দেশটিতে মারা গেছে এক লাখ ছয় হাজার ৩৪৮ বেসামরিক ইরাকি (মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য থেকে ওয়েবসাইট আইক্যাজুয়ালিটিসের হিসাব)। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ হবে। কারণ হাজার হাজার ইরাকির এখনো হদিস নেই। অন্যদিকে দখলদার আমেরিকান সেনা মারা গেছে চার হাজার ৪০০ জনের মতো। এদিকে ওবামা আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শেষ হলেও এখনো ইরাকে ৫০ হাজারের মতো সেনা অবস্থান থাকবে। আমেরিকার ভাষায় তাদের কাজ হবে- ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সমর্থন দেয়া। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ইরাকে এক লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান সেনা অবস্থান করছিল।
ইরাক যুদ্ধে নিহতদের জন্য ‘দুঃখিত’ ব্লেয়ার
ইরাক যুদ্ধে নিহতদের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বৃটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। একইসঙ্গে তিনি গর্ডন ব্রাউনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাকে ‘বিপর্যয়’ বলেও উল্লেখ করেছেন। ‘এ জার্নি’ নামে তার একটি স্মৃতিকথামূলক বইয়ে ব্লেয়ার এসব কথা বলেছেন। ওই স্মতিকথায় মূলত তার ক্ষমতায় থাকার সময়কাল ১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সালÑ এই এক দশক উঠে এসেছে। বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের পেছনের দরজা দিয়ে তার চলে যাওয়ার কারণও উন্মোচিত হয়েছে এ বইয়ে।
টনি ব্লেয়ার যেসব তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন সেগুলোর মধ্যে আছে- ইরাকে হামলার বিভিন্ন ঘটনা, নর্দান আয়ারল্যান্ডের শান্তিপ্রক্রিয়া, দেশের বিভিন্ন সংস্কার এবং অর্থমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের সঙ্গে তার অস্থিতিশীল সম্পর্ক ইত্যাদি। ব্লেয়ার বলেছেন, বৃটিশ সেনা ও তাদের মিত্রবাহিনী, ইরাকের বেসামরিক নাগরিক, বিভিন্ন কূটনীতিকসহ সব মৃত্যুর জন্য তিনি ‘অত্যন্ত দুঃখিত’। তবে তিনি এও বলেছেন, ইরাকে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য তিনি অনুতপ্ত নন। তিনি মানুষের নিহত হওয়ার ঘটনায় কেঁদেছেন। তারপরও যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন। কারণ একনায়ক সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতায় রাখা আরো ঝুঁকিপূর্ণ হতো। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করাই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৭