somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পল্লী বিদ্যুতের মিটার ও আমি দূর্নীতির উৎসাহদাতা

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক আত্মীয় গত বছর পর পর কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় নতুন মিটার নামানোর প্রয়োজন অনুভব করল। একদিন কথা প্রসঙ্গে আমাকে বলল, আমাদের ২ টা মিটার নামানো প্রয়োজন কিন্তু এক একটা মিটার নামাতে ১০,০০০/= টাকা লাগছে। আমি বললাম এত লাগার তো কথা না। মিটার খরচ সব মিলিয়ে হয়ত ২০০০/= হতে পারে। আমি উনাকে বললাম চিন্তা করবেন না, আমার মামা পল্লী বিদ্যুতের একজন অফিসার। উনি সুপারিশ করে দিলে আপনার কোন ঘুষ লাগবে না। উনি আশ্বস্ত হলেন।

গত বছর তারিখ ০৩ জুলাই ২০১২ গাজীপুর বোর্ড বাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জন্য ২ টা মিটারের জন্য আবেদন করি। আশা ছিল বড়জোর ১ মাসের মধ্যে মিটার নামানো যাবে। আমার মামা পল্লী বিদ্যুতের একজন কর্মকর্তা বর্তমানে বরিশাল সদরে কর্মরত আছেন । ভেবেছিলাম মামা সুপারিশ করলে আমার কাজটা অনেক দ্রুত হয়ে যাবে। মামা আমাদের ২ টি মিটারের জন্য তার এক কলিগ যিনি বর্তমানে গাজীপুর সদরে কর্মরত আছেন তাকে বলে দিলেন যেন দ্রুত আমার কাজটি হয়ে যায়। তিনি সেখানকার একজন প্রকৌশলী। ৪ জুলাই ২০১২ আমি তার নিকট গেলে উনি মামার প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখান। তিনি বলেন আপনি যান আমি বলেদিব। আপনার কাজ হয়ে যাবে। উনার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমি বাসার ফিরলাম এবং উনাদের (যাদের মিটারের জন্য আবেদন করেছি) বললাম আপনাদের মিটার খুব দ্রুত পেয়ে যাবেন। ওনারা আমার কথায় আশ্বস্ত হলেন।

১ মাস পর আমি সেই ভদ্র লোকের সাথে দেখা করতে যাই। উনি মৌখিক ভাবে বলে দিয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি। এবার তিনি আমার আবেদনের মানি রিসিটের ফটোকপির উপর লাল কালি দিয়ে একটা সুপারিশ লিখে সিল সাক্ষর করে বোর্ড বাজার অফিসে কর্মরত একজন ইন্সপেক্টরের সাথে দেখা করে উনাকে দিতে বললেন।

পরদিন সকালে আমি আবার বোর্ড বাজার অফিসে যাই। ও একটা কথা বলতে ভুলে গেছি, আমি কিন্তু বাড্ডা থাকি এবং এখান থেকেই প্রতি নিয়ত গাজীপুর গিয়ে আমাকে তদবির করতে হচ্ছে।
যে ইন্সপেক্টরের কাছে কাগজটা দিতে বলেছিল উনি আমার আত্মীয়ের এলাকার দায়িত্বে নাই। তাই যিনি ওই এলাকার দায়িত্বে আছেন তার কাছে কাগজটা দিলেন। উনি আমাকে বললেন এখন মিটার দেয়া বন্ধ, তার পর ও যখন সুপারিশ নিয়ে আসছেন তখন বাড়ী দেখতে হবে। উনি বলল আপনি যান আমি আধা ঘন্টা পর আসছি। সকাল দশটা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর উনি আসলেন। সব দেখলেন, বললেন আমি কাগজ পত্র কমপ্লিট করে দিব দেখেন ডিজি এম স্যার পাশ করে কি না। তবে উনি আমার কাছে কিছু প্রত্যাশা করছিল কিন্তু সরাসরি বলার সাহস পায়নি সুপারিশ থাকার কারনে যা আমি পরে টের পেয়েছিলাম।

