পুরো না মো: সেরাজুল ইসলাম বকুল। সবাই বকুল নামেই তাকে চেনে। তিনি আর কেউ না আমার ছোট মামা। আমার ছয় মামার মধ্যে বকুল মামা সবার ছোট। একসময়কার বালসাবাড়ীর হিরো ছিল বকুল মামা কেননা সে ছিল অসাধারন ভাল ছাত্র। বকুল মামা যখন ছাত্র ছিল তখন মামার পড়ার ঘরের সামনে সুন্দর ফুলের বাগান ছিল, সেই বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ দেখে আমি মুগ্ধ হতাম। বাগানে আমি আর আমার মামাত ভাই বাবু (বড় মামার ছেলে) পানি দিতাম, বিভিন্ন রকম পরিচর্যা করতাম, বিনিময়ে মামা আমাদের মনোহরা, চাদপুর, কাওয়াক, বিভিন্ন মাঠে ফুটবল খেলা দেখাতে নিয়ে যেত। কি ভালই না লাগতো মামার বাই সাইকলটার পেছনে আমি আর সামনে বাবু! কাওয়াক মাঠে উল্লাপাড়া বনাম শাহজাদপুর খেলা। টানটান উত্তেজনা!! তার চেয়েও বেশী উত্তেজনা মনের ভিতরে, সাইকেলে চড়া, বাদাম খাওয়া কি মজার দিনগুলো। এই বালসাবাড়ী এলাকায় ছাত্রদের মধ্যে সর্ব প্রথম কালো জ্যাকেট ও বেলী কেড্স পড়ে স্কুলে যাওয়া ছাত্র ছিল একমাত্র বকুল মামা। ১৯৯০ সাল। সামনে ম্যাট্রিকের টেষ্ট পরীক্ষা। মামা সকালে ঘুম থেকে উঠল জীবনের অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা নিয়ে। সারা রাত পড়াশুনা করার কারেন মামা পাগল হয়ে গিয়েছিল। সেই যে বকুল মামার জীবনে তিমির অন্ধকার নেমে এলো। তারপর কালো জ্যাটে, বেলী কেডস্, মোটর বাইক সব কিছুই জীবন থেকে হারিয়ে গেল। বালসাবাড়ীতে আর কোন বকুল মামারা ফুলের বাগান করার সাহস দেখালো না। তারপর.................। তার আর পর নেই।। তারপরও অনেক দিন পার হয়ে গিয়েছিল। আমার নানা, নানী, বড় মামা, কোরপ আলী মামা (যে সব চেয়ে বেশী বকুল মামার দেখাশুনা করেছে), মমতা আপা, তারা মামা আরও অনেক আপনজন এই পৃতিবী ছেড়ে চলে গেছে!ম্যাট্রিকে ষ্ট্যান করার পরিবর্তে কোনমতে থার্ড ডিভিশন জুটেছিল মামার কপালে। বকুল মামার ৫২ শতক দাগের জমি, বাজারের দোকানপাট, বাড়ীর তাত সব বিক্রি করা হয়েছিল শুধু একটু ভাল চলার আশায়। এরপরও কি দিন ভাল গেছে? সর্বশেষ যারা বকুল মামার সমসাময়িক বন্ধু বান্ধব ছিল (যেমন বিজ্ঞান কলেজের মানিক স্যার) তারা আমার বকুল মামাকে আগ বাড়িয়ে কিছু কিছু সাহায্য করেছেন। আমার একসময়কার অদম্য মেধাবী ছাত্র বকুল মামা আজ বালসাবাড়ী বাজারের শাক সব্জির দোকান্দার। কোনমতে দিন চলতো। এরপরের ঘটনা আরও নির্মম। এইতো কয়েক দিন আগে। কার সাথে যেন ঝগড়া হয়েছিল বকুল মামার। কেজির পাথর ছুড়ে মেরেছিল মুর্খ লোকটা মামার পাকে লক্ষ্য করে। বিধি বাম, আমার বকুল মামার পায়ের বুড়ি আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়েছিল। পায়ে ঘা সৃষ্টি হওয়ায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যালের ডাক্তাররা পরামর্শ দিলেন হাটুর নীচের অংশ কেটে ফেলতে হবে। এই কাজে মামা রাজি ছিল না কিছুতেই। বলল অনেক তো হলো এখন বাড়ী নিয়ে চল। শেষ নি:শাসটা বাপের ভিটাতেই ফেলি। এরপর আমার ছোট ভাই সুমন অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে কৌশলে অপারেশনটা করিয়েছিল। গরীব মানুষদের ক্ষেত্রে যেটা হয়। আপন জনেরা পর হয়ে যায়। আহারে বলার লোকটা পর্যন্ত থাকে না। বকুল মামার ক্ষেত্রেও তাই হলো। বর্তমানে পায়ে মরন ব্যাধি তকতকে ঘা নিয়ে বগুড়া জিয়া মেডিক্যালে পড়ে আছে আমার দীন দু:খি বকুল মামা। পাশে থকার জন্য যিনি দু:খের ঘর বেধে এসছিলেন আমার ছোট মামার ভাঙ্গা ঘরে, সেই ছোট মামী! প্রতিনিয়তই জীবন আর মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে দাড়িয়ে শেষ নি:ম্বাসের অপেক্ষাতে আছেন সহযাত্রী হয়ে। টাকা পয়সার বড়ই অনটন চলছে। ডাক্তার বলেছেন প্রতিদিন ৩৫০০ টাকার ঔষধ দিতেই হবে নইলে ঘা আরও উপরের দিকে উঠে যাবে। জানিনা এভাবে আর কতদিন আমার বকুল মামাকে এভাবে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হবে। বকুল মামার জীবন নাটকের পরের দৃশ্যটা কি হবে তা হয়তো এ নাটকের লেখকই ভাল জানেন। আমার শুধু একটা নতুন পবিত্র শুভ্র সকালের অপেক্ষায় পথ চেয়ে রইলাম। বিধাতা যেন অন্তত: এই টুকু প্রার্থনা কবুল করেন!! সবার কাছে দোয়া কামনা রইলো।
আমার ছোট মামা!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।
... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…
১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন