বহুল প্রতীক্ষিত হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু হয়েছে গত ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি খুব উদগ্রীব ছিলাম কবে থেকে বাস সার্ভিস চালু হবে কারন বাড্ডা থেকে প্রতিদিন আমাকে অফিস করতে যেতে হয় গ্রীন রোড। দ্রুত ও জানজট বিহীন চলা চলের জন্য হাতিরঝিল রুট আমার জন্য আদর্শ। শুধু আমি নই আমার মত যারা বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রীতে থাকেন তাদের জন্য এই রুটের বিকল্প নেই।
হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর একটি চক্র হাতিরঝিলে অবৈধ মাইক্রোবাস দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু করে। মাত্র ৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য তারা ভাড়া নির্ধারন করল ২০ টাকা। প্রথম দিকে ভাল কিছু মাইক্রোবাস দিয়ে তারা শুরু করে। যাত্রী সেবা ভালই ছিল তাই কেউ তেমন আপত্তি করত না তাছাড়া আপত্তি করেও লাভ নেই কারন আমরা সাধারন জনগন কোন যায়গায় আপত্তি করে ঠাই পাই না। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা আমজনতা কোন না কোন চক্রের হাতে জিম্মি। যাক সেসব কথা, সময় গড়ানোর সাথে সাথে সেবার মান সিকায় গিয়ে ঠেকতে লাগল। বিভিন্ন ডাম্পিং স্টেশন থেকে ভাংগাড়ি মেরামত করে এই রুটে নামানো হলো। তিন জনের সিটে ৪জন, ইঞ্জিনের উপর সিট না থাকলেও সেখানে সিট বানিয়ে ৩ জনের বসার ব্যবস্থা করা হলো। আমি এমন ও দেখেছি, গাড়ীর সামনে ড্রাইভার সহ ২ জন্য বাসার ব্যবস্থা থাকলেও ৪ জন গিয়েছে সামনে বসে!!! রাতারাতি এই মাইক্রোবাস চক্র পেয়ে গেলো মধুর ঘনি। সেই মধুর ঝাঝালো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল চারিদিক। মাইক্রোবাস ব্যবসায় ভাগ বসালো ৩ থানার পুলিশ, রামপুরা, কাওরানবাজার থানা দলীয় বিভিন্ন অংগ সংগঠন। তাই গাড়ী প্রতি চাদা নির্ধারন হয়। মাইক্রোবাস ড্রাইভারদের মুখে শোনা, তারা প্রথম দিকে গাড়ী প্রতি দিন ৩০ টাকা দিন যা সর্বশেষ ১৩০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে যতদূর শুনতে পেরেছি।
এত সব ঝামেলা মাথায় নিয়েও আমরা আশায় ছিলাম বাস সার্ভিস চালু এই চক্রের দৌরাত্ত কমবে আমরা স্বস্তি পাব। কিন্তু সে গুড়ে বালি। ঘটেছে তার উল্টোটা। হাতিরঝিলের বাস এফডিসি পর্যন্ত যাবে বলা হয়েছিলো। কিন্তু সেটা হাতির ঝিলের বাইরে বের হয় না। যদিও সেটার অনেক কারন দেখানো যাবে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যারা কাওরানবাজার থেকে রামপুরা আসেন তাদের জন্য এই সার্ভিস আশানুরুপ হয়নি বলে আমি মনে করি। তার অন্যতম কারন কাওরান বাজার থেকে বাস কাউন্টারের দূরত্ব প্রায় ১ কিঃমিঃ। তাই ১ কিঃমিঃ হেটে এসে বাসে ওঠার মত আহাম্মকি আর হয় কি না জানিনা। তবে এতে যে কারো সুবিধা হয়নি তা নয়। সেই মাইক্রোবাস চক্র তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সগৌরবে। শত শত মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাইক্রোবাসে ওঠার জন্য তাহলে সুফলটা আসল কিভাবে?? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সুফল আসতে দেয়া হয় না কাউকে সুবিধা করে দেয়ার জন্য??? অনেকবার অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে এদের কিন্তু তারপর আবার আগের মতই সবকিছু!!!
বাস ভাড়ার কথা কি আর বলব, ১ কিমি আগে নামিয়ে দিয়েও ভাড়া নির্ধারন করেছে ১৫ টাকা। বাসের সংখ্যা ৪ টি যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
পরিশেষে একটা কথাই বলব, আশা করা ভাল তবে সেটা যেন সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩১