পর্যবেক্ষক
ব্যাট হাতে একসময় ঝড় তোলা ক্রিকেট তারকা সাঈদ আনোয়ারের চলনে-বলনে পরিবর্তন এসেছিল আগেই। তারপরও দেশের প্রয়োজনে ঠিকই ব্যাট হাতে মাঠ কাঁপিয়েছেন। সেই সাঈদ এখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন অন্য পরিচয়ে। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে ব্যস্ত আছেন দ্বীনের কাজে। মুখে দাড়ি, মাথায় সাদা পাগড়ি, হাতে তসবি। সিজেকেএসের পীড়াপীড়িতে শনিবার চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এলেও ক্ষুদে ক্রিকেটারদের ক্রিকেট নিয়ে কিছু বলেননি। বরং দিয়ে গেলেন শুধুই দ্বীনের দাওয়াত।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) অনুরোধে বিকালে স্টেডিয়ামে হাজির হন সাঈদ আনোয়ার। কথা ছিল ক্ষুদে ক্রিকেটারদের ক্রিকেট নিয়ে মূল্যবান কিছু উপদেশ দেবেন। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল বলে গেলেন ধর্মের কথা। দ্বীন ইসলামের কথা।
ক্ষুদে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্রিকেট যেভাবে সাধনা করে শিখতে হয়; তেমনি ইসলামের জন্যও কঠোর সাধনা দরকার। ক্রিকেট শিখতে হয় মাঠে, খেলতেও হয় মাঠে। কিন্তু ইসলাম শিখতে হয় মসজিদে। স্টেডিয়ামে এসে মাঠে ঢোকার আগে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করে এ শিক্ষার বাস্তবিক উদাহরণও দিয়ে গেলেন সাঈদ।
ক্রিকেটের জন্য সারা দুনিয়ায় পরিচিত সাঈদ আনোয়ার ক্রিকেট খেলতে কখনই চট্টগ্রাম আসেননি। তবে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে এর আগেও একবার এসেছিলেন দ্বীনের দাওয়াত দিতে। ছিলেন লাভলেইন এলাকার মাদানি মসজিদে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম এসে এবারো অবস্থান করছেন সেই একই মসজিদে। এর আগে শুক্রবার তিনি মসজিদে মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘মাছ যেমন পানি ছাড়া থাকতে পারে না; তেমনি মুসলিমও মসজিদ থেকে দূরে থাকতে পারে না। খেলাধুলা মাঠের জিনিস। কিন্তু মনে রাখতে হবে পরকালই আসল। সেই জগতের তালিম নিতে হবে, এজন্য মসজিদে আসার কোনো বিকল্প নেই।’
ক্ষুদে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, ‘একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল ক্রিকেট খেলে জীবনে অনেক ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। অনেক কিছুই পেয়েছেন। কিন্তু পরকালের জন্য কী করলেন?’ তখন মনে হয়েছিল সত্যিই তো, পরকালের জন্য তো কিছুই করিনি। তখন থেকেই তাবলিগের দাওয়াত দিতে শুরু করলাম। কিন্তু দাওয়াতের উদ্দেশ্য এটি নয়, সব ছেড়ে দিয়ে এ পথে আসতে হবে। ক্রিকেটাররা অধিকাংশ সময় মাঠে থাকে আর মুসলমান থাকেন মসজিদে।’ তিনি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন সবচেয়ে বড়। আল্লাহ বান্দাদের বলছেন, তোমরা আমার কাছে আসো। খোলোয়াড়দেরও দ্বীনের পথে আসতে হবে। যেমন এসেছেন আফ্রিদি, ইনজামামসহ অনেক ক্রিকেটার। মুসলমান মসজিদে থাকলে জীবিত থাকে। মসজিদের বাইরে সে মৃত। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদের ভেতরে পড়তে হবে। যে ব্যক্তি অধিকাংশ সময় মসজিদে থাকেন, নবী-রাসুল তাকে মুমিন হিসেবে সাক্ষী দেবেন। আল্লাহ তার সঙ্গী হবেন। নবী-রাসুল তার সঙ্গী হবেন। মনের মধ্যে সব সময় কালিমাকে ধারণ করতে হবে।
পাকিস্তান জাতীয় দলের সাবেক উইকেটকিপার জুলকারনাইনও ছিলেন সাঈদ আনোয়ারের সঙ্গে। ক্ষুদে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের জিন্দেগির কোনো মূল্য নেই। গাড়ি-বাড়ি কিছুই কাজে লাগবে না। আসবে এ দ্বীন, এ ইসলাম। আমি ৩০ দিনের মধ্যে চারদিন তাবলিগে থাকি। আল্লাহ ছাড়া কারো ওপর ঈমান আনা যাবে না। ভালো খেলোয়াড়ের সঙ্গে সঙ্গে ভালো নামাজি হতে হবে।’
সোমবার বিশ্ব ইজতেমার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ছাড়বেন পাকিস্তানের এ দুই সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার।