somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাপ্তির কোলাহল

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমাপ্তির কোলাহল
জহরলাল মজুমদার

এ এক রিমঝিম বৃষ্টিময় সন্ধ্যা, বালুদিয়া গ্রামের নাম। মালবাহী কার্গো এসে থামল নদীর কিনার ঘেঁষে কাকভেঁজা কতগুলো লোক মস্ত ড়ি টানাটানি করছে নোঙ্গর ফেলার জন্য । এটা সেখানকার নিত্য দিনের চিত্র। ইট কাঁঠ সিমেন্ট রড ভর্তি শত শত নৌযান ঘাটে ভিড়েছে। গনিত মানুষের দেখা মেলে এখানে। সবাই কম শিক্ষিত। হাতেগোনা দু’একজন শিক্ষিত পাওয়া যায় এ তল্লাটে। এদের দেখলে মনে হয় নিরলস পরিশ্রমি রোবট। এই গ্রামে বা আশেপাশে কোন চিকিৎসালয় নেই । ভদ্র সমাজের কিছু লোক একত্রিত হয়ে নির্বাচনী পতিশ্রুতি আদায় করতে সরকারি লোকেদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে একটি হাসপাতাল মঞ্জুর হয়েছে এই গ্রামের জন্য। সাথে মা ও শিশু বিষয়ক কিনিক এবং একটি আশ্রয় কেন্দ্র বা সাইক্লোন সেল্টার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তাই এ অপরিচিত লোকদের দেখা পাওয়া যায়। কোনো মালবাহী কার্গো নদীর পারে এসে থামলে গ্রামের শিশুরা অতি কৌতহলী হয়ে ওঠে,ছুটে আসে দেখতে। আজও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিরতিহীন বৃষ্টি কাঁদা মাখা শরীরে ছোটদের আনন্দ একধাপ এগিয়ে দিল। এই কার্গোতে যারা এসেছে তারা সবাই প্রায় পরিচিত, ওদের মধ্যে একজন ছাড়া। কারন এর আগে ঐ ব্যক্তিকে শিশুরা দেখেনি। এর মধ্যে বৃষ্টিও থেমে গেল। কার্গো থেকে নেমে যে যার কাজ করছে। কেউ পোষাক পরিবর্তন করে শুকাতে ব্যস্ত। আর একজন সিগারেট টানছে। অন্যরা নিজেদের তৈরি চা কাপে নিয়ে ফড়াৎ ফড়াৎ শব্দ করে খাচ্ছে। বাচ্চারা তাদের পাশ ধরে ঘুরঘুর করছে নতুন লোকটার কাছ থেকে যতটা সম্ভব দূরত্ব রেখেই। পাশের এক জন গ্লাসে করে চা এগিয়ে দিয়ে বলল- সুবীর সাহেব চা খান? অপরিচিত লোকটাই হাত বাড়িয়ে দিলেন। বাচ্চারা বুঝতে পারল নতুন লোকটার নাম সুবীর সাহেব। তার গায়ের রং টকটকে লাল। মুখ গোলাকৃতির পেটে চর্বি আছে, ঝুলে পড়েছে সামনের দিকে। দেখলে মনে হয় কোন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা। অথচ দিন মজুর। তাই সবাই সুবীর এর সাথে সাহেব যোগ করে সুবীর সাহেব বলেই ডাকে। স্যুর্যটা লাল হয়ে গলে যেন চারিদিকে ছড়িয়ে পরছে পুর্ব দিগন্তে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এপাশ
ওপাশ। বাচ্চারা হেসে খেলে বাড়ি ফিরে গেল।

বেশ কিছুদিন পর....................
গ্রামের প্রতিটা মানুষের চোখে মুখে চঞ্চলতা আনন্দ মুখরিত এই ভেবে যে, বহু দিনের আকাক্ষার প্রতিফলন ঘটতে চলেছে। অর্থাৎ হাসপাতালের কাজ যেমন ভাবে এগোচ্ছে মোটামুটি সন্তোসজনক। এ আনন্দে প্রায় ছোট বড় সকলেই রোজ একবার পদর্পন করে যায় হাসপাতাল চত্বর। এখানে প্রতিদিনই দুইশ’র মত লোক শ্রম বিক্রয় করে। কেউই স্থানীয় নয়। সবাই দূর দূরান্ত থেকে এখানে এসেছে পেটের দায়ে। ভিন্ন ভিন্ন দল আকারে, প্রত্যেক দলের মধ্যে এক জনের ওপর বাবুর্চির দায়িত্ব থাকে। সুবীরের দল সুবীরকে রান্নার কাজ দিয়েছে। সময় মত রান্না শেষ করে আবার দলের কাজের সাথে যোগ দিতে হয় তাকে। আজ বেলা বারটা রান্নার সরঞ্জাম তৈরি। সুবির সাহেব একটা মুসকিলে পরেছে। ম্যাচের কাঁঠি ফুরিয়ে গেছে। কারো কাছে একটা দেশলাই পাওয়া গেলে মন্দ হত না। অনেকের কাছে চেয়েও না পেয়ে এবার ভাবল কাউকে দিয়ে কাছের বাসা থেকে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে আনতে পারলে সুবিধা হয়। পাশেই খেলা করছিল বাচ্চারা। এই বাবু একটু কথা শুনে যাও- সুবির সাহেব বললেন। একটা ছোট মেয়ে চুলার দিকে এগিয়ে এসে বলল- কি! আমারে ডাহেন ক্যান। এই মোমবাতিটা জ্বালিয়ে এনে দিবা তোমারে খাবার দিবানি। দ্যান আমারে মমডা দ্যান, খাবার লাগবে না এমনি জ্বালাইয়া আইন্যা দিমু- মেয়েটা উত্তর দেয়। ওর মিষ্টি মুখ হাসিটা চমৎকার উদলা শরীর হাফ প্যান্ট পরা দেখলেই বোঝা যায় সে বস্তির মেয়ে। মেয়েটি দৌড়ে গেল আর আসল। দুই মিনিটের মাথায় এসেই বলে ফেলল- এই ন্যান ল্যাম,আগুন ধরাইন্যা আছে মমডা আত দিয়া পইড়া ভাইঙ্গা গ্যাছে, হেইয়ার ল্যাইগা এইডা আনছি। আমি অহন যাই, বলে যেতে উদ্যত হল। সুবির সাহেব জিজ্ঞেস করল- মাগো তোমার নাম কি? কোন ক্লাসে পরতিছ। আমার নাম মানবী, আমি লেহাপড়া করি না। আমার আব্বায় অনেক আগে মইড়্যা গ্যাছে, মায় ভর্তি করায় নাই, নৌকা দিয়া যাওন লাগে তাই। মানবী উত্তর দিয়ে চলে যায়। মানবী কে দেখে সুবীর সাহেব অজানা মায়ায় পরে যায়। মাত্র তিন চার বছরের একটি মেয়ের এত সুন্দর করে হাসে, আবার কষ্টও হয় আহঃ! মেয়েটার আবার বাবা নাই। এসব কথা ভাবতে থাকে একা একা, এখানকার কোন বাচ্চা কিভাবে কথা বলে তা সবই মুখস্ত আর বাচ্চাদেরও ভয় কেটে গেছে। সবাই খুব ভালভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে হাসি ঠাট্টার মধ্য দিয়ে। মানবী রোজ রান্নার সময় আসে নানা ধরনের কথার মাঝে তার জানা বিভিন্ন তথ্য বলে নিজেরদের পরিবারের। সুবীর সাহেব মানবীর প্রতি আরো মায়া কাতর হয়ে পরে।

একমাস পর................
সুবির সাহেব কখনো কাজে বিচলিত হন না খুব মনোযোগী,মাথায় আস্তো সিমেন্টের বস্তা। ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠছে। নানান কথা মাথায় গুড়ছে প্রথমেই মানবীর কথা। এ রকম একটা মেয়ে যদি আমার থাকত তাহলে হয়তো এরকম রাখতাম না। ভাত কাপরের অভাব তো হতই না। আমাকে বাবা বলে ডাকত শুনলেই বুকটা ভরে যেত। আর কত কি সব অদ্ভুত ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যে মাথা থেকে বস্তা ফেলে এসে নির্জন জায়গায় গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়েছে, বুঝতেই পারেনি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখে মানবী কোথাও নাই বেলা চারটা এ সময়ের মধ্যে কয়েকবার আসে। আজ একবারও দেখা যায়নি। মনটা কেমন জানি করে ওঠে সুবির সাহেবে’র মেয়েটা অসুস্থ্য নয় তো? একা একাই বলছে। অনেকক্ষণ পর অস্বস্তি আরো বেড়ে যায়। একটু খোঁজ নেয়া দরকার। আমার যদি মেয়ে হত তাহলে কি যেতাম না। যাই গিয়েই দেখি। আমাকে তো বলেছিল ঐ যে দেখা যায় দোতলা টিনের ঘর ওর পেছনে একটা ডোবার পাশে ওদের ঘর। হোগল পাতার বেড়া তাল পাতার ছাউনি দরজায় কপাট নেই একটা ওড়না ঝুলানো আছে দরজায় সেটা নাকি মানবীর মায়ের ওড়না। হঠাৎ হেসে ফেললেন সুবির সাহেব মেয়েটা কি সুন্দর করে বলছিল কথাগুলো। একদম স্থানীয় ভাষায়। বলছিল আমনে আমাগো ঘরে যাইবেন কিন্তু, আমাগো পাঁচটা মুড়হা আছে দুইডায় আন্ডা পারে আন্ডা ভাইজ্জা ভাত খাওয়াইয়া দিমু । মায় আইগ্যা য়্যাত্ত গুলান আন্ডা আডো নিছে কইছে চাইলের গুঁড়া আইনবে পিডা বানাইবে পিডাও খাওয়ামু। মায় আমারে আন্ডা খাইতে দেয় না। চাইলে কয় এহন আন্ডা দেঅইন যাউব না। আন্ডা জমাইয়া বেইচ্যা চাউল না আনলে খাইবি কি। এসব ভাবতেই হাটার পথ শেষ পৌছে গেল মানবীর বাড়িতে। এইটুকু মেয়ের কথার কোন ভুল নেই। দরজার কাপরটা ভাঁজ করে ওপরের দিকে ওঠানো। যেটা দেখছে সেটাকে ঘর বলা যায় না। হাত ছয় জায়গা পাতার বেড়া দিয়ে ঘেরা। ভেতরে হাড়ি পাতিল আর পুরানো কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। ঘরের মেঝেতে মানবী শুয়ে আছে মাথায় জলপট্টি বাঁধা। পাশে মহিলা দেখা যাচ্ছে, শাড়ির আঁচলটা মাঝখান
থেকে আলাদা। বোধ হয় ছিড়ে গেছে। মাথায় যে দু’এক মাসে তৈল দেয়া হয়নি তা বোঝাই যাচ্ছে। কি হয়েছে ওর? সামনে এগিয়ে এসে বলল সুবির সাহেব। ব্যইন্যাহাল (সকাল) হইতে মাইয়াড্যা আমার মাতা খ্যাড়া হরতে পারে না আমনে কেডা?
প্রশ্ন করে মহিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কথা শুনেই বুঝতে পারল মনবীর সাথে মহিলার সম্পর্ক কি। আপনার মেয়েকে ডাক্তার দেখাননি? সুবির সাহেব বলল। মানবীর মায়ের সাথে আনেক কথা হল কি ভাবে মানবীকে চেনেন, কেন বালুদিয়া গ্রামে আসা, সারাদিন এত খাটুনির পর ওখানে আসায় ধন্যবাদ জানাল মানবীর মা। মানবীর মা আরও বলেন এক বছর আগে ওর বাবা মারা যাবার পর মানবীর অসুখ হয়েছিল ডাক্তার বলেছে ক্যান্সার হয়েছে, এরোগ নাকি আর সারবে না। যে কোন সময় মারা যেতে পারে। সুবীর সাহেবের বুকের মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাল। নিজের কানকে বিশ্বার করতে পারছে না। মানবীর মাথায় হাত বুলাতেই অস্পষ্ট শব্দ এল কানে। সে বলল বাবা তুমি আইছো আর যাইয়ো না। দু’জনেই শুনল একথা। সুবির সাহেবের চোখ ছলছল করছে। সেদিন বিদায় নিয়ে চলে এল। এরপর প্রতিদিন মানবীকে দেখতে আসতে লাগল ভিভিন্ন ধরনের ফলমূল নিয়ে। মানবীকে এতহানি ভালবাসে ব্যাড্যায় কিসের লাইগ্যা মনে কোন মতলব নাই তো। না! কি সব ভাবন লইছি লোকটা ভাল মানুষই অইব মনে অয়। নাইলে কেউ এত আদর করত না আমার মাইয়্যাডারে..... একা একা বলছে মানবীর মা।

চার মাস পর..................
এখন নভেম্বর মাস হাসপাতালের শেষ ছাদ ঢালাই চলছে এ দিনে সাধারনত বৃষ্টি হয় না আজ বৃষ্টি নেমেছে সাগরে ঝড় উঠেছে। যে কোন সময় উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমনটা বলেছে রেডিওর সংবাদ। দিনের কাজ শেষ করে সব শ্রমিকরা যে যার মত হাত পা ধুয়ে তাবুতে ফিরে যাচ্ছে। সুবির সাহেব ভাবছে অন্য কথা মানবীর কিছু মেডিসিন ফুরিয়ে গেছে যেভাবেই হোক মানবীর মায়ের কাছে টাকা পাঠানো দরকার। এর আগের সকল চিকিৎসার টাকা মিটিয়েছে সুবির সাহেব সবই মেয়েটার কথা ভেবে। এত মিষ্টি একটা মেয়ে এভাবে বিছানায় পরে কষ্ট পাক, তা তিনি চাননি। এই মানবতা থেকে আজও ছুটে গেলেন। ঘরে ডুকে বসতে না বসতেই তিব্র হাওয়া শুরু হল। বোঝাই যাচ্ছে ঝড় উঠেছে মানবীর মা এগিয়ে এল। এত্ত ঝড় তুবানে না আইলেই ভালো অইতে- বলে মানবীর মা। সুবির সাহেব শুনলো, কিছু বলল না। মানবীর পাসেই বসল। মানবী বলল- তুমি আমার বন্দু অবে? সুবির সাহেব মাথা নেড়ে জানিয়ে দিল হ্যা। অনেক দিন পর মানবী এমন ভাবে কথা বলল, সুবির সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেসে দিল, এই ভেবে মেয়েটা মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। যদিও সে জানে মানবীর মৃত্যু নিশ্চিত। মানবীর সাথে হাসি ঠাট্টা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছে। বাতাস একটু থামছে। বৃষ্টিটা আড়ি পাতাইয়া বইস্যা আছে দেখা যায়। তাবুর ওপরে কোন গাছ পরছে কি না? কে জানে, বলল সুবির সাহেব। বন্দুরে আইজগ্যা আমার লগে রইতে কও- বলে মানবী বায়না ধরে বসল মায়ের সাথে। অনেক বোঝানোর পরেও ব্যর্থ হয়ে শেষে সম্মতি দিলেন। মানবীর মা বললেন আইগ্যা থাইক্কা জান বেহাইয়া মাইয়া কতা হোনবে না। ঝড়ের মধ্যে তাবুতে থাকাটা নিরাপদ নয় আবার এখানে বিধবার সংসারে থাকতেও মন চাচ্ছে না এমন