somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি জানি সে একটা ভালো ছেলে

২৫ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটা সুন্দর, দেখতে বেশ সুন্দর। যখন কেউ গল্প লিখে মেয়েদের সৌন্দর্যের কথা বলে। ছেলে হয়ে ছেলেদের সৌন্দর্যের গল্প করাটা খুব নিরাপত্তার ব্যাপার না। ছেলেটার সাথে কিভাবে পরিচয় সেটা এই গল্পের কোন অংশ না। ছেলেটার নাম রবিন। ভদ্র ছেলে, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরে এই জন্য না, এরকম ভালো ব্যবহারের ছেলেকে যে কারও ভালো লাগবে। তার কোয়ালিফিকেশনটাও বেশ ভালো। নিজের বাবার ব্যবসা দেখাটাই তার কাজ।


রবিন আমার কাছে এসেছিল তার বিয়ের দাওয়াত দিতে। বড়লোকের ছেলে খুবই স্বাভাবিক বেশ ধুম ধাম করে তার বিয়ে হবে কিন্তু দেখা গেল ব্যাপারটা তা নাকি না! খুব বেশি আয়োজন নাই। ছেলেটার এই জিনিসটাও আমার খুব ভালো লাগে। ইসলাম ধর্ম বইয়েই খালি পরেছিলাম ধন-সম্পদ থাকা স্বত্তেও সাহাবিরা, নবীর উম্মাত রা জাক-জমক পছন্দ করতেন না। খুব বেশি টাকা পয়সা ওয়ালা লোকজন আমি চিনিনা। তবে যাদের চিনি টাকা পয়সার এলেম দেখাতে তারা কোন ফুরসত রাখে না। রবিন আমাকে দাওয়াত দিতে এসেছিল বিকাল ৫ টায়। বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯ টা। এই ৪ ঘন্টায় থেমে থেমে খুব অদ্ভুত কিছু ব্যাপার সে আমাকে বলেছিল। বলার সময় তাকে বেশ কয়েক বার থামতে হয়েছে। আচ্ছা পুরা ব্যাপারটা বলা যাক।



রবিন এর ছোটবেলা ছিল স্বপ্নের ছোটবেলা। বাবা মায়ের অঢেল টাকা। হেলায় ফেলায় রাজার হাল যাকে বলে আর কি। রবিন বড় হয়েছে তার মধ্যেই। মোটামটি শৈশব পার হল। কৈশোর কালেই একটা সমস্যা দেখা দিল। বোবার কোন শত্রু থাকেনা। যারা কথা বেশি বলে তাদের শত্রু বেশী।আর টাকা পয়সা অয়ালা লোকের বন্ধুরুপি শত্রু বেশি। রবিন এর বয়ষ যখন ১৪ তখন-কার কথা সেটা। রবিনকে সিগারেট খাওয়ান যে শিখাইছে তার নাম পিয়াল। সেটাও আরও ২ বছর আগের কথা। ততদিনে নিসিদ্ধ জগতের অনেক কিছু জেনে গেছে রবিন। সিগারেট খাওয়াটা অ, আ, ই, ঈ পর্যায়ের ব্যাপার। গাজা টান দিয়েছে। বাসায় খেয়াল করার তেমন লোক নেই। বাবা বিদেশ বিদেশ ঘুরেন। হ্যা, একজন সব জানত। রবিনদের গাড়ির ড্রাইভার হারুন। ড্রাইভার শ্রেনীর লোকজনকে পোষ মানান খুব কঠিন ব্যাপার না। সে ব্যাবস্থা রবিন এর করা থাকত।


