somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপি : তাবোল-আবোল

২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১)

এ মাসের "কালি কলম " পড়লাম। চার থেকে পাঁচটি ছোট গল্প ছিল সেখানে। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে সবগুলো গল্পই সাধারণের থেকেও নিচু মানের। একটি সুন্দর ছাপা, এবং তথাকথিত "কালচার্ড" গাম্ভীর্য নিয়ে পত্রিকাটি আউটলুক বানানো হয়েছে। অথচ কিছু প্রবন্ধ ছাড়া কথাসাহিত্যের মান তলানিতে। আমি গত ২ বছর যাবত পত্রিকাটি নিয়মিত পড়ে থাকি। হঠাত মনে হল মাঝে মাঝে পুরনো ভাল সাহিত্যিকের গল্প যেমন "হাসান আজিজুল হক কিংবা সৈয়দ হক" এর লেখা ছাড়া এখানে মনে পরার মত কিছুই ছিল না। অথচ পত্রিকাটি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে একটি কালচার্ড আভিজাত্যের ছোঁয়া। আমি কোন উত্তরাধুনিক সাহিত্য সমালোচক নই যে নির্দিষ্ট তত্বীয় কোন অভিযোগ করব। গল্পগুলো প্লেইন এন্ড সিম্পল ট্র্যাশ। অধিকাংশই ক্লিশে আর পরিমিতিবোধের অভাবে দুষ্ট। প্রাচীন গ্রীস থেকে শুরু করে নব্য আধুনিকতার যুগ পর্যন্ত সংস্কৃতির চর্চা প্রধানত সুবিধাভোগী লোকজনই করে গেছে। অনেকের দর্শনেই এরিস্টোক্র্যাসির প্রতি প্রচ্ছন্ন , ক্ষেত্র-বিশেষে প্রবল অনুরাগ ছিল। সংস্কৃতি এমন লোকদের জন্যে যারা সুপিরিয়র এবং তাদের নৈতিক অধিকার আছে মেজরিটি ইনফিরিয়রদের শ্রমে টিকে থেকে ট্র্যাশ পয়দা করার। এই ট্যাগ লাইনে অনেকেই কথা বলেছেন। সক্রেটিস থেকে আধুনিক নিতশে পর্যন্ত। এথেন্সের পতনে প্লেটো এতই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তার বিখ্যাত রিপাবলিকের ইন্সপিরেশন তিনি নিয়েছিলেন স্পার্টা থেকে, এথেন্স থেকে নয়। কিভাবে মিথ্যার মাধ্যমে "গার্ডিয়ান ক্লাস" শ্রমজীবীদের দমিয়ে রাখবে, যাতে গার্ডিয়ান ক্লাস দর্শন এবং শিল্পে মনোযোগ দিতে পারে এর ডিটেইল স্ট্রাকচার তিনি তৈরি করে গেছেন যা যুগে যুগে সুবিধাভোগীদের নৈতিক মেরুদণ্ড প্রদান করেছে। শুধু আমাদের সুবিধাবাদী মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত নয়, প্লেটোর এরিস্টোক্র্যাসির ফর্মুলায় তথাকথিত প্রোলেতারিয়েত একনায়কতন্ত্র তথা সোভিয়েত রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টিও পড়ে। আসলে "ম্যাকাভেলীয় পাওয়ার পলিটিক্স" এরিস্টোক্র্যাটদের প্রধান ভাব। এইভাবেই আমাদের দেশের লোকজন সাহিত্যের কোন সামাজিক দায় নেই ইত্যাদি বলেই অভ্যস্ত। "কালি কলমে" মেধার দৈন্য তা প্রমাণ করে, সংস্কৃতিকে আমরা বেধে অভিজাততন্ত্র এর শখ হিসেবেই দেখতে চাই।

২)

wisdom শব্দটার ভালো বাংলা কি? জ্ঞান অবশ্যই নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে জ্ঞানকে "wisdom" থেকে আলাদা দেখি। আমার কাছে জ্ঞান হচ্ছে, "যে পৃথিবীকে আমি এক্সপেরিয়েন্স করি, তার একটি ডেসক্রীপশন।" আমার/আমাদের ব্যক্তিগত বায়াসের ঊর্ধ্বে যদি সে উঠতে পারে তাহলে সেই জ্ঞান হচ্ছে নৈর্বত্তিক। এখন অবজেক্টিভিটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং ফিজিক্যাল সায়েন্স এই মহাবিশ্বের বর্ণনা হিসেবে ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। তার আপাত কোন শেষ নেই। সুতরাং অবজেক্টিভ জ্ঞান অর্জনের সাথে পূর্ণতার বোধের সরাসরি সম্পর্ক নেই। কিন্তু উইসডোম আমার কাছে ভিন্ন জিনিস। উইজডোম ইজ কাইন্ড অফ ইন্টারপ্রেটেশন ফ্রম নলেজ উইথ এক্সপেরিয়েন্স। সুতরাং উইজডোম অবজেক্টিভ নয়। অবজেক্টিভ না হওয়াতে উইজডোমের ক্ষেত্রে পূর্ণতা লাভ হয়ত সম্ভব।