ভাবছে সুবির সাহেব। অবশেষে সুবির সাহেব একমত প্রকাশ করল। এক রকম নিরুপায় হয়েই থেকে গেল মানবীদের ঘরে। ঘরে আলাদা রুম না থাকায় সবাইকে এক জায়গাতেই থাকতে হল। সকাল বেলা বিছানা থেকে উঠে মানবীর মা। ভাঙা একটা আয়না হাতে নিয়ে ভাবছে এইডা আমি কি করলাম অর্থাৎ সে শরীরের যৌন ডাকে সারা দিয়ে ফেলেছে। চোখে মুখে অপরাধ নিয়ে মানবীর পাশে গিয়ে কাঁদছে মানবীর মা। সুবির সাহেব তার কাছে এসে বলল এটা আমাদের ঠিক হয় নাই ভুলটা আমার হয়েছে। মনবীর মা চুপকরে রইল। এদিকে কাজে যাবার সময় হয়ে গেছে। মানবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল সুবির সাহেব। এরপর আর সেই ভুলের পুনবাবৃত্তি ঘটেনি। যা ভুল হবার এক বারই হয়ে গেছে। দুজনই ভুলতে বসেছে সে দিনের কথা। সুবির সাহেব আগের মতই মানবীকে আদর সোহাগ দিয়ে আগলে রাখছে। অসুধ পত্র নিয়মিত বাজার সদাই মাঝে মাঝে করে দিচ্ছে। এতে মানবীর মা আপত্তি জানিয়ে আসছে প্রথম থেকেই কিন্তু সুবির সাহেবের যেন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। এক এক বার বাজারে গিয়ে কিছু কিনবে না বলে মন স্থির করে। অথচ মানবীর কথা মনে পরলেই বাজার না করে পারেন না। এর মধ্যেই মানবীর মা একটা দুশ্চিন্তায় পরে গেছে। তার মাথাটা ঘুরছে খাওয়া দাওয়ায় অরুচি। মাঝে মধ্যে বমি আসছে সে বুঝতে পারল তার পেটে বাচ্চা এসেছে। বিধবার পেটে বাচ্চা। জানাজানি হইলে লোক মুহে (মুখে) ছি ছি আওয়াজ লইবে (তুলবে) সুবির সাহেবকে কওন দরকার সেই বা কি কইবে। দোষটা তো আমারই ঠিক সময় সাবধান অইতে পারি নাই বইল্লা আইজ এ বিপদে পরছি। একা একা বসে বলছে মানবীর মা। মেয়েটা মিত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে যে কোন সময় মারা যেতে পারে। পেটে যার আস্তিত্ব টের পায়, সে নিয়ে আসছে আরেক সংগ্রাম। এ অবস্থায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে মানবীর মা। কাউকে কিছুই বলল না। হতাশা আর ভীতির মধ্য দিয়েই কেটে যাচ্ছে দিন।

নয় মাস পর.....................
বালুদিয়া গ্রাম এখন প্রায় বদলে যেতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। রাস্তাঘাট স্কুল কলেজের কাজও শুরু হয়েছে। চায়ের দোকানে বসলেই শোনা যায় এখানকার খুঁটিনাটি সব। মজিদ ভাই এই বার আমাগো কোন ভুল হয় নাই। ঠিক মানুষটারে ভোট দিছিলাম দেইখ্যাই অহন সবকিছুর লগে গ্রামটার চেহারাও বদলাইতাছে। মেয়র সাব খুব ভাল মানু (মানুষ) চা খাচ্ছে আর বলছে এক বয়স্ক লোক। সুবির সাহেব ওখানে বসেই চা খাচ্ছিল। এমন সময় ঠিকাদার এসে হাজির। নাঃ এখন এ দেশে ভাল মানুষের কোন দাম নেই দশ টাকার কাজে আট টাকাই দিতে হয় চাঁদা, ঠিকাদার বলল। কেন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করল সুবির সাহেব। এখানে মালদার পার্টির চোখ পরেছে। দশ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। নইলে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে। আমি এক টাকাও চাঁদা দেব না। ঠিক করেছি দুই ঘন্টার মধ্যে কাজ বন্ধ করে চলে যাব। এর পর যা করার মিডিয়ার লোক করবে। সুবির, যান