somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে উচ্চশিক্ষাঃ একটি আত্ম-জিজ্ঞাসা

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



উচ্চশিক্ষায় বিদেশ যাত্রী প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীর মুখে কাছাকাছি ধরণের প্রশ্ন। কোন দেশ আমার ক্যারিয়ারের জন্য বেশি ভাল হবে? কিংবা অমুক শহরে যাচ্ছি, তমুক ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন পেয়েছি, এই সাবজেক্টে
প্রসপেক্ট কেমন … কোন শহরটা বেশি ভাল, কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়লে আগে জব পাওয়া যাবে… বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়, বিদেশ মানেই সব ভালোর একটা জগত। আর সবাই গোল্লায় যাক, নিজের দরকার সবচেয়ে ভালো দেশটা, তার সবচেয়ে ভাল ইউনিভার্সিটিতে পড়া, সবচেয়ে ভাল শহরে যাওয়া যেখানে পথে ঘাটে চাকরি বিলি হয়। আর পড়ার খরচ? টিউশন ফি না থাকলে ভাল, আর যদি থাকে তাহলে যেন ফান্ডিং নিয়ে প্রফেসররা বসে থাকে।

খুব উৎকণ্ঠা নিয়ে লক্ষ্য করা যায়, বিদেশগামী কিংবা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক – এই শ্রেণীর প্রায় বেশীরভাগই খুব সম্ভবত একটা সাধারণ কথা ভেবে দেখার সময় পায়নি। খুব সামান্য একটা আত্ম-জিজ্ঞাসা, আমি নিজে কতটুকু যোগ্য — সবচেয়ে ভাল দেশে, সবচেয়ে ভাল ইউনিভার্সিটিতে যেতে, কিংবা গিয়েই ফান্ডিং বা স্টুডেন্ট জব পেতে! বিদেশ যাবার জন্য আমাদের যতটুকু আকাঙ্ক্ষা, যতটুকু উৎসাহ, আসলেই একটা উন্নত দেশে গিয়ে উন্নত জীবন যাপন করার জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত, কিংবা কতটুকু প্রস্তুতি নেই?

আমরা আসলে কেন বিদেশ যেতে চাই? উন্নত জীবন যাত্রার মান, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে উন্নত জীবনের সংস্থান, অনেক টাকা উপার্জন, নিজের গাড়ী, নিজের বাড়ী, সব মিলে জীবনটা উপভোগ করা… এই সব কারণগুলোর মধ্যে একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট, সেটা হল আমরা সবাই কিছু পেতে চাই, যেটা নিজের দেশে পাওয়া সম্ভব নয়। বেশি পেতে কে না চায়! সমস্যাটা অবশ্য অন্য জায়গায়, এই সব বেশি পেতে আমরা কি যোগ্য? কিংবা, আমরা কি এই যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে আমরা প্রস্তুত কিনা – এটা ভেবে দেখার সময় আমাদের নেই।

বিদেশের সবকিছু (কিংবা বেশীরভাগ কিছু!) আমাদের দেশ থেকে ভাল কেন? এর অনেক কারণ আছে, কোন সন্দেহ নেই। তবে, এই অনেক কারণের মধ্যে আমাকে যদি শুধুমাত্র একটা কারণ খুঁজে নিতে বলা হয়, আমি বলব – মানুষের আত্মনির্ভরতা! নিজের কাজ নিজে করা, নিজের সমস্যার সমাধান নিজেকেই খুঁজে নেওয়া। সর্বোপরি নিজের জীবনের দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেওয়া। যারা বিদেশে আসতে চায়, তাদের কতজনকে উপরের ক্যাটাগরির মধ্যে ফেলা যাবে?

বাস্তবতা হল, আমাদের বেশীরভাগ ছেলেপেলেরা বিদেশ যাত্রার পথে অন্যের সহায়তা ছাড়া এক পাও নড়াতে পারে না। যদিও সারাদিন ফেসবুকে লগ ইন করা থাকে, আর দিনে লাইকের সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি মারা হয়ে যায়, সামান্য ইনফরমেশনটা নিজে খুঁজে নেবার সময় নেই কারোরই। আর যদি বাবার পকেট ভারি থাকে, তাহলে তো এজেন্সি আছেই, কিছু পয়সা ঢাললেই হল, ভিসা রেডি হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই। এখনকার ইন্টারনেটের যুগে, গোগল ব্যাবহার করতে জানা কোন ইউনিভার্সিটির ভর্তির কন্ডিশনের মধ্যে নেই, তবে যারা এর ব্যবহার জানে না, কিংবা এই সামান্য জ্ঞানটুকু অর্জন করে নিয়ে সঠিক সাইটে গিয়ে নিজের ইউনিভার্সিটি, নিজের কোর্স খুঁজে নিয়ে নিজের ভর্তির প্রসেস নিজে করে নিতে পারে না, এদের বোধকরি নিজেকে আরেকবার প্রশ্ন করা উচিত – বিদেশে যেতে আমি কি আদৌ যোগ্য!!

