মানুষ মুখে মিথ্যা বলতে পারে , চোখ কখনো মিথ্যা বলে না । বিশ্বাস হয় না ? তাহলে একটা বার চেষ্টা করেই দেখুন । আপনিও কারোর চোখে চোখ রেখে মিথ্যা কথা বলতে পারেন কি না.।.।
আমি অনেক ছোট খাটো একজন মানুষ । ভালোবাসি সবাইকে ? না , আমি ভালোবাসি মানুষকে , যার জন্যে আমাকে অনেক সময় বোকা বনে যেতে হয় । সেই দিন কার কথা , ধানমন্ডি গিয়েছিলাম , কারোর সাথে দেখা করার ইচ্ছা নিয়ে যদিও সেটা বিফল হওয়ায় একটা ছোট খাটো হোটেলে গিয়েও ঘুরে আসি এই ভেবে যে আজ আমি সবার সাথে কিছুটা সময় কাটাবো । যেই কথা সেই কাজ , কিছু দূর হাটার পর একটা ফুটপাতের দোকানে বসে চা এর জন্যে বলি , একটু পরে চা নিয়ে দাডিয়ে বলে বাবা আপনার চা । আমি অবাক হয়ে গেলাম । তিনি একজন অনেক বয়সের এক কথায় মুরুব্ববি। আমি একটু পরে বললাম ধন্যবাদ । লোকটি তাকিয়ে একবার দেখলো আমার দিকে .। আমি নিজেও কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম এই ভেবে যে , চা দেয়া তার তো দায়িত্ব ছিল , আমি তাকে ধন্যবাদ কেন দিলাম ! সত্যি কথা বলতে তাকে চা বিক্রেতা মনে হচ্ছিল না । চা এর কাপ মুখে দিয়ে আর একটু অবাক হলাম যে , এটা কোন চা এর মধ্যেই পরে না । তাকে জিজ্ঞাসা করলাম , এটা কে বানিয়েছে ? তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন যে , আমি ( তার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারছিলাম তিনি অপরাধের মধ্যেও সব চেয়ে বড় অপরাধটি করে ফেলেছেন ) । আমি কেন জানি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করে বসলাম , যে আজ কত কাপ চা সে বিক্রি করেছেন , তার উত্তর ছিল , আমিই প্রথম ! রাত ৮ টা ৪৩ বাজে ! আমি অবাক হয়ে বললাম , মানে ? তখন তিনি বললেন , ঢাকাতে এসেছেন ছেলের কাছে । আসার সময় জানিয়েও এসেছেন । কিন্তু এসে দেখেন , ছেলে ওর বৌকে নিয়ে কোথায় জানি গেছে। রাতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় হাটছিলেন একটু মাথা গুজার জন্যে । কিন্তু সেটাও হয় নি । তিন দিন যাবত ঢাকায় । রাস্তার এক চা বিক্রেতার সানিদ্দ্যে তার থাকা জায়গা হলেও গ্রামে যাবার টাকার দরকার এ সে এই চা এর ফ্লাস্কটা কিছু সময়ের জন্যে পেয়েছে । সে জানে এই এলাকায় , অনেকই ঘুরতে আসে , চা এর বিক্রিটাও ভালো হবে সামান্য সময়ের মধ্যে ? আমি ভাবছি , এই চা বিক্রি করলে যা সেই খরচ করেছে , সেটাও বিফলে যাবে । সে তার কথা গুলা বলছিল আর অন্যে দিক হয়ে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছছিল ।। আমি ছোট মানুষ , হয়তো অনেক ছোট , তার বয়সে।। কাপটা হাতে দিয়ে বললাম । আর কত কাপ চা হবে এখানে ? তিনি কিছুটা অবাক হলেন ? তার বললেন , কেন ? চা ভালো হয়নি । তাহলে আমি আর একটা দিছি । আমি না বলে তার হাতে ৩০০ টাকা দিয়ে বললাম ।। এটা নিয়ে বাসায় যান । আর এখানে যারা বেড়াতে আসে , তারা আর এখানে নেই , যারা আছে , তারা আপনার কাছ থেকে চা খাবে না , আর খেলেও পরে আপনাকে টাকা দিবে না । তিনি হয় বুজতে পেরেছিলেন , আমার কথা । আমি আর সেখানে ১ মিনিটও না দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করে দেই আমার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে । সত্যি আজব দুনিয়া।। আমার কাছে টাকা ছিলো না , থাকলে হয়তো আরো কিছু টাকা দিতাম .। কিন্তু সেই টাকা পেয়ে তার চোখ থেকে যে কান্না আমি দেখেছি তার মাঝে যে সন্তুষ্টির এক টোকরা হাসি ছিল , সেটা সত্যি নিজেকে নতুন করে ভাবতে শেখায় । ঘটনাটা বন্ধুকে বললে , সে বলে আমি নাকি আজ আবারও বোকা হয়ে গেলাম ।। কিন্তু আমি তার চোখে যেটা দেখেছিলাম , সেখানে কোন প্রকার ছলনা , প্রতারনা বা মিথ্যার তিল পরিমান অস্তিত্বও ছিল না ।