somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেটে গেল আর একটা দিন।

১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি – সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে কিছুই বলিনা – সকালে উঠিয়া আমি প্রকাশ্যে দাঁত মাজতে যাই। দাঁত মাজতে গিয়ে মনে পড়ল ভয়াবহ দিন আসন্ন। মাস্টার্স ল্যাব প্রাকটিস। ৪ দিন প্র্যাকটিস এর পর পুজার বন্ধ তারপর পরীক্ষা। এর মাঝে শান্তি নাই। আমার এমবিএ তে আবার মিডটার্ম। বল দেখি আজ কোথা যাই, পথ হারিয়ে কোন বনে যাই।

সকাল দশটায় কিঞ্চিত বাস ধরার কথা। ঠিক যেই মুহুর্তে বুঝলাম বাস আর আজকে আসতেসেনা ৩০ টাকা দিয়ে রিকশা ঠিক করলাম ওমনি বাস এসে হাজির। কিছু করার নাই এখন রিকশাতেই যাব। রিকশাওয়ালা ফরমুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ান। মাইকেল সুখেমার এর সাথে চেহারাতেও মিল আছে। জামও কম আজকে। রিকশা ৩০০ কিমি/ঘন্টাতে চালায় নিয়ে গেল। মোকাররম ভবনে আসার পর মানিব্যাগে খুচরা নাই। রিকশাওয়ালাকে বললাম ১০০ ভাংতি আছে কিনা। রিকশাওয়ালা মাইকেল সুখেমার বলল নাই। আমি বললাম ৫০০ ভাংতি আছে কিনা। মাইকেল সুখেমার সব গুলা দাঁত বের করল। এখন উপায়? ৪ বছরের ছোট সুদীপ্তা সিথির সাথে দেখা। সিথিকে বললাম ভাংতি আছে কিনা ১০০ এর জবাবে অতি নম্র ভদ্র শান্ত বিনয়ী সিথি বলল ভাইয়া কত লাগবে? আমি বললাম ২০। কারন বাকি দশ টাকা আমার কাছেই আছে। সিথি বেশ লজ্জিত। কারন তার কাছে ভাঙ্গতি ১৫ টাকা আছে। তিনটা ৫ টাকার নোট। সেটা নেওয়ার পর দেখলাম ৫ টাকার নোট ৪ টা। ৫ টা ৪ টাকার নোট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। রিকশা ওয়ালার ভাড়া দিয়ে মাস্টার্স রুম এ গেলাম।

মাস্টার্স ল্যাবে ১০ টা ল্যাব। তার মধ্যে একটা নতুন তাই এবারের পরীক্ষায় আসবেনা- সেটা হল সুপার কন্ডাক্টিভিটি। তার মধ্যে একটা পুরান তাই এবারের পরীক্ষায় আসবেনা- সেটা হল হলোগ্রাফী (শুধু এই কারনে না আসলে)। ল্যাব দেখা শুরু করলাম। ব্রিউস্টার এঙ্গেল। পোলারাইজেশন। পৃথিবীতে পোলারাইজেশন আছে মেয়েরাইজেশন নাই আর এটাও জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন এর অংশ কিনা সেটা ভাবার সময় আপাতত নেই। পোলারাইজেশন পদার্থবিজ্ঞানের আলোকবিজ্ঞানে অংশ। আলোকবিজ্ঞান বা অপটিক্স এ বায়াসড ব্যাপার স্যাপার আছে। মালুস ল (Malus Law) আছে কিন্তু মুসলিমস ল নাই, খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এক্সপেরিমেন্টগুলা দেখা শুরু করলাম। ডপলার ইফেক্ট এরটা খুব মজার। গাড়ি সোর্স নিয়ে শব্দ করতে করতে দৌড়ায়। মাঝে মাঝে ভুল করলে গাড়ি থেমে যায়। তখন দলছুট এর গাড়ি চলে চলেনা চলেনা রে গাড়ি চলেনা, চড়িয়া মানব গাড়ি, যাইতেসিলাম বন্ধুর বাড়ি – এই গান না গাইলেও চলে- কারন এটা মানব গাড়ি না, ডপলার এফেক্ট এর গাড়ি। মোটামুটি গাড়ি ঠিক যায়গায় রেখে কম্পুটার এ মান নিতে হয়। গামা স্পেকট্রাম এরটাও করলাম। সোলার সেল। ফোটো রেসিস্টর। তারপর দুপুরের টাইম হল। ক্লাস এর মেয়েদের গ্রুপ এর কাজ হল প্র্যাক্টিকাল এর খুঁটিনাটি তুলে রাখা। সদ্য বিবাহিত বিথী আর আর অদ্য বিবাহিত তানিয়া দুই বান্ধবী। তাদের খাতা চেয়ে নিলাম। কার্জন হল দুইটা ক্যান্টিন আছে। জাহাঙ্গির মামার ক্যান্টিন আর জহিরের ক্যান্টিন। জহিরের নামের সাথে “মামা” শব্দটা নাই ক্যান সেটাও চিন্তার বিষয়। তবে কার্জন হলের সব থেকে নাম করা দোকান ছিল মিলন ভাইয়েরটা। ১৮ বছরের ঐতিহ্য ৩৬ মাস আগে তুলে দেওয়া হয়েছে বিবিধ কারনে। কার্জন হলের এক্সাম হলের পাশ দিয়ে গেলাম কোন এক ডিপার্টমেন্ট এর এক্সাম শেষ হয়েছে। ঐ জায়গায় আর ঢুকতে হবেনা ভেবে শান্তি লাগছে। জহির এর ক্যান্টিনে গেলাম। তেহারি আর পেপসি ওর্ডার দিয়ে মাথা তুলে দেখি ব্লগার সোহায়লা বিনতে রিদওয়ান। এখন অবশ্য সে সহপাঠি নেই। থীওরেটিকাল ফিজিক্স এ সে।



