somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম আলোর জোম্বিরা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এইটা অনেক পুরনো একটা লেখা, যা ইংলিশে লেখা হইছিল। শাহবাগ থেকে হেফাজত উপলক্ষে শাহরিয়ার তানভীর ভাই, এইটা অনুবাদ করে দিছিলেন। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক বলে এইটা আর বইয়ে দেয়া হয় নাই। তাই এখন কিছু সংযোজন বিয়োজন সহ দিলাম।

প্রথম আলোর জোম্বিরা

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটি মজার প্রবাদ আছে। যদি সরকার এবং বিরোধীদল উভয়ই আপনার সমালোচনা করে তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ‘ভালো’ কিছু করছেন।

প্রথম-আলো বরাবরই সেই অবস্থানে নিজেকে পেয়েছে। কমিউনিস্টরা, সেনাবাহিনী, মোল্লা, উদারপন্থী, চরমপন্থী, বামপন্থি কেউই তাদের দেখতে পারেনা।
কিন্তু সবাই প্রথম-আলোকে ফলো করে যদিও তাদের সবার ধারণা হ্যামিলনের বাঁশির সুরে এই অর্ধঘুমন্ত জাতিকে একটা নরকের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সকল দলের কাছেই চক্ষুশূল হওয়ার একটা কারণ আছে। তারা সবাই প্রথম-আলোর এই মতামত-জনপ্রিয়তার অবস্থানকে হিংসা করে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত নাগরিকদের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই প্রতিদিন প্রথম-আলো পড়েন। এবং সবাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান এবং এই পত্রিকায় একটি কলামে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব থাকেন। মানুষের মধ্যে জনমত তিরি করতে গত প্রায় ১৫ বছরে প্রথম-আলোর প্রতিদ্বন্দী কেউ নেই (**লের কন্ঠ ? ধুরর!) । তাই এই খেলাটা এতটাই একপেশে হয়ে গেছে যে মতিউর সাহেব চাইলে ছয় মাসের মধ্যে সরকার পতন ঘটাতে পারেন এবং সবাই এটা জানেন।

প্রথম-আলো’র জম্বিরা



এটা এখন বলাই যায় যে, এই দেশকে এখন দুই গ্রুপে ভাগ করা যাবে। তা হোল যারা প্রথম আলো পড়ে আর যারা পড়ে না। । পত্রিকা পড়ুয়া শিক্ষিতদের প্রায় ৮০ % প্রথম-আলো পড়ে এবং তারা তাদের বেশিরভাগই তাদের চিন্তা ভাবনা বন্ধক রেখেছেন প্রথম-আলোর সম্পাদকের কাছে। তারা ঠিক ততটুকু তথ্যই পান যতটুকু প্রথম-আলো তাদের দেয়।

প্রথম আলো তাদের কোন কিছু ঘৃনা করতে বললে তারা ঘৃনা করে এবং প্রথম আলো যাদের ভালো বাসতে বলে, ইয়াবা খাওয়ার মত সেই বড়ি খেয়ে তারা তাদের ভালবাসতে শুরু করে ।

বাকি সব পত্রিকা, টক-শো, মিডিয়া, ব্লগ, ফেসবুক সবাই শুধু প্রথম-আলোর সকালের প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদটাই সারা দিন জাবর কাটতে থাকে। গত ১৫ বছরে অবস্থাটা এমন দাড়িয়েছে যে ফ্যান্টাসি মুভির জম্বি’দের মত এরা সবাই অন্ধ ভাবে প্রথম আলোকে ফলো করে যাচ্ছে এবং কোন ধরনের টোটকা, বা তাবিজ দিয়ে তাদের সেই অসুখ সারানো যাচ্ছেনা।

এই প্রথম-আলো জম্বি গ্রুপ আর তাদের প্রতিপক্ষ মতের মানুষের মাঝে এখন বিশাল একটি পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এই প্রথম আলো বিদ্বেষী গ্রুপে আছে ধর্মীয় মৌলবাদী,পলিটিকাল এলিটেরা আর কিছু অতি বাম।


এন্টিএস্টাব্লিশ্মেন্ট ভুমিকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করা প্রথম আলোর প্রধান কর্তব্য এখন এখন এস্টাব্লিশ্মেন্টের কাঠামো রক্ষা করা

আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় জনপ্রিয়তা পাওয়া প্রথম-আলো, এস্টাবলিশমেন্টের খারাপ গুলোর বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে প্রতিবাদ করে আজকে এই অবস্থায় পৌঁছেছে । কিন্তু, সেই দিন এখন আর নাই। প্রথম আলো এখন নিজেরাই ঐ এস্টাবলিশমেন্টের কাঠামো হয়ে এস্টাব্লিশমেন্টকে রক্ষা করছে । সচেতনভাবে হোক আর নাই হোক তাদের অস্তিত্বের প্রধান লক্ষ্য হলো, কর্পোরেট, মেডিয়া, পলিটিকো, সিভিকো, মিলিটারী এবং কালো টাকায় গড়া এই এস্টাব্লিশমেন্টের কাঠামো টাকে ধরে রাখা ।
হ্যা, প্রথম-আলো এখনও সরকার, সেনাবাহিনী, বিচারক, সাধারণ অফিস, রাজনৈতিক দল এবং তাদের লেজুর সংগঠন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর খারাপ দিক, ভাল দিক তুলে ধরছে কিন্তু তাদের এই কাজগুলো তাদের প্রতিষ্ঠাকে আরো সুদৃঢ় করার জন্যই। এর কোন আমূল পরিবর্তনই তাদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত নয়।

প্রথম-আলো এখন একটা আরামদায়ক অবস্থানে গেড়ে বসেছে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাধারা সেই সকল জম্বিদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে এই জম্বিরা এখন প্রথম আলোর ডাইরেকশন মত সরকারের দুর্নীতি মেনে নিয়ে নিশ্চুপ থাকে, সরকার যদি তেল গ্যাস ব্লক আমেরিকা বা ইন্ডিয়াকে অলমোস্ট বিনামূল্যে দান করে আমাদের ভবিষ্যত ধংশ করে , এরা মনে করে কোন ব্যাপার না , একটা নকল করে পরীক্ষা করে পাশ করা সরকার পরীক্ষা বাতিল করার ইস্যু বাদ দিয়ে যারা যারা পরীক্ষা দেয় নাই, তাদের সবাই ভুল করেছে বলে এরা ভাবতে থাকে ।
এবং এর ফলে এই আবদ্ধ এবং নিষ্পেষণমূলক সমাজ, কর্পোরেটদের লুটপাট ,নীরব দারিদ্র, সংস্কৃতিতে কর্পোরেট প্রভাব, এফএম রেডিওর ফাঁকা মাথার উপস্থাপক, আমাদের সকল ট্রাডিশোনাল অনুভূতির বানিজ্যিকীকরণ করে পণ্য বেচার ধান্দা এবং ইত্যাদিকে দিনের পর দিন সহ্য করে যাচ্ছে। তারা এখন বাংলালিংকের সিম কেনার সাথে দেশের প্রতি ভালবাসাকে মিলাচ্ছে, ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে কর্পোরেট ছোঁয়া দিচ্ছে, কুষ্টিয়ায় লালন উৎসবকে কর্পোরেট পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেবার স্থান হিসেবে দেখছে।

প্রথম আলো এবং তার গ্রিড
প্রথম আলোর প্রধান একটা ইস্যু হইলো,

বর্তমানে প্রথম-আলোর সহায়তায় শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিজীবিতা, চিন্তা ক্ষেত্র, ব্যবসা, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে একদল পেশাদার গজিয়ে উঠেছে যাদেরকে জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। বুদ্ধি এবং চিন্তাশীলতার ক্ষেত্রে এরা প্রকৃতপক্ষে মাঝারি মানের এবং এদের বেশিরভাগেরই দেশকে নতুন কিছু দেবার নেই। প্রতি সপ্তাহেই তারা একটি মনমাতানো কলাম নিয়ে আসেন পত্রিকায় যার কিছুই সাধারণ মানুষের জীবনে বিন্দুমাত্রও প্রভাব ফেলেনা এবং দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে তার কানেকশান খুব কম । এবং একটা সুশীল জগতের এজেন্ডা আজকে, প্রথম আলো সেবীরা তাদের প্রধান খাদ্য হিসেবে খাচ্ছে।
এবং যেসব ক্ষেত্রে মিডিয়ার সমর্থন দরকার সেসব জায়গায় প্রথম-আলোর এই কোটারী গ্রুপ তার একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যাকে আমার ভাষায় বলি ‘ গ্রিড’। এই গ্রিডের একজন আরেকজনকে রক্ষা করে । তারা একজন আরেকজনের প্রশংসা করে, এক এক জন আরেক জনকে লিফট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে রাখছে। এবং একজন আর একজনের আর্থিক ইন্টারেস্ট রক্ষা করছে। বং সর্বপোরি এটি নিশ্চিত করছে যাতে আর কোন নতুন প্রতিযোগী না গজায়।
সাথে সাথে, এই গ্রিডের সদস্যরা এতটাই সম্পদের অধিকারী হয়েছেন যা দিয়ে তারা এখন তাদের এই সামাজিক অবস্থান এবং সম্পদ দুটোতেই ভালো একটা অবস্থানে পৌছাইছেন। এবং প্রথম আলোর উদ্দেশ্য থাকে, তার গ্রিডের সদস্যদের বানিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা।
প্রথম আলো এখন একটা স্থিতাবস্থায় আছে, যেই স্থিতাবস্থার কোন পরিবর্তন প্রথম আলোর কাছে এখন গ্রহনযোগ্য না।
প্রথম-আলো জানে এই সাম্যাবস্থার পরিবর্তন হলে তাদের আধিপত্য হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তারা তাই এই কর্তৃত্ব রক্ষায় যেকোন অবস্থান নিতে প্রস্তুত।
এইটা যেমন রাজনীতির জন্যে প্রযোজ্য , তেমন প্রযোজ্য প্রথম আলোর সাথে জড়িতদের ব্যবসা , প্রথম আলোর সাথে জড়িত শিল্প, সাহিত্য সহ সকল শ্রেনীর গ্রিডভুক্ত সকল ধরনের কোটারীদের জন্যে।
এই জন্যেই প্রথম-আলো বামপন্থী দলগুলোকে বেশি সুবিধা দেয়না যারা গত ২০ বছর থেকে দুই দলের রাজত্বের অবসান ঘটাতে চাইছে।

গ্রিড এর বাকি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করতেও তারা বদ্ধ পরিকর। এর মধ্যে কর্পোরেট সার্থটা সব আগে আসে। কারণ, কর্পোরেটদের হাতেই পয়সা আছে। ফলে কর্পোরেট স্বার্থ দেখা এখন প্রথম আলোর অস্তিত্বের সব চেয়ে বড় ইস্যু। 'পারসোনা' কেলেঙ্কারির সময় আমরা দেখেছি তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ এ নিয়ে কোন খবর ছাপায়নি। পরবর্তীতে মিডিয়ায় এ নিয়ে জোর আন্দোলন শুরু হলে তারা পত্রিকায় খবরটি ছাপাতে বাধ্য হয়। আরেকটি হোল ভিকারুন্নেসায় পরিমল কেলেঙ্কারি। বেশ কিছুদিন ভিকি’র ছাত্রীরা পথে আন্দোলন করে কিন্তু প্রথম-আলো সেটি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য না করার সিদ্ধান্ত নেয় যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলাতে সমালোচনা শুরু হয়।

তাই, দেখা যাক প্রথম-আলো কি চায় আর তার জম্বি পাঠকরা কি চায়!

দি আমেরিকান ড্রীম

প্রথম-আলোর বয়ানের প্রথম উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট্য হইলো, আমেরিকার ইমান আকিদা প্রচার করা এবং বাংলাদেশের জোম্বিদের মধ্যে সেইটা হার্ডওইয়ার করে দেয়া ।

আমি কোন ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিচ্ছিনা বা বলছিও না যে এগুলো ওয়াশিংটনে বসে তৈরি করা নীল নকশা। বরং এটা আমেরিকা এবং প্রথম-আলোর ইসলাম ভীতিতে আক্রান্ত বামপন্থী সম্পাদকদের উভয়ের একই মতাদর্শের মিলের ফলাফল।

যদিও র‍্যাডিকাল বাম’রা বলে যে তারা আমেরিকাকে ঘৃণা করে এবং এন্টি আমেরিকান হিসেবেই তাদের বাহ্যিক আবরণ সাজায় , কিন্তু আমেরিকান মূল্যবোধ এবং রাজনইতিক উদ্দেশ্যের সাথে ঐ বামদের অনেক কিছুতেই বেশ মিল আছে। উভয়েই ইসলামিক মৌলবাদের বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নেয়, সবসময়ই বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক নীতিতে বিশ্বাস করে এবং বাক স্বাধীনতা আর নারী অধিকার সহ বেশ কিছু প্রগ্রেসিভ ইস্যুতে উভয়ের আন্তরিকতা আছে – যার ফলে তাদের মধ্যে সব সময়েই একটা সম্মিলন দেখা যায়।

উইকিলিকস এর একটা আলোচনাতেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পত্রিকা গুলো সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠায় বলছিল, প্রথম-আলোকে তাদের বন্ধুসুলভ পত্রিকা।
এবং, বলা বাকি রাখে না যে প্রথম-আলোর জম্বি পাঠকরাও এই অবস্থানে ঢুকে গ্যাছে , যদিও প্রথমদিকে এর কিছুটা বিপরীত প্রতিক্রিয়াও ছিল।


এনেমি এট দ্য গেইট- র‍্যাডিকাল ইসলাম:

আগেই বলেছি প্রথম-আলোর মূল অস্বস্তির জায়গাটি হোল ধর্মীয় গোড়ামি। এই অস্বস্তি এতটাই মূলে ঢুকে গেছে যে তারা সাইক্লোনে কোথাও ২০,০০০ মানুষ মারা যাওয়ার সংবাদ বাদ দিয়ে কোথায় কোন মাদ্রাসা শিক্ষক বাংলাকে তালিবান বানানোর উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা ঢাল-তলোয়ার সহ ধরা পড়েছে এই খবর আগে ছাপাবে।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি:

প্রথম-আলোর একটি স্পষ্ট মত হচ্ছে মুক্তযুদ্ধের পক্ষে তাদের অবস্থান। যদিও বাংলাদেশের বামপন্থীদের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে কখনোই তারা জাতির পিতা হিসেবে মেনে নেয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে এই দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে যায়। জামাত-শিবির বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনীতিতে প্রধান ইসলামী শক্তি হিসেবে প্রবেশ করায় এবং একই সাথে জামাতের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান থাকার কারণে – প্রথম আলো খুব স্ট্রংলি জামাতের বিরুদ্ধে এক্টিভিজম করে গ্যেছে। কারণ, প্রথম আলোর দুইটা প্রধান সেনসিটিভিটি বিপক্ষে জামাতের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মীয় মৌলবাদ। প্রথম আলোর ১০ বছর ব্যাপী এই এক্টিভিজমের ফলাফলে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে জামাত সিম্পেথি এবং সমর্থন অনেক কমে এসেছে ।
এই মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীর কিন্তু একসময় ইরাক ও আফগানিস্তান সহ অনান্য মুসলমান দেশে তেলের উপর দখল রাখার চেষ্টায় পশ্চিমা বিরোধী মনোভাবের কারণে পাকিস্তানিদের মত কিছুটা মৌলবাদীদের পক্ষ নেয়ার অভ্যাস ছিল।

দ্য কুল কর্পোরেট:

বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় প্রথম-আলোর একটা প্রধান গোল । বিজ্ঞাপন চাহিদার বাইরেও টেলিকম, ভূমি ব্যবসা, ভোগ্য পণ্য, খাদ্য শিল্প, পরিবহন বা অন্য যেকোন ক্ষেত্রের গত ২০ বছরে গড়ে ওঠা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রথম-আলো সহযোগীতা করে আসছে। প্রথম-আলো এদের বরাবরই সমালোচনা, নেতিবাচক প্রচার এবং মার্কেটে নতুন প্রতিযোগীতা থেকে বাচিয়ে এসেছে। এজন্যেই ভালোবাসা দিবস এখন দেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এটিও তাদের এস্টাবলিশমেন্ট রক্ষার আরেকটি নমুনা। লক্ষ্য করার বিষয় হোল তাদের পত্রিকার সবচেয়ে দুর্বল ভাগটি হচ্ছে বাণিজ্য এবং অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতির অনেক বড় খবর যেটা মালদ্বীপের পত্রিকাতেও শিরোনাম হিসেবে আসে সেটা প্রথম-আলোর কোন কলামেই আসেনা। এছাড়াও দেশের অর্থনীতির যেসব সমস্যার কারণে পুঁজিবাদীদের দৌরাত্ব সেগুলো নিয়েও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এজন্যে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোলযোগ এবং সেই সবের কারণে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এর প্রভাব নিয়ে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জোম্বিদের তেমন কোন টেনশন নাই । এবং ঐ জম্বিরা নিশ্চিন্তেই তাদের সেই না জানার জায়গা থেকে শান্তিতে প্রথম আলো প্রদত্ত স্বস্তি থেকে শান্তিতে রাত্রি যাপন করে।

ইজরায়েল এর প্রতিরক্ষা
এইটা একটু পরোক্ষ ব্যাপার । প্রথম আলো এবং মার্কিন এস্টাব্লিশমেন্ট দেখছে, মুসলমানদের মধ্যে মৌলবাদের প্রধান একটা কারণ, জেরুজালেম, দক্ষিন তির এবং গাজাতে মার্কিন সমর্থনে ইস্রায়েলের বর্ণ বৈষম্য এবং অত্যাচার ।
এই ফিলিস্তন-ইজরায়েল দ্বন্দের ব্যাপারটি এড়িয়ে চলে বরাবরই এবং তারা এটা নিশ্চিত করে যে কোন প্রকার ছবি বা প্রবন্ধ যেন এ বিষয়ে ছাপা না হয়। অন্যান্য মুসলিম দেশে এ ধরণের আচরণকে ইজরায়েল সমর্থন হিসেবে ধরা হয়।
এবং এইটার কারণে, ইসলামিক দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সব চেয়ে কম রেডিকাল।


ড। ইউনুস- আমার ভালোবাসা:

প্রথম-আলো ড। ইউনুসের পক্ষে দাঁড়ায় যাকে আমেরিকান নেতৃত্ব তাদের ‘জানে জিগার’ মনে করে। আওয়ামী লীগের বুঝেনা, ডাক্তার ইউনুস এর বিরুদ্ধে তাদের খেলার ফলাফল শুন্য হবে। কারণ, ডাক্তার ইউনুস এর পক্ষে প্রথম আলো এমনভাবে জনমত তৈরি করেছে যে প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ শুধু সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবমূর্তিই নষ্ট করছে, বিশেষত ঐ জম্বিদের কাছে।

এখন প্রথম আলোর এই বয়ান এর বিরুদ্ধে কারা সব চেয়ে বেশি সরব ?


