somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেয়ামত সংঘটিত হবার নিদর্শণ সমূহ। পর্ব-৭

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম;

৬০) আকস্মিক মৃত্যুর হার বৃদ্ধিঃ

সম্প্রতি ঘটিত কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে আকস্মিক মৃত্যু অন্যতম। হার্ট এ্যাটাক, হাই প্রেশার এবং ব্যাপক সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অধিক হরে আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামতের নিদর্শনাবলীর মধ্যে - ব্যাপক হারে আকস্মিক মৃত্যু- অন্যতম।" (তাবরানী)
আগে মানুষ দুই-তিন দিন পূর্বে থেকে-ই মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে টের পেত। কিছুদিন বিছানায় অসুস্থ পড়ে থাকত। মরণ কাছিয়ে গেছে বুঝে- অসিয়ত লিখে রাখত। পরিবারের কাছে দোয়া ও বিদায় চাইত। সারা জীবনের পাপ থেকে আল্লাহর দরবারে তাওবার সুযোগ পেত। বেশী বেশী কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করত।

কিন্তু এখন...!! শুনে থাকবেন যে, সুস্থ সবল পূর্ণ আরোগ্য ব্যক্তিটি হার্ট এ্যাটাক করে গত রাতে মারা গেছে। অমুক মন্ত্রীর ছেলে পাঁচ বন্ধ সহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। সুতরাং জ্ঞানী মাত্র-ই সদা নিজেকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত রাখা চাই। গুনাহ হওয়ার সাথে সাথে তাওবা করে নেয়া চাই।

৬১) নির্বোধদের নেতৃত্বঃ

কথায় আছে- নেতৃত্ব ঠিক থাকলে জনগণ ঠিক। নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়লে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হুমকির মুখে পড়ে। কোরআন-হাদিসে অবজ্ঞা প্রদর্শনকারী নির্বোধ ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আগমনকে নবী করীম (সাঃ) কেয়ামতের নিদর্শন বলে চিহ্নিত করেছেন।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, একদা কাব বিন উজরা রা. কে উদ্দেশ্য করে নবী করীম (সাঃ) বলতে লাগলেন- "নির্বোধ ব্যক্তিদের নেতৃত্ব থেকে আল্লাহ পাক তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন!" নির্বোধের নেতৃত্ব কি? জিজ্ঝেসা করা হলে নবীজী বললেন- "আমার পর এমন সব নেতা-নেত্রীদের আগমন হবে, যারা আমার আদর্শকে অবহেলা করবে। প্রচুর মিথ্যা কথা বলবে। সুতরাং যারা-ই মিথ্যুকদের সত্য বলে বিশ্বাস করবে, অপরাধ-দুর্নীতিতে তাদেরকে সহয়তা করবে, অবশ্যই তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। হাউজে কাউসারে- তারা আমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না। পক্ষান্তরে যারা মিথ্যুকদেরকে সত্যায়ন করেনি, অপরাধ দুর্ণীতিতে সহয়তা করেনি, তারাই আমার উম্মত। আমি তাদের পক্ষে থাকব। হাউজে কাউসারে তারা আমার কাছে আসবে। ওহে কাব বিন উপরা.........! (জেনে রেখো!) রোযা হচ্ছে ঢাল, সাদাকা-পাককে ধুয়ে দেয় এবং নামায হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপায়। ওহে কাব বিন উজরা...! (জেনে রেখো!) অবৈধ উপার্জনে ক্রিত খাদ্যে যে মাংস শরীরে বেড়ে উঠল, তা কখনো-ই জান্নাতে প্রবেশ করবে না; বরং জাহান্নামের আগুনই তার জন্য অধিক মানানসই। ওহে কাব...! মানুষ প্রতিদিন (কর্ম শেষে)) প্রত্যাগমন করে, কেউ নিজেকে বিক্রি করে দিয়ে আসে, কেউ (নিজেকে জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে আসে।" (মুসনাদে আহমদ, মুসনাদে বাযযার)

অপর হাদিসে- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না প্রত্যেক জাতিকে মুনাফেক-রা নেতৃত্ব দেবে।" এখানে মুনাফিক বলতে যাদের অন্তরে খোদা-ভীতি বলতে কিছু নেই, দুর্বল ঈমান, প্রচন্ড মিথ্যাবদিী এবং গন্ডমূর্খ লোক উদ্দেশ্য।
ইমাম শাবী রহ. বলেন- "কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে প্রকৃত জ্ঞান হয়ে যাবে মূর্খতা, আর মূর্খতা হয়ে যাবে প্রকৃত জ্ঞান। এভাবেই দৃশ্যপট পাল্টে যাবে।"
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "কেয়ামত ঘনিয়ে আসার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে, উৎকৃষ্টদের অবহেলা করা হবে এবং নিকৃষ্টদের মর্যাদা দেয়া হবে।" (মুস্তাদরাকে হাকিম)

৬২) দ্রুত সময় পারঃ

দ্রুত সময় পার হয়ে যাওয়াকে নবী করীম (সাঃ) কেয়ামতের নিদর্শন বলে চিহ্নিত করেছেন।
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "(কেয়ামতের পূর্বমুহূর্তে) দ্রুত সময় পার হয়ে যাবে। (দ্বীনের) জ্ঞান কমে যাবে। পর্যায়ক্রমে ফেতনা প্রকাশ হতে থাকবে। ব্যায়কুন্ঠতা প্রকাশ পাবে। অধিক হারে সংঘাতের ঘটনা ঘটবে। 'সংঘাত কি?
-জিজ্ঞেস করা হলে নবীজী বলেন- হত্যাযজ্ঞ...হত্যাযজ্ঞ...।" (বুখারী-মুসলিম)

উলামায়ে কেরাম এখানে কয়েকটি সম্ভাবনার কথা বলেছেনঃ
১) সময়ের বরকত শেষ হয়ে যাবে। পূর্ববর্তী লোকেরা (দ্বীনী বিষয়ে) যে কাজ এক ঘন্টায় সেরে ফেলত, পরবর্তীগণ কয়েক ঘন্টায়ে-ও তা পারবে না।
ইবনে হাজার রহ. বলেন- "আমরা দ্রুত সময় পার হওয়ার বিষয়টি অনুভব করছি। অথচ পূর্বের যুগে এমনটি ছিল না।" (ফাতহুল বারী)
২) মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মানুষ একে অন্যের কাছাকাছি হয়ে যাবে, কেউ কাউকে দূরে ভাববে না।
৩) বাহ্যিক সংকোচন। হতে পারে শেষ জামানায় আল্লাহ পাক সময়কে দ্রুত করে দেবেন। আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলে দিবস দীর্ঘ করতে পারেন, ইচ্ছা করলে সংর্কর্ণ করতে পারেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহা ক্ষমাতাবান।

কারন, দাজ্জাল আবির্ভাবের প্রথম তিনদিন এরকম-ই হবে। প্রথম দিনটি এক বৎসরের ন্যায় দীর্ঘ হবে। দ্বিতীয় দিনটি এক মাসের ন্যায় দীর্য় হবে। তৃতীয় দিনটি এক সপ্তাহের ন্যায় দীর্ঘ হবে। তদ্রূপ আল্লাহ চাইলে দিবসকে সংকীর্ণ ও করতে পারেন।

আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- "কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না সময় কাছাকাছি হয়ে যাবে। ফলে বৎসরকে মাসের মত মনে হবে। মাসকে সপ্তাহের মত মনে হবে। সপ্তাহকে এক দিনের মত মনে হবে। দিনকে এক ঘন্টার মত মনে হবে। এক ঘন্টাকে বাতাসে উড়ে যাওয়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত মনে হবে।" (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী)
৪) কেউ কেউ এখানে- মানুষের আয়ু হ্রাস পাওয়া- উদ্দেশ্য বলেছেন।

চলবে.........................
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×