somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীলার বান্ধবী বৃষ্টি। শুধু বান্ধবী বললে ভুল হবে একেবারে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, দুজনের মধ্যে যেন আত্মার সম্পর্ক। ক্লাস ফাইভ পাস করার পর নীলা যখন চক ময়রাম হাই স্কুলে ভর্তি হলো তখন দু’জনের মধ্যে প্রথম পরিচয়। তারপর থেকে এক সঙ্গে এইচ.এস.সি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে কিন্তু এইচ.এস.সি পাসের পর দু’জনে যেন আলাদা হয়ে গেল। নিজের ইচ্ছায় নয় অনেকটা পারিপার্শ্বিকতার কারণে। দু’জনে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য এডমিশন টেস্ট দিল। নীলা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেল আর বৃষ্টি চান্স পায়নি। অগত্যা বৃষ্টি ভর্তি হলো একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে। দু’জনের ইচ্ছা ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলে এক সঙ্গে হল-এ থাকবে। কিন্তু বৃষ্টি চান্স না পাওয়ায় সে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে উঠল তার মামার বাসায়।

ইচ্ছা থাকলে দূরত্ব কোন বিষয় নয় তার ওপর তা যদি হয় ঢাকা শহরে তবে তো দূরত্ব আরো কমে যায়। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টি ছুটে আসে নীলার কাছে। দু’জনে চুটিয়ে আড্ডা দেয়, কোন কোন দিন বৃষ্টি তার মামীকে মোবাইলে জানিয়ে দিয়ে থেকে যায় নীলার রুমে, তবে বেশির ভাগ দিনই বৃষ্টি চলে যায় তার মামার বাসায় আর নীলা তার হল-এ ঢুকে পড়ে।

বৃষ্টির মাধ্যমে নীলার পরিচয় হয় তারই মামাতো ভাই আকাশের সঙ্গে। বৃষ্টি আকাশের সঙ্গে নীলার পরিচয়টা করে দিল ঠিক এভাবে:

বৃষ্টি আর আকাশ ওয়েটিং রুমে নীলার জন্য অপেক্ষা করছিল। নীলা হল থেকে বেরিয়ে আসতেই বৃষ্টি বলল, কিরে এত দেরি করলি?

সরি বৃষ্টি একটু দেরি হয়ে গেল।

ঠিক আছে আর সরি বলতে হবে না। চল, বলে সবাই টি.এস.সি’র দিকে পা বাড়াল।

টি.এস.সি’র সামনে এসে বৃষ্টি আবার থমকে দাঁড়ালো, ও নীলা তোর সঙ্গে তো আকাশের পরিচয় করে দেয়াই হয়নি। আমার সঙ্গে যে সুদর্শন, স্মার্ট তরুণটা এসেছে সে আমার মামাতো ভাই, নাম আকাশ। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বি.বি.এ পড়ছে। আর আকাশ ও হচ্ছে নীলা, আমার বান্ধবী, শুধু বান্ধবী না আরো বেশি কিছু। তোকে কীভাবে বলি মানে নীলা যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হতো তবে আমি ওকে বিয়ে করে ফেলতাম, বলে বৃষ্টি হেসে ফেলল।

আকাশ লজ্জায় মাথা নত করল।

সবাই মুখোমুখি হয়ে বসল।

বৃষ্টি আবার বলতে শুরু করল, আকাশ আমার বান্ধবী কিন্তু খুব ভালো ছবি আঁকে।

আকাশ বলল, কথাটা তুই আগেও অনেকবার বলেছিস।

বৃষ্টি রেগে গিয়ে বলল, আর কী কী বলেছি?

বলেছিস তোর বান্ধবীটা খুব সুন্দর, স্মার্ট, ভদ্র, মার্জিত আরো অনেককিছু, মানে একটা মেয়ের যতগুলো গুণ থাকে তার সবগুলোই বলেছিস।

কোনটা মিথ্যা বলেছি?

সবকিছু সত্যি বলেছিস, তুই কি আমার কাছে মিথ্যা বলিস? আমি তোর বড় ভাই না?

জি তুই আমার বড় ভাই, বেশি বড় না, উনত্রিশ দিনের বড়।

নীলা হেসে ফেলল, বৃষ্টি তুই ঝগড়া থামাবি?

বৃষ্টি বলল, ঝগড়া থামাব কী রে ও তো সারাদিন আমার সঙ্গে ঝগড়া করে, এখানে তোর সামনে আবার নতুন কী?

আকাশ একটু স্মার্ট হয়ে বলল, তো ম্যাডাম নীলা আপনি কেমন আছেন?

বৃষ্টি ধমকের সুরে বলল, আপনি কী রে ওকে তুমি বলবি, আবার ম্যাডাম কিসের? মেয়ে পটানোর জন্য একেবারে ম্যাডাম বলছিস, কই আমাকে তো কোনদিন ম্যাডাম বললি না?

কোন অপরিচিত ভদ্র মহিলাকে হঠাৎ করে তুমি বলতে হয় না। আর ম্যাডাম বলে ডাকবো না তো কি বলব? তুই তো আমার কাজিন, তারওপর তোর চেহারাটা কেমন না একেবারে একটা ভুতুম পেঁচার মতো। তাই তোকে কীভাবে ম্যাডাম বলব? তুই-ই বল?