বিপরীত পক্ষ-
মোল্লারা:

নিটনের তৃতীয় সূত্র মতে প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সে নিয়মেই প্রথম আলোর প্রতিটি বিষয় এবং কাজে বিরোধিতা করার জন্য কট্টর একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এদের একটি গ্রুপ হোল ইসালামী কর্মী এবং আরেকটি হচ্ছে এস্টাবলিশমেন্ট-বিরোধী বামদের একটা ছোট্ট দল। তবে এই দলটার সাইজ খুব ছোট ফলে তাদের বিরোধিতার কোন বেইল নাই। প্রথম গ্রুপটি প্রথম-আলোর মূল টার্গেট। এরা হচ্ছে মৌলবাদী ইসলামী দল। এরা জানে যে এদের ধর্ম ব্যবসায় প্রথম আলো বেশ বড় একটা ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এর সবচেয়ে বড় শিকার জামাত এ ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্র শিবির। প্রথম আলো সাফল্যের সাথে মধ্যবিত্ত মগজে এর ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এইটার কারণে, একজন নন পর্দা নারী , বিএনপির প্রধান হওয়া সত্তেও এবং দলের মধ্যে বেশ কিছু বাম ধারায় আসা নাস্তিক থাকা সত্বেও জামাতের সাথে সংস্লিষ্টতার কারনে বিএনপিকে মৌলবাদী হিসেবে গালি খাইতে হইছে কারণ প্রথম আলোর জোম্বিদের কাছে জামাতে ইসলামী বিশাল একটা স্টিগমা।

নৈরাজ্যবাদী ও অতি বামপন্থী:

অন্য আরেকটি গ্রুপ যারা প্রথম-আলো মতের বিরোধী তারা হোল অতি উদার বামপন্থীরা। তারা প্রথম-আলো কে সম্পাদক মতিউর রহমানের কন্ঠ ওরফে ‘মতিকন্ঠ’ বলে থাকে। এটি বেশ ইন্টেরেস্টিং একটা রাজনৈতিক গ্রুপ। আসুন দেখা যাক এদের কিছু বৈশিষ্ট। আমাদের সংস্কৃতিকে কর্পরেটায়ন এবং জীবনের বানিজ্জিকিকরণ এদের সব চেয়ে বড় প্রথম আলো নিয়ে ক্ষোভ।

এদের মধ্যে অনেকেই সমাজে অবস্থাপন্ন এবং প্রগ্রেসিভ রাজনীতি তাদের একটা বড় একটা অংশের কাছে ফ্যশন স্টেটমেন্ট । তারা সমাজ নিয়ে অনেক ভাবে এবং এরা সম্পদের সমবন্টনে বিশ্বাস করে। এরা সিস্টেম এর পরিবর্তন চায় কিন্তু এরা বোঝে না, এই সিস্টেম এর সে নিজেই একটা পার্ট। ফলে, তাদের কাছেও সিস্টেম এর গোড়া থেকে পরিবর্তন কারণ এই ধরনের পরিবর্তনে সে নিজেই তার কমফোর্ট জনের মধ্যে বিপদে পড়বে। তাই একটা প্রগ্রেসিভ বয়ান রেখে বুর্জোয়া জীবন যাপন এদের সব চেয়ে বড় অর্জন।

এরা আমেরিকাকে সকল পুঁজিবাদ এবং মন্দের আখড়া হিসেবে দেখে। এরা হলমার্ক কেলেঙ্কারীতেও আমেরিকার পুঁজিবাদী অবস্থানকে দায়ী করে! ফ্রেন্ডস তাদের প্রিয় সিটকম, চে তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব কিন্তু সুযোগ পাইলেই তারা ইউরোপ বা আমেরিকাতে পগার পার হয়।

তাদের বড় শত্রু ড। ইউনুস, যিনি উচ্চ্ সুদের ঋণ দান করেন। তাকে এরা সুদখোর বলে সম্বধোন করে এবং প্রথম আলোকে ড। ইউনুসকে সমর্থন দেয়ার জন্য দায়ী করে। কিন্তু এদের বেশিরভাগেরই ক্রেডিট কার্ড আছে এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড তাদের সবচেয়ে পছন্দের। তারা কর্পোরেট এবং এস্টাবলিশমেন্ট-বিরোধী, তাই প্রথম আলোর পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ পক্ষপাতকে এর দু'চোখে দেখতে পারেনা।

এরা অবশ্য নিজেদের মৌলবাদের বিপক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে প্রথম আলোর সাথেএক লাইনে আছে । কিন্তু অপ্রাসংগিকতার দোহাই দিয়ে, এই মিলগুলোকে তারা এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে।

নিজের দেশ এবং নিপীড়িত মানুষের প্রতি এদের সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। যদিও তাদের ভালবাসার প্রমাণ আজ পর্যন্ত চাওয়া হয়নি, কিন্তু কোনদিন যদি দেশের স্বার্থ আর নিজের স্বার্থের মধ্যে বেছে নিতে হয় তাহলে তারা কোনটা বেছে নেয় সেটা একটা দেখার বিষয় হবে!
শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশের নন জামাত মৌলবাদীদের সাথে বামদের একটা নেচারাল এলায়েন্স হয়। সেইটা কেন হয়না, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে।

তবুও, বাংলাদেশের যেই অবস্থা প্রথম আলোকে বিশ্বাস করা ছাড়া কোন উপায় নাই। কারণ, প্রথম আলোই এক মাত্র পত্রিকা যারা হলুদ সাংবাদিকতা করে, বাকিরা বেশির ভাগ করে কুচকুচে কাল সাংবাদিকতা।ফলে জোম্বিরা চাইলেও বের হইতে পারতাছেনা।

কিন্তু , প্রথম আলোর এই জোমবিরা খুব ভয়ঙ্কর একটা প্রজাতি। এদের চিন্তা করার ক্ষমতায় প্রথম আলোর সম্পাদককে বন্ধক দিয়ে রাখা হইছে। এই দেশকে যদি জাগতে হয়, তাইলে হয় এদেরকে জাগতে হবে নইলে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং ডিসিসান মেকারদের জাগতে হবে। এবং কে আগে জাগবে সেইটাই এখন গুরুত্তপুরন প্রশ্ন।
এইটা অনেক পুরনো একটা লেখা, যা ইংলিশে লেখা হইছিল। শাহবাগ থেকে হেফাজত উপলক্ষে শাহরিয়ার তানভীর ভাই, এইটা অনুবাদ করে দিছিলেন। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক বলে এইটা আর বইয়ে দেয়া হয় নাই। তাই এখন কিছু সংযোজন বিয়োজন সহ দিলাম।

প্রথম আলোর জোম্বিরা

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে একটি মজার প্রবাদ আছে। যদি সরকার এবং বিরোধীদল উভয়ই আপনার সমালোচনা করে তাহলে নিশ্চয়ই আপনি ‘ভালো’ কিছু করছেন।

প্রথম-আলো বরাবরই সেই অবস্থানে নিজেকে পেয়েছে। কমিউনিস্টরা, সেনাবাহিনী, মোল্লা, উদারপন্থী, চরমপন্থী, বামপন্থি কেউই তাদের দেখতে পারেনা।
কিন্তু সবাই প্রথম-আলোকে ফলো করে যদিও তাদের সবার ধারণা হ্যামিলনের বাঁশির সুরে এই অর্ধঘুমন্ত জাতিকে একটা নরকের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সকল দলের কাছেই চক্ষুশূল হওয়ার একটা কারণ আছে। তারা সবাই প্রথম-আলোর এই মতামত-জনপ্রিয়তার অবস্থানকে হিংসা করে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত নাগরিকদের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষই প্রতিদিন প্রথম-আলো পড়েন। এবং সবাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান এবং এই পত্রিকায় একটি কলামে জায়গা করে নিতে উদগ্রীব থাকেন। মানুষের মধ্যে জনমত তিরি করতে গত প্রায় ১৫ বছরে প্রথম-আলোর প্রতিদ্বন্দী কেউ নেই (**লের কন্ঠ ? ধুরর!) । তাই এই খেলাটা এতটাই একপেশে হয়ে গেছে যে মতিউর সাহেব চাইলে ছয় মাসের মধ্যে সরকার পতন ঘটাতে পারেন এবং সবাই এটা জানেন।

প্রথম-আলো’র জম্বিরা



এটা এখন বলাই যায় যে, এই দেশকে এখন দুই গ্রুপে ভাগ করা যাবে। তা হোল যারা প্রথম আলো পড়ে আর যারা পড়ে না। । পত্রিকা পড়ুয়া শিক্ষিতদের প্রায় ৮০ % প্রথম-আলো পড়ে এবং তারা তাদের বেশিরভাগই তাদের চিন্তা ভাবনা বন্ধক রেখেছেন প্রথম-আলোর সম্পাদকের কাছে। তারা ঠিক ততটুকু তথ্যই পান যতটুকু প্রথম-আলো তাদের দেয়।

প্রথম আলো তাদের কোন কিছু ঘৃনা করতে বললে তারা ঘৃনা করে এবং প্রথম আলো যাদের ভালো বাসতে বলে, ইয়াবা খাওয়ার মত সেই বড়ি খেয়ে তারা তাদের ভালবাসতে শুরু করে ।

বাকি সব পত্রিকা, টক-শো, মিডিয়া, ব্লগ, ফেসবুক সবাই শুধু প্রথম-আলোর সকালের প্রথম পাতায় প্রকাশিত সংবাদটাই সারা দিন জাবর কাটতে থাকে। গত ১৫ বছরে অবস্থাটা এমন দাড়িয়েছে যে ফ্যান্টাসি মুভির জম্বি’দের মত এরা সবাই অন্ধ ভাবে প্রথম আলোকে ফলো করে যাচ্ছে এবং কোন ধরনের টোটকা, বা তাবিজ দিয়ে তাদের সেই অসুখ সারানো যাচ্ছেনা।

এই প্রথম-আলো জম্বি গ্রুপ আর তাদের প্রতিপক্ষ মতের মানুষের মাঝে এখন বিশাল একটি পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এই প্রথম আলো বিদ্বেষী গ্রুপে আছে ধর্মীয় মৌলবাদী,পলিটিকাল এলিটেরা আর কিছু অতি বাম।


এন্টিএস্টাব্লিশ্মেন্ট ভুমিকায় জনপ্রিয়তা অর্জন করা প্রথম আলোর প্রধান কর্তব্য এখন এখন এস্টাব্লিশ্মেন্টের কাঠামো রক্ষা করা

আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় জনপ্রিয়তা পাওয়া প্রথম-আলো, এস্টাবলিশমেন্টের খারাপ গুলোর বিরুদ্ধে জনগণের পক্ষে প্রতিবাদ করে আজকে এই অবস্থায় পৌঁছেছে । কিন্তু, সেই দিন এখন আর নাই। প্রথম আলো এখন নিজেরাই ঐ এস্টাবলিশমেন্টের কাঠামো হয়ে এস্টাব্লিশমেন্টকে রক্ষা করছে । সচেতনভাবে হোক আর নাই হোক তাদের অস্তিত্বের প্রধান লক্ষ্য হলো, কর্পোরেট, মেডিয়া, পলিটিকো, সিভিকো, মিলিটারী এবং কালো টাকায় গড়া এই এস্টাব্লিশমেন্টের কাঠামো টাকে ধরে রাখা ।
হ্যা, প্রথম-আলো এখনও সরকার, সেনাবাহিনী, বিচারক, সাধারণ অফিস, রাজনৈতিক দল এবং তাদের লেজুর সংগঠন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর খারাপ দিক, ভাল দিক তুলে ধরছে কিন্তু তাদের এই কাজগুলো তাদের প্রতিষ্ঠাকে আরো সুদৃঢ় করার জন্যই। এর কোন আমূল পরিবর্তনই তাদের কাছে আকাঙ্ক্ষিত নয়।

প্রথম-আলো এখন একটা আরামদায়ক অবস্থানে গেড়ে বসেছে এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাধারা সেই সকল জম্বিদের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছে এই জম্বিরা এখন প্রথম আলোর ডাইরেকশন মত সরকারের দুর্নীতি মেনে নিয়ে নিশ্চুপ থাকে, সরকার যদি তেল গ্যাস ব্লক আমেরিকা বা ইন্ডিয়াকে অলমোস্ট বিনামূল্যে দান করে আমাদের ভবিষ্যত ধংশ করে , এরা মনে করে কোন ব্যাপার না , একটা নকল করে পরীক্ষা করে পাশ করা সরকার পরীক্ষা বাতিল করার ইস্যু বাদ দিয়ে যারা যারা পরীক্ষা দেয় নাই, তাদের সবাই ভুল করেছে বলে এরা ভাবতে থাকে ।
এবং এর ফলে এই আবদ্ধ এবং নিষ্পেষণমূলক সমাজ, কর্পোরেটদের লুটপাট ,নীরব দারিদ্র, সংস্কৃতিতে কর্পোরেট প্রভাব, এফএম রেডিওর ফাঁকা মাথার উপস্থাপক, আমাদের সকল ট্রাডিশোনাল অনুভূতির বানিজ্যিকীকরণ করে পণ্য বেচার ধান্দা এবং ইত্যাদিকে দিনের পর দিন সহ্য করে যাচ্ছে। তারা এখন বাংলালিংকের সিম কেনার সাথে দেশের প্রতি ভালবাসাকে মিলাচ্ছে, ২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারে কর্পোরেট ছোঁয়া দিচ্ছে, কুষ্টিয়ায় লালন উৎসবকে কর্পোরেট পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেবার স্থান হিসেবে দেখছে।

