বরিশালের মুলাদী উপজেলায় ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রী তামান্না আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে বিচার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওই ছাত্রীর পরিবার!
বুঝলামনা, এই দেশটা কি ধর্ষকের? এটা কি রীতিতে পরিনত হয়েছে যে, বাংলাদেশে ধর্ষণ-হত্যার বিচার খুবই কমই হয়, উল্টো বারবার হয়রানির শিকার হতে হয় ভিকটিমকে!?
মানুষের নৈতিকতার যখন চরম অধঃপতন ঘটে, তখনই তারা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করে। সাম্প্রতিককালে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিনিয়িতই ঘটছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। থামছেই না এ বর্বরতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম কয়েকটি ঘটনায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। হতভম্ব হচ্ছেন বিবেকবান মানুষ। চলন্ত গাড়ি, কর্মস্থল, বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এসব ঘটনা। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী।
সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক অনুশাসনের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে ধর্ষণ বাড়ছে। বিশেষ করে এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দিনদিন বেড়েই চলেছে। কারণ শিশু থেকে বৃদ্ধারা যখন এ নরপশুদের হাত থেকে রেহায় পায় না, তখন আমাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, সমাজ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, পত্রিকা বা অনলাইন দেখব আর ধর্ষণের খবর পড়ব না তা কি হয়? গত সপ্তাহে টপ অব দ্যা কান্ট্রি ছিল "নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক নারীকে গণধর্ষণ"
বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় নারী ও শিশুকে ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক সময় দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীরা বিচারের আশা ছেড়ে দেয়। অথবা রাজনৈতিক ভয়ভীতি প্রদর্শন ও অর্থের বিনিময়ে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার ফলে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।
আমরা এমন বিচার ব্যবস্থাই চাই। আমরা নারীবান্ধব আইন চাই। ধর্ষিতার প্রতি সহানুভূতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা চাই। চাই এমন প্রশাসন যে ভিকটিমের প্রতি চূড়ান্ত সংবেদনশীল ও অপরাধের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাবে। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে যেতে পারেন। তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রর। সেখানে ব্যর্থ রাষ্ট্র ও সমাজ ভিকটিমের দিকে আঙুল তুলতে পারে না।
ধর্ষণ আসলে হত্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর এক অপরাধ। সে অপরাধে কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। কারণ ছাড় দিতে দিতে আজকের বাংলাদেশ একটি ধর্ষণপ্রবণ দেশে পরিণত হয়েছে। সময়টা চলে গেছে ধর্ষকদের মুঠোয়। বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বিভাগকে সেই নষ্ট হাতের বিষয়ে হতে হবে কঠোরতম। এর বিকল্প নেই।