লাঞ্চ করে ফটোকপি করতে গেলাম। আমি যেইসময় দিতে গেলাম কোথেকে এক মহিলা হাতি এসে ফটোকপি দিল। বিরাট জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন। ফটোকপি মামু তারটা আগে নিল। কি আর করা। ফটোকপি করে প্র্যাক্টিকাল রুমে গেলাম। পুরোদমে এসি ছাড়া। সবাই ল্যাব করছে। জাইরো ম্যাগনেটিক রেশিও না গাইরো ম্যাগনেটিক রেশিও জিনিসটা কে কি বলে কে জানে! তবে সেটা এখন বের করতে হবে। জিম্যান এফেক্ট। এই জিনিস একা পারা সম্ভব না। ল্যাব এর ইন্সট্রাক্টর মিলন ভাই আসল। অবিশ্বাস্য সহজ ভাবে কানশনটা দেখাল। তিনটা নীল তার, দুইটা লাল, দুইটা হলুদ আর ৪ টা কালো। বিরাট প্যাচ। মিলনভাই সিকোয়েন্স বুঝিয়ে দিল। রঙ মনে রেখে কানেকশন দেওয়া। এলেক্ট্রন স্পিন রেজোনেন্স থেকে অসিলোসকোপ, সেখান থেকে হেলমহোজ কয়েল। আগেও দেখসি মিলন ভাই জিনিশগুলা বেশ ভাল বুঝে। মিলন ভাই চলে যাওয়ার পর সমস্যা হল। (তার) খুলি আর লাগাই খুলি আর লাগাই কিন্তু লিসার জোশ ফিগারটার কিছু করতে পারলাম না। অহ হো, লিসাজ্জুস ফিগার। অসিলোস্কোপ এ বাকানো আকৃতি।

সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ এ ম্যানাজারিয়াল বিহেভিয়ার ক্লাস। ফিনান্স এমবিএ, ঢাবি। রবোট এর মত একজন ম্যাডাম। আসলেই রবোট মনে হয়। প্রজেক্টর থেকে সাদা বোর্ড এ যা আসে তা দেখার মত শক্তি নাই। অ্যাটেন্ডেন্স এ মার্কস না থাকলে আসতাম কিনা সন্দেহ। ১ ঘন্টা যন্ত্রনা সহ্য করার পর মাঝখানে বের হলাম। বাথরুম এ যাওয়ার নাম করে নিচে গিয়ে চা চিপস খাইলাম। আরো কিছুক্ষন হেটে ক্লাস এ গিয়ে দেখি ম্যাডাম তখনো অন্যদের যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছেন। পরের ক্লাস এই মিডটার্ম। ম্যাডাম দেখা যাচ্ছেন বেশ দয়ালু। তিনি চাননা প্রশ্ন নো অল্টারনেটিভ হোক। তাই অপশন দিবেন। কিরকম? ৬ টা প্রশ্ন থেকে মাত্র ৫ টা প্রশ্ন এনসার করলেই চলবে। নিজেদের ভাগ্যবান লাগল। ম্যাডাম চলে গেলেন। বাইরে বের হয়ে দুঃসংবাদ পেলাম। ১৭ তারিখের পরীক্ষা নাকি ২২ তারিখ হবে। এইটাই বাকি ছিল। ১৬ তারিখ ম্যানাজেরিয়াল ফিনান্স, ১৯ তারিখ ইকনোমিক্স, ২০ তারিখ একাউন্টিং, ২২ তারিখ ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল ম্যানাজিং, ২৩ তারিখ ও আল্লাহ গো ২৩ তারিখ, ফিজিক্স মাস্টার্স প্র্যাক্টিকাল। বল দেখি আজ কোথা যাই পথ হারিয়ে কোন বনে হারাই।

বাসায় ফিরার জন্য লিফট দিল হুজুর মেহেদি। আমাদের মেহেদি দুইটা। হুজুর মেহেদি আর লালা মেহেদি। লালা মেহেদিখালি লাল গেঞ্জি পড়ে। যাই হোক হুজুর মেহেদি গাড়িতে বোঝাতে লাগল কেন ইসলামী ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য ব্যাঙ্ক গুলাতে জব করা উচিত না। সুদের কারবারের লেনদেন থাকাটাও হারাম। সিটি ব্যাঙ্ক কিভাবে সব লুটপাট করছে। মেহেদির নলেজ ভাল কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু কেন জানি কথাগুলা শুনতে ইচ্ছে করলা। মেহেদি প্রসংগ চেঞ্জ করল। আর্সেনাল চেলসির কাছে হেরে গিয়ছে। আর্জেন্টিনা জাপান এর কাছে। ইংলিশ প্রিমিয়ারশীপ এর খবর রাখা ছেড়ে দিয়েছি। যেই টিম এর সাপোর্টার আমি সেটা আর ইপিএল দেখার মত অবস্থা রাখেনি। লিভারপুল। হাতিরপুল এর সাথে খেললেও যারা এখন হারবে। সে কি!! লিখতে লিখতে খেয়াল নাই এত কিছু লিখে ফেলসি। সামনে পরীক্ষা আর অনেক যন্ত্রনা। আজকের মত অফ যাই। সবাই ভাল থাকুন। ধন্যবাদ।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ রাত ১২:২৬
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×