গিয়ে মালছামানা গুছিয়ে কার্গো ছাড়ুন, বলে চলে গেল ঠিকাদার। হাতে মাত্র দুই ঘন্টা সময়। ভাবতেই সুবির সাহেবের মুখ কাল হয়ে গেছে। আমি চলে যাব এখানে আর কোন দিন অসবো কিনা কে জানে। মানবীর সাথে একবার দেখা করা দরকার। মেয়েটা আমার চলে যায়ার কথা শুনলে খুব কষ্ট পাবে। মানবীর মাকে একটা ধন্যবাদ জানানো দরকার। কোন মুখেই বা বলল যাক সে রাতের কথা আর মনে করতে চাই না। বউটা বোধ হয় আমার পথ চেয়ে বসে আছে। সেই রাগ করে চলে এসেছি আর কোন খোঁজও নেইনি । আচ্ছা আমি বাড়ি ফিরে গেলে বউ আমার সাথে কথা বলবে তো। একটা বাচ্চা নেয়ার জন্য কতই না চেষ্টা করেছি। ওঝা বৌদ্য ডাক্তার কবিরাজ কোন লাভ হল না । আমার কি দোষ বিধাতা না চাইলে কি আর মানুষ কিছু পারে। তুই আর বুঝলি নারে বউ এ সব ভাবছে আর মুখে আওড়াতে আওড়াতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুবির সাহেব। সুবির সাহেবের সাত বছরের বিবাহিত জীবন কোন ছেলেপান না হওয়ায় নিজেদের সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। তার জের ধরে একদিন ঘর থেকে বেরিয়ে আসে কাউকে কিছু না বলে। তারপর আর ফিরে যায়নি। এতদিন পরে বাড়ি ফেরার পালা। তাও এভাবে? তবুও একটু স্বস্তি পায় এই ভেবে যে, সে কাছের মানুষদের দেখতে পাবে। এত তারাহুড়োর মাঝে মানবী বা মানবীর মায়ের সাথে দেখা করার কোন সুযোগ হল না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও, কার্গো ছেড়ে দিল বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে.........................।
এদিকে মানবীর মা তার গোপন কথা গোপনই রাখল। বিধবা মায়ের পেটে যে বাচ্চা তার ব্যাপারে মনবী কিছুই বোঝে না। সৃষ্টির নিয়মে প্রতিটা নারীর ক্ষেত্রে যা হয় মানবীর মায়েরও তাই হল। হাত পা ফুলে গেছে তার বিশ্রাম ও চিকিৎসা দরকার। মানবী বুঝতে পারল তার মা অসুস্থ- বন্ধু কে ডাকা দরকার। সে ছুটে গেল হাসপাতালের দিকে। জায়গাটা ফাঁকা। কোন লোক নেই রোগা শুকনা মুখে লাল অবরন পরে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে এগোলো নদীর দিকে। যত যাচ্ছে ততই চোখ টলমল করছে মনবীর। নদীর এপাশ ওপাশ তাকালো অনেক কার্গো আছে কিন্তু সেই লাল রং করা পেছনে কাপর বাঁধা ছাদওয়ালা কার্গোটি নেই। বুঝতে পারল তার বন্ধু না বলে চলে গেছে। কাঁদতে শুরু করল মানবী। এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখে মায়ের মুখ থেকে কষ্টের ধ্বনি বেরোচ্ছে। মানবীর চোখে মুখে অজানা উম্মাদনা যেন মায়ের সব কষ্ট দূর করে দেবে। মানবী বলল মা মুই বন্দুরে লইয়া আইতাছি.... দুই জনে যাইয়া সেলিম চাচার কাছ দিয়া ওসুধ আইন্যা দিমু। তুমি ভালো অইয়া জাবা। এই বলে মনবী আবার দৌড় দিয়ে নদীর ঘাটে পৌছাল। এর মধ্যেই সবগুলো কার্গো ছেড়ে চলে গেছে। এই গ্রামের অদূরে একটি হাইওয়ে রোড থাকায় মানবীর যেন চঞ্চলতা বেড়ে যায়। বন্ধুরে খোঁজার একমাত্র উদ্দেশ্যে সুবিধা হল। সে বাসে উঠে বসল। তার বন্ধুর খোঁজে চলে গেল অজানা গন্তব্যে..............।

সমাপ্ত
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×