জিসান, রবিন এবং পিয়াল ……… তারা ৩ জন যা খুশি তাই করত। যখন খুশি যেখানে খুশি যাওয়ার জন্য রবিনের গাড়িটা সব সময়ই থাকত। তারা ৩ জন মিলেই ভয়ঙ্কর একটা প্লান একবার করে ফেলল। শুনলে গা শিউরে উঠলেও তাদের কাছে সেটা তেমন মনে হল না। তারা ৩ জন মিলে স্কুল থেকে ফিরার পথে একটা মেয়েকে তুললো। মেয়েটার বয়স ১২ এর মত হবে। ৩ জন মেয়েটাকে তাদের সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে গেল। তারপর যেটা করার সেটাই করল। ৩ জন ছেলে একটা মেয়েকে তুলে নিবে কেন সেটা আর লিখে প্রকাশ করতে ইচ্ছে করছে না। ড্রাইভার হারুন তাদের এই কাজে যাতায়াতের সাহায্য করল। হারুন অবশ্য টাকা পেয়েই খুশি ছিল।



আইন ব্যাপারটা আসলে মধ্যবিত্তদের জন্য। গরিবরা কখনই এর বিচার পায় না। বড়লোকদের কখনই বিচার হয় না। রবিন এর বাবা রবিন এর এরকম অধঃপতনটা খুব যে ভালো ভাবে মেনে নিতে পেরেছিল এমন না। হ্যা রবিন এর জেল হয় নাই যেটা পিয়াল আর জিসান এর হয়েছিল। জেল তো না কিশোর সংশোধনি, কতটা সংশোধনি হয়েছে জানা যায় নাই। তবে জিসান জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কয়েকদিন মধ্যেই গুলি খেয়ে মারা যায়। পিয়ালই গুলি টা করে। তাদের মধ্যে টাকা পয়সা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল। পিয়াল যাবজ্জিবনের সাজা কাটে।


রবিন কে তার বাবা বিদেশ পাঠিয়ে দেন। তবে সেখানে তার পূর্ন স্বাধিনতা ছিল না। তার লেখা পড়ার ব্যাপারটা অনেক অবজারভেসনে রাখা হয়। তার নৈতিকতা যাতে ঠিক ভাবে বেড়ে উঠে সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

রবিন দেশে আসলে তাকে পারিবারিক এক হুজুর মারফত কুর’আন খতম সহ যাবতিয় ব্যাপারে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাবস্থা হত। সেটার ফলপ্রসুতা তখন আসতে শুরু করেনি। তবে রবিন মানষিক ভাবে বেশ দূর্বল থাকত। ঐ ঘটনার পরেই সে বুঝে গিয়েছিল সে যেটা করেছে সেটা যে খুব ঠিক হয়নি। বরং তার আসে পাশে অনেক মানুষের রি’একশনই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল তার অবস্থান টা কি। শুধু তাই বলে না এমনিতেও আস্তে আস্তে সে অনুতপ্ত হওয়া শুরু করল। মানুষ এমনি এমনি মোটিভেতটড হয় না। এ ক্ষেত্রে রবিনের মা আর তাদের পারিবারিক হুজুরের একটা অবদান ছিল। ঐ ঘটনা ঘটাকালিন সময় রবিন এর মা অসুস্থ ছিলেন এবং তার কিছু বছর পরেই তিনি মারা জান।


বিবেকের দংশনে দংশিত কথাটা পড়তে মাঝে মাঝে খুব এলঘেয়ে লাগলেও কথাটা রবিন এর জন্য সত্যি। রবিন তার দারা কৃত কর্মের সাজা পেতে চায়। যদিও সে জানে না সেটা সে কিভাবে করবে। তার থেকেও বড় কথা হল রবিন যাকে বিয়ে করছে তাকে রবিন এর ঘটনাটা সে কিভাবে বলবে। কিন্তু এটা না বলে কি বিয়ে করা যায়! রবিন চায়না করতে। কার্ড তো ছাপা হয়ে গেছে।


