somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"পিতা".....(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে একটি ছোট গল্প)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ গল্পে যার কথা বলা হচ্ছে তিনি ঢাকা- শহরের অন্যতম এক ধনী ব্যাক্তি। তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে তার যথেষ্ট প্রভাব এবং নাম- ডাক রয়েছে। তার নাম- রেজওয়ান। দেখতে শুনতে বেশ লম্বা, বিশাল দেহ। আচার- আচরণে বেশ নম্র। বয়স তেমন একটা বেশি না। খুব ভালো একজন মানুষ। সবাই তাকে মি. রেজওয়ান বলেই ডাকে।
একদিন এশার নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলেন। ইমাম সাহেব মসজিদের পাশেই একটা রুমে থাকতেন। মি. রেজওয়ানের সাথে তার বেশ ভালো সম্পর্ক। তিনি ইমামকে বললেন- ইমাম সাহেব,আমার একটা ছেলে হয়েছে, তার নাম রাখতে চাই। তাকে কি আপনার কাছে নিয়ে আসবো নাকি আপনি বাসায় আসবেন?
-"কি নাম রাখতে চান"? ইমাম জিজ্ঞেস করলেন।
- "আপনি ভালো দেখে একটা নাম দিয়ে দিবেন"।
-"ঠিক আছে, শুক্রবার আপনি আমার সাথে দেখা করেন। আর কিছু?" ইমামের প্রশ্ন।
নাহ, আর কিছু না- বলে রেজওয়ান সাহেব যাওয়ার জন্য উদ্যত হলেন।
ইমামও উঠে দাঁড়ালেন। তিনি রেজওয়ান সাহেবের কাছে এগিয়ে গেলেন। রেজওয়ান সাহেবের হাত ধরে তার দিকে চোখের দৃষ্টি নিবন্ধ করে বললেন- "আপনার ছেলে আপনার জন্য সত্যিকারের কল্যাণ বয়ে আনুক, আল্লাহ্‌র কাছে আমি এই প্রার্থনা করি!"


-১৬ বছর পর একদিন।
মি. রেজওয়ান আবার এলেন ইমামের কাছে। তার চেহারায় কোনও পরিবর্তন না দেখে ইমাম সাহেব বললেন-
"আপনার স্বাস্থ্য এখনও বেশ ভালো আছে দেখছি।"
"কারন আমার কোন অশান্তি বা ঝুট-ঝামেলা নেই, আমি অনেক সুখে আছি।"- মি. রেজয়ান জবাব দিলেন।
ইমাম সাহেব কথার প্রত্যুওরে কিছু না বললেন না। শুধু জিজ্ঞেস করলেন- "তা আজ এসেছেন কেনো ?"
-"আমার ছেলে এখন কৈশোরে পা দিয়েছে, এখন থেকে সেও মসজিদে আসবে, নামায পরবে। আপনি তাকে শেখাবেন"।
- "ঠিক আছে, খুব ভালো কথা। পাঠিয়ে দিবেন।"
- "এই নিন কিছু বখশিশ, আমার খুব আনন্দ হচ্ছে একমাত্র ছেলের কথা ভেবে"- রেজওয়ান সাহেব আবেগভরা কণ্ঠে বললেন।
ইমাম সাহেব টাকাটা নিতে চাইলেন না। মি. রেজওয়ান তাকে জোর করে টাকাটা দিয়ে দিলেন। এরপর চলে গেলেন।


-কেটে গেলো আরও ৮টি বছর।
একদিন বিকালে ইমাম সাহেব তার রুমের পাশে কোলাহলের আওয়াজ পেলেন। বাইরে বেরিয়ে দেখলেন, একদল লোক তার কাছে আসছে। সবার সামনে মি. রেজওয়ান। তিনি ইমাম সাহেবের রুমে ঢুকলেন।
ইমাম সাহেব মি. রেজওয়ানকে চিনতে পারলেন।
মি. রেজওয়ান বললেন- "আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এই এলাকার সবচেয়ে ধনী, মি. রহমানের একমাত্র মেয়ের সাথে। আপনাকে দাওয়াত দিতে এসেছি আর বলতে এসেছি যে, বিয়েটা কিন্তু আপনি পড়াবেন।"
ইমাম সাহেব হাসিমুখে বললেন- "ভালো সংবাদ। ঠিক আছে, আমি অবশ্যই আসবো"।
মি. রেজওয়ান উঠে দাঁড়ালেন। ইমাম সাহেবের হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে বললেন- এই নিন আপনার বখশিশ।
ইমাম সাহেব বললেন- আপনি তো অনেক বেশি দিয়েছেন, এতো টাকা লাগবে না। প্রাপ্যটুক রেখে বাকিটা ফেরত নিয়ে নিন।
- "আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে। আমি কোনরকম কার্পণ্য করতে চাই না। আমি আপনাকে খুশি হয়ে দিচ্ছি"- মি. রেজওয়ান বললেন।
ইমাম সাহেব টাকাটা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন- "আপনি এ নিয়ে আপনার ছেলের জন্য এখানে ৩ বার এলেন।"
"আমার আসার কাজ, বোধ হয় আজ শেষ হয়ে গেলো। আর হয়তো আসতে হবে না"- বলে ইমামের সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মি. রেজওয়ান চলে গেলেন।


এক সপ্তাহ পরের কথা। বেশ শান্ত একটা দিন।
পিতা-পুত্র গাড়িতে করে বিয়ের আয়োজন ঠিকঠাক করার জন্য যাচ্ছিলো। হঠাৎ.............
প্রচণ্ড জোরে শব্দ করে একটা অ্যাকসিডেন্ট হলো। মি. রেজওয়ান গাড়ি থেকে ছিটকে বাইরে পরে গেলেন। তার ছেলে ভিতরেই রয়ে গেলো। আশে- পাশের মানুষজন ছুটে এলো সাহায্য করতে। কিন্তু, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মারা গেলো মি. রেজওয়ানের একমাত্র ছেলে।
মি. রেজওয়ান কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। শুধু হতবিহবল হয়ে তাকিয়ে রইলেন।
তিনদিন তিনরাত তিনি না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটালেন। শোকে পাথর হয়ে গেলেন।



এ ঘটনার প্রায় এক বছর পরের কথা।
শীতকালের এক সন্ধ্যায় ইমাম সাহেব তার রুমের সামনে পায়ের শব্দ শুনতে পেলেন। কে যেনো দরজা খোলার চেষ্টা করছে। ইমাম সাহেব দরজা খুললেন।
একজন লম্বা- পাতলা লোক ঘরে ঢুকলো। শরীরটা সামনের দিকে নুয়ে গেছে। মাথার চুলগুলো সব সাদা। অনেকক্ষণ ধরে ইমাম সাহেব তার দিকে তাকিয়ে রইলেন। লোকটাকে চিনতে বেশি দেরি হলো না। চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ইমাম সাহেব চিনতে পারলেন, তার সামনে দাড়িয়ে আছে- মি. রেজওয়ান।
ইমাম সাহেব তাকে বসতে বললেন। মি. রেজওয়ান শরীর ছেড়ে দিয়ে বসে পরলেন। ইমাম সাহেবও তার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলেন। কারও মুখে কোনও কথা নেই। দুজনেই নিরব। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেলো। অবশেষে নীরবতা ভেঙ্গে মি. রেজওয়ান, বললেন- "আমি আমার ছেলের নামে কিছু করতে চাই"।
তিনি উঠে দাড়িয়ে পকেট থেকে একটা চেক বের করে বললেন- "এখানে অনেক টাকা। আজ আমি আমার ছেলে নামে যেই বাড়িটা কিনেছিলাম সেটা বিক্রি করে দিয়েছি। সেটা থেকে প্রাপ্ত টাকার চেকটা আপনার হাতে তুলে দিলাম"।
ইমাম সাহেব বললেন- আপনি কি করতে চান?
-"ভালো কিছু"_ মি. রেজওয়ান মৃদু স্বরে বললেন।
দুজনেই নীরবে বসে রইলেন কিছুক্ষন।
মি. রেজওয়ানের দৃষ্টি অবনত, আর ইমাম সাহেবের দৃষ্টি তার উপর নিবদ্ধ।
অবশেষে ইমাম সাহেব মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে বললেন- "আপনার ছেলে অবশেষে আপনার জন্য সত্যিকারে কল্যাণ বয়ে এনেছে বলেই মনে হচ্ছে"।
-"হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। আমারও তাই মনে হয়"_ মি. রেজওয়ান মুখ তুলে কথাগুলো বললেন। তার চোখ থেকে দুটো বড় ফোঁটা ধীরে ধীরে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরতে লাগলো।
............................................... :) ......................................

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী- 'বিওর্নস্টারনে বিওর্নসন'-এর কালজয়ী গল্প- "The Father" -এর ছায়া অবলম্বনে লিখিত।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×