প্রথম আলো এবং তার গ্রিড
প্রথম আলোর প্রধান একটা ইস্যু হইলো,

বর্তমানে প্রথম-আলোর সহায়তায় শিল্প, সাহিত্য, বুদ্ধিজীবিতা, চিন্তা ক্ষেত্র, ব্যবসা, রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে একদল পেশাদার গজিয়ে উঠেছে যাদেরকে জাতীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হচ্ছে। বুদ্ধি এবং চিন্তাশীলতার ক্ষেত্রে এরা প্রকৃতপক্ষে মাঝারি মানের এবং এদের বেশিরভাগেরই দেশকে নতুন কিছু দেবার নেই। প্রতি সপ্তাহেই তারা একটি মনমাতানো কলাম নিয়ে আসেন পত্রিকায় যার কিছুই সাধারণ মানুষের জীবনে বিন্দুমাত্রও প্রভাব ফেলেনা এবং দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে তার কানেকশান খুব কম । এবং একটা সুশীল জগতের এজেন্ডা আজকে, প্রথম আলো সেবীরা তাদের প্রধান খাদ্য হিসেবে খাচ্ছে।
এবং যেসব ক্ষেত্রে মিডিয়ার সমর্থন দরকার সেসব জায়গায় প্রথম-আলোর এই কোটারী গ্রুপ তার একটা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যাকে আমার ভাষায় বলি ‘ গ্রিড’। এই গ্রিডের একজন আরেকজনকে রক্ষা করে । তারা একজন আরেকজনের প্রশংসা করে, এক এক জন আরেক জনকে লিফট দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে রাখছে। এবং একজন আর একজনের আর্থিক ইন্টারেস্ট রক্ষা করছে। বং সর্বপোরি এটি নিশ্চিত করছে যাতে আর কোন নতুন প্রতিযোগী না গজায়।
সাথে সাথে, এই গ্রিডের সদস্যরা এতটাই সম্পদের অধিকারী হয়েছেন যা দিয়ে তারা এখন তাদের এই সামাজিক অবস্থান এবং সম্পদ দুটোতেই ভালো একটা অবস্থানে পৌছাইছেন। এবং প্রথম আলোর উদ্দেশ্য থাকে, তার গ্রিডের সদস্যদের বানিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করা।
প্রথম আলো এখন একটা স্থিতাবস্থায় আছে, যেই স্থিতাবস্থার কোন পরিবর্তন প্রথম আলোর কাছে এখন গ্রহনযোগ্য না।
প্রথম-আলো জানে এই সাম্যাবস্থার পরিবর্তন হলে তাদের আধিপত্য হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তারা তাই এই কর্তৃত্ব রক্ষায় যেকোন অবস্থান নিতে প্রস্তুত।
এইটা যেমন রাজনীতির জন্যে প্রযোজ্য , তেমন প্রযোজ্য প্রথম আলোর সাথে জড়িতদের ব্যবসা , প্রথম আলোর সাথে জড়িত শিল্প, সাহিত্য সহ সকল শ্রেনীর গ্রিডভুক্ত সকল ধরনের কোটারীদের জন্যে।
এই জন্যেই প্রথম-আলো বামপন্থী দলগুলোকে বেশি সুবিধা দেয়না যারা গত ২০ বছর থেকে দুই দলের রাজত্বের অবসান ঘটাতে চাইছে।

গ্রিড এর বাকি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করতেও তারা বদ্ধ পরিকর। এর মধ্যে কর্পোরেট সার্থটা সব আগে আসে। কারণ, কর্পোরেটদের হাতেই পয়সা আছে। ফলে কর্পোরেট স্বার্থ দেখা এখন প্রথম আলোর অস্তিত্বের সব চেয়ে বড় ইস্যু। 'পারসোনা' কেলেঙ্কারির সময় আমরা দেখেছি তারা বেশ কয়েক সপ্তাহ এ নিয়ে কোন খবর ছাপায়নি। পরবর্তীতে মিডিয়ায় এ নিয়ে জোর আন্দোলন শুরু হলে তারা পত্রিকায় খবরটি ছাপাতে বাধ্য হয়। আরেকটি হোল ভিকারুন্নেসায় পরিমল কেলেঙ্কারি। বেশ কিছুদিন ভিকি’র ছাত্রীরা পথে আন্দোলন করে কিন্তু প্রথম-আলো সেটি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য না করার সিদ্ধান্ত নেয় যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলাতে সমালোচনা শুরু হয়।

তাই, দেখা যাক প্রথম-আলো কি চায় আর তার জম্বি পাঠকরা কি চায়!

দি আমেরিকান ড্রীম

প্রথম-আলোর বয়ানের প্রথম উল্লেখযোগ্য বিশিষ্ট্য হইলো, আমেরিকার ইমান আকিদা প্রচার করা এবং বাংলাদেশের জোম্বিদের মধ্যে সেইটা হার্ডওইয়ার করে দেয়া ।

আমি কোন ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দিচ্ছিনা বা বলছিও না যে এগুলো ওয়াশিংটনে বসে তৈরি করা নীল নকশা। বরং এটা আমেরিকা এবং প্রথম-আলোর ইসলাম ভীতিতে আক্রান্ত বামপন্থী সম্পাদকদের উভয়ের একই মতাদর্শের মিলের ফলাফল।

যদিও র‍্যাডিকাল বাম’রা বলে যে তারা আমেরিকাকে ঘৃণা করে এবং এন্টি আমেরিকান হিসেবেই তাদের বাহ্যিক আবরণ সাজায় , কিন্তু আমেরিকান মূল্যবোধ এবং রাজনইতিক উদ্দেশ্যের সাথে ঐ বামদের অনেক কিছুতেই বেশ মিল আছে। উভয়েই ইসলামিক মৌলবাদের বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নেয়, সবসময়ই বিভ্রান্তিকর অর্থনৈতিক নীতিতে বিশ্বাস করে এবং বাক স্বাধীনতা আর নারী অধিকার সহ বেশ কিছু প্রগ্রেসিভ ইস্যুতে উভয়ের আন্তরিকতা আছে – যার ফলে তাদের মধ্যে সব সময়েই একটা সম্মিলন দেখা যায়।

