somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

জীবনের শেষ গোধূলী-০১

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষাট/পঁয়ষট্টি বছর বয়সের এক বয়স্ক মহিলা, সমস্ত চুল পাকা সাদা ধবধবে, পাটের মতো সাদা। কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, চিবুক, গালের চামড়ায়ও অসংখ্য ভাঁজ পড়েছে। সেই বুড়ি বারো শিবালয় মন্দিরের গা ঘেঁষে প্রাচীন বটগাছটার আশেপাশে, ছোট যমুনা নদীর তীরে সেই বিকেল থেকে কী যেনো খুঁজছে, কোনো মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেলে মানুষ যেমন হন্য হয়ে খুঁজে তেমনি হন্য হয়ে খুঁজছে আর বিড় বিড় করে বুলি আওড়াচ্ছে, আরে বাবা যাবে তো যাবে, নিজের ছায়াটা তো রেখে যাবে আমার জন্য। তোমাকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছায়া দর্শন বইটা দিয়েছিলাম না, পড়েছো? পড়লে তো ছায়াটা রেখে যেতে ভুল করতে না। এরকম তুমি বরাবরই করতে, আমি তোমাকে ইমদাদুল হক মিলনের বিখ্যাত উপন্যাস নূরজাহান দিয়েছিলাম, পড়োনি। সেই উপন্যাসটা আমি কিনেছিলাম কত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ইমদাদুল হক মিলনের অটোগ্রাফসহ। ইমদাদুল হক মিলন লিখেছিলেন, ’’ভালোবাসা থাকলে সব হয়’’। আর সেই অটোগ্রাফ পড়েই তো আমি তোমার কাছে চলে এলাম সবকিছু ছেড়ে। অথচ তুমি সেই উপন্যাসটা পড়লেই না।

ঠিক একই কাজ করেছো হয়তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ছায়া দর্শন বইটাও। যদি পড়তে তবে ছায়াটা রেখে যেতে ভুল করতে না। আজ এসে তোমার ছায়াটা দেখতাম। তুমি জানো তোমার ছায়াটা দেখার জন্য আমি সেই কতদূর থেকে এসেছি, লুকিয়ে, সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে। ওরা আমাকে তোমার সাথে কথা বলতে দিবে না বলে আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছিলো, আমাকে পাহারা দিয়ে স্কুলে পাঠাতো, স্কুলের সব কলিগদের বলে দিয়েছিলো আমি যেনো তোমার সাথে কথা বলতে না পারি। আমাকে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করিয়েছিলো আমি যেনো তোমার সাথে না বলি। তবুও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার সাথে কথা বলার জন্য ফোন করেছি কিন্তু সেই বেয়াদব মহিলাটা বার বার করে বলেছে, দু:খিত এই মুহূর্তে মোবাইল সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যদি সেই মহিলাটাকে কাছে পেতাম তবে আমি ওকে জুতোপেটা করতাম।

একদিন তোমার সাথে কথা বলার জন্য আমি ফোন করছিলাম আর সেই বেয়াদব মহিলাটা বার বার দু:খিত বলছিলো। সেটা দেখে ওরা আমার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো, আমাকে প্রচণ্ড মার দিলো, দেখো আমার সামনের দাঁতটা ভাঙ্গা কী না। বলে বুড়ি বট গাছের সেই যুগলবন্দি লতার কাছে দাঁড়ালো। তারপর আবার বিড়বিড় করে বলতে শুরু করলো, যেদিন আমরা প্রথম এখানে এলাম সেদিনই জায়গাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছিলো। তারপর তোমার জন্মদিন পালন করলাম এখানে। তোমার জন্মদিনের ক’দিন আগে থেকেই সে কী প্রস্তুতি আমার, তোমার জন্মদিনে কী দেবো আমি এই নিয়ে আমার চিন্তার অন্ত ছিলো না। সেদিন সকাল থেকে উত্তেজনায় আমি যেনো কাঁপছিলাম। কখন মোশা স্কুল যাবে, কখন আমি স্কুলে গিয়ে হেড স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে তোমার কাছে আসবো। তুমি বার বার ফোন করছিলে, ইরা দেরি করছো কেনো? তোমার কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আমি বললাম, না।
তাহলে দেরি করছো কেনো?
আমি তখন বেকারিতে তোমার জন্মদিনের কেক-এ নাম লিখতে দিয়ে ক্যাটস পো’তে তোমার জন্য শার্ট কিনছি, আমি তখন কৃত্রিম রাগান্বিত স্বরে বললাম, এতো ব্যস্ত হয়োনা তো। একটু ধৈর্য ধরো। আমি আসছি।
আমি যতই রেগে যাই তুমি আমার ওপর কোনোদিন রাগ করতে না, এটা তোমার একটা বড় গুণ। তুমি হেসে বললে, একটু তাড়াতাড়ি এসো সোনা।
আমার সব কেনাকাটা ব্যাগে নিয়ে একটা অটো রিক্সায় উঠলাম। তুমি ততক্ষণ দাঁড়িয়েছিলে। আমি দেরিতে এলাম অথচ তুমি একটুও রাগ করলে না। একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললে, অনেক দেরি করে ফেললে, কখন যাবে আর কখন আসবে একবার ভেবে দেখেছো। তারপর রিক্সায় উঠলে।
বটগাছের নিচে এসে আমি তোমার হাতে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে বললাম, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ।
তুমি বললে, থ্যাঙ্কস।
তারপর আমি ব্যাগ থেকে জন্মদিনের কেক বের করে কেক, মোমবাতি সাজালাম। তোমার জন্য আনা শার্ট-প্যান্ট, পারফিউম আরো যত গিফট এনেছিলাম তোমার হাতে দিলাম। তোমার চোখে-মুখে সে কি আনন্দ দেখেছি আমি। তোমার চোখ দু’টো পানিতে ছলছল করছিলো। তুমি আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেছিলে, ইরা কেনো এতোকিছু করতে গেলে, কতকগুলো টাকা খরচ করে ফেললে আননেসেসারি।
তোমার চোখের পানি দেখে আমার চোখেও পানি এসে গেলো, আনন্দে, গর্বে। গর্ব এজন্য যে, যে লেখকের শত শত ভক্ত যখন ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাসসহ বিভিন্ন ব্লগ এবং মোবাইল ফোনে জন্মদিন উইশ করছে সে লেখকের জন্মদিন পালন করছি শুধু আমরা দু’জন। আমার সেদিন নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়েছিলো। তোমার সেই জন্মদিনটা আমার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলির একটি।
এই বটগাছের নিচে সেদিন তুমিই আবিস্কার করেছিলে এই যুগলবন্দি লতাগুল্ম, কেমন বুকের মধ্যে জড়িয়ে আছে একটা লতা আরেকটা লতাকে।
চলবে..
এই গল্পটির পরের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন:জীবনের শেষ গোধূলী-০২
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ভিজিট করুন:www.writerzillur.com
আমাকে ফেসবুকে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে:www.facebook.com

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×