somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইউসুফ আদিত্যর ডায়েরি
অদ্ভুত অদ্ভুত কল্পনার মাঝে নিজের মনকে বন্দী করতে বেশ ভালো লাগে। বৃত্তের ব্যাস বৃদ্ধি করণে এক অদ্ভুত মজা আছে। আমার জ্ঞানের অন্ধকার রাজ্যে এক মহাপুরুষের মোমবাতি বিক্রি করতে আসায় তাকে কৃতজ্ঞা জানাই আজীবন।

বিশ্বযুদ্ধে প্রাণ দেয়া প্রথম বাঙালি-যোগেন্দ্রনাথ সেন

০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যোগেন্দ্রনাথ সেন, ছোট করে বললে: জন সেন। আমাদের অনেকেরই অপরিচিত যোগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন ভারতীয় সৈনিক, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনিই প্রথম বাঙালি সৈনিক যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় মারা গেছেন। সুতরাং চলুন জেনে আসা যাক, যোগেন্দ্রনাথ সেনের অজানা জীবন সম্পর্কে।
ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এই বাঙালির পুরো নাম ছিলো যোগেন্দ্রনাথ সেন, তবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার সময় তিনি নামটিকে ছোট করে জন সেন রাখেন। যোগেন্দ্রনাথ সেন তৎকালীন বাংলার একটি ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগরে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে। চন্দননগরেই বড় হয়েছেন বিধবা মায়ের কাছে। যোগেন্দ্রনাথ সেনের বড় ভাই ছিলেন একজন ডাক্তার। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে যোগেন্দ্রনাথ সেন পড়ালেখার জন্য চলে যান ইংল্যান্ডে। আর ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে যায় ঐতিহাসিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ


মেধাবী যোগেন্দ্রনাথ সেন ভর্তি হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পড়াশোনার বিষয় ছিলো বৈদ্যুতিক কারিগরীবিদ্যা। পড়াশোনাকালীন সময়ে তিনি চাকরি করতেন হোয়াইটহল রোডের লিডস কর্পোরেশনের ইলেকট্রিক লাইটিং স্টেশনে। যোগেন্দ্রনাথ সেন বিশ্বের সাতটি দেশের ভাষা জানতেন বলে জানা গেছে। ১৯১৩ সালে লীডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে যোগেন্দ্রনাথ সেন থাকতেন লীডস শহরের ব্ল্যাকম্যান লেনের গ্রসভের প্লেসে।
১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যোগেন্দ্রনাথ সেন ১৫ তম ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের লীডস প্যান্স ব্যাটালিয়নে যোগদান করেন। প্যান্স ব্যাটালিয়ন (Pals battalion) ছিলো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে অঞ্চল ভিত্তিক গড়ে ওঠা সৈন্যদল, যারা সাধারণত একে অপরের সাথে পূর্ব থেকেই পরিচিত ছিলো। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৫ তম ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের একমাত্র অশ্বেতাঙ্গ সদস্য ছিলেন বাঙ্গালি যোগেন্দ্রনাথ সেন।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অশ্বেতাঙ্গরা যেমন বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পায় না, ঠিক তেমনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যোগেন্দ্রনাথ সেন তার অধিকাংশ সহকর্মীর চেয়ে বেশি শিক্ষিত হয়েও শুধুমাত্র অশ্বেতাঙ্গ হওয়ার কারণে সৈনিক থেকে অফিসার পদে উন্নীত হতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে তার অনেক সুনাম ছিলো।
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে হয়তো নিজেকে নিয়ে অনেক গর্বিত হতে পারতেন যোগেন্দ্রনাথ সেন, কিন্তু জীবনের শেষ দিকে তিনি তার বিধবা মায়ের সাথেও একবার দেখা করতে পারেননি। ঐতিহাসিক ব্যাটেল অফ দ্য সোমে'তে (Battle of the Somme) যুদ্ধকালীন সময়ে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের বাইশে মে রাতে ব্যাপক বোমাবর্ষণে গুরুতর আঘাত পান যোগেন্দ্রনাথ সেন। এসময়ে তিনি কর্মরত ছিলেন ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের ওয়ারিং পার্টিতে (wiring party), যেখানে তাদের কাজ ছিলো রাতের বেলা সমরাঙ্গনে শত্রুপক্ষের সাজানো কাঁটাতার কেঁটে ফেলা এবং স্ট্রাটেজিক কৌশল হিসেবে কিছু স্থানে নিজেদের কাঁটাতার সাজানো। প্রথমে পায়ে এবং পরে ঘাড়ে বোমার প্রানঘাতী শ্রাপনেলের আঘাতের তাৎক্ষনিকভাবে মারা যান যোগেন্দ্রনাথ সেন।

এই বীর বাঙালিকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ফ্রান্সের কলিনক্যাম্পস সামরিক সমাধিস্থলে। যুদ্ধের পরে তার ব্যবহার করা দৈনন্দিন জিনিসগুলো তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছিলো, যা তার ডাক্তার বড়ভাই চন্দনগরের ইন্সটিটিউট ডি চন্দননগরে (Institut de Chandernagore) দান করে দেন।

মাত্র তিন দশকের ছোট্ট জীবনে যোগেন্দ্রনাথ সেন হয়তো এই অবাক পৃথিবী অনেক কিছুই দেখেননি, কিন্তু ইতিহাসের সোনালি পাতায় তাকে আজীবন দেখা যাবে। এই বাঙালির গল্প হয়তোবা তেমন জনপ্রিয় হবে না এবং অনেকেরই অজানা থেকে যাবে। তবে ইতিহাসের পাতা থেকে কখনো বীরের কীর্তি মুছে যায়না বলে তিনি অসংখ্য লাইব্রেরির বইয়ে লিপিবদ্ধ থাকবেন। কোনো উৎসাহী পাঠক হয়তো বইটি খুলে একটু পড়বে তারপর আবার রেখে দিবে। এভাবেই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যোগেন্দ্রনাথ সেন ওরফে জন সেন।




-- লেখাটি আমি এবং আমার খালাতো ভাই জউথ ভাবে লেখা--
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×