somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু উষ্ণতার জন্য

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-দেখতো আমাকে কেমন লাগছে এই সোয়েটারটাতে?
- ভাল না বেশি।
-ভাল না কেন? জিনিসটা তো খুব সুন্দর। রঙটাও আমার পছন্দের। চেইনটা গলা পর্যন্ত উঠে গেছে, ঠিক যেমন খুঁজছিলাম। ভেতরে তুলতুলে মোলায়েম লোমের উষ্ণতা। গায়ে দিয়ে ভীষণ আরাম বোধ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে আর না খুলি। একবারে এটা পরেই বাসায় যাব।
- তাহলে আর কি, কিনে ফেল। দাম কত?
- একটু বেশি, ৪৯ ইউরো।
- এতো দাম দিয়ে কিনবে? এখানে দেখ ১০-১২ ইউরোতে কত সুন্দর সুন্দর সোয়েটার আছে।

একটু অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোয়েটারটা খুলে রাখলাম। বউয়ের কথা ঠিক। আসলেই ৪৯ ইউরো দিয়ে সুয়েটার কেনার কোন মানে হয় না। পরতে একটু বেশি আরাম এই যা। তাছাড়া বেশি দাম দিয়ে সুয়েটার কিনলেও মধ্য বয়সের বরকে দেখে বউ এখন আর "বাহ, বেশ মানিয়েছে তো তোমাকে" টাইপ কথা বলে না। বিশেষ করে পছন্দ যেহেতু আমার করা।
দুইদিন পরে দেখি বউ ঠিক আমার জন্য অন্য একটা নতুন সোয়েটার কিনে এনেছে।

- এই রঙটা তোমাকে খুব মানাবে। দেখতো সুন্দর না?
- হ্যাঁ, ভালই তো দেখতে।
সোয়েটারটা গায়ে দিয়েই সেই ৪৯ ইউরোর পুলওভারটার কথা মনে পড়ল। কোথায় আব্বাছ আর কোথায় গাব গাছ! তারপরও বউয়ের কেনা জিনিস বলে কথা, এটা নিয়ে কথা বাড়ানো ঠিক হবে না। এইবারের শীত বউয়ের কেনা পুলওভার পরেই কাটাব।

ঘটনাচক্রে দুইদিনের মধ্যেই আবার সেই দোকানে যাওয়া পড়ল। আমার সেই আরাধ্যের সোয়েটারটা তখনও সেখানে ঝুলছে। গায়ে পরা নতুন সোয়েটারটা খুলে আরেকবার সেটা গায়ে চড়ালাম। আহ, কি আরাম! দুটো পয়সা দাম কি আর এমনি এমনি বেশি! যা আছে কপালে এইটা কিনেই ফেলব নাকি? একটা নাহয় বেশিই কেনা হোক এই বছর। আবার একটু দোমনা করি। ঘরে পুরনো অথচ এখনও যথেষ্ট ভাল আছে এমন অন্তত ৬-৭ টা সোয়েটার আছে। জ্যাকেটও ঝুলছে মনে হয় আলমারিতে ৩-৪ টা।

নিজের সাথে একটু মনে মনে বচসা করি।
- দেরী না করে কিনে ফেল। এতো কি ভাবছ?
- ঘরে অনেকগুলো ভাল সুয়েটার আছে। এরমধ্যে নতুন কিনে দিয়েছে বউ। এখন আবার এইটা কেনা ঠিক হবে?
- এমন তো না যে টাকা নেই।
- না, ঠিক সেটা সমস্যা না। তারপরও...
- দুইদিনের দুনিয়া। শখের জিনিসের দাম লাখ টাকা।
- আচ্ছা, তাহলে কিনেই ফেলব?
- একশবার। দরকার হলে দুইটা কিনবে। একটা বাসায় পরার জন্য, আরেকটা অফিসে।
- ঠিক আছে, তাহলে কিনেই ফেলছি।

সুয়েটারটা নিয়ে ক্যাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, সেই সময় মোবাইলটা বিপ করে উঠে। ফেসবুকের নোটিফিকেশন। তাহমিদ খান ইনভাইটেড ইউ টূ এন ইভেন্ট "আসুন, সংঘবদ্ধভাবে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই"। একটু থমকে গেলাম। কি মনে করে ইভেন্টের বিস্তারিত বর্ণনা পড়তে শুরু করলাম।

শীত আসছে শীত। হাড় কাঁপুনি দেয়া শীত। চায়ের কাপের ধোঁয়া ওঠা শীত নয়, বালিশ কম্বলে আরাম করে অলস হয়ে আরামের ঘুম দেবার শীত নয়। সামান্য গরম বস্ত্রের অভাবে চট গায়ে বেঁধে ছেঁড়া কুটিরের ফোঁকর দিয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে কাঁপতে থাকা কিশোরীর শীত। সূর্য ডোবার পরে রাস্তার পাশে খড়কুটো জমিয়ে সামান্য আগুনে ঠাণ্ডায় অবশ হয়ে আসা কিশোরের বিবর্ণ হাতে একটু উষ্ণতা পোহানোর শীত। রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছেলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে নেমেছে। এরা ফেসবুকে একটা ইভেন্ট করেছে, যদি কিছু শীত বস্ত্র এখন থেকেই যোগাড় করে ফেলা যায় একে ওকে বলে কয়ে। যদি তা দিয়ে যাদের গরম কাপড় আছে, সেই উষ্ণতা একটু করে হলেও ছড়িয়ে দেয়া যায় তাদের মাঝে, যাদের কিছুই নেই।

আমি জানি আমি ভাল গল্প লিখতে জানি না। ভাল গল্প লিখতে পারলে হয়তো বলতাম, এই যে গল্পটা ফ্রি ঘরের আরাম কেদারায় কোমল উষ্ণতায় পড়ছেন, এর বিনিময়ে ঘরের পুরনো গরম কাপড়গুলো কুরিয়ার করে এই স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে পাঠিয়ে দিন। এমনকি কুরিয়ার করার খরচটাও এরা দিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

Click This Link target='_blank' >ইভেন্টের লিঙ্কঃ Click This Link



শুধু এই ছেলেদের ইভেন্ট নয়, ব্লগে ফেসবুকে আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা চেষ্টা করছে তাদের সময় ব্যয় করে অন্যদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। আমাদের না হয় একটা জায়গায় দুইটা সোয়েটার কিনতে সমস্যা নেই, কিন্তু যাদের এই বিলাসিতা করার অবকাশ নেই তাদের কথাও যেন আমরা ভুলে না যাই।

‪#‎আদনান_সাদেক‬

পুনশ্চ: এই বছর আর নতুন কোন সোয়েটার কিনব না বলে ঠিক করেছি। বরং সেই ৪৯ ইউরো রাজশাহীতে পাঠিয়ে দিলাম। হয়তো এই সামান্য টাকায় কয়েকজনের শীত নিবারণ হবে। আমি নিশ্চিত, একটি পুরনো শীতবস্ত্র পরিধান করে কিশোর ছেলে আনন্দে বলে উঠবে, আহা, কি আরাম!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×