somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭-১: দ্যা জার্মান ওয়ে

১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


২০০৪ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে গেল জার্মানি। অন্য দেশের মতনই জার্মানিতে ঝড় উঠল সমালোচনার। নতুন কোচ, নতুন পরিকল্পনার আহ্বান উঠল সমস্ত দেশ থেকে। জার্মানরা তাদের ফুটবলকে সিরিয়াস ভাবে নেয়। এবং যে যে বিষয়কে তারা গুরুত্ব দেয়, সকল ক্ষেত্রেই তাদের পরিকল্পনার মধ্যে একটা সাধারণ ছাঁচ দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়াকে শুধু "দ্যা জার্মান ওয়ে" দিয়েই বিশেষিত করা যেতে পারে।

"দ্যা জার্মান ওয়ে"-র প্রথম ধাপ মনস্থির করা। ফুটবল কি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে তার জন্য সর্বোপরি প্রচেষ্টা করতে হবে। সেই সর্বোপরি প্রচেষ্টার যাচাই করার একটাই মানদণ্ড, বিশ্বসেরা। জার্মানরা যদি কিছু করবে বলে ঠিক করে, তাহলে তারা সফলতা বলতে বোঝে শুধুমাত্র সমস্ত বিশ্বের মধ্যে সেরা হওয়াকে। দ্বিতীয় সেরা বলে সেখানে কিছু নেই।

"দ্যা জার্মান ওয়ে" মিরাকল বা রাতারাতি কিছু করাতে বিশ্বাস করে না। জার্মানরা মনে করে শুধুমাত্র পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন তাই সুনির্দিষ্ট এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। বিশ্ব সেরা হবার জন্য তারা অন্তত দশ বছরের পরিকল্পনা করবে, ধীরে ধীরে হাঁটি হাঁটি পা দিয়ে তারা লক্ষ্যে পৌঁছাবে। হুড়োহুড়ি করে এক লাফে উপরে উঠতে গিয়ে পা ফসকাতে তারা চায় না।


২০০৪ সালের পরে নতুন পরিকল্পনার আওতায় জার্মানির সকল ফুটবল ক্লাবে তরুণ এবং স্থানীয় খেলোয়াড় খোঁজার দেশব্যাপী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন আরম্ভ হয়। শুধু টাকা ঢেলে বিদেশী খেলোয়াড় আনা নয়, বরং লিগের ক্লাবগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হল স্থানীয় তরুণদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার। এই প্রক্রিয়ার সুফল আসা দুই দিনের কাজ নয়। ২০০৬ এবং ২০১০ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও এই প্রক্রিয়ার কাজ থেমে থাকল না। ফুটবল একাডেমীর মাধ্যমে টমাস মূলার, ওঁজিল বা কেদিরার মতন তরুণ খেলোয়াড়রা বের হয়ে আসতে থাকল, এবং নিয়মিতভাবে।

"দ্যা জার্মান ওয়ে" সফলতার জন্য টিম ওয়ার্ককে গুরুত্ব দেয়। শুধু মেসি নেইমারের মতন দুই একজন তারকা খেলোয়াড় তৈরি করা এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য নয়। বরং দলের ১১ জনের সবাইকে ফিটনেস, বল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব রকম কলা কুশলীর সমন্বয় গড়ে তোলা এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য। দলের সাফল্য যেন শুধু দুই-একজন কি-প্লেয়ারের উপরই নির্ভর না করে, বরং সবার সামগ্রিক প্রচেষ্টার ফলাফল হয়।

"দ্যা জার্মান ওয়ে"-র মূলমন্ত্র শৃঙ্খলা এবং অনুগত্যতা। সাকিব আল হাসান বা কোহলির মতন ঈশ্বর সম তারকারা যত ভালই পারফর্ম করুন না কেন, "দ্যা জার্মান ওয়ে"তে তারা দলে জায়গা পাবেন কিনা সন্দেহ। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আমেরিকার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ডোনাভেনকে বাদ রেখেই এইবারের বিশ্বকাপের দল গড়েছিলেন "দ্যা জার্মান ওয়ে"র অন্যতম রূপকার ইউর্গেন ক্লিন্সম্যান। কে কত বছর ধরে জাতীয় দলে, কার কত বড় রেকর্ড, কে কার ভাগিনা - এইসবের বদলে দল নির্বাচনে শুধুমাত্র দেখা হবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোন খেলোয়াড়টি সবচেয়ে জরুরী।


চার বছর আগে যখন আর্জেন্টিনার জালে চার বার বল জড়িয়েছিল জার্মান দল, তখনও সবাই "দ্যা জার্মান ওয়ে" উপস্থিতির চেয়ে আর্জেন্টিনা এবং তাদের তারকা খেলোয়াড়দের ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখেছিল। জার্মানরা পরবর্তিতে সেমিতে হেরে গেলেও তাদের লক্ষ্য থেকে এক চুল নড়েনি। "দ্যা জার্মান ওয়ে" তার বিশ্বসেরা হবার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।


ব্রাজিলের ইতিহাসের শোচনীয় তম পরাজয়ে বিশ্বজুড়ে যতই বিস্ময়ের ঝড় উঠুক না কেন, "দ্যা জার্মান ওয়ে" জানে এই ফলাফল কোন ফ্লুক বা "ওভারনাইট সেনশেসন" নয়। এই সাফল্য দশ বছরের লক্ষ্যে অটুট থেকে সুপরিকল্পিত ফুটবল শৈলীর এক অপূর্ব বিজয়। টেকনিক্যাল ফুটবল, ক্ষিপ্র গতি, সারা মাঠ দৌড়ে খেলা, সর্বোপরি দলীয় সমঝোতার পরিপূর্নতায় পৌঁছে যাওয়া "দ্যা জার্মান ওয়ে"র কাছে ব্রাজিলের নান্দনিক অথচ পরিকল্পনা বিহীন, তারকাখচিত অথচ সমঝোতা বিহীন ফুটবলের পরাজয় ছিল তাই অবশ্যম্ভাবী।

আদনান সাদেক
৯ই জুলাই, ২০১
বিশ্বকাপ নিয়ে অন্যান্য লেখা
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:২২
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×