somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিকু। (ছোট বাচ্চাদের গল্প)

২২ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এটা বাচ্চাদের লেখা। ব্লগার কিনাদির ভাগ্নী ফারহিনের জন্য একটা রুপকথা লিখে দিব বলেছিলাম তাই লিখলাম। আল্লাহই জানে কিছু হয়েছে কিনা। সবাই ক্ষমা করবেন)

দিনটি ছিল শুক্রবার। ফারহিনের মনে আছে। শুক্রবার দুপুরে বাবা নামাজ পড়তে যান। তার থেকে বড় কথা শুক্রবার স্কুল বন্ধ থাকে। তার থেকে ছোট কথা তারপরেও শুক্রবার তাকে অনেক পড়ালেখা করতে হয়। সেরকম এক শুক্রবারের কথা, ফারহিন বসে বসে কবিতা মুখস্থ করছিল। যদিও সেটা মুখস্থ হচ্ছিল না। দাড়ি, কমা, সেমিকোলনে তাল মিলানোতে সমস্যা হচ্ছিল। ঠিক তখনি পিকুকে সে পেল। তা কে এই পিকু? পিকু আসলে একটা পেন্সিল। যাকে সিয়ে কমা দেওয়া যাচ্ছিল না। কমা দিতে গেলেই পিকু, কু কু কু করা শুরু করত। তাই ওর নামই হয়ে গিয়েছিল পিকু।

পেন্সিল্টা নাকি বাবা দোকান থেকে কিনে এনেছিলেন। কিন্তু বাবা কেন পিকুকে চিনতে পারলেননা সেটা ফারহিন বুঝতে পারলনা। ফারহিন প্রথম পিকুকে চিনল যখন সে , “থাকবোনা আর বদ্ধ ঘরে” এত টুকু লেখার পর কমা দিতে গেল আর পিকু বলল কু কু কু। ওমা পেন্সিল কথা বলে কেন! ফারহিন অনেক্ষন খেয়াল করল। তারপর পিকু বলে উঠল, ব্যাথা দিস ক্যান। ফারহিন আবার চোখ বড় করে তাকাল। খবরদার আমাকে তুই করে বললে খবর আছে। পিকু বলল, ব্যাথা দিস না। ফারহিন শার্পনার খুযে পিকুকে শার্পনার এর কাছে নিয়ে গেল। বল আর তুই বলবি? পিকু আতঙ্কে কেঁপে উঠল। আর বলবা না ছেড়ে দে ছেড়ে দে। দে দে দে। ফারহিন বলল, তুমি যেখান থেকে এসেছ সেখানে কি সবাই তোমার মত বেয়াদব? পিকু বলল, কি জানি! আমরা তো বড়দের তুই বলি ছোটদের আপনি। ফারহিন বলল, এভাবে হবেনা। আমাকে আপনি বলতে হবে। আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমার বয়স ৯ আর ১০ এর মাঝামাঝি। পিকু আর কোন জবাব দিলনা। কারন ফারহিনের বাসার টিচার চলে এসেছে।

বাসার টিচার ফারহিনকে কবিতা লিখতে দিল। ফারহিন দেখল পিকুকে তোলার সাথে সাথে তার আর কিছু মনে করা লাগছে না। পিকুই সব লিখে নিচ্ছে। খালি কমা গুলা লিখছেনা। টিচার বেশ অবাক হলেন। কি ব্যাপার কমা লিখছনা কেন! আর হা এই পেন্সিল দিয়ে কলমের মত কিভাবে লেখা বের হচ্ছে। ফারহিন বলল, স্যার ও পেন্সিল না । ও পিকু। স্যার বেশ বিরক্ত হলেন। বাজে কথা রাখ। কমা গুলো শিখোনাই ক্যান!! কমা শিখবে ভাল করে। স্যার চলে যাওয়ার পর ফারহিন পিকুকে খোঁজার চেস্টা করল। কিন্তু পিকুকে পাওয়া গেলনা। ফারহিন বুঝতে পারল শার্পনার না সরালে পিকু আসবেনা। ফারহিন পিকুকে খুঁজে জিজ্ঞেস করল সে কোথা থেকে এসেছে? পিকু জানাল সে পেন্সিলপুরের বাসিন্দা। কিন্তু সেখান থেকে সে বিতাড়িত। কারন সে পেন্সিল নামের কলঙ্ক। সে পেন্সিলের মত লিখতে পারার কথা কিন্তু সে লিখে কলমের মত। পেন্সিল জগতে এর থেকে বড় অপমান আর নাই। সে কমা দিতে পারেনা। তাকে দিয়ে কমা দেওয়া যায় না। এই জন্মগত ত্রুটি অনেক বড় অপমানের সমান। পেন্সিল জগত থেকে তার বাবা মা ভাই বোনেরা তাকে বের করে দিয়েছে। ফারহিন বুঝতে পারলনা কি বলবে। তুমি কমা দিতে পারনা কেন? আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব? পিকু বলল, না। কমা দিতে গেলেই আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে যায়। এই বলে পিকু আবার পালিয়ে গেল। কারন ফারহিনের বাবা মা চলে এসেছে।





