somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিস্ময়কর এক নিদর্শন হচ্ছে ময়ূর সিংহাসন

১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর ইতিহাসে বিস্ময়কর এক নিদর্শন হচ্ছে ময়ূর সিংহাসন। বিরল মনি-মুক্তা এবং স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত এই সিংহাসন একসময় ভারতের সম্পদ ছিল। যা তৈরি করেছিলেন মোঘল সম্রাট শাহজাহান। এখন কারো কারো মনে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, কেন সম্রাট শাহজাহান এই সিংহাসনে ময়ূরের অবয়ব ব্যবহার করলেন, অন্য কোনো প্রাণী ব্যবহার করলেন না কেন? মোঘল আমলে শিল্প-সাহিত্যে ময়ূরের এক অনন্য স্থান ছিল, যা অন্য কোনো প্রাণীর ছিল না। মোঘল আমলে অঙ্কিত চিত্রকর্মগুলোতে ময়ূরের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হতো অনেক নিপুণভাবে। তখনকার সাহিত্যেও ময়ূর এক গুরুত্বপূর্ণ রূপ দান করে।




শামস-ই-তাবাসি একজন কবি। তিনি তার কাব্যগ্রন্থে দাবি করেন যে, বেহেশতের সবচেয়ে উঁচু স্তরে থাকবে ময়ূর। আর যেহেতু এই পাখিকে ধর্মীয়ভাবে বেশ গুরুত্ব দেয়া হতো, তাই মোঘল শাসনামলে সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল যে, এই পাখির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তা পরকালে ভালো কিছু করবেন। এজন্যই ধারণা করা হয়ে থাকে সম্রাট শাহজাহান তার বিখ্যাত সিংহাসনের পেছনে দুটো ময়ূরের অবয়ব তৈরি করিয়ে নেন। আর পরবর্তীতে এই পাখির নামেই সিংহাসনটির নামকরণ করা হয়।

বাছাই করা স্বর্ণকার ও জহুরিদের মাধ্যমে প্রায় সাত বছর সময় নিয়ে এই সিংহাসন তৈরি করেন। এতে বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা কোহিনুর ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রায় এক হাজার ২০০ কেজি স্বর্ণ এবং ২৩৬ কেজি মূল্যবান পাথর দিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এছাড়াও ১১৬টি পান্না, ১০৮টি রুবি এবং আরো অসংখ্য মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল, যেগুলোর অনেকগুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ। এতে আগ্রার তাজমহলের থেকেও দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়েছিল। সিংহাসনের পেছনে যে দুটো ময়ূর ছিল সেগুলোর লেজ ছিল ছড়ানো। আর এই কারণে সিংহাসনের সৌন্দর্য বেড়ে যায় বহুগুণ।


কথিত আছে, হযরত সোলায়মান (আ.)-কে অনুসরণ করার চেষ্টা করতেন সম্রাট শাহজাহান। সোলায়মান (আ.) এর বিশাল সাম্রাজ্যের পাশাপাশি ছিল একটি রাজকীয় সিংহাসন, যেটি মোঘল সম্রাট শাহজাহানকে বেশ প্রভাবিত করে। এজন্য তিনি নিজেও বিশাল সাম্রাজ্যের পাশাপাশি একটি রাজকীয় সিংহাসনে বসে সাম্রাজ্য পরিচালনার স্বপ্ন দেখতেন।

১৬২৮ সালে যেদিন সম্রাট শাহজাহান সাম্রাজ্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেদিনই প্রথম সেই রাজকীয় সিংহাসন প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়। সম্রাট শাহজাহানের চিন্তাধারা ছিল যে, এই সিংহাসন মোঘল সাম্রাজ্যের পরিচয়বাহী একটি কীর্তি হয়ে উঠবে। মোঘলদের ঐশ্বর্য সম্পর্কে বাইরের দুনিয়াকে ধারণা দেবে। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র সম্রাট আওরঙ্গজেব জিন-ব্যাপ্টিস্ট টাভের্নিয়ার নামের একজন ফরাসি অলংকারিককে আমন্ত্রণ জানান। ১৬৬৫ সালে তিনি ভারতবর্ষে আসেন। রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে ময়ূর সিংহাসন দেখার পর তার চোখ কপালে উঠে যায়।



১৭৩৯ সালে পারস্যের নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। নাদির শাহ ছিলেন খুবই চতুর। মোঘল সাম্রাজ্যের মতো বিশাল সমৃদ্ধ এলাকা তার দখলে চলে আসলেও তিনি মূল এলাকা ছেড়ে দিয়ে এখানকার সিংহাসন দখল করতে চাননি। কারণ তাতে করে তার মূল সাম্রাজ্য অরক্ষিত হয়ে যেত এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারো দখলে সিংহাসন চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই তিনি মোঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি মুহাম্মদ শাহের সঙ্গে সন্ধি করেন এবং তাদেরকে সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই সন্ধি অনুসারে মোঘলদের যেসব মূল্যবান সম্পদ ছিল তার বড় অংশ হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় তারা। এর মধ্যে ময়ূর সিংহাসনও ছিল। এভাবেই অত্যন্ত দামী ও ঐতিহ্যবাহী ময়ূর সিংহাসন তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।


১৯৭৪ সালে নাদির শাহ আততায়ীদের হাতে নিহত হন। এরপর রাজপ্রাসাদে বেশ অরাজকতা শুরু হয় এবং লুটের ঘটনা ঘটে। তখনই হারিয়ে যায় বিখ্যাত এই ময়ূর সিংহাসন। কারো কারো মতে, এটি টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছে। আবার কেউ বলেন, চুরি হয়ে গিয়েছে সেই সব ভাঙা টুকরোগুলো। ভাঙা টুকরোগুলো পরবর্তীতে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। মোঘল সাম্রাজ্যের অনুকরণে পরবর্তীতে ইরানেও ময়ূর সিংহাসন তৈরি করা হয়, যেটি এখন তেহরান জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ব্রিটেনের একটি জাদুঘরে ময়ূর সিংহাসনের একটি পায়া সংরক্ষিত আছে।

ময়ূর সিংহাসন ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের জৌলুস তুলে ধরা এক কালজয়ী কীর্তি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এক সময়ের পরাক্রমশালী সাম্রাজ্য শক্তি হারিয়ে ইতিহাস থেকে হারিয়ে যেতে থাকে। বিদেশি শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে মোঘলদের গর্বের ময়ূর সিংহাসনও হাতছাড়া হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২০
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×