কালো টাকার উত্স হলো কালো বাজার | এই লেখায় আমি দেখাবো কালো বাজার কাকে বলে আর কালো টাকা সেখান থেকে কিভাবে তৈরী হয় |
যেকোন বেআইনি কারবারকে কালো বাজার বলে | যেসব পণ্য ও পরিসেবা আইনবিরুদ্ধ তার ব্যবসা করাটাই হলো কালো বাজার | এইসব পণ্যের মধ্যে আছে : দেহব্যবসা, মাদক চোরাচালান , অস্ত্র ব্যবসা, যৌন শোষন, কাঠের চোরাচালান, চোরাশিকার আর পশুর ব্যবসা, মদের ব্যবসা, দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ব্যবসা, জাল ওষুধের ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসা, হাওয়ালা ইত্যাদি | ভারতে এইসব কারবার প্রায় মহামারীর মত ছেয়ে গেছে |
কে নেই এইসব কারবারে ? হরিদাস পাল থেকে বড় বড় নেতা মন্ত্রী ইত্যাদি সব্বাই জড়িত | এইসব কারবার থেকে যে টাকা আসে তা আইনের চোখে কখনই বৈধ বলে গন্য হতে পারে না | সেইটাই হলো অবৈধ টাকা বা কালো টাকা | এগুলিকে সাদা করা অর্থাৎ বৈধ আয়ের অংশ হিসাবে দেখানোই হলো "কালো টাকা সাদা করা" | এখন এই মূলটা উপরে না ফেললে কোনমতেই কালো টাকা বন্ধ করা যাবে না | বলা বাহুল্য ঘুষ হলো কালো টাকা | কোন নেতা সেটা না নেয় ?
এছাড়াও কালো বাজারের আরেকটা সংজ্ঞা আছে | সেটা হলো যদি আইন না মেনে ব্যবসা করা হয় তাহলে সেটাকেও কালোবাজার বলা হবে | অর্থাৎ আপনি দোকান খুললেন কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স নেই, সপ এন্ড এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে নথিভুক্তি নেই | তাহলে আপনার দোকান আইনের চোখে অবৈধ হলো | আর সেই দোকান থেকে আপনার যা আয় হয় সেটাও অবৈধ | অর্থাৎ কালো টাকা | আমার নিজের একজন মক্কেল আছে | তার বৈধ ব্যবসা হলো সোনার কারবার অর্থাৎ স্যাকরা | আর আইনি কাগজপত্র নেই এমন দুটো ব্যবসা তার আছে | একটা হলো বন্ধকী কারবার আর আরেকটা হলো ঘটকালি কারবার | এই দুই কারবার থেকে যে আয় (প্রচুর আয়) তা কালো |
এই কালো কারবার বন্ধ না হলে কোনভাবেই কালো টাকা বন্ধ করা যাবে না | তা সে যতই ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বাতিল হোক না কেন | মোদী সরকারের ক্ষমতা নেই এই কালো কারবার বন্ধ করা , কারণ তার নিজের মন্ত্রীরা কি দলের সদস্যরাই হয়ত এর সঙ্গে জড়িত |এখন এই দেশের প্রায় ৯৯% মানুষ কালো কারবারে জড়িত | কারবারের সাইজ ছোট বড় যা খুশি হতে পারে | এই কালো কারবার প্রমান করা শক্ত কারণ কোনো কাগজপত্র নেই | আয় ধরা আরো শক্ত | বর্তমানে তা প্রমাণিত | টাকা ছিঁড়ে অথবা হাওয়ালার মাধ্যমে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে | সুতরাং কালো ব্যবসা রুখে দেওয়া যাবে না | তাহলে কি করণীয় ?
আসুন একটা সিমিলার ঘটনা দেখা যাক | ধরুন কোনো মানুষের দেহের ৯৯% পুড়ে গেছে | ডাক্তার কি তাকে আর চিকিত্সা করবে ? তাকে কি ওষুধ দিয়ে বাঁচানো যাবে ? নিশ্চয় নয় | তখন তার মৃত্যুকে মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই | সেই রকম আমাদের দেশের যেখানে ৯৯% মানুষ কালোবাজারী সেখানে কালো কারবার তথা কালোবাজারকে আইনের ওষুধ দিয়ে আর চিকিত্সা করার কোনো অর্থ হয় না | tঅখন একটাই কাজ করা উচিত | তা হলো কালো কারবারকে বৈধ ঘোষণা করে দেয়া উচিত | এতে করে ওই কারবারগুলি থেকে আসা টাকা সাদা তথা বৈধ হয়ে যাবে | আর এভাবেই একমাত্র বাস্তবসম্মত ভাবে কালো টাকার চিহ্ন মুছে ফেলা সম্ভব |
কথাটা খুব সিনিক-এর মত শোনাচ্ছে , তাই না ? কিন্তু এটাই এখন যুক্তিসম্মত কাজ | পৃথিবীর বহু দেশ এই পথে হাঁটছে | সুইজারল্যান্ড-এর জুরিখে ঘুষ নেয়া বেআইনি নয় | ইউরোপের কিছু দেশ যেমন ডেনমার্ক ইত্যাদিতে দেহব্যবসা বৈধ | আমেরিকার কয়েকটা রাজ্যেও বৈধ | থাইল্যান্ড তো সেক্স টুরিসম করে কোটি কোটি টাকা বিদেশী মুদ্রা কমিয়ে নিল | অস্ত্র ব্যবসা আমেরিকায় বৈধ | এই সেদিন মারিজুয়ানার উপর থেকে আমেরিকায় আইনি নিষেধাজ্ঞা হঠে গেল | এরকম বহু উদাহরণ দেখতে পাওয়া যাবে |
এছাড়া ব্যবসার উপর থেকে আইনের বন্ধন একটু শিথিল করলে বোধহয় ভালো হয় | এই পথে জাপান অনেক বেশি অগ্রসর | পিছিয়ে পড়ে শুধুই ভারত | দুঃখের কথা ভারত সরকার ও ভারতের জনতা এই সত্যটা কিছুতেই বুঝে না যে যখন সারা শরীর পুড়ে যায় তখন চিকিত্সা করে কোনো লাভ হয় না |
আপডেট ১৭/১১/২০১৬
এইভাবে কালো ব্যবসা বৈধ করার ফলে দেশের সরকারের প্রচুর রাজস্ব লাভ হবে | এক মদের ব্যবসা বৈধ করে তা থেকে অনেক টাকার রাজস্ব পাওয়া গেছে | বাকিগুলি বৈধ করলে না জানি আরো কত কি পাওয়া যাবে | এছাড়া কর্মসংস্থান হবে প্রচুর | মুম্বাই-এর ডান্স বার গুলিতে প্রচুর নারী পুরুষ কাজ করে | সরকারের লাভই লাভ |
এইভাবে কালো ব্যবসা বৈধ করলে আমরা মানুষ ভালো চিনতে পারব | কাউকে আর লুকোছাপা করতে হবে না | প্রকাশ্যে সবার ব্যক্তিত্ব আসবে | আমাদের ব্যবহার করা সহজ হবে |
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৬