ওই ঘটনা বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোর সাড়ে ৩টায় ভারতীয় বাহিনী বড়াইবাড়ী দখলের উদ্দেশ্যে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে। রাতের আঁধারে বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্প দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায় তারা। রাতে ধানক্ষেতে পানি দিতে আসা মিনহাজ উদ্দিন নামের এক যুবককে রাস্তায় পায় ভারতীয় বাহিনী। তার কাছে জানতে চায় বিডিআর ক্যাম্প কোন দিকে। সে ঘটনা বুঝতে পেরে বিডিআর ক্যাম্পের উল্টো দিকে তাদের দেখিয়ে দেয়।
ভারতীয় বাহিনী সেদিকে রওনা করলে মিনহাজ উদ্দিন জীবন বাজি রেখে বিডিআর ক্যাম্পে চলে আসে এবং ভারতীয় বাহিনী প্রবেশ করার সংবাদ দেয়। এ সংবাদ পেয়ে প্রস্তুতি নেন বিডিআর ক্যাম্পের সদস্যরা। এরই মধ্যে রাস্তায় টহল বিডিআর পেয়ে গুলি চালায় ভারতীয় বাহিনী। এদিকে প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্প থেকে পাল্টা গুলি চালায় বিডিআর। শুরু হয় যুদ্ধ।
ভারতীয় বিশাল বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অটল থাকে ক্যাম্পের ২৫ বিডিআর। সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলে স্থানীয় জনগণও। আক্রমণের সংবাদ পেয়ে জামালপুর থেকে সকাল ১০টায় লে. কর্নেল শায়রুজ্জামানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত ফোর্স সেখানে পৌঁছায়। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র রূপ নেয়। ১৮ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ যুদ্ধ। ভারতীয় বাহিনী মরিয়া হয়েও বিডিআর ক্যাম্প দখলে নিতে পারেনি। এক পর্যায়ে প্রাণে বেঁচে থাকা দুই বিএসএফ সদস্য আত্মসমর্পণ করে। তবে এর আগে প্রথম আক্রমণেই বিডিআর ক্যাম্প দখলে নিতে না পেরে ভারতীয় বাহিনী গ্রামের ৮৬টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
২০০১ সালের এই দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ীতে হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রাতের আঁধারে বড়াইবাড়ী বিডিআর ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকা দখল করে নিতে আক্রমণ চালিয়েছিল ভারতীয় বাহিনী; কিন্তু তাদের সেই আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল তত্কালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) ও এলাকাবাসী।
বিডিআর-জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ ভারতীয় বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। তত্কালীন বিডিআর মহাপরিচালক আ ল ম ফজলুর রহমানের তথ্য অনুযায়ী বড়াইবাড়ী যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য নিহত হয়। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দেয়া বক্তব্যে তিনি একাধিকবার এ তথ্য জানিয়েছেন। অপরদিকে বিডিআরের শাহাদাত বরণ করেন ৩ জন। নিজের জীবন দিয়ে ৩ বিডিআর সদস্য দেশের মাটি রক্ষা করেন; কিন্তু তাদের আজও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ বড়াইবাড়ী এলাকার মানুষ।
তবে ২০০৯ সালে দৈনিক আমার দেশ’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বড়াইবাড়ীর ৩ শহীদ পরিবারকে দেশ রক্ষায় বীর সন্তানদের অবদানের জন্য আনুষ্ঠানিক সম্মাননা এবং ৫০ হাজার করে নগদ টাকা দেয়ায় তারা ভীষণ খুশি।
বড়াইবাড়ীর ঘটনার বিষয়ে নতুন প্রজন্মের স্থানীয় যুবকরা বলেছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি বা দেখার সৌভাগ্য হয়নি; কিন্তু ২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে যে যুদ্ধ রচিত হয়েছিল তাকে সত্যিকার অর্থে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ বলেই মনে হয়েছে। ১৮ এপ্রিল রাত থেকে যুদ্ধ চলে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। যুদ্ধে বিডিআরের ল্যান্স নায়েক ওয়াহিদ মিয়া, সিপাহী মাহফুজুর রহমান ও সিপাহী আবদুল কাদের শহীদ হন। গুরুতর আহত হন আরও ৬ জন। ২০ এপ্রিল যুদ্ধ থামার পর বিডিআর-বিএসএফ পতাকা বৈঠকে ১৬টি লাশ ও দু’জন আত্মসমর্পণকারী বিএসএফ সদস্যকে হস্তান্তর করা হয়।
ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী দিবস : এই দিনে বিএসএফ এর আক্রমণের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল বিডিআর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাদিকে গুলি করলো কে?
হাদিকে গুলি করলো কে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইতিহাসের সেরা ম্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমি আর এমন কে

যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।