উইকিলিকস এর একটা আলোচনাতেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পত্রিকা গুলো সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠায় বলছিল, প্রথম-আলোকে তাদের বন্ধুসুলভ পত্রিকা।
এবং, বলা বাকি রাখে না যে প্রথম-আলোর জম্বি পাঠকরাও এই অবস্থানে ঢুকে গ্যাছে , যদিও প্রথমদিকে এর কিছুটা বিপরীত প্রতিক্রিয়াও ছিল।


এনেমি এট দ্য গেইট- র‍্যাডিকাল ইসলাম:

আগেই বলেছি প্রথম-আলোর মূল অস্বস্তির জায়গাটি হোল ধর্মীয় গোড়ামি। এই অস্বস্তি এতটাই মূলে ঢুকে গেছে যে তারা সাইক্লোনে কোথাও ২০,০০০ মানুষ মারা যাওয়ার সংবাদ বাদ দিয়ে কোথায় কোন মাদ্রাসা শিক্ষক বাংলাকে তালিবান বানানোর উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা ঢাল-তলোয়ার সহ ধরা পড়েছে এই খবর আগে ছাপাবে।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি:

প্রথম-আলোর একটি স্পষ্ট মত হচ্ছে মুক্তযুদ্ধের পক্ষে তাদের অবস্থান। যদিও বাংলাদেশের বামপন্থীদের বড় একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধুকে কখনোই তারা জাতির পিতা হিসেবে মেনে নেয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে এই দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে যায়। জামাত-শিবির বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনীতিতে প্রধান ইসলামী শক্তি হিসেবে প্রবেশ করায় এবং একই সাথে জামাতের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অবস্থান থাকার কারণে – প্রথম আলো খুব স্ট্রংলি জামাতের বিরুদ্ধে এক্টিভিজম করে গ্যেছে। কারণ, প্রথম আলোর দুইটা প্রধান সেনসিটিভিটি বিপক্ষে জামাতের অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ এবং ধর্মীয় মৌলবাদ। প্রথম আলোর ১০ বছর ব্যাপী এই এক্টিভিজমের ফলাফলে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে জামাত সিম্পেথি এবং সমর্থন অনেক কমে এসেছে ।
এই মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীর কিন্তু একসময় ইরাক ও আফগানিস্তান সহ অনান্য মুসলমান দেশে তেলের উপর দখল রাখার চেষ্টায় পশ্চিমা বিরোধী মনোভাবের কারণে পাকিস্তানিদের মত কিছুটা মৌলবাদীদের পক্ষ নেয়ার অভ্যাস ছিল।

দ্য কুল কর্পোরেট:

বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানির স্বার্থ রক্ষায় প্রথম-আলোর একটা প্রধান গোল । বিজ্ঞাপন চাহিদার বাইরেও টেলিকম, ভূমি ব্যবসা, ভোগ্য পণ্য, খাদ্য শিল্প, পরিবহন বা অন্য যেকোন ক্ষেত্রের গত ২০ বছরে গড়ে ওঠা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান গুলোকে প্রথম-আলো সহযোগীতা করে আসছে। প্রথম-আলো এদের বরাবরই সমালোচনা, নেতিবাচক প্রচার এবং মার্কেটে নতুন প্রতিযোগীতা থেকে বাচিয়ে এসেছে। এজন্যেই ভালোবাসা দিবস এখন দেশে জাতীয় উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এটিও তাদের এস্টাবলিশমেন্ট রক্ষার আরেকটি নমুনা। লক্ষ্য করার বিষয় হোল তাদের পত্রিকার সবচেয়ে দুর্বল ভাগটি হচ্ছে বাণিজ্য এবং অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতির অনেক বড় খবর যেটা মালদ্বীপের পত্রিকাতেও শিরোনাম হিসেবে আসে সেটা প্রথম-আলোর কোন কলামেই আসেনা। এছাড়াও দেশের অর্থনীতির যেসব সমস্যার কারণে পুঁজিবাদীদের দৌরাত্ব সেগুলো নিয়েও তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এজন্যে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন অর্থনৈতিক গোলযোগ এবং সেই সবের কারণে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এর প্রভাব নিয়ে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর জোম্বিদের তেমন কোন টেনশন নাই । এবং ঐ জম্বিরা নিশ্চিন্তেই তাদের সেই না জানার জায়গা থেকে শান্তিতে প্রথম আলো প্রদত্ত স্বস্তি থেকে শান্তিতে রাত্রি যাপন করে।

ইজরায়েল এর প্রতিরক্ষা
এইটা একটু পরোক্ষ ব্যাপার । প্রথম আলো এবং মার্কিন এস্টাব্লিশমেন্ট দেখছে, মুসলমানদের মধ্যে মৌলবাদের প্রধান একটা কারণ, জেরুজালেম, দক্ষিন তির এবং গাজাতে মার্কিন সমর্থনে ইস্রায়েলের বর্ণ বৈষম্য এবং অত্যাচার ।
এই ফিলিস্তন-ইজরায়েল দ্বন্দের ব্যাপারটি এড়িয়ে চলে বরাবরই এবং তারা এটা নিশ্চিত করে যে কোন প্রকার ছবি বা প্রবন্ধ যেন এ বিষয়ে ছাপা না হয়। অন্যান্য মুসলিম দেশে এ ধরণের আচরণকে ইজরায়েল সমর্থন হিসেবে ধরা হয়।
এবং এইটার কারণে, ইসলামিক দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সব চেয়ে কম রেডিকাল।


ড। ইউনুস- আমার ভালোবাসা:

প্রথম-আলো ড। ইউনুসের পক্ষে দাঁড়ায় যাকে আমেরিকান নেতৃত্ব তাদের ‘জানে জিগার’ মনে করে। আওয়ামী লীগের বুঝেনা, ডাক্তার ইউনুস এর বিরুদ্ধে তাদের খেলার ফলাফল শুন্য হবে। কারণ, ডাক্তার ইউনুস এর পক্ষে প্রথম আলো এমনভাবে জনমত তৈরি করেছে যে প্রধানমন্ত্রীর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ শুধু সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবমূর্তিই নষ্ট করছে, বিশেষত ঐ জম্বিদের কাছে।

এখন প্রথম আলোর এই বয়ান এর বিরুদ্ধে কারা সব চেয়ে বেশি সরব ?