ও কাকে ম্যাডাম বলতে হবে, কাকে তুমি বলতে হবে আর কাকে তুই বলতে হবে এটা তাহলে চেহারার ওপর নির্ভর করে? আচ্ছা আমি ভুতুম পেঁচার মতো হলে অসুবিধা নেই আমার বান্ধবীটা সুন্দর তো? যা বলেছিলাম ঠিক সে রকম?

না।

কী আমার বান্ধবীটাও খারাপ, তাই না? আর নিজে খুব রাজপুত্রের মতো, তাহলে তো তোর নামটা আকাশ না রেখে প্রিন্স রাখাই ভালো ছিল।

আমি তো খারাপ বলিনি। আমি বলতে চাচ্ছি তুই নীলার সৌন্দর্যটা আমাকে গুছিয়ে বলতে পারিস নি। আসলে তোর তো ভাষা জ্ঞান কম তাই সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারিস নি, আমি বলি তুই শোন, তুই বলেছিস নীলা সুন্দর, স্মার্ট, ভদ্র এবং মার্জিত। কিন্তু এভাবে বললে নীলার সৌন্দর্যকে লুকিয়ে রাখা হয়। নীলা হচ্ছে অপূর্ব সুন্দর, অসাধারণ স্মার্ট, অত্যন্ত ভদ্র এবং মার্জিত।

তবে আর কি বিশেষণ বাকী থাকল?

আমিও বাংলায় দক্ষ না, তাই আর যা কিছু বাকী থাকল তা আমি জানি না।

বৃষ্টি কি যেন বলতে যাচ্ছিল। নীলা বলল, বৃষ্টি তুই একটু থামবি?

আচ্ছা আমি মুখে তালা লাগালাম। তোরা কথা বল। তবে কথা বলতে গিয়ে কেউ কোন ভুল করলে কিন্তু আমি চুপ করে থাকবো না। এই মনে কর তোরা কথা বলবি আর আমি রেফারির কাজ করবো।

তো মিঃ আকাশ বলুন আপনি কেমন আছেন?

বৃষ্টি বলল, এইতো তোরা আবার ভুল করলি তাই আমি আর কথা না বলে থাকতে পারলাম না। আকাশ আমার চেয়ে ঊনত্রিশ দিনে বড় আমি ওকে তুই বলে ডাকি, নীলা তুই ওকে বড় জোর তুমি বলতে পারিস।

আকাশ বলল, নীলা তুমি আমাকে তুমিই বল। আমার কোন আপত্তি নেই।

আমি ভালো আছি, তুমি?

ভালো।

তোমার গ্রামের বাড়ি?

ধামইরহাট, তোমার?

আমাদের গ্রামের বাড়ি পত্নীতলা উপজেলায়, তবে এখন ঢাকায় সেটল।

তোমরা ক’ভাই বোন?

আমার কোন ভাই-বোন নেই, আমি বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান, তোমরা?

আমরা এক ভাই এক বোন। আমি বড়, ভাইটা আমার ছোট, ও এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিবে।

তুমি তো জার্নালিজম নিয়ে পড়ছ, তাই না?

হ্যাঁ।

তারমানে লেখাপড়া শেষ করে সাংবাদিকতা করবে?

হ্যাঁ সেরকম ইচ্ছাই আছে।

মেয়ে মানুষ হয়ে হঠাৎ করে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছা হলো যে?

এতক্ষণ বৃষ্টি চুপ করে ছিল এবার বলল, কেন সাংবাদিকতায় কি মেয়েদের জন্য কোন বাধা আছে নাকি? আজকাল তো অনেক মেয়ে সাংবাদিকতা করছে, নীলা করলে অসুবিধা কি?

না অসুবিধা নেই।

নেই তবে উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করছিস কেন?

সরি বৃষ্টি আর উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন করে তোর বান্ধবীকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলব না।

আমরা এখানে বসে আছি তুই যা আমাদের জন্য চটপটি নিয়ে আয়।

যাচ্ছি, বলে আকাশ চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর চটপটি নিয়ে ফিরে এলো।

সবাই খেতে শুরু করল।

খাওয়া শেষ করে আকাশ বলল, ও নীলা তুমি নাকি খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পার?

সুন্দর না তবে ছবি আঁকতে পারি।

আমার একটা ছবি এঁকে দিবে, প্লিজ?

নীলা মৃদু হেসে সায় দিল।

আকাশ বলল, তবে ঠিক আছে আমরা আগামীতে যেদিন আসবো সেদিন তোমার কাছ থেকে তোমার আঁকা ছবি নিব।

নীলা মুচকি হেসে বলল, আচ্ছা।

তারপর সবাই নীরব।

কিছুক্ষণ পর নীলা মৌনতা ভঙ্গ করে বলল, বৃষ্টি আজ উঠি, জানিস তো হল-এ আবার সান্ধ্য আইন আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরতে হবে।

সবাই উঠে পড়ল।

আকাশ হ্যান্ড শ্যাক করার জন্য নীলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, সি ইউ।

নীলা চলে গেল আকাশ তার পথের দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ।

বৃষ্টি আকাশকে জিজ্ঞেস করল, কিরে কেমন লাগল আমার বান্ধবীকে?

এক্সিলেন্ট।
চলবে..


আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ঠিকানা
ফেসবুকে আমার লেখা উপন্যাস গডফাদার পড়তে লাইক দিন:গডফাদার
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×