পরদিন সকালে আবার গেলাম। উনি কাগজ পত্র কমপ্লিট করে ডি জি এম সাহেবের রুমে আমাকে ডুকিয়ে দিলেন। উল্লেখ্য মিটার পাশ করানোর জন্য গ্রাহককে ডিজি এমের রুমে যাওয়ার প্রয়োজন আমি দেখি না। ভদ্রলোক অভদ্রের মত যাচ্ছে তাই ব্যবহার করলেন। ফাইলটা আমার সামনে ছুড়ে ফেলে দিলেন। এবং তদন্তের নির্দেশ দিলেন । কিসের তদন্ত তা আমিও বুঝতে পারি নাই। জিজ্ঞেস করলেন মিটার কেন প্রয়োজন, আমি বলেছিলাম নতুন রুম উঠেছে তাই দরকার লোড নিতে পারছে না। উনি বললেন বাড়ী ভাড়া দিয়ে ব্যবসা শুরু করছেন, আপনার ওই মিটারও খুলে আনা হবে। বলে ফাইলটা আমার সামনে ছুড়ে ফেলে দিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রচন্ড অপমান সইতে না পেরে আমি কেঁদেছিলাম।

এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই মিটার দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমি গাজীপুর সদর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে আবার যাই। প্রকৌশলী সাহেব আমাকে বললেন আপনি চিন্তা করেন না, কয়েক মাস পর মিটার চালু হলে আপনারটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেয়ার ব্যবস্থা করব। আর এই ডি জি এম খারাপ। উল্লেখ্য যে ইন্সপেক্টর গিয়েছিল উনার মত এত খারাপ ব্যবহারের মানুষ আমি আমার জীবনে দেখি নাই।

অপেক্ষার পালা শুরু হল। দীর্ঘ ১০ মাস পর আমি জানতে পারি মিটার বিতরন আবার শুরু হয়েছে। আমি আবার বোর্ড বাজার জোনাল অফিসে আবার যোগাযোগ করি। এই বার মুল নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। ইন্সপেক্টর বললেন আপনার বাসা আবার দেখতে হবে। আমি বললাম আপনি নিজেই তো একবার গিয়েছিলেন। উনি বললেন আবার জেতে হবে। যাব যাব করে আমাকে ৭/৮ দিন ঘোরালেন। একদিন আমাকে রাত ৯ তা পর্যন্ত বিদ্যুৎ অফিসের সামনে দাড় করিয়ে রেখেছে। তারপর রাত ৯ টায় ফোন বন্ধ করে রাখল!!

আপনারাই বলুন এইটা কি কোন মানুষের কাজ???

আমি প্রতিদিন বাড্ডা থেকে সকালে যাই , সাড়ে নয়টার আগে না গেলে উনাদের আবার অফিসে পাওয়া যায় না। কত জ্বালা। এর পর একদিন উনি আমার ফাইল রেডি করলেন আর বললেন "ক" উনার সাথে দেখা করেন উনি রিপোর্ট দিলে মিটার পাস করে দিব। তারপর বহিরাগত লোকের ফোন নাম্বার দিলেন এবং তাকে ইন্সপেক্সনের দায়িত্ব দিলেন। তাকে ফোন করে যোগাযোগ করে বাসায় নিয়ে গেলাম। সব দেখে উনি বললেন

"আমাকে ৮০০০ টাকা দেন। আমি সব করে দিব। আপনি বুঝেন না ইন্সপেক্টর সাব আমার কাছে কেন পাঠাইছে!! উনিতো সরাসরি আপনার কাছে চাইতে পারে না। তাই আমার কাছে পাঠাইছে। "

আমি বললাম তাই বলে ৫০০০ টাকা ঘুষ। যেখানে মিটারের জন্য ধরা হয়েছে ৪১০০ টাকা সেখানে ঘুষ ৫০০০ টাকা এইটা কোণ কথা হলো? আমি বললাম বিকল্প কি আছে, উনি বললেন ২০০০ টাকা দিলে আমি ফাইলে সই করিয়ে দিব, বাকী কাজ আপনাকে করে নিতে হবে। আমি রাজি হলাম। তাকে ২০০০ টাকা দিলাম এবং ৩ দিন পরে এসে শুনি ডিজি এম সাহেব সই করেছে। এই বাটপারিটা আমার সাথে ১০ মাস আগে না করলে আমি কিন্তু মিটার পেয়ে যেতাম।