উইজডোম মানুষকে একধরনের "বৌদ্ধিক" অথরিটি দেয় বলেই আমার ধারনা। অন্তত নিজের জীবনের উপর। উইজডোমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও আমার কাছে টয়েলকিনের লর্ড অফ দ্যা রিঙ্গসে টানা সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক মনে হয় না। এলফ রা ছিল সেখানে ওয়াইজ। এজন্যেই তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা নেয়ায় আগ্রহ ছিল না। উইজডোম সম্ভবত মানুষের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাংরি যে "ম্যাকাভেলীয় প্রিন্স" বসবাস করে তাকে হত্যা করতে পারে।

রাসেলের "হিউম্যান নলেজ" পড়ছি। অনেকক্ষেত্রে একমত হতে পারছি না। রাসেলের সাথে দ্বিমত হতে পেরে ভাল লাগছে।

৩)

আজকার অনেক গণিত পড়তে হচ্ছে। ভালোই মজা পাচ্ছি। শেষ পড়লাম "মেনিফোল্ডস" আর "গ্রুপ থিওরি"। ইন্টারেস্টিং জিনিস হচ্ছে, তাদের পদার্থবিজ্ঞানে প্রয়োগের অনেক আগেই তারা অস্তিত্বশীল ছিল গণিতে। রোড টু রিয়েলিটি বই এ রজার পেনরোজ "প্লেটোনিক রিয়েলিটি" বলে একটি ধারনার কথা বলেছেন। ম্যাথম্যাটিক্যাল স্ট্রাকচার গুলো এই প্লেটোনিক মহাবিশ্বে বাস্তবতা। কিন্তু রহস্য হচ্ছে কিভাবে এই প্লেটোনিক মহাবিশ্বের উপাদান বাস্তব বিশ্ব-চিত্রের বর্ণনায় ব্যবহৃত হতে পারল? এটি একটি ভাল প্যাঁচানো দার্শনিক সমস্যা। পেনরোজ অবশ্য তার এই প্লেটোনিক বাস্তবতার ধারনা অনেকদূর নিয়ে গেছেন। "দ্যা নেচার অফ স্পেস-টাইম" বই এ যা কিনা ১৯৯৪ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত স্টিফেন হকিং এর সাথে একটি তাত্ত্বিক বিতর্কের পুস্তক সংস্করণ, সেখানে হকিং প্রথমেই প্লেটোনিক বাস্তবতার প্রতি পেনরোজের আস্থাকে বাতিল করে দিয়েছেন এই বলে কারণ বাস্তবতার প্রকৃত সংজ্ঞা নেই। হকিং "মডেল ডিপেন্ডেন্ট রিয়েলিজমে" বিশ্বাসী। এই দিক থেকে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আধিভৌতিক ফলাফল সমূহকে তার মেনে নিতে "দার্শনিক" কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পেনরোজ এইখানে দাবী করছেন, প্লেটোনিক বাস্তবতার সাবসেট হচ্ছে, আমাদের পার্সেপশনের মহাবিশ্ব, সুতরাং তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সংস্কার দাবী করছেন, তার কাছে জেনারেল রিলেটিভিটি সম্পূর্ণতর মহাবিশ্বের বর্ণনা। যেখানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স অসংখ্য "গাণিতিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য" রিনর্মালাইজেশনের উপর নির্ভরশীল।( অসীম যোগ বিয়োগের দরকার হয়।)। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গাণিতিক ভিত্তি প্লেটোনিক মহাবিশ্বের বাস্তবতা(প্রধানত গাণিতিক) এর সাথে সন্দেহজনক সম্পর্ক। তাই কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে এডহক ভেবে সম্পূর্ণতর তত্ব খোজার কথাও তার বক্তব্যের মাঝে আছে। "এম থিওরি গাণিতিক ভাবে তুলনামূলক ভাবে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু কোন এম্পেরিক্যাল প্রুফ নেই।

গ্রীকরা বিশ্বাস করত পার্সেপশন বিশ্বাসযোগ্য নয়। তার চেয়ে বিশুদ্ধ চিন্তা গ্রহনযোগ্য। পিথাগোরাস থেকে হেরাক্লিটাস , এম্পেকোডিস , সবাই তাই চিন্তায় গুরুত্ব দিতেন বেশী। আয়োনিয় দার্শনিকরা ছিলেন এম্পিরিক(পরবর্তিতে এটোমিস্টরাও আয়োনিয়দের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন)। তাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে ভুল প্রেডিকশান গুলো অধিকাংশই "এম্পিরিসিজম" কে অবজ্ঞা করার জন্যেই। আমাদের বর্তমান বিশ্ব বেকনীয় দর্শনে এত সফল, যে আমরা গ্রীকদের এইসকল সহজ বিষয়ে ভুল করা দেখে হাসাহাসি করি। ভুলে যাই, এম্পিরিক পদ্ধতি পরিত্যাগ করা ছিল তাদের "কনশাস চয়েস।" আর সেজন্যেই তারা "প্লেটোনিক বাস্তবতা" এর মুল তৈরি করে যেতে পেরেছে। আজকের এম্পিরিক বৈজ্ঞানিক তত্ব গুলোর প্রধান ভিত্তিও কিন্তু সেই প্লেটোনিক বাস্তবতার "বিশুদ্ধ চিন্তার" গণিত। কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর সাধারণ আপেক্ষিক তত্বের দ্বন্দ্ব আমার "প্লেটোনিক বাস্তবতা" আর "এম্পিরিসিজম" কে মুখোমুখি করে তুলেছে।

আমি নিজেও "বাস্তবতার" সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে দ্বিধায় ভুগি।


৪)

অনেকদিন পর লিখলাম। লিখতে ভালোই লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১২ রাত ২:৪৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×