সময়-জ্ঞান নিয়ে একটু না বললেই নয়। যে জাতি সময়ের মূল্য দেয়না, তাঁরা হয় অনুন্নত (যেমন আমরা!) অথবা তাদের উন্নয়নের ইতিহাস সংক্ষিপ্ত (গ্রিস!)। বাংলাদেশে কেউ যদি সময়মত কোন অনুষ্ঠানে চলে যায়, সেটা পারিবারিক দাওয়াতই হোক আর অফিসের মিটিং হোক, তাকে সাথে সাথে আঁতেল জাতীয় উপাধি দেয়া হবে। খুব সম্ভবত পরীক্ষার হল ছাড়া আর কোন কিছু আমাদের দেশে একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে শুরু হয় কিনা সন্দেহ আছে। এই পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসে হটাত করে সময়-জ্ঞান বদলে ফেলা সহজ কাজ নয়। তবে মোদ্দা কথা হল, যদি সময়ের কাজ সময়ে শেষ না করা হয়, তাহলে বিদেশকে বিভীষিকা মনে না হবার কোন কারণ নেই। আর এই সামান্য গুণটি নিজের মধ্যে না গড়ে নিতে পারলে সবচেয়ে ভাল দেশে সবচেয়ে ভাল ইউনিভার্সিটিতে পড়েও খুব বেশি লাভ হবার কথা নয়।

ছোটবেলায় যদিও আমরা অনেক শুনেছি স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, স্বাস্থ্য সচেতনতা দেশে প্রায় বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বলতে আবার অনেকে একটু মোটাসোটা নাদুস নুদুস কিছু মানুশকে বোঝে! কেউ কি খেয়াল করে দেখেছে যে, যেই দেশ যত বেশি উন্নত তাদের স্বাস্থ্য তত বেশি ভাল? কিংবা ব্যাপারটাকে আরেকটু ঘুরিয়ে বলা যেতে পারেঃ যে জাতির স্বাস্থ্য যত বেশি ভাল, তাদের উন্নতির সম্ভাবনা তত বেশি। কোন সন্দেহ নেই যে, দেশে বসে খেলাধুলা করার সুযোগ করে নেওয়া খুব সহজ কাজ নয়। তবে পয়েন্টটা হল, যারা বিদেশ আসতে চায়, তাদের এটা মাথায় রাখা দরকার যে, নিজের উন্নতির পূর্বশর্ত হল, নিজেকে ফিট রাখা।

ভাষা! আমেরিকা গেলে ভাল ইংরেজি শিখে যাও, জার্মানি আসলে জার্মান শেখ। শুধু টোফেল বা জিআরই তে কিছু নম্বর তোলার জন্য তোতা পাখির মতন কিছু শব্দ মুখস্থ করা নয়, নিজের মনের ভাব অন্য দেশের ভাষায় প্রকাশ করা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় শব্দগুলো জানা এবং তাদের সঠিক প্রয়োগ করা যায় -সেই দক্ষতা অর্জন করা। আমাদের দেশে সব কিছুর রেডিমেড সমাধান হল কোচিং সেন্টার, তবে ভাষা শেখার পূর্বশর্ত হল, সেই দেশের মানুষ ও সংস্কৃতির প্রতি সত্যিকারের কৌতূহল এবং আগ্রহ থাকা। যে দেশে আমি যেতে চাই, তাদের মানুষ, সাহিত্য কিংবা ভাষার প্রতি যদি আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকে, তাহলে আবার নিজেকে প্রশ্ন কর, আমি কি যোগ্য সেই প্রবাসে পাড়ি দিতে!

এক দেশের সাথে অন্য দেশের পার্থক্য আসলে তাদের মানুষের সাথে অন্যদেশের মানুষের পার্থক্য। একটি মানুষের সাথে আরেকটি মানুষের পার্থক্য তৈরি হয় খুব সাধারণ কয়েকটি দোষগুণ দিয়ে। সততা, একাগ্রতা, সময়ানুবর্তীতা, অধ্যবসায় – এমন সামান্য ছোট ছোট গুণাবলী দিয়ে তৈরি হয় উন্নত মানুষ, তাদের সমগ্রে উন্নত দেশ। বিদেশ যদি আমাদের দেশের মতন সহজলভ্য হয়ে যায়, যদি সেখানেও নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায়, যদি দেশের সব আরাম আয়েশ সেখানেও উপভোগ করা যায়, তাহলে বিদেশ কি আর সেই আকাঙ্ক্ষিত বিদেশ থাকবে?

বিদেশে উচ্চশিক্ষাঃ একটি আত্ম-জিজ্ঞাসা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×