আমাকে ১৫ দিন পরে আবার যেতে বলল রড নেয়ার জন্য। আমি তাই করলাম। ইন্সপেক্টরকে বললাম কি কি করতে হবে। উনি বলল, মিটারের বোর্ড বসিয়ে তার পর যোগাযোগ করবেন। শালা একটা খাটাশ। দেখতে যেমন বিশ্রি কথাও তেমন। কোন গ্রাহকের সাথেই ভাল আচরন করে না। কথা মুখের মধ্যে অর্ধেক রেখে দিছে।

রড বোর্ড লাগানোর ৭ দিন পর আমি আবার অফিসে যাই। বলি রড বোর্ড লাগানো শেষ। এবার আমার ফাইলটা পাশ করে দিন। উনি আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললেন, আপনে আমারে জিগাইছেন কারে দিয়া অয়ারিং করাইবেন?? যান অয়ারিং রিপোর্ট নিয়ে আসেন। দেয়ালে ঝোলানো কতগুলো নাম্বার থেকে একজনকে ফোন দিলাম। তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে বাসায় নিয়ে দেখালাম। সেও নানা ছুতা বের করতে লাগল। এইটা লাগবে, ওইটা লাগবে নানান ছল চাতুরী কথা। সুইচ কেনার জন্য ৫০০, তার মজুরী ৫০০ ও অন্য কি অদৃশ্য খরচের জন্য ৫০০ টাকা নিল। আমি সানন্দে দিলাম। প্রায় ১ বছর হয়ে গেছে আর দৌড়াতে পারছি না, ক্লান্ত হয়ে গেছি।
৩ দিন পর আবার গেলাম। বাস থেকে নামার আগে ফোন দিলাম সেই বাটপারকে যে কাজের কথা বলে ১৫০০ টাকা নিয়েছিল। সে এখন ও অয়ারিং রিপোর্ট তৈরি করেনি। সে আরও ২ দিন পর আমাকে যেতে বলে। অনেক রিকোয়েস্টের পর সে আমাকে অয়ারিং রিপোর্ট দেয়। কিন্তু অনেক নাটকের অবতারনা ঘটিয়ে। তারপর আমার কাছে আরও কাজ বাকী আছে, না না ছল চাতুরী কথা বার্তা বলে আমার কাছে আরও ১০০০ টাকা দাবী করে। সুইচের জন্য যে টাকা নিয়েছিল তা কবে লাগাবে জানতে চাইলে বলে সুইচ লাগাতে হবে না, সে টাকা মেরে দিয়েছি- নির্লজ্জের মত আমাকে উত্তর দেয়। বলেন এই অবস্থায় আপনি কি করতেন?? শুধুমাত্র নিজের আত্তসম্মান রক্ষার্থে সমস্ত ঘুষের টাকা আমার নিজের পকেট থেকে ব্যয় করলাম। আর যাওয়া আসার খরচ তো আছেই।


মাঝের কিছু কথা বলা বাকি রয়ে গেছে। আমার এত ভোগান্তির শিকার হওয়ার মূল কারন ছিল সুপারিশ নিয়ে যাওয়া। টাকা চাইতেও পারে না আবার সইতেও পারে না। তাই এই বিড়ম্বনা।

দূর্নীতি যে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের মত সাধারন মানুষকে চিপায় ফেলে এত সুন্দর ভাবে তারা টাকা আদায় করে যা আপনাকে এতটাই পিড়া দিবে কিন্তু আপনি তাদের শুধু সহযোগিতা করবেন, প্রতিবাদ করতে পারবেন না। তাহলে যে আপনার কাজ হবে না। তাই ক্ষোভে দুঃখে একটা কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে, অন্যান্য বিলের মত জাতীয় সংসদে ঘুষের বিলটাও আমাদের এম পি-রা পাশ করে নিক। তাহলে আমাদের ভিতরে আর কোণ অপরাধবোধ কাজ করবে না। আমরা সেচ্ছায় ঘুষ দিব।
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×