বিপরীত পক্ষ-
মোল্লারা:

নিটনের তৃতীয় সূত্র মতে প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। সে নিয়মেই প্রথম আলোর প্রতিটি বিষয় এবং কাজে বিরোধিতা করার জন্য কট্টর একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এদের একটি গ্রুপ হোল ইসালামী কর্মী এবং আরেকটি হচ্ছে এস্টাবলিশমেন্ট-বিরোধী বামদের একটা ছোট্ট দল। তবে এই দলটার সাইজ খুব ছোট ফলে তাদের বিরোধিতার কোন বেইল নাই। প্রথম গ্রুপটি প্রথম-আলোর মূল টার্গেট। এরা হচ্ছে মৌলবাদী ইসলামী দল। এরা জানে যে এদের ধর্ম ব্যবসায় প্রথম আলো বেশ বড় একটা ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এর সবচেয়ে বড় শিকার জামাত এ ইসলাম এবং ইসলামী ছাত্র শিবির। প্রথম আলো সাফল্যের সাথে মধ্যবিত্ত মগজে এর ব্যাপারে একটি নেতিবাচক ধারণা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এইটার কারণে, একজন নন পর্দা নারী , বিএনপির প্রধান হওয়া সত্তেও এবং দলের মধ্যে বেশ কিছু বাম ধারায় আসা নাস্তিক থাকা সত্বেও জামাতের সাথে সংস্লিষ্টতার কারনে বিএনপিকে মৌলবাদী হিসেবে গালি খাইতে হইছে কারণ প্রথম আলোর জোম্বিদের কাছে জামাতে ইসলামী বিশাল একটা স্টিগমা।

নৈরাজ্যবাদী ও অতি বামপন্থী:

অন্য আরেকটি গ্রুপ যারা প্রথম-আলো মতের বিরোধী তারা হোল অতি উদার বামপন্থীরা। তারা প্রথম-আলো কে সম্পাদক মতিউর রহমানের কন্ঠ ওরফে ‘মতিকন্ঠ’ বলে থাকে। এটি বেশ ইন্টেরেস্টিং একটা রাজনৈতিক গ্রুপ। আসুন দেখা যাক এদের কিছু বৈশিষ্ট। আমাদের সংস্কৃতিকে কর্পরেটায়ন এবং জীবনের বানিজ্জিকিকরণ এদের সব চেয়ে বড় প্রথম আলো নিয়ে ক্ষোভ।

এদের মধ্যে অনেকেই সমাজে অবস্থাপন্ন এবং প্রগ্রেসিভ রাজনীতি তাদের একটা বড় একটা অংশের কাছে ফ্যশন স্টেটমেন্ট । তারা সমাজ নিয়ে অনেক ভাবে এবং এরা সম্পদের সমবন্টনে বিশ্বাস করে। এরা সিস্টেম এর পরিবর্তন চায় কিন্তু এরা বোঝে না, এই সিস্টেম এর সে নিজেই একটা পার্ট। ফলে, তাদের কাছেও সিস্টেম এর গোড়া থেকে পরিবর্তন কারণ এই ধরনের পরিবর্তনে সে নিজেই তার কমফোর্ট জনের মধ্যে বিপদে পড়বে। তাই একটা প্রগ্রেসিভ বয়ান রেখে বুর্জোয়া জীবন যাপন এদের সব চেয়ে বড় অর্জন।

এরা আমেরিকাকে সকল পুঁজিবাদ এবং মন্দের আখড়া হিসেবে দেখে। এরা হলমার্ক কেলেঙ্কারীতেও আমেরিকার পুঁজিবাদী অবস্থানকে দায়ী করে! ফ্রেন্ডস তাদের প্রিয় সিটকম, চে তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব কিন্তু সুযোগ পাইলেই তারা ইউরোপ বা আমেরিকাতে পগার পার হয়।

তাদের বড় শত্রু ড। ইউনুস, যিনি উচ্চ্ সুদের ঋণ দান করেন। তাকে এরা সুদখোর বলে সম্বধোন করে এবং প্রথম আলোকে ড। ইউনুসকে সমর্থন দেয়ার জন্য দায়ী করে। কিন্তু এদের বেশিরভাগেরই ক্রেডিট কার্ড আছে এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস ক্রেডিট কার্ড তাদের সবচেয়ে পছন্দের। তারা কর্পোরেট এবং এস্টাবলিশমেন্ট-বিরোধী, তাই প্রথম আলোর পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ পক্ষপাতকে এর দু'চোখে দেখতে পারেনা।

এরা অবশ্য নিজেদের মৌলবাদের বিপক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে প্রথম আলোর সাথেএক লাইনে আছে । কিন্তু অপ্রাসংগিকতার দোহাই দিয়ে, এই মিলগুলোকে তারা এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে।

নিজের দেশ এবং নিপীড়িত মানুষের প্রতি এদের সত্যিকারের ভালোবাসা আছে। যদিও তাদের ভালবাসার প্রমাণ আজ পর্যন্ত চাওয়া হয়নি, কিন্তু কোনদিন যদি দেশের স্বার্থ আর নিজের স্বার্থের মধ্যে বেছে নিতে হয় তাহলে তারা কোনটা বেছে নেয় সেটা একটা দেখার বিষয় হবে!
শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশের নন জামাত মৌলবাদীদের সাথে বামদের একটা নেচারাল এলায়েন্স হয়। সেইটা কেন হয়না, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন আছে।

তবুও, বাংলাদেশের যেই অবস্থা প্রথম আলোকে বিশ্বাস করা ছাড়া কোন উপায় নাই। কারণ, প্রথম আলোই এক মাত্র পত্রিকা যারা হলুদ সাংবাদিকতা করে, বাকিরা বেশির ভাগ করে কুচকুচে কাল সাংবাদিকতা।ফলে জোম্বিরা চাইলেও বের হইতে পারতাছেনা।

কিন্তু , প্রথম আলোর এই জোমবিরা খুব ভয়ঙ্কর একটা প্রজাতি। এদের চিন্তা করার ক্ষমতায় প্রথম আলোর সম্পাদককে বন্ধক দিয়ে রাখা হইছে। এই দেশকে যদি জাগতে হয়, তাইলে হয় এদেরকে জাগতে হবে নইলে প্রথম আলোর সম্পাদক এবং ডিসিসান মেকারদের জাগতে হবে। এবং কে আগে জাগবে সেইটাই এখন গুরুত্তপুরন প্রশ্ন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×