somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রহসন। (ছোট গল্প)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটার নাম না হয় নাই নিলাম। নাম নেওয়াতে সমস্যা অবশ্য নাই। এমনিতেই যা অবস্থা কিন্তু তাই বলে লেখালেখিতে তার নাম নেওয়াটাও কেমন দেখায়। অবস্থাও এমন বেগতিক যে এরকম লেখা হালকা কথায় লেখাটাও ঝামেলা। কিন্তু আমার যে লিখতে ইচ্ছে করছে। আবার কীর্তিমান লেখকদের মত লেখালেখির সাগর থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে আনার মত যোগ্য লেখকও আমি নই। তারপরেও দেখি কতদূর বলতে পারি।

ঘটনা কোথেকেশুরু করব ঠিক বুঝতে পারছিনা। গ্রামের সালিসীর বিষয়টা আনা যায়। গ্রামে সালিসী বসেছে। অপরাধী ৬ জন। সমস্যা হল স্বাক্ষী নেই। ৬ জন একটা অপরাধ করেছে স্বাক্ষী নেই কেন? কারন ৬ জনই অপরাধী। এমন কথা যিনি বললেন সেই সাবের মোয়াজ্জেন যা বলেন তাকে বলা হয় ফতোয়া। এমন নাম কেন দেওয়া হবে তাও বোঝা যাচ্ছেনা। তবে সাবের যা বলে সাধারনত সেটাকে বলে ফতোয়া। পুরানো প্রসঙ্গে ফিরে যাই। স্বাক্ষী লাগবে ৪ জন। ধর্ষনের যে কোন অপরাধ প্রমান করতে গেলে স্বাক্ষী লাগবে ৪ জন। তা ৬ জনের মধ্যে দুইজন সেই বাহাদুরির কাজ করলে বাকি ৪ জনকে স্বাক্ষি ধরা যেত কিন্তু এরুপ বীরত্বের কাজ থেকে কেই বা বিরত থাকে। তাই স্বাক্ষী নেই। অপরাধী ৬ জন।

শরীরের উপর যে ধর্ষন চলে তার দাগ হয়তবা কখনও মুছে যায়। কিন্তু মনের ধর্ষন? সেই স্মৃতি সেই বিভীষিকা? অতঃপর গ্রামবাসীরা মিলে ঠিক করল মেয়েটাকে আবার ধর্ষন করার জন্য!? কিভাবে ধর্ষন হয়েছে ৬ জনের মধ্যে কে কখন কোথায় ছিল সে সব নাকি সালিসে বলতে হবে। না হলে ধর্ষনের বিচার হবেনা। ঘটনার বিবরন ছাড়া আবার বিচার কি?? বীরত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদনকারীর একজন আবার জাকির চেয়ারম্যানের ছেলে কিনা। তাই বিচারকার্য কত তাড়াতাড়ি সারা যায়।

তা জাকির চেয়ারম্যান দেখা যাচ্ছে বেশ লোক ভাল। তিনি সালিসীতে এসে বললেন, আমার ছেলেকে বাসায় গিয়ে দুই গালে দুইটা থাপ্পর দিসি। বলসি, কত বড় সাহস তোর! আমি গ্রামের চেয়ারম্যান আর তুই কিনা গ্রামে...! ওরে বাবা। দুই গালে দুই থাপ্পর? এরপর আবার বিচারের প্রয়োজন ছিল নাকি!! সুবিচার তো হয়েই গেল। জাকির চেয়ারম্যানের ভাতিজা ছিল একজন। সেও ৬ জনের টিমে ছিল। তাকেও কয় থাপ্পর মারা হয়েছে জানা যায়নি। আশা করি বেশি মারেনায়। ন্যায় পেতে গিয়ে আবার অন্যায় না হয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসনে দূর থেকে সেই ব্যাবস্থা করা হয়েছে। নিজেদের এলাকায় আবার এসব কি?

মেয়ের বাবা ক্ষেতে কাজ করে। নাম রুহুল মিয়া। তা বলি ও রুহুল। তোমার মেয়েকে একটু বলবানা ঠিকঠাক মত জানি চলাফেরা করে। এইসব অঘটন ঘটতে দাও কেন?

রুহুল মিয়া কি বলবে বুঝলনা। তার হাতে কোদাল। সালিসে কোদাল আনার অর্থ বোঝা গেলনা!! সম্ভবত সালিসী থেকে ক্ষেতে কাজ করতে যাবে। মেয়ে ধর্ষনের মত সামান্য ব্যাপারে কি আর দৈনন্দিন কাজ থেমে থাকে?

রুহুল মিয়া জবাব দাও না কেন!! ছেলেপেলেকে লাই দিলে তো এরকম করবে। না বলতেসিনা যে আমাদের ছেলেরা ঠিক ছিল। কিন্তু তোমার মেয়েকে তুমি দেখে রাখোনাই ক্যান?



রুহুল মিয়া কি বলবে বুঝলনা। মেয়েকে তো ঘরেই রাখতে চাইসিল। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়ায় বিয়ে দিয়ে দিবে। সেরকম ঠিকই ছিল। মাস্টার এসে বলে মেয়েকে তোমার পড়ালেখা করাও। দেখো তার হাতের লেখা। রুহুল মিয়া বুঝলনা হাতের লেখা কি ধুইয়া পানি খাওয়ার জিনিষ কিনা। সে বলল মেয়েদের এত পড়ালেখার দরকার নাই। মাস্টারের পীড়াপিড়িতে এরকম হইসে।

রুহুল মিয়া বলে, মেয়ে তো আমার খালি স্কুল যাইত আর আসত। মাথা নিচু থাকত। আপনার ছাও তার সাথে এমনডা করল।

আরে আরে ছেলে মানুষ একটু আধটু এমনটা করেই। তাই বলে আমরা তো আসি নাকি? আমরা থাকতে তুমি পুলিশকে জানাইতে গেলা!! ব্যাপারটা ঠিক করলানা মিয়া।

রুহুল মিয়া কি বলবে বুঝে পেল না, না না আমি কখনই কিছু ঠিক করিনা। আমার মেয়েরে ওইদিন বললাম তোর কলম তুই কিনে আনগে এটাও ঠিক করিনাই।

হা, এটাই তো তোমারে বলতে চাই মিয়া। সন্ধ্যাকালীন মেয়েছেলেরে তুমি বাইরে পাঠাইলা ক্যান।

রুহুল মিয়ার দৃষ্টি তখন শূন্যে। বলতে লাগল, আমি গেসিলাম মোল্লাবাড়ি বর্গার টাকা আনতে। কাশেম মোল্লা বলি দিছে টাইম মত আসতে। এর মধ্যে মেয়ে আমার বলে সে নাকি বিত্তি পরীক্ষা দিবে। তার কলম নাই। আমি রাগ করি বললাম নিজেরটা নিজে কিনি আন। আমার ভুল হইসে।

এই যে দেখো ভুল খালি আমাদের ছেলেদের না। তোমারও আসে। তাইলে চল মিটমাট করে ফেলি। নিজেদের ব্যাপার পুলিশ ডেকে কি হবে? কি বলেন সবাই?

রুহুল মিয়া চুপ থাকল।

শুনেনে সবাই। আমি জাকির চেয়ারম্যান কখনও নাইনসাফি করিনা। যে ৬ জন ছিল। তাদের মধ্যে একজন আমার ছেলে একজন ভাতিজা। সবাই বুঝার চেস্টা করেন মেয়েরও দোষ ছিল। হুজুরকে জিজ্ঞেস করেন দোররা মারার কথা তিনি বলসেন। কিন্তু ভুল একটা হয়ে গেসে। মেয়েটা বাচ্চা মেয়ে। আমরা ক্ষমা করে দিলাম। আর ছয়জন সবাই ৫ হাজার টাকা করে দিবে।

রুহুল মিয়া একবার তাকাল খালি। চোখ দিয়ে পানিও আসছেনা। দৃষ্টি শূণ্য।

জাকির চেয়ারম্যান বলতে লাগল, তবে পুলিশে খবর দিসে রুহুল মিয়া। রুহুল মিয়া কাজটা ভাল করেনায়। পুলিশ হয়ত আসবে। তবে আপনারা বলে দিবেন সব সামলায় নিসি। রুহুল মিয়া নিজেই বলবে। কি বল রুহুল মিয়া? আর হা ঐ ৬ জন ছেলে যারা ভুল করসে তাদের এখানে আজকে আসার কথা ছিল তারা আসেনায়। তবে তাদের অভিভাবকরা আসছে। আপনারা জেনে রাখেন জরিমানার কথা।

রুহুল মিয়া তাকাল। অভিভাবক!। ৬ জনের ২ জন জাকির চেয়ারম্যানের ছেলে আর ভাতিজা। একজন করিম মওলার ছেলে। করিম মওলা আসছে। একজন রহমত শেখ এর ভাই। রহমত শেখ উঠে দাড়াল।

রুহুল মিয়ার কাছে আমি ২ হাজার টাকা পাই। তাই আমি ৩ হাজার দিব। করিম মওলা বলল, আমি পুরাটা একবারে দিতে পারবনা। কিস্তিতে ৫ মাসে এক হাজার করে দিব।

রুহুল মিয়া চোখ বন্ধ করে আবার খুলল।

জাকির চেয়ারম্যান। পুলিশ আসবে আর ৩০ মিনিটের মধ্যে। আমি তারে বলে দিব ঐ ৬ জনকে যাতে না খুঁজে।

জাকির চেয়ারম্যান বলল, এই তো মিয়া তুমি হইলা আমাদের ভাইয়ের মত।

রুহুল মিয়া বলল, পুলিশকে আমি ঐ ৬ জনের জন্য আসতে বলিনাই। পুলিশ এসে আমাকে ধরবে।

জাকির চেয়ারম্যান রুহুল মিয়ার দিকে তাকাল। রুহুলের চোখ পুরা লাল বর্ন।

রুহুল মিয়া বলল, এই যে কোদালখানি দেখতেস? এটা দিয়া ৬ জনের কল্লা আলাদা করসি। ৪ জন এক সাথেই ছিল। রহমতের ভাইরে খালি বাজারের পিছনের ক্ষেতে নিয়ে গেসিলাম।

সবাই উৎকন্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কি কয়!!

জাকির চেয়ারম্যান। আমার মেয়ে নাই। আমার মেয়ে বিত্তি পরীক্ষা দিতে চাইসিল। আমার মেয়ে কুয়ায় ঝাপ দিসে কালকে রাতে। আমি কোদালটা হাতে নিসি। আর নামাইনাই।

হটাৎ গ্রামে হৈ চৈ শুরু হল। ঝিলের ধারে, ক্ষেতে সহ ৬ জনকে পাওয়া গেসে। লাশ অবস্থায়।

জাকির চেয়ারম্যান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। রুহুল মিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে কিন্তু কেউ এগুতে সাহস পাচ্ছেনা। হাতের কোদালটার কারনে। এই কোদাল ৬ জনের জান নিয়েছে।

জাকির চেয়ারম্যান রুহুলের শার্টের কলার ধরল। রুহুল মিয়া বলে, চেয়ারম্যান। কোদালটা এখনও নামাইনাই। তোরে মারা বাকি আসে। সবাই কিছু বুঝার আগেই রুহুল এলোপাথারি ভাবে ৪-৫ টা কোপ দিল। জাকির চেয়ারম্যান গোঙ্গাতে লাগল।

রুহুল মিয়া তার নিজের মেয়ের মৃত্যুতে কাঁদেনায় কথাটা সত্যিনা। কেঁদেছিল পুলিশ আসার পরে। পুলিশ আসার আগ পর্যন্ত রুহুল মিয়া কোদাল হাতে জাকির চেয়ারম্যানের নিথর দেহের সামনেই পড়ে ছিল। এক ফোটাও নড়েনি। গ্রামের সবাই তাকিয়ে দেখেছে কাছে যাওয়ার সাহস পায়নি। রুহুল মিয়ার পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে জাকির মিয়ার মেয়েকেও মারতে চেয়েছিল। কিন্তু অপরাধ যে করেনি তাকে আর মারা হয়নি। কোদাল চালানোর সময় তার মনে হয় ঐ মেয়ের চোখ তার নিজের মেয়ের চোখের মতই।

রুহুল মিয়ার ফাসি হয়নি। ২০ বছর জেলে থাকার পর সে ছাড়া পায়। সে জানি জেল থেকে মুক্তি পায় সে ব্যাবস্থা করার পেছনে নাকি জাকির চেয়ারম্যানের মেয়ের হাত ছিল। বাবা আর ভাই খারাপ হলেই যে মেয়ে খারাপ হবে ব্যাপারটা সব সময় এমন হয়না।




সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ বিকাল ৩:৪৭
৩৭টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×