মৌমিতা’র বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ প্রায়। প্রস্তুতি বলতে তেমন কিছু না। মৌমিতা চায় না এটা নিয়ে খুব মাতা মাতি হোক। মৌমিতার বাবাও সেটা নিয়ে খুব কথা বলছে না। মৌমিতার মন ভালো রাখার কাজটা তিনি অনেক দিন ধরেই করে আসছেন। কিন্তু মৌমিতা যে সমস্যাটা এখন করছে সেটা নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত। তিনি চান তার মেয়ের বিয়ে হোক, মেয়ে সুখি হোক, এর বাইরে আর কোন কিছুই তিনি চিন্তা করতে চান না।



মৌমিতা রবিন কে কিছু বলতে চায়। মৌমিতা চায় না কাউকে বোকা বানাতে। যা হবার হবে। রবিন কে সব না জানিয়ে সে বিয়ে করতে চায় না। এটা প্রতারণা। যদিও যা হয়েছে তাতে মৌমিতার কোন দোষ নাই।

রবিন এর কথা আমি জানলাম, রবিন এখন কিভাবে মৌমিতাকে সব বলা যায় সেটাই জানতে ছেয়েছিল আমার কাছে। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কি বলব। হ্যা যেভাবেই হোক রবিন চাচ্ছে মৌমিতা সব জানুক আর সেটাই স্বাভাবিক। রবিন কে আমার বুঝাতে কোন বাকি নাই। সে যেটা করেছে সেটা মৌমিতাকে সব খুলে বলি। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না যে এখানে জরানো আমার ঠিক হবে কিনা। যাক শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম মৌমিতা’র সাথে দেখা করতে।




আমি মৌমিতা’র সাথে দেখা করতে গেলাম রবিনের ব্যাপারটা বলতে। মৌমিতা আগে আমার সম্পর্কে জেনে নিল। আমি রবিন এর কত টুকু ক্লোজ বা কত কাছের মানুষ। অতটুকুই বলা। মুল কথাটা আর বলতে পারলাম না। মৌমিতা খালি বলল সে রবিন কে একটা মেইল করতে যায়। সেটা জানি রবিন ছাড়া আর কেউ না জানে। আমিও তাকে আসস্ত করলাম।



মেইল করা হল। মেইলটা পড়া হল। মৌমিতা আর কেউ না, মৌমিতা সেই ১২ বছরের মেয়েটাই। কিভাবে তার সাথেই রবিনের বিয়ে ঠিক হল উপরের ওয়ালার এটা কোন খেলা কিনা ঠিক বুঝতে পারলাম না।


রবিন কে তার কথা বলতে হবে এখন। রবিন সেটা ইমেইল এ বলবে না। আমি তাকে মানা করে দিয়েছি। রবিন যেটা বলবে সেটা জানি সামনা সামনি বলে। বনের পশু থেকে সত্যিকারের মানুষ সে আসলেই হয়েছে সেটা মৌমিতার থেকে ভালো কেউ আর সার্টিফাই করতে পারবে না। আমার ধারনা রবিন যখন তার কথা বলবে মৌমিতা রবিনের চোখ দেখে বুঝতে পারবে আগের রবিন এর সাথে এখনকার রবিন এর পার্থক্যটা কি। আমার বিশ্বাস মৌমিতা তাকে মাফ করে দিবে আর সব কিছু সুন্দর হয়ে যাবে। তাদের বিয়ের গিফট কি দেওয়া যায় তাই ভাবছি।

রবিন আর মৌমিতার বিয়ে হয়নি। মৌমিতার সাথে দেখা করার আগেই রবিন এর এক্সিডেন্ট হয়। তবে মৌমিতা হসপিটালে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে কোন কথা হয়নি। মৌমিতাকে কিছু বলার সুযোগ পাওয়ার আগেই রবিন মারা যায়।



* গল্পে একটা খুঁত আছে সেটা হল মৌমিতার বাবা। মৌমিতার বাবার তো রবিনের ব্যাপারটা জানা থাকার কথা। গল্পটা যদি কখনো এডিট করি তাহলে এই খুঁত-টা থিক করে দিব।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ১০:৪৯
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×