ফারহিনের এ্যানুয়াল পরীক্ষা সামনে। পরীক্ষা কলম দিয়ে দিতে হয় কিন্তু তারপরেও পিকুকে সে মাঝে মাঝেই তার কাছে রাখে। তার পেন্সিল বক্সে পিকু থাকে আর কয়েকটা কলম থাকে। একদিন ফারহিন পেন্সিল বক্স খুলে দেখে আরও একটা পেন্সিল। পিকুর পাশেই। পিকু বলে উঠল, ফারহিন, ফারহিন। এ আমার মা। মা আমাকে দেখতে এসেছে। বাবা জানতে পারলে মাকে মেরে ফেলবে। পেন্সিল জগতে কারো সাথেই আমার দেখা করার পারমিশন নাই। কিন্তু মা লুকিয়ে লুকিয়ে চলে এসেছেন। ফারহিন বেশ খুশি হলেন। পিকুর মা পিকুকে আদর করতে লাগলেন ঠিক তখনি কোথেকে ৪-৫ টা পেন্সিল চলে আসল। পিকু, এইরে বাবা আসছে বলে পালিয়ে গেল। পিকুর বাবা পিকুর মাকে বলল, এই কুলাঙ্গারকে দেখতে কেন আসছ? তোমাকে না বারন করেছিলাম। ফারহিন বুঝতে পারল পিকুর মা মনে কষ্ট পাচ্ছেন। চল তাড়াতাড়ি চল। পেন্সিল গুলা গায়েব হয়ে গেল।

পরেরদিন থেকে ফারহিন পিকুকে কমা শিখানো শুরু করল। পিকু বলল শিখবনা। ফারহিন তাকে বুঝাল, তোমার কি তোমার আব্বা মার কাছে যেতে ইচ্ছে করছেনা? পিকু বলল, হ্যা করছে। ফারহিন কয়েকদিন চেস্টা করে পিকুকে কমা অনেক কষ্টে আয়ত্ত করাল। এরপর পেন্সিল জগতে রিয়েলিটি শো এর মত পেন্সিলপুরে পিকুর লাইভ শো হল। পে্ন্সিল জগতের চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচারিত হল। পিকুর শেষ সুযোগ। কিন্তু পিকু কমা দিতে পারল না। পিকু অর্ধেক কমা একেই পড়ে গেল। অন্য পেন্সিলরা দুয়ো ধ্বনি দিল। সেটা শোনার পর ফারহিন বেশ রাগ করল। পিকু তুমি একটা গাধা। তুমি আর কখনও আমার কাছে আসবানা। আমার পেন্সিল বক্সে কখনও থাকবানা। পিকু হাজারবার বলল, ফারহিন আমি তাহলে কই যাবো?? আমাকে পেন্সিল জগতেও কেউ রাখবেনা!! ফারহিন বলল, সে আমি কি জানি!! তুমি যেখানে খুশি যাও। গিয়ে মরে যাও। আমার কাছে আসবেনা। যাও।

পিকু আর ফারহিনের কাছে আসল না। কয়েকদিনপর ফারহিনের বেশ মন খারাপ হল। পিকু বেচারা। তার নিজের আবা মায়ের কাছেও যেতে পারছেনা। কই যাবে সে এখন। ফাইনাল পরীক্ষা ফারহিনের তেমন ভালো হল না। তার রোল এবার ১০ এর বাইরে চলে যাবে সেটা নিয়ে সে শঙ্কিত। পরীক্ষার রেজাল্ট দিল। ফারহিন অবাক হয়ে শুনল সে ফার্স্ট হয়েছে। ফারহিন বেশ অবাক। সে মিস এর কাছে গেল। মিস বললেন, ফারহিন মামনি। তোমার হাতের লেখা এরকম সুন্দর কিভাবে হয়েছে বল তো। আর হা তুমি বাংলা পরীক্ষায় শেষ পাতাটা খালি না রেখে এত বড় একটা কমা’র চিহ্ন দিয়েছ আমরা সবাই সেটাতে বেশ অবাক হয়েছি। ফারহিন আবারো অবাক হল। বাবা মাকে বোঝানোর চেস্ট করল ফার্স্ট সে না। পিকু হয়েছে। পিকু কোনভাবে ঐখানে এগিয়ে পরে লিখে দিয়ে এসেছে। ফারহিন বাসায় গিয়ে তাড়াতাড়ি পেন্সিল বক্স খুলল। সেখান পেন্সিল একটা আছে কিন্তু সেটা পিকু নয়। তার থেকে ছোট একটা পেন্সিল কিন্তু সেটাও কথা বলে। সে বলল, তুই কি ফারহিন? ফারহিন শার্পনার দেখিয়ে বলল, পারলে আরেকবার তুই বল। তখন মনে পড়ল পেন্সিলরা বড়দের তুই বলে। ঐ পেন্সিলটা বলল, পিকু কমা লেখা শিখে গেছে। ফারহিন তাকে বের করে দেওয়ার পর সে অনেক কেঁদেছে। সে এরপর কমা শিখেছে কিন্তু ফারহিনের কাছে সে আর কখনো আসবেনা। ফারহিনের খারাপ লাগল। সে বলল তাহলে পিকুর মাধ্যমে ফার্স্ট হওয়াও আমার দরকার নাই। এখন থেকে আমি নিজেই ফার্স্ট হব। নিজেই অনেক লেখাপড়া করব।

এরপর থেকে ফারহিন সব সময় পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া শুরু করল। সে অনেক পড়ালেখা করত। কিন্তু প্রতিটা পরীক্ষার খাতার পেছনে একটা কমা কেন থাকত সেটা কেউই বুঝতনা। ফারহিনের দাবী সেই কমা সে দিত না। কিন্তু এটা কোন কথা হল!! ফারহিন নিজেই কমা লিখে বলত সে কমা দেয় নি। কেই বা আর বিশ্বাস করবে যে পিকু নামে কখনও কেউ ছিল!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:৪২
৪৫টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×