বেশি কিছুদিন হল পুরি আলামের রাতে ঘুম হয় না, দিনে বুক ধড়ফড় করে। কন্ঠার হাঁড় বেরিয়ে গেছে, চোখের নিচে একগাদা কালি পড়ে গেছে। জীবনটা কেমন দিনদিন বৃত্তবন্দী হয়ে যাচ্ছে। বেকার জীবন। পাস করেছে অনেক দিন হল, কোন চাকুরীই পছন্দ হয় না। দেশের বাইরে যাবে। উচ্চশিক্ষার কথা শুধু ভাও, আসল কারন আলস্য। আইইএলটিএস দিয়েছিলো, স্কোর ৪.৫ দেখে বাপে খেপেসে। তারপরও জিআরই দেয়ার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হতে টাকা দিয়েছে।
জিআরই আরো কঠিন লাগে। দাতভাঙা ইংরেজি। মাঝে মাঝে খেপে গিয়ে তার ইচ্ছে করে পুরা ইংরেজ জাতিটাকেই দাত ভেঙে দিতে। তবে তার মেজাজের পারদ এত উচ্চচাপে ওঠার একমাত্র কারন জিআরই নয়। পাশের গলির সীমার সাথে প্রেম হবো হবো করছিল। বাপের কাছ থেকে এটাওটা বলে টাকা বাগিয়ে তাকে নিয়ে বেশ কয়েকবার ফাষ্টফুড ঘুরেছে। বেশ চলছিল। সীমা তাকে ইয়েস না বললেও নো তো আর বলেনি। পুরি আলাম জানে অধবসায়ই সাফল্যের চাবিকাঠি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সে অধ্যবসায় করতে চাইলেও পাশের গলির কিছু বখাটে ছেলেপেলে তার কাজে বাগড়া দেয়। কিভাবে যেন তারা সীমার সাথে তার ইটিশপিটিশের ব্যাপারটা জেনে গেছে।
পুরি আলাম বাইরে থেকে ফেরার পথে বখাটে গুলো তাকে দেখে শিষ দেয়, অশলীল কথা বলে, পুরি আলাম সীমাদের গলিতে ঢোকার সাহস পায় না। একবার এক রংবাজ তাকে ডেকে জামার কলারটা কসরত করে উঠিয়ে ঘুরিয়ে দিয়ে বলেছে, আর এমুখো হবা না খোকা, হাত-পা ভাংগা অবস্থায় বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। পুরি আলাম ভয় পেয়েছে, তীব্র ভয়। গনপিটুনী খাওয়া চোরেরও ভয়ডর কমে যায়; কিন্তু ভয়ের আবহটাই মানুষকে বেশি ভীত করে ফেলে।
অনেকদিন হল, মোবাইলে কথা বলা ছাড়া সীমার সাথে তাই তার কোনো যোগাযোগ নেই। সীমা বায়না ধরে, আজ ফ্যান্টাসি কিংডমে যাবে, কাল আশুলিয়া, পরশু কোন চাইনিজে, তরশু ফাস্টফুডে বসে আড্ডা। পুরি আলাম ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যায়।
সীমার সন্দেহ হয়। কি হল এমন মানুষটার? আগে কেমন পাগল ছিল তার জন্য। আর পুরি আলামবিহীন সীমার জীবনযাত্রার মানও কমে যায়। আগে বিনা পয়সায় কত মৌজ করা যেত। সীমা আলামকে আসল কারন জিগ্গেস করে। তোমার বাবা-মা কিছু বলেছে? আরে না। - পুরি আলাম ডিফেন্ড করে? তাহলে? আমাদের গলির সৌরভ? ছেলেটা একদম বখাটে। পুরি আলাম বাঘের মত ভাব দেখাতে চায়। চেচিয়ে বলে, কী যে বল তুমি। আমি এসব ফালতু পোলাপানকে ভয় পাই নাকি?
ফোন রেখে পুরি আলাম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তার বৃত্ত থেকে বেরোবার কোন উপায় নেই। সীমা না থাকলে কিছুদিন খারাপ লাগবে, তারপর একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু হাত না থাকলে চলবে কী করে? সীমা তার হাতের অভাব পুরন করতে সক্ষম নয়; কিন্তু তার মালটিপারপাস হাত এমনকি সীমার অভাবও পুরন করতে পারবে।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরি আলাম হাতের ওপর ভরসা করে বৃত্তবন্দী জীবনকেই মেনে নিয়ে খাটের ওপর শুয়ে পড়ে। চোখ বরাবর ছাদের বুকে ঘোরা পাখাটির সাথে সাথে তার কোনো স্বপ্ন হয়তো কোনো বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। সে ঘুমিয়ে পড়ে। কীসব স্বপ্ন দেখে হঠাৎ ধড়মড়িয়ে জেগে ওঠে। বাথরুমে ঢোকে। লুঙ্গিটা এখনই ধুয়ে শুকাতে না দিলে নামাজ কাযা হয়ে যাবে।
পুরি আলাম টেবিলে বসে জিআরই বইয়ের পাতা উলটিয়ে চলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৮ ভোর ৫:০১