somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রলীগের সংক্ষেপে নতুন ইতিহাস...

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দায়মুক্তিতে ছাত্রলীগ অপ্রতিরোধ্য

১৯৭৩ সাল। স্বাধীনতার পরপরই। স্বাধীন দেশে ডাকসুর প্রথম নির্বাচন। নির্বাচনে নিশ্চিত ভরাডুবি জেনে সেই সময়কার ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করেছিল। তখন এই নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ের সম্ভাবনা ছিল ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের। বাংলাদেশে সেটিই প্রথম ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা। স্বাধীনতার পর থেকে ছাত্রলীগ সেই যে সশস্ত্র তাণ্ডব এবং অপকাণ্ড শুরু করেছে তা এখনো চলছে। এই দফায় এসে ছাত্রলীগ আরো বেশি ভয়ঙ্কর, ভয়াবহ এবং বিপজ্জনক। পরে নির্বাচনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমই ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনিই এখন সিপিবির সভাপতি এবং সিলেটে ছাত্রলীগ সিপিবি - বাসদের জনসমাবেশ ভেঙে দেয় এবং জনাব সেলিম লাঞ্ছিত হন। চিরাচরিতভাবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ছিল - জামায়াতের চরদের শায়েস্তা করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জনসমাবেশে জামায়াতের চর কারা - এ চিন্তাটুকুও ছাত্রলীগের মাথায় আসেনি।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে যেদিন ক্ষমতা গ্রহণ করে ঠিক সে দিন থেকেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, তাণ্ডব আর নানাবিধ কর্মকাণ্ড শুরু হয় এবং দেশবাসী তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। অথচ ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারটি আওয়ামী লীগ নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নির্মাণের লক্ষ্যে উৎসর্গ করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, দখল, হত্যা, সন্ত্রাস, যৌন সন্ত্রাসসহ হেন কর্ম নেই যা তারা করেনি।

গত পৌনে পাঁচ বছরে এই সংগঠনটি এমন সব কর্মকাণ্ড করেছে যাতে ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতা এবং বর্তমানের আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে, এমনকি সংবাদ মাধ্যমেও ‘ছাত্রলীগকে সামলান’ বলে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আকুতি জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী দুই একবার মৃদু ধমক ধমক দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তা কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আর এই ব্যবস্থা না নেয়ার কারণেই ছাত্রলীগ দিনকে দিন হয়ে উঠেছে এক অপ্রতিরোধ্য সন্ত্রাসী শক্তিতে। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকতে পারবেন না, এমন নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা দিলেন - তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করছেন। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে ছাত্রলীগকে সামলানো বা তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কোনো ইঙ্গিত যেমন মেলে না, তেমনি কখনই এই সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ এদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি। বরং ছাত্রলীগকে বিরোধী দল ও পক্ষের হরতাল, সমাবেশ ভন্ডুল করার এবং বিরোধী পক্ষ দমনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রী এতে বাহবাও দিয়েছেন। একজন মন্ত্রী তো ছাত্রলীগকে বিরোধী পক্ষ দমনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সঙ্গে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে সভা - সমাবেশ ভন্ডুল করা, বিরোধীদের উপরে চড়াও হওয়ার বহু ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে, টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে। এমনকি অন্তত কয়েক ডজনবার সংবাদপত্রে ছবি ছাপা হয়েছে দলীয় অর্ন্তদ্বন্দ্ব বা অন্য দলের উপরে চড়াও হওয়ার সময়ে ছাত্রলীগের সুনির্দিষ্ট নেতাকর্মীর হাতে অস্ত্রের ছবি। কিন্তু তাদের একজনের বিরুদ্ধেও মামলা তো দূরের কথা বরং পুলিশ বরাবরই এটা বলে থাকে - আমরা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম, লক্ষ্যই করার সময় হয়নি অস্ত্রধারী কেউ ছিল কিনা ?

নানাবিধ কর্মকাণ্ডের পরেও ছাত্রলীগ অপ্রতিরোধ্য, বাধা - বিঘœহীন। কারণ সরকার তাদের দায়মুক্তি দিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনমতের চাপে যখন ওই সংগঠনটির কাউকে আটক করা হয়, স্বল্পকাল পরেই তাদের সদম্ভ মুক্তিও জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে এবং করছে। চট্টগ্রামে গত ২৪ জুন রেলওয়ের দরপত্র আহ্বান নিয়ে ছোট্ট শিশু আরমানসহ দুই জনের মৃত্যু হয় ছাত্রলীগ - যুবলীগের গোলাগুলিতে। ওই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তদন্ত কাজই এখন পর্যন্ত খুব একটা অগ্রগতি অর্জন করেনি, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি বরং যাদের আটক করা হয়েছিল তাদের জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

গত পৌনে পাঁচ বছরে কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে ছাত্রলীগের হাতে। এরা কেউ নিরীহ মেধাবী ছাত্র, কেউ দরিদ্র শিশু কিংবা সাধারণ মানুষ। ২০১২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের, ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকর সিদ্দিক, ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নসরুল্লাহ নাসিম, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিহত দরিদ্র কিশোর রাব্বীসহ যারা নিহত হয়েছে তাদের একজনের হত্যাকাণ্ডের বিচারও এখন পর্যন্ত হয়নি। এখনো বিচার হয়নি ছাত্রলীগের হাতে বিশ্বজিত দাস নিহত হওয়ার ঘটনা। বিশ্বজিত দাসকে কুপিয়ে কি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে সেই স্মৃতি এখনো আতঙ্কের এবং বেদনার। ছাত্রলীগ যে শুধু চাঁদাবাজি - টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসের ঘটনাই ঘটিয়েছে তাই নয়, এমন অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে যা ইতোপূর্বে কখনো কেউ ভাবতেও পারেনি যে, একটি ছাত্র সংগঠনের নামে এসব কর্মকাণ্ড করা যায়। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলের দরজা - জানালা বিক্রি করে দেয়া, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উপরে এসিড নিক্ষেপ, রংপুর মেডিকেলসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলে রাতের বেলা জোরপূর্বক প্রবেশসহ অসংখ্য ঘটনা যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এমনকি ৩৪তম বিসিএস প্রিলিমিনিয়ারি পরীক্ষায় কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ছাত্র - ছাত্রীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের উপরে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এতে বেশ কয়েকজন আহতও হয়। এই ঘটনার বিচার তো হয়ইনি, বরং দুই দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বলে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে, ফুটেজ দেখে ওই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র - ছাত্রীদের যেন চাকরি দেয়া না হয়। প্রধানমন্ত্রীই যখন এভাবে সমর্থন দিয়ে যান তখন অপ্রতিরোধ্য এবং বাধা - বিঘœহীন হওয়ার পথকেই আরো অনেক বেশি প্রশস্ত করে।

গত পৌনে পাঁচ বছরে ছাত্রলীগ কি করেছে তারচেয়েও বড় প্রশ্ন এখন দাঁড়িয়েছে - ছাত্রলীগ কি করেনি? এক সময় নানা পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ছাত্রলীগকে সামলান, থামান। এখন বলতে হবে - এদের হাত থেকে রেহাই দিন।

লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৫২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×