এই পোস্টে কিছু কথা লিখতে বাধ্য হচ্ছি কারণ সেগুলি আমার নজরে এসেছে | বিজেপি এই যে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে , নিঃসন্দেহে তা জনহিতকর নয় কিন্তু তা একেবারে অহিতকরও নয় | এর ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, রাঘব বোয়ালরা পার পেয়ে গেছে | এমনকি সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলিকে কালোটাকার আওতার বাইরে রেখে একরকম কালোটাকা পাচারের আদর্শ জায়গাও করে দিয়েছে মোদী সরকার | এইসব ব্যাপার আমার আগের পোস্টগুলিতে বলা আছে | পড়ে নিন |
সবই ঠিক আছে | অস্বীকার করছি না | কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সত্য আছে | প্রচুর কালোটাকা ধরা পরেছে | ব্যাঙ্ক-এ হানা দিয়ে সিবিআই আর ইডির লোকেরা প্রচুর কালোটাকা ধরেছে | ব্যাঙ্ক কর্মীরা মায় ম্যানেজার পর্যন্ত এই কালোটাকার সঙ্গে জড়িত সেটাও সামনে এসেছে | সাধারণ মানুষের নোট দুর্ভোগের জন্য যতটা মোদী সরকার দায়ী ততটাই ব্যাঙ্ক কর্মীদের স্বার্থপরতাও দায়ী | ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা মোটা পার্সেন্টেজ কাটমানি নিয়ে নোট বদলে দিচ্ছিল এটাও জানা গেছে | আবার তারা নিজেদের বেতন আর আত্মীয়দের পেনশন-এর টাকাটা জনগনের জন্য পাঠানো টাকা থেকে তুলে নিচ্ছিল সেটাও জানা গেছে | যদিও আমজনতার মিডিয়া , গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের এসব খবর নিয়ে হেলদোল নেই | তার যত রাগ সরকারের উপর কারণ তার খদ্দের জনগনেরও রাগ সরকারের উপর | ব্যাঙ্ক কর্মীদের রহস্যময় কারণে তারা এড়িয়ে গেছে | সে যাই হোক |
অনেক লোক তাদের কালোটাকা ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে | তাতেও কালোটাকা বিনষ্ট হয়েছে | এককথায় মাঝারি মাপের কালোটাকার কারবারীরা মার খেয়েছে রান্ডম | এখানেই বিজেপির কৃতিত্ব | এই নোট বাতিল না করলে এই কটা কালোটাকাও ধরা পড়ত না | এটা নিঃসন্দেহে মোদী সরকার তথা বিজেপির কৃতিত্ব | এর জন্য তাদের ধন্যবাদ দেয়া উচিত |
এই অভিযান গরিব মানুষদের একটা দিকও দেখিয়েছে | জনধন একাউন্ট ব্যবহার করতে দিয়ে "গরিব" সাধাসিধে মানুষরাও প্রচুর টাকা কামিয়েছে | সুতরাং তারা একেবারে দুধের ধোওয়া তুলসীপাতা নয় | যদিও ভোট ভিখারীরা সেটা স্বীকার করবে না |
এই নোট বাতিল দেখিয়েছে যে ভারতের আমজনতার মজ্জায় মজ্জায় কালোবাজারী তথা কালোটাকা মিশে আছে | তাই তো এত টাকা ধরা পড়েছে | রাঘব বোয়ালরা তো ২ % | শুধু তারাই যদি কালো টাকার কারবারী হত তাহলে এত কালো টাকা ধরা পড়ত না | আর টাকা কামাবার মউকা পেলে কেউ কম যায় না তা সে গরিব মানুষের টাকাই হোক না কেন : এটা দেখিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা | এর মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-এর মত এক নম্বর ব্যাঙ্ক-এর কর্মচারিও আছে |
এই ঘটনায় বিজেপির একটি দিক সামনে এসেছে | সেটা হলো বিজেপি ভোটের রাজনীতি করে না | যদি করত তাহলে সে নোট বাতিলের পথে হাঁটত না | কারণ এটার ফলে বিজেপি আর ভোট পাবে না সেটা একটা বাচ্চাও বলে দিতে পারবে | বিজেপি আগেও নোট বাতিল করেছিল যখন তার নাম ছিল জনসংঘ | বিজেপির অন্যান্য ইসুগুলি যদি দেখা যায় তাহলেও এই সত্য স্পষ্ট হয় যে সে ভোটের রাজনীতি করে না | বিজেপি কখনো মুসলিম ভোট পায় না | সে হিন্দুত্ববাদী : এই কারণে | গোমাংস নিয়ে হইচই করে| বিজেপি দলিতবিরোধী তাই সে দলিত ভোটও পায় না | বিজেপি এইভাবে দুটি প্রধান ভোট ব্যাঙ্ক হারায় | এগুলি বিজেপির দীর্ঘদিনের ইসু | এইবারের রাজনীতি এটা আরো স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল যে বিজেপি দেশের ভালো চায় দলের ভালো চায় না | সেকুলার পার্টিগুলি যেমন এর উল্টোটা করে | কংগ্রেসের আমলে সে কখনই কালোটাকার বিরুদ্ধে একটা কথা বলার সাহস পায় নি | অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল | যদি কংগ্রেসের আমল হত তাহলে হয়ত কার্গিল পাকিস্তানকে লিখে দিয়ে আসতে হত | বিজেপি ব্যাঙ্ক-এর সুদ কমায়, ফলে মধ্যবিত্ত ভোটও সে হারায় | এগুলি বিজেপি জেনেশুনেই করে | সুতরাং বিজেপি আর যাই করুক ভোটের রাজনীতি করে না |
মজার কথা হলো এই জাজ্বল্যমান সত্যটা কেউ দেখতে পায় না | সব্বাই শুধু নিজেরটা নিয়েই তো ব্যস্ত | বিজেপির কাছ থেকে যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে সে ভালো পার্টি , যেমন সেকুলার পার্টি | আর না পাওয়া গেলেই খারাপ পার্টি | ওই দেশপ্রেম ট্রেম সব বাজে ব্যাপার | আগে তো পকেট | এই কারণেই এদেশে বিজেপি খুব কম সময় রাজত্ব করেছে | তবে যদি কোনো দল সত্যিই ভোটের রাজনীতি না করে তাহলে সেটা বিজেপি | এটা একটা বিরাট পাওয়া |
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২১