মানুষ সবসময় নিজেকে ভালবাসে, তার আছে একটি গোপনীয় ভালোলাগা। ধরন বিশেষে এক এক জনের ভাল লাগার উপস্থাপন ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মোগল আমলে রাজাদের মহল দেখলে বুঝা সহজ তাদের ভাল লাগার বিবরণ ও নিদর্শন। সেই দৃশটিতে দেখলে প্রত্যেকেই নিজের ভালোলাগা ফুটিয়ে তোলে কোন না কোন ভাবে। সেটা হতে পারে পোশাক-আষাক, ইলেকট্রিক সামগ্রী অথবা ঘর সাজানোর আসবাপত্র কিংবা সামান্য একটি পা মুছার পাপোষ ইত্যাদি ইত্যাদি দ্বারা। পাগল উন্মাদও নিজের ভাল লাগাটিকে প্রকাশ করে তাদের পদ্ধতিতে যাকে আমরা বলি পাগলামি। মোট কথা- নিজের ভালোলাগা প্রকাশের কোন সংখ্যাবদ্ধ তালিকা নেই তাই সেটা যে মাধ্যমেই প্রকাশ পাক না কেন তার উৎপত্তি গোঁড়া হলো "নিজেকে ভালবাসা" থেকে।
কিন্তু প্রশ্ন আসেঃ এরকম আমরা প্রায় শুনে থাকি আথবা বলি যে, 'আমি নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি আমার মা-বাবাকে, স্বামী /স্ত্রীকে বা সন্তান কিংবা প্রিয়তমাকে' একথাটির আসলেই কতটুকু সত্য বা এর পিছে যুক্তি কি? তা আমি জানিনা তবে আমি এটা জানি যে, মানুষ নিজেকে আপন মনে একটি আকাঙ্ক্ষিত অবস্থানে দেখতে ভালবাসে সেটি গোপনে হতে পারে কিংবা প্রকাশ্যে। নিজের অবস্থানকে ঠিক রাখার জন্য আজকাল একে অপরকে হত্যা করেছে এটি আমাদের অজানা নয় যাইহোক একটা সন্তান তার মাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসে কিংবা বেসেছে এরকম অনেক নজির বিহীন গল্প আমাদের জানা আছে। প্রসঙ্গ যদি নিজের অবস্থান হয় তাহলে সমাজে এরকম মানুষের দেখা মেলা মুশকিল যারা পিতা মাতাকে নিখাদ সেবা করে, ভালবাসে। পিতা-মাতকে সেবা করার উদ্দেশ্য যদি সম্পত্তি অথবা অধিপতি হয় তাহলে এই ভেশে মতলবি সেবক সেবিকার কোন অভাব আমাদের নেই আশপাশে তাছাড়া সেবা করা মানে ভালবাসা এটা নিতান্তই ভুল প্রলাপ। সম্পত্তিশীল অধিপতি হবার জন্য একটি সন্মানিত অবস্থানের প্রয়োজন আর সেই অবস্থানকে সকলেই ভালবাসে। স্বীয় অবস্থান বজায় রেখে কে না চায় সবাই তার অধীনে হোক আর এই "অবস্থান" কে ভালো লাগা নির্গত হয় নিজেকে ভালবাসা থেকে। এটাও একটি বহিঃপ্রকাশ নিজেকে ভালবাসার। মানুষ সবসময় নিজেকে ভালবাসে।
নিজেকে ভালবাসতে হলে সুখী হওয়ার ভূমিকা বিশদ। শুধু তাই নই, যে মানুষটি সুখ খোঁজে ভবঘুরে তার কাছে ভালবাসাটি নেহায়েত বাড়তি ঝামেলা। যদিও ভালবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য সুখী হওয়ার অভিনয়ে পারদর্শী সকলেই। কিন্তু ভালবাসা হতে আত্মতৃপ্তি মেলাটাই আমাদের আত্মিক চাহিদা ফলে নিজের চেয়েও স্ত্রী কে কিংবা প্রেমিক,প্রেমিকাকে ভালবাসা সম্ভব বটে তবে নিজে সুখী হওয়ার প্রয়োজন।
সুখী থাকা প্রেত্যেকেরই স্বপ্ন আর আমারা নিজের স্বপ্ন নিজেই সাজাই। অপরকে নিয়ে স্বপন বাঁধ নিজেকেই সাজাতে হয় তা এটাই বাস্তব। নিজের সাজানো স্বপ্ন নিজের কাছে সবসময়ই প্রিয় সেটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা আমারা প্রত্যেকেই করি। সে স্বপ্ন দেখতে বা সাজাতে আমাদের ভাল লাগে, ভালোলাগা কে সবসময় বহাল রাখতে আমরা ভালবাসি অন্যকে। ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে বাঁধি এক নতুন ভালবাসার স্বপ্ন এবং নিজের ভালবাসাকে জড়িয়ে দেই তার ভালবাসার সাথে। প্রকৃত মানুষ নিজেকেই ভালবাসে
সন্তানকে নিয়ে সকলেই চিন্তাবান, তাদের জুড়ে আমাদের বহু স্বপ্ন ও আশা। নিজের ফেলে আসা স্বপ্ন গুলো আমারা তাদের দিয়ে বাস্তব করব এটা নতুন কথা না। নিজের কাঙ্ক্ষিত অবস্থান নিজের সখ ও চাহিদার সীমা নির্ধারণ করতে পেরেছে এরকম মানুষ সংখ্যায় লঘু হতে লঘু। কারণ একটি প্রতিষ্ঠিত সার্থক সন্তান সবাই কামনা করে এবং তার অর্জন কে নিজের অর্জন মনে করাটাই স্বাভাবিক। সেটি সন্মান অবস্থান কিংবা অর্থ হতে পারে। নিজেরা ত্যগ করে হলেও সন্তানের ভোগের ব্যবস্থায় নিমজ্জিত সবাই। এক সময়তো এই সন্তানই আমাদের দেখবে, আমাদের চাহিদা মিটাবে, তাদের নিজের ভালবাসাকে বিলিয়ে দিবে আমাদের ভালবাসার জন্য। মূলত প্রত্যেকেই নিজেকে ভালবাসে প্রথমে আর পরিশেষে নিজের ভালবাসাটাই আমাদের কাম্য। মানুষ সবসময় নিজেকেই ভালবাসে।